<p>বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় অগ্নিসংযোগ, অস্ত্র-গুলি লুট ও ১৫ পুলিশ সদস্য হত্যার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। গত রবিবার (২৫ আগস্ট) রাতে এনায়েতপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মালেক বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। </p> <p>মামলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের চার নেতার নাম উল্লেখ করে ৫-৬ হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। পূর্বক্ষোভের কারণে আওয়ামী লীগ নেতারা এ হামলা চালান বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।</p> <p>মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন- এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বিএসসি, শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুল্লুক চাঁন এবং বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গবাড়ি ইউপির চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভূইয়া।</p> <p>মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চু থানায় গ্রেপ্তার হওয়া এক আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি করেন। পুলিশ তার দাবি না মেনে ওই আসামির বিরুদ্ধে মামলা নেয়। এ কারণে আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চুর নেতৃত্বে ৪৫০ থেকে ৫০০ জন লোক থানা ঘেরাও করেন। সে সময় থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাকের অপসারণের দাবিও করেছিলেন তিনি। </p> <p>এ ছাড়া বিভিন্ন সময় অবৈধ দাবি না মানায় থানা পুলিশের ওপর আওয়ামী লীগ নেতা বাচ্চুর ক্ষোভ ছিল। তাই তিনি এনায়েতপুর থানা পুলিশের ক্ষতি করার সুযোগের সন্ধানে ছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে গত ৪ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা এনায়েতপুর থানার সামনে সমবেত হয়। এ সময় ওসি আব্দুর রাজ্জাক হ্যান্ডমাইকে সমবেত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন।</p> <p>ওসি রাজ্জাক বলেন, এই থানা সাধারণ জনগণের। আপনারা থানার কোনো ক্ষয়ক্ষতি করবেন না। এ কথায় ছাত্র-জনতা চলে যায়। পরে ১ নম্বর আসামি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চুর নেতৃত্বে এজাহার নামীয় আসামিসহ পাঁচ থেকে ছয় হাজার দুষ্কৃতকারী দেশি অস্ত্র নিয়ে থানায় হামলা চালায়। আসামিরা পুলিশের কোয়ার্টার ও ওসির বাসভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুন দেখে পুলিশ সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আসামিরা থানা কম্পাউন্ডে উপপরিদর্শক (এসআই) তহছেনুজ্জামান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ওবায়দুর রহমান, কনস্টেবল আরিফুল আজম, রবিউল আলম শাহ, হাফিজুল ইসলাম, শাহিন, রিয়াজুল ইসলামকে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। একপর্যায়ে আসামিরা থানা ভবন ধ্বংস ও জীবিত পুলিশ সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে ভেতরে ঢুকে যায়। পুলিশের ও জনসাধারণের জমা দেওয়া বেসরকারি অস্ত্র ও গুলি লুট করে। </p> <p>পরে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে থানার ভেতর ও বাইরে থাকা অফিসার ও ফোর্সকে এলোপাতাড়ি গুলি করে। এ সময় থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক, এসআই আনিছুর রহমান, এসআই রহিজ উদ্দিন খান, এসআই প্রণবেশ কুমার বিশ্বাস, কনস্টেবল আব্দুল সালেক, কনস্টেবল হানিফ আলী থানার পাশে বাবু মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নেন। আসামিরা তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে যায়। সেখানে গিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে তাদেরও। এ সময় নারী কনস্টেবল রেহেনা পারভীনকে মারধর করে টানা-হেঁচড়া করে শ্লীলতাহানি করে। পরবর্তী সময়ে বিকেলে সেনাবাহিনীর একটি দল থানা এলাকায় পৌঁছে নিহত পুলিশ সদস্যদের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।</p> <p> </p> <p> </p>