<p style="text-align:justify">তৈমূর আলম খন্দকার। নারায়ণগঞ্জের তুখোড় এই রাজনীতিবিদ একসময় ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা। বিএনপির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা অবস্থায় ধরাকে সরা জ্ঞান করতেন তিনি। কিন্তু দলের বিরুদ্ধে গিয়ে ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি নাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নেওয়ায় তাকে উপদেষ্টা পদ থেকে প্রত্যাহার করা হয়। </p> <p style="text-align:justify">সেই সঙ্গে নির্বাচনের দুই দিন পর, অর্থাৎ ১৮ জানুয়ারি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। তা সত্ত্বেও বিএনপি রাজনীতি করে আসেন তিনি। তখন বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচি ঘিরে তার শহরের মাসদাইর এলাকাস্থ ‘মজলুম নিবাসে’ বাড়িতে বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়মিত আনাগোনা ছিল। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে আসতেই আওয়ামী লীগে যোগদান না করলেও কিংস পার্টি খ্যাত তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করেন তিনি। হয়ে যান তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব। যা নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। </p> <p style="text-align:justify">তবে সমালোচনা উপেক্ষা করেই সংসদ নির্বাচনে রূপগঞ্জ আসনে তৃণমূল বিএনপি থেকে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। লড়েন আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর সঙ্গে। সেখানে তার জামানত বাজেয়াপ্তের পাশাপাশি ভোট পান মাত্র ৩ হাজার। যা নিয়ে হাস্যরসে মেতে উঠেছেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতারা। সেই সঙ্গে তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানাভাবে ট্রলের শিকার হতে হয়।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের পতন ঘটলে বদলে যায় তৃণমূল বিএনপির প্রেক্ষাপট। একে একে দল থেকে তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা সরে গেলেও দল আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করেন তৈমূর আলম খন্দকার। তবে গত ১৭ অক্টোবর রাজধানীর বনানীর ডিওএইচএসের বাসা থেকে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী গ্রেপ্তার হওয়ায় তৈমূর আলম কিছুটা আতঙ্কে রয়েছেন। কেননা বিগত দিনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কঠোর সমালোচনা করে একদিকে বিএনপির নেতাকর্মীদের রোষানলে রয়েছেন। বিপরীতে রয়েছে গ্রেপ্তারের শঙ্কাও।</p> <p style="text-align:justify">খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৫ আগস্টের পর থেকেই তৈমূর আলম খন্দকার রাজধানী ঢাকাতেই বেশি অবস্থান করছেন। বর্তমানে রাজনীতি থেকে অনেকটাই দূরে রয়েছেন তিনি। গত দুই মাস ধরে শহরের মাসদাইর এলাকায় তার নিজ বাসায় তার পাশাপাশি বিএনপির নেতাকর্মীদেরও যাতায়াত নেই। আর সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে রূপগঞ্জের রূপসী এলাকাতেও তার পদচারণ কমিয়ে দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে অনেকটাই নেতাকর্মী ও অনুসারীদের এড়িয়ে একাকিত্ব জীবন কাটাচ্ছেন তৈমূর আলম খন্দকার।</p> <p style="text-align:justify">এর আগে জেলা বিএনপির গতি ফেরাতে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৪১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা দেন। আর এতে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে আহ্বায়ক করা হয় এবং অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সদস্যসচিব করা হয়। আর এই কমিটি ঘোষণার আগে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে চলে নানা হিসাব-নিকাশ। </p> <p style="text-align:justify">সব হিসাব-নিকাশ মিলিয়ে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের ওপরই জেলা বিএনপির দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়। কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে দিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের সমাগম ঘটাতে থাকে। প্রায় প্রত্যেকটি কর্মসূচি নেতাকর্মীদের দ্বারা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। নেতাকর্মীরা ফিরে পান মনোবল। যেন এমন নেতৃত্বের অপেক্ষাতেই ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। প্রত্যেক কর্মসূচিতেই নজরকাড়া শোডাউন চলে জেলা বিএনপির। তবে নাসিক নির্বাচনে অংশ নিয়ে তার পতন শুরু হয়।</p> <p style="text-align:justify">বিএনপির নেতাকর্মীদের মতে, তিনি দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতি করে এলেও শেষ পর্যায়ে এসে নিজের লোভ সামলাতে পারেননি। এ কারণে নিজ দলের সঙ্গে বেঈমানি করে নাম লেখান তৃণমূল বিএনপিতে। তিনি যদি দলের খারাপ সময়ে দলের পাশে থাকতেন তাহলে আজ তিনি বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে থাকতেন। </p> <p style="text-align:justify">এদিকে তার এমন পতন দেখে বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে দেখছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। উইনেবল ক্যান্ডিডেট ছিলেন তবে তা কেবল ধানের শিষ প্রতীক নিয়েই। স্বতন্ত্র বা দল ভেঙে নয়। নিজের পাশাপাশি দলের সংস্পর্শও যে গুরুত্বপূর্ণ তা প্রমাণ হয়ে গেছে সহজেই। সেই কারণেই উইনেবল ক্যান্ডিডেট হিরো থেকে পরিণত হয়েছেন জিরোতে। এর ফলে তৈমূরের এক সাহসী রাজনৈতিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে পরিবারের যারা রাজনীতিতে জড়িত তাদের সামনেও থাকবে এক ভয়াবহ অন্ধকার পথচলা।</p> <p style="text-align:justify">নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন বলেন, তার থেকে সবারই শিক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সারা দেশের মানুষ যে তাকে চেনে, এটা শুধুমাত্র বিএনপির কারণেই চিনে। বিএনপি তাকে বিআরটিসির চেয়ারম্যান বানিয়েছিল। বিএনপি তাকে অসংখ্য পদ-পদবি দিয়েছিল। অথচ সে দলের দুঃসময়ে মোনাফেকির মতোই আচরণ করেছেন। যারা পাওয়ার জন্য দল করে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন তৈমূর আলম খন্দকার। তার থেকে বিএনপির শিক্ষা নেওয়ার বড় বিষয়ই হলো আমরা কিছুই না। দলই আসল বিষয়। দল না থাকলে আমাদের কোনো মূল্য নেই। অতিরিক্ত লোভের ফল এখন তৈমূর সাহেবকে পেতে হবে। যা কেউ আটকাতে পারবে না।</p> <p style="text-align:justify">নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, সে একজন সুবিধাবাদী নেতা ছিলেন। দল তাকে অনেক কিছুই দিলেও সে তা ভুলে গিয়ে বেঈমানি করেন। সে দলকে ভেঙে শেখ হাসিনার সরকারের কাছ থেকে স্বার্থ লাভ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু জনগণ সব ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছেন। এর ফলে সে নিজেও আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। এখন সে জনরোষের ভয়ে রয়েছেন। সে এখন জাতির গণশত্রুতে পরিণত হয়েছেন। তাই তিনি এখন সব জায়গা থেকেই ঘৃণার শিকার হবেন। যা বিএনপির সব নেতাকর্মীদের জন্য বড় একটি উদাহরণ হয়ে থাকবেন বলে আমি মনে করি।</p> <p style="text-align:justify">নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, বিএনপি দেশের বৃহত্তম একটি রাজনৈতিক দল। এখানে কেউ আসে আবার কেউ যায়। এতে বিএনপির কোনো বিষয় না। আর বর্তমানে যে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিবকে নিয়ে কথা হচ্ছে সে তো আমাদের বিএনপির কেউ না। তার সঙ্গে বর্তমানে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। দলত্যাগ করলে কিংবা দলকে ভাঙার চেষ্টা করলে তার পরিণতি কী হয় তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হচ্ছেন তিনি।</p>