<p style="text-align:justify">নরসিংদীর বেলাব উপজেলার সরকারি হোসেন আলী অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিগত আওয়ামী সরকারের পটপরিবর্তনের পর থেকে অধ্যক্ষ বীরেশ্বর চক্রবর্তী গা ঢাকা দিয়েছেন। এরপর থেকে তিনি সশরীরে আর কলেজে আসেননি বলে নিশ্চিত করেছেন কলেজের একাধিক শিক্ষক। সেইসঙ্গে বিচ্ছিন্ন করেছেন কলেজের সঙ্গে সকল যোগাযোগ।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে, অধ্যক্ষ বীরেশ্বর চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে বারবার অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ার পরেও অদৃশ্য শক্তির বলয়ে ও তৎকালীন স্থানীয় এমপির আস্থাভাজন হওয়ার সুবাদে স্বপদে বহাল থেকেছেন। </p> <p style="text-align:justify">কলেজ সূত্রে জানা যায়, সরকারি হোসেন আলী কলেজটি ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে গত ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট কলেজটি জাতীয়করণের মধ্য দিয়ে নতুনভাবে পথচলা শুরু করে। বর্তমানে কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে মানবিক শাখায় ৩০১ জন, বিজ্ঞান শাখায় ২৩ জন ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ১৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে এবং ডিগ্রি পর্যায়ে প্রথম বর্ষে ৩৬ জন, দ্বিতীয় বর্ষে ৫৬ জন, তৃতীয় বর্ষে ৫৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়াও কলেজটিতে ৩৯ জন সরকারি শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছেন। </p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="জবি প্রশাসনের বিবৃতিতে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ : ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/04/1730726383-0072f0847cdbbb6737bf01b9f4be9867.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>জবি প্রশাসনের বিবৃতিতে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ : ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/campus-online/2024/11/04/1442712" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">২০১০ সালে বীরেশ্বর চক্রবর্তী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ ও পরে রাতের আঁধারে ২০১৩ সালে অবৈধভাবে কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের সেশন ফি, মাসিক বেতন, পরীক্ষা ফি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের টাকার রশিদ না কেটেই অর্থ আদায় করেছেন। প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের বিল ভাউচারে কলেজের আভ্যন্তরীণ অডিট কমিটির স্বাক্ষর দেওয়ার বিধান থাকলেও তিনি বিল ভাউচারে কারো স্বাক্ষরের তোয়াক্কা না করে সকল কার্যক্রম চালিয়ে যান। </p> <p style="text-align:justify">আয়-ব্যয়ের হিসাব নিকাশের জন্য কলেজের অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটির স্বাক্ষরতো দূরের কথা কমিটি গঠন করার বিধান থাকলেও কোনো অডিট কমিটি গঠন না করে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে তিনি একাই সকল কার্যক্রম করেছেন। এছাড়াও তিনি কলেজে না এসে বাড়িতে থেকেই কলেজের কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। সপ্তাহে দু’একদিন অল্প সময়ের জন্য কলেজে তার উপস্থিতি ও আর্থিক অনিয়মের পাশাপাশি দায়িত্বে অবহেলা, প্রশাসনিক পক্ষপাতিত্ব এবং দুর্নীতির কারণে কলেজের সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।</p> <p style="text-align:justify">অধ্যক্ষ বীরেশ্বর চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে উপরিউক্ত অভিযোগে ২০১৬ সালে তৎকালীন বেলাব উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুলতানা রাজিয়ার নির্দেশে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পান। কলেজটি সরকারিকরণের আদেশ জারির পর সভাপতি হিসেবে পর্যায়ক্রমে তৎকালীন বেলাব উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে হাবিবা ২০১৯ সালে, শামীমা শারমিন ২০২১ সালে ও মো. আক্তার হোসেন শাহিন ২০২২ সালের বিভিন্ন সময়ে অধ্যক্ষের দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত সাপেক্ষে সত্যতা পান এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশপত্র পাঠান।</p> <p style="text-align:justify">কলেজের শিক্ষকরা জানান, ২০১৮ সালে অডিট কমিটির মাধ্যমে ১১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৭৯ টাকা আর্থিক অনিয়মসহ উপরিউক্ত সকল অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। পরে অধ্যক্ষ বীরেশ্বর চক্রবর্তীর অনিয়মের বিবরণ উল্লেখ করে ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগপত্র প্রেরণ করা হয়। ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় শিক্ষক প্রতিনিধিরা প্রতিষ্ঠানের আত্মসাৎকৃত অর্থ অতি দ্রুত কলেজ তহবিলে জমা দেওয়ার জন্য অধ্যক্ষকে বললে, তিনি অর্থ আত্মসাতের কথা স্বীকারপূর্বক টাকা দ্রুত কলেজ তহবিলে জমা দেবেন বলে আশ্বস্ত করেন।</p> <p style="text-align:justify">এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৩ লাখ টাকা কলেজ ফান্ডে দিলেও বাকি ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৬৭৯ টাকা আর জমা দেননি। এছাড়াও কলেজ পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২০ সালের ডিসেম্বর হতে অধ্যক্ষ বীরেশ্বর চক্রবর্তীর বেতন স্থগিত রাখার জন্য সোনালী ব্যাংক বেলাব শাখার ব্যবস্থাপককে অবহিত করা হয়। কিন্তু এতসব অভিযোগের সত্যতা থাকা সত্ত্বেও অধ্যক্ষ বীরেশ্বর স্বপদে বহাল থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক শিক্ষক। </p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="গণ-অভ্যুত্থানের দিনগুলো : গোয়েন্দাদের যেভাবে বিভ্রান্ত করতেন সমন্বয়করা" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/04/1730726144-af6e6b693ed51557729e654e34b27ab5.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>গণ-অভ্যুত্থানের দিনগুলো : গোয়েন্দাদের যেভাবে বিভ্রান্ত করতেন সমন্বয়করা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/Politics/2024/11/04/1442710" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">এদিকে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের পলায়নের পর একই দিনে তিনিও তার কর্মস্থল ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর থেকে কলেজের সবার সঙ্গে তিনি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এতে কলেজ ধারাবাহিক কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাপক বিঘ্ন ঘটছে।</p> <p style="text-align:justify">কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের কলেজ একটি ঐতিহ্যবাহী কলেজ। এটার অনেক সুনাম রয়েছে। কিন্তু বীরেশ্বর চক্রবর্তী অবৈধভাবে নিয়োগের মাধ্যমে অধ্যক্ষ হওয়ার পর থেকেই কলেজের পতন শুরু। তিনি কলেজে নিয়মিত আসেন না, আসলেও দুপুর দুইটার পর এসে কিছুক্ষণ পর চলে যায়। তিনি কলেজের সকল সিদ্ধান্ত এককভাবে নিতেন। ওনার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে কলেজের ফলাফল খারাপ হতে থাকে। এর ফলে কলেজের শিক্ষার্থী সংখ্যাও কমে যায়।</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, অধ্যক্ষ বীরেশ্বর চক্রবর্তী শিক্ষকদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করতেন। তিনি কলেজের প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে অনিয়ম করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আমরা চাই দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন অধ্যক্ষের মাধ্যমে কলেজের ঐতিহ্য ফিরে আসুক।</p> <p style="text-align:justify">সরকারি হোসেন আলী কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক শফিকুর রহমান বলেন, বীরেশ্বর চক্রবর্তী কলেজের জুনিয়র শিক্ষক হয়েও ক্ষমতা প্রদর্শন করে অবৈধভাবে অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি স্বৈরাচারী কায়দায় কলেজ পরিচালনা করতেন। কলেজে নামমাত্র কমিটি থাকলেও কোনো মিটিং না করেই সকল সিদ্ধান্ত একা নিতেন। উনি কলেজের টাকা আত্মসাৎ করে তার কিছু টাকা ফেরতও দিয়েছেন। শিক্ষক-কর্মচারীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে একাধিকবার তদন্ত করে তার দোষ প্রমাণ হলেও অদৃশ্য কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যার কারণে তিনি আরো বেপরোয়াভাবে দুর্নীতি ও ক্ষমতা দেখিয়ে কলেজ পরিচালনা করেছেন।</p> <p style="text-align:justify">কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জিয়াউর রহমান জানান, কলেজের উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে আমি অ্যাকাডেমিক কাজ পরিচালনার দায়িত্ব পেলেও কলেজের কোনো আর্থিক ক্ষমতা পাইনি। যার কারণে আমি দৈনন্দিন খরচ, পরীক্ষা পরিচালনাসহ কলেজ পরিচালনায় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। অধ্যক্ষ পলাতক থাকায় অফিসের আলমারি তালাবদ্ধ, সকল জরুরি কাগজপত্র ও কলেজের পাসওয়ার্ড ওনার কাছে রয়েছে। যার কারণে কলেজের কোনো জরুরি কাজ করা যাচ্ছে না।</p> <p style="text-align:justify">তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষ বীরেশ্বর চক্রবর্তী বলেন, আমি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মাউশির মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছি। কোনো অবৈধ পন্থায় নয়। কলেজের ক্যাশিয়ার না থাকায় এক বছর হিসাব কার্য সামলিয়েছি। হিসাবে অদক্ষতার কারণে কিছু ভুল হয়েছে কিন্তু তিনি কোনো টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়নি। যদি দুর্নীতি প্রমাণিত হতো, আমি অধ্যক্ষ পদে থাকতে পারতাম না। শুধু তৎকালীন ইউএনও'র সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝির কারণে বেতনের ব্যাংক হিসাব স্টপ পেমেন্টে করে দিছে। ফলে নতুন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে বেতনভাতা নিচ্ছি।</p> <p style="text-align:justify">কলেজে অনুপস্থিত থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন কিছু শিক্ষক আমার বাসাতে গিয়ে মালিককে হুমকি দিয়েছে যে, আমি যদি ওইখানে থাকি তাহলে বাসা পুড়িয়ে দেওয়া হবে। যার কারণে জীবনের নিরাপত্তাহীনতার কারণে আমি বেলাব ত্যাগ করি। বর্তমানে আমি মেডিক্যাল ছুটিতে আছি। যখন আমার জীবনের নিরাপত্তা পাবো, তখন কলেজে যোগদান করবো।</p> <p style="text-align:justify">বর্তমান বেলাব উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সরকারি হোসেন আলী কলেজের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. আবদুল করিম জানান, কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ, বদলি, বরখাস্ত সকল সিদ্ধান্ত মাউশি নিয়ে থাকে। কলেজে অধ্যক্ষ দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকায় কলেজের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অধ্যক্ষ প্রয়োজন মর্মে মাউশি বরাবর আবেদন করা হয়েছে।</p>