কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আবদুল হাই কানু নামের এক মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করে গলায় জুতার মালা পরিয়ে এলাকাছাড়া করেছে একদল দুর্বৃত্ত। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
লাঞ্ছিত মুক্তিযোদ্ধা উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। তার বয়স৭৮ বছর।
১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে সর্বত্র নিন্দার ঝড় ওঠে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে রাতেই থানা পুলিশ অভিযানে নামে।
আরো পড়ুন
শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ভারতকে চিঠি
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু বলেন, ‘রবিবার দুপুরে উপজেলার পাতড্ডা বাজার থেকে তুলে নিয়ে যায় কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে। জুতার মালা দেওয়ার আগে তারা আমাকে নির্যাতন করেছে।
তারা আমার সারা শরীরে পা দিয়ে আঘাত করে, কিল-ঘুষি মারে। তারা ১৫০ টাকা স্ট্যাম্প দিয়ে আমাকে বলে তুই এখানে স্বাক্ষর কর, তুই মুক্তিযোদ্ধা নামে পরিচয় দিবি না, তুই কোনো দিন এলাকায় আসতে পারবি না। বিকেল ৫টার আগে বাড়ি থেকে না গেলে তোদের বাপ-ছেলের শরীরে হাড়-মাংস থাকবে না। রবিবার বিকেল ৫টার আগেই এলাকা ছেড়ে ফেনীতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি, কিছুটা সুস্থ হয়ে বিকেলে ফেনী ছেলের বাসায় এলাম।’
আরো পড়ুন
শেখ হাসিনা দেশে আসবেন ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলার জন্য : নাহিদ ইসলাম
তিনি আরো বলেন, ‘তারা আমাকে যে নির্যাতন করেছে তাতে আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো উপায় নাই। আমি প্রতিবাদ করে বলেছি জীবন চলে গেলেও পরিচয় দেব আমি মুক্তিযোদ্ধা, আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আমি স্বাক্ষর দেব না। উপদেষ্টামণ্ডলীর কাছে আমার দাবি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে, আমার গলায় জুতার মালা দেওয়া মানে সারা বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের গলায় মালা দেওয়া সমান কথা। আমি এই অপমানের বিচার চাই।
আমাকে নিরাপত্তা দিলে আমি বাড়ি ফিরে যেতে চাই। স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চাই।’
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের নিন্দা ও প্রতিবাদ
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে অপমান ও অপদস্থ করার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতে ইসলামী। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. বেলাল হোসাইন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিবাদলিপিতে তিনি উল্লেখ করেন, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার লুদিয়ারা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত করে গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনার একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় কিছু কুচক্রী মহল উপজেলা জামায়াতে ইসলামীকে জড়িয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত হচ্ছে।
আরো পড়ুন
শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করা সরকারের দায়িত্ব : সাকি
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতে ইসলামী গণমাধ্যমকর্মীদের জানাচ্ছে যে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জামায়াত কোনো অবস্থাতেই জড়িত নয়। যারা আব্দুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত অথবা জুতার মালা পরিয়েছে তারা জামায়াতে ইসলামী ও তার সহযোগী সংগঠনের কেউ নয়। যারা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত করেছে প্রশাসনের প্রতি আমাদের আহ্বান তদন্তপূর্বক দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। জামায়াতে ইসলামী কোনো অন্যায়কে সমর্থন করে না। বরাবরেই জামায়াতে ইসলামী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম আক্তার উজ জামান বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে অপমান করার বিষয়টি অত্যন্ত নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি দেখার পর থেকে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে রবিবার রাত থেকে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রহমত উল্লাহ বলেন, ‘আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়াতে ঘটনাটি দেখছি, এটা অনাকাঙ্ক্ষিত, আমি চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলেছি। নির্যাতিত বীর মুক্তিযোদ্ধা কানু সাহেব ফেনী আছেন। আমি কথা বলে আইনগত সহযোগিতা ও নিরাপত্তা বিষয়েও কথা বলেছি।’