ঢাকা সিএমএইচে চিকিৎসাধীন গত ১৩ জানুয়ারি রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে দেশের অন্যতম সাহসী সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদ আলী (বীরপ্রতীক) শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
১৯৭১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স পড়াকালীন সময়েই আজাদ আলী মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।
রাজশাহীর আড়ানি ব্রিজ উড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর চলাচল ব্যাহত করার ইতিহাসে তার সাহসিকতার গল্প আজও অনুপ্রেরণা হয়ে আছে। দিনের বেলায় পরিচালিত এই অভিযানের পর পাকিস্তানি বাহিনী পাল্টা শেলিং শুরু করলেও তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে ফিরে যেতে সক্ষম হন।
মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এক মিশনে পাকিস্তানি সেনাদের পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে তার বাঁ হাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে বাঁচার তাগিদে চিকিৎসকরা তার বাঁ হাত কেটে ফেলতে বাধ্য হন।
তার অসীম সাহসিকতার জন্য সরকার তাকে (বীরপ্রতীক) খেতাবে ভূষিত করে।
মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে তিনি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, সেনা সদর দপ্তর এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
আজাদ আলী দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
আট বছর আগে তিনি তার স্ত্রীকে হারান।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে তার মরদেহ রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানি হাই স্কুল মাঠে নেওয়া হয়। সেখানে পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন এবং সর্বসাধারণ শ্রদ্ধা নিবেদন করে। জানাজা শেষে বারিধারা ডিওএইচএস জামে মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বনানী সামরিক কবরস্থানে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।
সরকারের পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
বারিধারা ডিওএইচএস পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল জীবন কানাই দাস (অব.) গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘আজ জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন প্রথম সারির বীরকে হারাল। তার অবদান আমরা চিরকাল মনে রাখব।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদ আলী (বীরপ্রতীক) তার সাহসিকতা ও ত্যাগের জন্য ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবেন।