<p>সর্বস্ব হারানো গাজাবাসী দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে চলা ভয়াবহ যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার খবরে উল্লাসে ফেটে পড়লেন। বাঁধ ভাঙা উল্লাস করতে দেখা গেছে তাদের। বিশ্বস্ত সূত্রে বিবিসিতে জানায়, কাতারের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যস্তততায় এই চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। তিনি হামাস ও ইসরায়েলের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেন। পরে তারা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। </p> <p>বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার ডি ক্রু বলেছেন, ‘দীর্ঘ সংঘাতের পর জিম্মিদের বিষয়ে আমরা বেশ স্বস্তি বোধ করছি। আশা করি, এ যুদ্ধবিরতি যুদ্ধের অবসান ঘটাবে এবং একটি টেকসই শান্তির সূচনা করবে। বেলজিয়াম সাহায্য করতে প্রস্তুত।’</p> <p>এদিকে যুদ্ধবিরতির খবরটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ ও অন্যান্য এলাকায় হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন। আনন্দে তারা ফেটে পড়েন। অনেককে মুঠোফোনে ছবি তুলতে দেখা যায়।</p> <p><span style="font-size:1.25rem">স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ হামাস ও দখলদার ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে রাজি হয়।</span> যুদ্ধবিরতির আলোচনার বিষয়ে ব্রিফ করা একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, এই চুক্তিতে ছয় সপ্তাহের প্রাথমিক যুদ্ধবিরতির রূপরেখা রয়েছে এবং এতে গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ধীরে ধীরে প্রত্যাহার এবং ইসরায়েলের হাতে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।</p> <p>চুক্তিতে বলা হয়েছে, গাজা শহর ও দক্ষিণ গাজার লাখো মানুষ তাদের বাড়ি ফিরে যাবে। এ সময়ের মধ্যে রাফা ক্রসিং দিয়ে তাবু, খাবার, চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক গাজায় প্রবেশ করবে। এ ছাড়াও ৫০টি জ্বালানিসহ গাড়ি প্রবেশ করবে। এদিকে যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা। জানিয়েছেন তাদের প্রতিক্রিয়া।</p> <p><strong>কাতারের প্রধানমন্ত্রী</strong></p> <p>কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল-থানি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে চূড়ান্ত বৈঠক শেষে গতকাল সন্ধ্যায় দোহায় আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, উভয়পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এটি রবিবার থেকে কার্যকর হবে। তিনি রোববার পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় সবাইকে শান্ত থাকার আহবান জানিয়েছেন।</p> <p><strong>ডোনাল্ড ট্রাম্প</strong></p> <p>ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে যুদ্ধবিরতি নিয়ে একাধিক পোস্ট করেছেন।</p> <p>প্রথম পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে জিম্মিদের জন্য আমাদের একটি চুক্তি হয়েছে। খুব শিগগির তাদের মুক্তি দেয়া হবে। সবাইকে ধন্যবাদ!’</p> <p>ট্রাম্প আরেক পোস্টে লিখেছেন, ‘এই চুক্তি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমার জাতীয় নিরাপত্তা দল ইসরায়েল এবং আমাদের মিত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাবে, যাতে গাজা আর কখনও সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল না হয়।’</p> <p><strong> জো বাইডেন</strong></p> <p>মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই চুক্তি গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করবে, ফিলিস্তিনের বেসামরিক নাগরিকদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি করবে এবং ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে বন্দি থাকার পর জিম্মিদের সঙ্গে তাদের পরিবারের পুনর্মিলন ঘটাবে।’</p> <p>তিনি বলেন বলেন, ‘লেবাননে যুদ্ধবিরতি ও ইরান দুর্বল হওয়ার পরে হামাস যে ব্যাপক চাপে ছিল এবং আঞ্চলিক সমীকরণ যেভাবে বদলে গিয়েছিল, এই যুদ্ধবিরতি কেবল সেটারই ফলাফলই নয়; বরং আমেরিকার দৃঢ় ও কষ্টসাধ্য কূটনীতিরও ফলাফল। এটা সম্পন্ন করার জন্য তাদের (কূটনীতিকদের) প্রচেষ্টায় আমার কূটনীতি কখনও থেমে থাকেনি।’</p> <p><strong>জাতিসংঘের মহাসচিব</strong></p> <p>জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, জাতিসংঘ এই চুক্তিকে সমর্থন করে। তারা ভোগান্তিতে থাকা অগণিত ফিলিস্তিনির জন্য টেকসই মানবিক ত্রাণ সরবরাহ বাড়াতে প্রস্তুত ছিল।</p> <p><strong>মিসরের প্রেসিডেন্ট</strong></p> <p>মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি গাজায় দ্রুত মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="এবার ‘সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স শিপ’ পেল ইরানের নৌবাহিনী" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/01/15/1736930845-4b69c2e27800846d4e132ea608c2a660.gif" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>এবার ‘সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স শিপ’ পেল ইরানের নৌবাহিনী</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/world/2025/01/15/1468909" target="_blank"> </a></div> </div> <p><strong>তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী</strong></p> <p>তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাতের সমাধানের জন্য তুরস্কের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।</p> <p><strong>ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী</strong></p> <p>ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘মাসের পর মাস ধরে ভয়াবহ রক্তপাত এবং অগণিত প্রাণহানির পর অবশেষ সেই দীর্ঘ বিলম্বিত খবর এলো, যেটার জন্য ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি জনগণ মরিয়া হয়ে অপেক্ষা করছিলেন।’</p> <p><strong>নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী</strong></p> <p>নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গাহর স্টোয়ের ‘গাজাসহ (সমগ্র ফিলিস্তিনের) পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ফিলিস্তিনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয়কেই বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেতে হবে এবং এই সমাধান আঞ্চলিকভাবে স্থির করতে হবে।’</p> <p><strong>জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী</strong></p> <p>জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে আশা করা যায় যে অবশেষে জিম্মিদের মুক্তি দেয়া হবে এবং গাজায় প্রাণহানি বন্ধ হবে।’</p> <p><strong>বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী</strong></p> <p>গাজা শহর থেকে ভূখণ্ডের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত নুসাইরাত ক্যাম্পে বাস্তুচ্যুত ৪৫ বছর বয়সী রান্ডা সামেহ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই দুঃস্বপ্ন অবশেষে শেষ হচ্ছে। আমরা অনেক মানুষকে হারিয়েছি, আমরা সবকিছু হারিয়েছি।’ </p> <p>তবে বন্ধ হয়নি ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা। গাজার খান ইউনিস এলাকা ও নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে খান ইউনিস এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় দুইজন নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার এক দিনে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৮২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদিকে গাজার নুসেইরাত শরণার্থীশিবিরে আবাসিক একটি এলাকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলায় একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েকজন। </p> <p>প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৭০৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত এক লাখ ১০ হাজার ২৬৫ জন। এদের মধ্যে বহু মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।</p> <p>সূত্র : রয়টার্স,বিবিসি, আলজাজিরা</p>