<p>নব্বই দশকের জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি হত্যা মামলায় খালাস পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) গোলাম ফারুক অভি। বর্তমানে কানাডায় পলাতক রয়েছেন তিনি। মামলায় অভির খালাসের রায় ঘোষণার সময় তিন্নির পরিবারের কেউই আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।</p> <p>মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) এ রায় দেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোছা. শাহীনুর আক্তার। এ রায়ের পর অভির পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী শাহ ইলিয়াস রতন সংবাদমাধ্যমে বলেন, আমার মক্কেল ন্যায় বিচার পেয়েছেন। তবে এ রায়ে সন্তুষ্ট নন রাষ্ট্রপক্ষ। রায় পর্যালোচনা করে উচ্চ আদালতে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সৈয়দ মো. আবু জাফর রিজবী।</p> <p>২০০২ সালের ১০ নভেম্বর বুড়িগঙ্গা নদীর ওপরে অবস্থিত বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু-১-এর নিচে পাওয়া যায় মডেল, অভিনেত্রী তিন্নির মরদেহ। এ ঘটনায় মামলা হলে ২০০৮ সালে তদন্তে অভিযুক্ত হন সাবেক এমপি গোলাম ফারুক অভি।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="‘আমার এখানে এসে ভণ্ডামি করছেন কেন’, কড়া জবাব শাবনূরের" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/01/15/1736921249-5aecb38e576fef52302e93ab561e973e.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>‘আমার এখানে এসে ভণ্ডামি করছেন কেন’, কড়া জবাব শাবনূরের</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/entertainment/2025/01/15/1468884" target="_blank"> </a></div> </div> <p>আমার</p> <p><strong>কে এই অভি</strong><br /> ইতিহাস বলে সাবেক এমপি গোলাম ফারুক অভির উত্থান ঘটে সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে। ছাত্র হিসেবে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। এসএসসি এবং এইচএসসিতে বোর্ড পর্যায়ে মেধার স্বাক্ষর রাখেন। নব্বইয়ের গণআন্দোলন ঠেকাতে এরশাদের নজর পান অভি। ওই সময় অপহরণ ও মুক্তিপণ এবং চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। তিনি নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে তিনি গ্রেপ্তার হন। তবে নব্বইয়ের গণআন্দোলনের চরম পর্যায়ে ডিসেম্বরের প্রথম দিকে কারাগার থেকে মুক্তি পান। আর ছাড়া পেয়েই পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তিনি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।</p> <p>১৯৯০ সালের ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। অভি একটি অংশের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং তার সঙ্গে তৎকালীন সরকারের গোপন যোগাযোগ রয়েছে, এই অভিযোগে ওই বছরের ২৫শে নভেম্বর তাকে ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ১৯৯৬ সালের ৯ই মে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং ১২ই জুন অনুষ্ঠিত ৭ম সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসন থেকে সর্বকনিষ্ঠ এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="যে কারণে বলিউড থেকে দুরে সরে যান নার্গিস" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/01/15/1736915910-df05ff71e7cd0aa551729ce869d9cb14.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>যে কারণে বলিউড থেকে দুরে সরে যান নার্গিস</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/entertainment/2025/01/15/1468865" target="_blank"> </a></div> </div> <p><strong>অভিযোগের পাহাড়</strong><br /> ১৯৮৯ সালে একটি হত্যা মামলার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে অভিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়াও ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে তার বিরুদ্ধে আটকাদেশ দেয়া হয়। ১৯৯০ সালের ২৭শে নভেম্বর ডা. মিলন হত্যায়ও তিনি অভিযুক্ত ছিলেন। ১৯৯২ সালের ১৮ই মে সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের গেস্টরুম থেকে একটি কাটা রাইফেল ও বিদেশি পিস্তলসহ অভিকে গ্রেপ্তার হয়। ২১শে আগস্ট ১৯৯৩ সালে ওই মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড হলে তিন বছর কারাভোগের পর উচ্চ আদালতে আপিল করে জামিন পান তিনি। কানাডার টরেন্টো থেকে অভি পাওয়ার অব অ্যাটর্নির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠিয়ে এক আইনজীবীর মাধ্যমে মামলাটির স্থগিতাদেশ চেয়ে ২০১০ সালের ৫ই ডিসেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। যার রিট পিটিশন নম্বর ৯৫৩১/২০১০। শুনানি শেষে ২০১১ সালের ১৫ই জানুয়ারি রুল জারি করেন হাইকোর্ট।</p> <p>এরপর ২০১১ সালের ২৩শে জুন হাইকোর্ট মামলাটির স্থগিতাদেশ দেন। এই কারণে প্রায় সাত বছর মামলার কার্যক্রম স্থগিত ছিল। হাইকোর্টের নির্দেশে এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া প্রায় পাঁচ বছর স্থগিত থাকার পরে ২০১৫ সালে মামলাটির বিচার কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়। মডেলকন্যা তিন্নি হত্যা মামলার আসামি অভি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তার নির্বাচনী এলাকা বরিশাল-২ এ ঈদের নামাজে মোবাইল ফোনে তার সহযোগীদের সহযোগিতায় বক্তব্য দিয়ে থাকেন। বক্তব্যে তিনি বলে থাকেন, নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে দেশে ফিরে আবারো রাজনীতিতে ফিরবেন। নির্বাচনে জয়ী হয়ে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করবেন।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="নতুন বছরে দর্শক মাতাবে পাকিস্তানি যে পাঁচ ড্রামা" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/01/15/1736919487-bc85f06fe236d654370d4b76ad6f4d55.png" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>নতুন বছরে দর্শক মাতাবে পাকিস্তানি যে পাঁচ ড্রামা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/entertainment/2025/01/15/1468875" target="_blank"> </a></div> </div> <p><strong>ক্যারিয়ারের তুঙ্গে ছিলেন তিন্নি</strong><br /> ১৯৭৭ সালের ২২শে অক্টোবর ঢাকায় জম্মগ্রহণ করেন তিন্নি। তিন্নি নামে পরিচিত হলেও তার পুরো নাম সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি। ২০০০ সালের কেনাকাটা করতে বনানীতে গেলে তার সঙ্গে দেখা হয় জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন নির্মাতা আফজাল হোসেনের। দেখার পর আফজাল হোসেন তাকে মডেল হবার জন্য প্রস্তাব দেন। ইডেন কলেজে ইংরেজি বিভাগে পড়ে এমন সুযোগ পেয়ে মডেল হতে রাজি হন। কয়েক মাস পরে তিন্নি মডেলিং করেন হেনোলাক্স স্পট ক্রিমের একটি বিজ্ঞাপনে। এক বিজ্ঞাপন দিয়েই তিন্নি পৌঁছে যান হাজারো দর্শকদের হৃদয়ে। একের পর এক অভিনয় করেন স্টারশিপ কনডেন্সড মিল্ক, লিজান মেহেদী, গন্ধরাজ তেল, কোয়ালিটি আইস্ক্রিম ও রিচি জুসের বিজ্ঞাপনে। মৌ-এর পর তিন্নি হয়ে উঠেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া মডেল।</p> <p>মডেল হিসেবে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর নাট্য নির্মাতারা তাকে নাটকে অভিনয় করার প্রস্তাব দিতে থাকেন। তিন্নি অনেক নাটকের অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও জনপ্রিয় পরিচালক মোহন খানের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে পারেননি। ২০০২ সালে মোহন খান পরিচালিত মেঘবতী নাটকে অভিনয় করেন। এরপর তিনি ধারাবাহিক নাটক তখন ছিলাম আমি ও সমুদ্র সীমানায় নাটকে অভিনয় করেন। তার জনপ্রিয়তা দেখে চলচ্চিত্র পরিচালকেরা তাকে ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দেন। বাদল খন্দকার পরিচালনায় প্রিয় সাথী নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের বিষয়ে পুরোপুরি চূড়ান্ত হয়। কিন্তু চলচ্চিত্রে আর অভিনয় করা হয়ে উঠেনি তিন্নির। ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা তিন্নি তার আগেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।</p> <p>উল্লেখ্য, ২০০২ সালের ১০ই নভেম্বর বুড়িগঙ্গা নদীর উপরে অবস্থিত বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু-১-এর নিচে মডেল তিন্নির লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ থানা-পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা করে। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ৮ই নভেম্বর সাবেক এমপি গোলাম ফারুক অভির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব ওরফে তিন্নি হত্যার ঘটনায় ওই সময় দেশ জুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। ইন্টারপোলের রেড নোটিশে অভির নাম থাকলেও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিন্নি হত্যা মামলায় ২০০৭ ও ২০১৮ সালে ইন্টারপোল অভির বিরুদ্ধে লাল নোটিশ জারি করে। কিন্তু দীর্ঘ ২২ বছরেও অভির সন্ধান করতে পারেনি আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল।</p>