<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় অস্ত্র আইনে মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ পাঁচজনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই মামলায় ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াকে ১৪ বছর এবং চার আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর মারা যাওয়ায় চার আসামির ক্ষেত্রে মামলাটি বাতিল করেছেন উচ্চ আদালত। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আসামিদের আপিলের শুনানির পর বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এই রায় দেন। এ মামলায় অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ধারায় ১৪ আসামিকে যাবজ্জীবন এবং ১৯(চ) ধারায় সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। গতকালের রায়ের ফলে লুৎফুজ্জামান বাবরের কারামুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবীরা। তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাবর ছাড়া অন্য যে চারজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন তালুকদার, ইউএফএলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এ কে এম এনামুল হক, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী এবং সাবেক ভারপ্রাপ্ত শিল্পসচিব নুরুল আমীন। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তাঁদের আপিল মঞ্জুর করে এই রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্যদিকে এনএসআইয়ের সাবেক পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ, এনএসআইয়ের সাবেক উপপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর লিয়াকত হোসেন, এনএসআইয়ের সাবেক মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান এবং চোরাকারবারি হাফিজুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। বিচারিক আদালতের দেওয়া যাবজ্জীবন সাজা পরিবর্তন করে তাঁদের আপিল খারিজ করা হয়েছে হাইকোর্টের রায়ে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যু হওয়ায় এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক আব্দুর রহিম, জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী, চোরাকারবারি দীন মোহাম্মদ এবং চোরাকারবারিদের সহযোগী হাজি আবদুস সোবহানকে খালাসপ্রাপ্ত ঘোষণা করে তাঁদের আপিল বাতিল করেছেন উচ্চ আদালত। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আদালতে আপিলের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসিফ ইমরান জিসান।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রায়ের পর আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ মামলায় লুৎফুজ্জামান বাবরকে ৭৮ দিন রিমান্ডে নিয়ে চাপ দেওয়া হয়েছিল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জড়িয়ে জবানবন্দি দিতে। এই জবানবন্দি দিলে তাঁকে (বাবরকে) আসামি না করে সাক্ষী করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ৭৮ দিন রিমান্ডে থাকার পরও তিনি এই জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। এ কারণে তাঁকে এ মামলায় আসামি করা হয়।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিশির মনির বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আদালত বলেছেন, আজকেই একটি লিখিত অ্যাডভান্স (অগ্রিম) আদেশ দেওয়া হবে। আশা করছি, অগ্রিম আদেশটি বাস্তবায়নের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি জেল থেকে মুক্তি পাবেন। তিনি কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। আদেশটি সেখানে পৌঁছার পর তাঁকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যাবজ্জীবন থেকে কমিয়ে যে চারজনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তাঁরা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আছেন। ফলে ১০ বছরের সাজা তাঁরা খেটে ফেলেছেন। এ কারণে এই চারজনের কারামুক্তিতেও কোনো বাধা থাকছে না বলে জানান আইনজীবী শিশির মনির।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span>    </span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মামলার বৃত্তান্ত</span></span></strong></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০০৪ সালের ১ এপ্রিল মধ্যরাতে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কর্ণফুলী নদীর তীরে রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের সংরক্ষিত জেটিঘাটে দুটি মাছ ধরার ট্রলার থেকে বিপুল অস্ত্র খালাস করে ট্রাকে তোলার সময় পুলিশ আটক করে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদের সর্ববৃহৎ চালান ধরা পড়ার পর দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে তদন্তে দেখা যায়, চীনের তৈরি এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ সমুদ্রপথে আনা হয় ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উলফা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">র জন্য। বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ওই চালান ভারতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। অস্ত্র উদ্ধারের পর ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগে একটি এবং ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনে অন্য মামলাটি করা হয়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন। বিচারিক আদালতের রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৪ জনের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা করেন বিচারিক আদালত। আর অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ধারায় ওই ১৪ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এ ছাড়া ১৯(চ) ধারায় তাঁদের দেওয়া হয় সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ১৮ ডিসেম্বর বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় বাবরসহ ছয়জনকে খালাস দেন হাইকোর্ট। আর পরেশ বড়ুয়াকে সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন এবং অন্য ছয় আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>