<p>চাঁদপুরের মেঘনায় সারবোঝাই কার্গো জাহাজে আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে অবশেষে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে জেলার হাইমচর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে এই মামলা করেন এমভি আল বাখেরা নামের কার্গো জাহাজের মালিক মাহবুব মোর্শেদ। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন সুমন। আর এই মামলা তদন্ত করবে নৌ পুলিশ।</p> <p>এতে খুনের ঘটনার সংবাদদাতা অপর জাহাজ এমভি মুগনির মাস্টার বাচ্চু মিয়াসহ ৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। </p> <p>মামলার বাদী হয়েছেন ঢাকার দোহারের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মাহবুব মোর্শেদ। যিনি এমভি আল বাখেরার মালিক। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৯৬ ও ৩৯৭ ধারায় বাদী তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, গত রবিবার সকাল ৮টায় চট্টগ্রামের কাফকো সার কারখানার জেটি থেকে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ির উদ্দেশে ইউরিয়া সার নিয়ে মোট ৯ জন রওনা করেন।</p> <p>সোমবার বিকেলে জাহাজটি গন্তব্যে পৌঁছার কথা ছিল। কিন্তু সোমবার সকাল থেকে জাহাজের মাস্টার মো. সালাহউদ্দিনসহ আরো কয়েকজন স্টাফকে মোবাইল ফোনে কল দিয়েও সাড়া পাননি তিনি। এ সময় তার মালিকানাধীন অপর জাহাজ একই পথ পাড়ি দেওয়ায় এমভি মুগনি নামে ওই জাহাজের মাস্টার বাচ্চু মিয়াকে খোঁজ রাখতে মোবাইল ফোনে জানান।</p> <p>এরই মধ্যে সোমবার দুপুর ১২টায় চাঁদপুরে হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে ঈশানবালা খালের মুখে সারবোঝাই এমভি আল বাখেরাকে অবস্থান করতে দেখেন মাস্টার বাচ্চু মিয়া।</p> <p>একপর্যায়ে ওই জাহাজের কাছে পৌঁছে বাচ্চু মিয়া তাতে আরোহণ করে দেখতে পান, এমভি আল বাখেরার প্রায় স্টাফ মৃত ও অর্ধমৃত অবস্থায় পড়ে আছে। বিষয়টি মাহবুব মোর্শেদকে জানানো হলে তিনি জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানোর অনুরোধ করেন।</p> <p>একপর্যায়ে কোস্ট গার্ড ও নৌ পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গ্রিজার ও সুকানিরুমে তিনজনকে মৃত, ব্রিজরুমে তিনজনকে রক্তাক্ত এবং ড্রাইভার ও মাস্টাররুমে আরো দুজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এদের মধ্যে রক্তাক্ত যে তিনজন ছিল, তাদের মধ্যে এখন শুধু জুয়েল নামে একজন বেঁচে আছেন। যাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। </p> <p>মামলায় আরো বলা হয়েছে, প্রত্যেকের মাথা, গলা ও মুখমণ্ডল রক্তাক্ত জখম ছিল। তবে আটজনের এমন করুণ পরিণতি হলেও ইরফান নামে একজন রহস্যজনক কারণে নিখোঁজ রয়েছেন। মামলায় ওই আটজনের নাম ও ঠিকানা থাকলেও নিখোঁজ ইরফানের কোনো তথ্য নেই। </p> <p>এদিকে মামলা সম্পর্কে হাইমচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন সুমন জানান, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা এই মামলার তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চাঁদপুর সদরের হরিণা ঘাট নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে।</p> <p>অন্যদিকে, চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনা তদন্ত করতে এরই মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং চাঁদপুর জেলা প্রশাসন, কোস্ট গার্ড জেলা ও নৌ পুলিশের সমন্বয়ে আলাদাভাবে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন জানান, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সাত খুনের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে এবং জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। </p>