<p style="text-align:justify">চাঁদপুরের হাইমচরে ইশানবালা খালে নোঙর করা এমভি আল-বাখেরা নামের সারবাহী জাহাজে সাতজন নিহতদের মধ্যে একটি লাশ জাহাজ মাস্টার গোলাম কিবরিয়া বিশ্বাসের (৬৫)। একই ঘটনায় তার ভাগ্নে সবুজ শেখও (২৬) নিহত হয়। ফরিদপুর সদরের গেরদা ইউনিয়নের জোয়াইর গ্রামের বাড়িতে এখনো থামেনি মাতম।</p> <p style="text-align:justify">গোলাম কিবরিয়া বিশ্বাসের বড় মেয়ে হাবিবা আক্তারের বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক হয়েছে ১০ জানুয়ারি। বাড়িতে চলছিল বিয়ের প্রস্তুতি আর কেনাকাটা। বাবা জাহাজ মাস্টার কিবরিয়ার বাড়িতে আসার কথা ছিল মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর)। মঙ্গলবার রাতেই তিনি বাড়িতে আসছেন ঠিকই তবে কাফনের কাপড় পরে লাশের গাড়িতে করে। আনন্দের বাড়িতে চলছে এখন মাতম। শোকাহত পরিবার কোনোভাবেই মানতে পারছে না এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের।</p> <p style="text-align:justify">প্রায় ৪০ বছর আগে জাহাজের কাজে যোগ দেন গোলাম কিবরিয়া বিশ্বাস। হত্যাকাণ্ডের দিনই তার চাকরিজীবনের ছিল শেষ কর্মদিবস। কিন্তু সোমবার সকালে চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীতে ওই জাহাজ থেকে খুন হওয়া ছয়জনের সঙ্গে উদ্ধার করা হয় তার মরদেহ।</p> <p style="text-align:justify">গোলাম কিবরিয়ার বড় মেয়ে হাবিবা আক্তার গেরদার আব্দুল খালেক ডিক্রি কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ছোট মেয়ে মুসলিমা একই কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়েন। একেবারে ছোট ছেলেটি রুবায়েত পড়ছে মক্তবে।</p> <p style="text-align:justify">সরেজমিনে নিহত কিবরিয়া বিশ্বাসের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল জীবিত কিবরিয়াকে। জামাই-মেয়েকে করার কথা ছিল আশীর্বাদ। সেই জায়গায় কিবরিয়া এসেছে ঠিকই কিন্তু লাশের কফিনে। শোকে স্তব্ধ গোটা পরিবার। প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন এসেছেন, তাদের মাঝেও বইছে শোকের ছায়া। যে বাড়িতে সোমবার সকাল পর্যন্ত ছিল বিয়ের আয়োজন, মঙ্গলবার রাতে সেই বাড়িতে হচ্ছে মেয়ের বাবার জানাজা।</p> <p style="text-align:justify">নিহত কিবরিয়া স্ত্রী রোজি আক্তার জানান, রবিবার রাতে স্বামীর সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আজকে কাজের চাপ অনেক ছিল, তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ব। আগামীকাল কথা হবে। বিয়ের আয়োজন ঠিকঠাকভাবে চালিয়ে যাও, আমি আসছি দু-এক দিনের মধ্যে।’ সোমবার সকাল থেকেই তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। বিকেলেই খবর আসে হাবিবার বাবা আর নেই।</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, ‘বাড়িতে বড় মেয়ের বিয়ের আয়োজন চলছে। এমন আনন্দের সময় জীবনের সবচেয়ে দুঃসংবাদ পাবো ভাবতে পারিনি। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আমার স্বামী। আমার সব শেষ হয়ে গেল। তিনি বাড়িতে আসছেন ঠিকই, তবে কফিনে লাশের গাড়িতে।’</p> <p style="text-align:justify">কিবরিয়ার শিশুসন্তান রুবায়েত কাঁদছে আর বলছে, “‘বাবা আর আসবে না, আদরও করবে না।’ বাবা বলেছিলেন, ‘তোমার আপুর বিয়েতে অনেক আনন্দ করবা’। আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে, তাদের কঠিন বিচারের দাবি জানাই।”</p> <p style="text-align:justify">নিহত গোলাম কিবরিয়ার সহকর্মী একই কম্পানির অন্য আরেকটি জাহাজের মাস্টার মো. আবুল কাশেম বলেন, ‘আমরা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। যাতে এরপর আর কেউ এমন ঘটনা না ঘটাতে পারে।’ এ ছাড়া তিনি নিহতদের পরিবারের জন্য প্রত্যেক পরিবারকে ২০ লাখ করে টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান।</p> <p style="text-align:justify">নিহত গোলাম কিবরিয়ার প্রতিবেশী আবুল হোসেন বলেন, ‘এভাবে মামা-ভাগ্নেকে হত্যার শিকার হতে হবে তা ভাবতেও পারিনি কখনো। কিবরিয়ার পরিবারটি অথৈ সাগরে পড়ে গেল। পরিবারটিতে রোজগারের কেউ আর থাকল না।’</p> <p style="text-align:justify">গেরদা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘কিবরিয়া একজন ভালো মানুষ ছিলেন। তাকে এভাবে চলে যেতে হবে ভাবিনি। মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে আনন্দ চলছিল। আমার সঙ্গে মাঝেমধ্যে মোবাইলে কথার সময় বলত, ভাই আর বেশিদিন চাকরি করব না, চলে আসব। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’</p> <p style="text-align:justify">গোলাম কিবরিয়া (৬৫) ও সবুজ শেখের (২৬) মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে ফরিদপুর সদর উপজেলার জোয়াইর গ্রামে পৌঁছালে জোয়ারের মোড় জামে মসজিদসংলগ্ন কবরস্থানে তাদের দুজনকে পাশাপাশি দাফন করা হয়। নিহতের পরিবার ও স্বজনরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত ইরফানকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।</p>