<p>মায়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা শরণার্থী জীবন থেকে মুক্তি পেতে নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ও নিজ দেশে ফেরার দাবিতে গণসমাবেশ করেছে। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ১ নম্বর ইস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবকদের সংগঠন ‘ইসলামি মাহাসা’ নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে উক্ত গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।</p> <p>গণসমাবেশে হাজার হাজার রোহিঙ্গা যুবক, আলেম ওলামা ও সাধারণ রোহিঙ্গারা অংশগ্রহণ করেন। বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সংগঠনের যুবকেরা সমাবেশে অংশগ্রহণ করে নিজ দেশে ফিরে যেতে নানা ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়। সমাবেশে ‘ইসলামি মাহাসা’ নামের সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।</p> <p>সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা ডা. জোবায়ের বলেন, ‘রোহিঙ্গারা নিজেদের দেশ মায়ানমারের রাখাইন (আরাকান) রাজ্যে ফিরে যেতে প্রস্তুত। জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকার সহযোগিতা করলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সহজ হবে। রোহিঙ্গাদের দাবিসমূহ মিয়ানমার সরকার মেনে নিলে আমরা ফিরে যাব।’</p> <p>ডা. জোবায়ের তার বক্তব্যে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সম্প্রতি মায়ানমারের রাখাইন (আরাকান) রাজ্যে আরাকান আর্মির শক্তিশালী অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে মায়ানমারের জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল তার সঠিক ও ন্যায় বিচার আশা করেন।</p> <p>রোহিঙ্গা নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা দ্রুত করার জন্য জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান করেন। তিনি আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দাবিগুলো নিশ্চিত করা হলে আমরা স্বেচ্ছায় মিয়ানমার চলে যাব। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে সারা জীবন থাকার জন্য আসেনি। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নিয়েছে, থাকার জন্য জমি দিয়েছে, ঘর দিয়েছে, খাবারের ব্যবস্থা করেছে। নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। আমরা (রোহিঙ্গারা) বাংলাদেশের মানুষ ও সরকারের কাছে সারাজীবন ঋণী হয়ে থাকব।’</p> <p>গণসমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, রোহিঙ্গা নেতা মাওলানা রাহমত করিম, মাওলানা জহির আহমেদ, কাওয়ালি হামিদ, মাওলানা আব্দুর রশিদ, মাওলানা দিল মোহাম্মদ ও অসংখ্য রোহিঙ্গা আলেম ওলামা এবং যুবকেরা।</p> <p>রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইন-শৃঙ্খলায় নিয়োজিত ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি সিরাজ আমিন রোহিঙ্গাদের সমাবেশের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।</p> <p>তিনি বলেন, ‘কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গাদের গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারা নিজ দেশে ফিরে যেতে এ সমাবেশ করেছেন বলে জানান এপিবিএনের এ কর্মকর্তা।’</p> <p>উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন (আরাকান) রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে এবং নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসান চরে রয়েছে।</p> <p>সাম্প্রতিক সময় মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘাত ও সহিংসতার জেরে আরো ৬০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয়শিবির এবং সীমান্তের নানা স্থানে অবস্থান করছে। </p>