<p style="text-align:justify">বান্দরবানের বোমাং সার্কেলের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি বিলুপ্তির পথে। আদি রাজরীতি, প্রথা ও উৎসবের অনেক কিছুই হারিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ সাত বছর ধরে বন্ধ রয়েছে ঐতিহ্যবাহী রাজপুণ্যাহ উৎসব। এবছরও এ উৎসবের আয়োজন করা হবে না বলে জানিয়েছে রাজ পরিবার। এতে জেলার পাহাড়ি ও বাঙালি উৎসবপ্রিয় মানুষেরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি পার্বত্য জেলায় জমি ও ফসলের খাজনা (রাজস্ব) আদায় করার রীতি চালু ছিল। এই তিনটি সার্কেলের মধ্যে বান্দরবান বোমাং সার্কেল, রাঙ্গামাটি চাকমা সার্কেল, এবং খাগড়াছড়ি মং সার্কেল পৃথকভাবে খাজনা আদায় করত।</p> <p style="text-align:justify">১৮৬৭ সালে মারমা অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় বোমাং সার্কেল। এরপর থেকে প্রতিবছর রাজপুণ্যাহ নামে একটি উৎসবের মাধ্যমে ১০৯টি মৌজার জুম খাজনা আদায় করা হতো।</p> <p style="text-align:justify">রাজপুণ্যাহ উৎসব সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিনব্যাপী চলত। এই সময় বান্দরবান শহরের রাজারমাঠে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা এসে পণ্য প্রদর্শন করতেন। নাগরদোলা, সার্কাস, যাত্রাপালা, পুতুল নাচ ও মৃত্যুকূপসহ নানা বিনোদনের আয়োজন করতেন বোমাং সার্কেল।</p> <p style="text-align:justify">উৎসবটি জেলার পাহাড়ি-বাঙালি জনগোষ্ঠীর মিলনমেলায় পরিণত হতো। এছাড়া, ১১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের উপস্থিতিতে মুখরিত হতো বান্দরবান শহর।</p> <p style="text-align:justify">২০১৯ সাল থেকে আর্থিক সংকট ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অজুহাতে রাজপুণ্যাহ উৎসব বন্ধ রাখা হয়েছে। এবছরও অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে উৎসব আয়োজন সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বোমাং রাজ পরিবার।</p> <p style="text-align:justify">বোমাং রাজ পরিবারের সহকারী অং ঝাই খ্যায়াং জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে মেলা আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বোমাং রাজা উ চ প্রু চৌধুরী।</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয়রা জানান, রাজপুণ্যাহ বন্ধ থাকায় মারমা ও অন্যান্য পাহাড়ি সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের ঐতিহ্য হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন। শহরের বাসিন্দা মং উ প্রু মারমা বলেন, রাজপুণ্যাহ আমাদের ঐতিহ্যের প্রতীক। এটি বন্ধ থাকায় আমরা নিজেদের ঐতিহ্য হারাতে বসেছি।</p> <p style="text-align:justify">সাংবাদিক মংসানু মারমা বলেন, আধুনিকতার চাপে বোমাং সার্কেলের অনেক ঐতিহ্যবাহী রীতি ও সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। রাজবাড়ি পর্যন্ত ভেঙে বহুতল ভবন তৈরি করা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">১৮৭৫ সালে নবম বোমাং রাজা সা নাইঞো প্রথম রাজপুণ্যাহ উৎসব চালু করেন। বর্তমানে বান্দরবান বোমাং সার্কেলের প্রধান উ চ প্রু চৌধুরী ১৭তম বোমাং রাজা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।</p> <p style="text-align:justify">বান্দরবান বোমাং সার্কেল ৯৫টি মৌজা নিয়ে গঠিত। এখানকার প্রতিটি পরিবার বছরে ৬ টাকা হারে জমি ও ফসলের খাজনা প্রদান করে। এই খাজনার একটি অংশ সরকারের তহবিলে জমা হয় এবং বাকিটা বোমাং রাজা ও হেডম্যানদের মধ্যে ভাগ করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয় বাসিন্দা মো. সিপন বলেন, বছরের পর বছর রাজপুণ্যাহ উৎসব বন্ধ থাকায় জেলার মানুষ তাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ভুলে যেতে বসেছে। এই ঐতিহ্য আমাদের ধরে রাখা উচিত।</p> <p style="text-align:justify">বোমাং সার্কেলের ঐতিহ্যবাহী রাজপুণ্যাহ উৎসব পুনরায় চালুর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনগণ।</p>