<p style="text-align:justify">আওয়ামী লীগের শাসনামলে মিথ্যা মামলার আসামি হয়ে ১৬-১৭ বছর ধরে কখনো জেলে, কখনো বাইরে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে গাজীপুরের বিএনপির নেতাদের। ৫ আগস্টের পর দলীয় দ্বন্দ্বের জেরে বৈষম্য বিরোধী মামলায় নতুন করে হয়রানির শিকার হয়ে এখনো পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ১০ বিএনপি নেতা। পুলিশের নজর এড়িয়ে তারা দিনের বেলা কাশিমপুর এবং রাতের বেলা তুরাগ নদীতে নৌকায় অবস্থান করছেন।</p> <p style="text-align:justify">অনুসন্ধানে জানা গেছে, টঙ্গী ও কাশিমপুরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত তুরাগ নদীতে গত তিন মাস ধরে বসবাস করছেন এই ১০ বিএনপি নেতা। গাজীপুর মহানগর বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার আতঙ্কে নতুন করে আসামি হওয়ার ভয়ে তারা রাতে নদীতেই রাত্রিযাপন করছেন। ১০ জন নেতার মধ্যে একজন রয়েছেন, যিনি সর্বাধিক ৭টি মামলার আসামি।</p> <p style="text-align:justify">বগুড়ার অধিবাসী মো. জাহাঙ্গীর আলম বর্তমানে কাশিমপুর থানা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। তার ছেলে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আহত হলে তিনি ১ অক্টোবর একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ০১)। এজাহারে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানসহ ১০২ জনকে শনাক্ত আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি হিসেবে ২-৩ শত জনের নামও উল্লেখ করা হয়। শনাক্তকৃত আসামিদের মধ্যে ১০ জন বিএনপি নেতা রয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">আসামিদের মধ্যে আছেন- আবু সাঈদ মিয়া (তারেক জিয়া মুক্তি পরিষদ, গাজীপুর মহানগর কমিটির সভাপতি), মো. মাহবুব আলম মহি (কাশিমপুর ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপি'র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক), মো. রকিবুল ইসলাম রকি (গাজীপুর মহানগর বিএনপির সদস্য), মো. আসাদ মণ্ডল (সাবেক ছাত্রনেতা), মো. ইউসুফ আলী খান (৪ নং ওয়ার্ড বিএনপি'র প্রচার সম্পাদক), হানিফ মোল্লা (৩ নং ওয়ার্ড বিএনপি'র সাবেক সহ-সভাপতি), মো. সোহেল ইসলাম (যুবদল নেতা), আয়নাল মিয়া (সাবেক ছাত্রনেতা), পারভেজ আহমেদ পবন (সাবেক ছাত্রনেতা) এবং পারভেজের কলেজপড়ুয়া ছেলে।</p> <p style="text-align:justify">মামলার বাদী মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনি মামলার আসামিদের কাউকেই চেনেন না। বিএনপি নেতা শওকত সরকারের পরামর্শে তার সহযোগী সাইফুল ইসলামের কথায় একটি কাগজে স্বাক্ষর করেন। তাকে বলা হয়েছিল, জিডি করলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধা পাওয়া যাবে। পরে তিনি জানতে পারেন এটি একটি মামলা। এখন তিনি মামলার ফয়সালা চান।</p> <p style="text-align:justify">আসামি আবু সাঈদ মিয়া জানান, তিনি শওকত সরকারের পিএস পরিচয়ে সাইফুল ইসলাম কর্তৃক ৭টি মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছেন। প্রতিটি মামলা দায়েরের পর সাইফুল তাকে শওকত সরকারের পক্ষে যাওয়ার জন্য চাপ দেন।</p> <p style="text-align:justify">মাহবুব আলম মহি বলেন, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল করিম রনিকে কাশিমপুরে সভা করতে দেওয়ার কারণে সভাপতি শওকত সরকার তাদের হুমকি দেন। তার নির্দেশ অমান্য করায় ১০ জন নেতার বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি কোনো ধরনের মামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না এবং শওকত সরকারের পিএস নন।</p> <p style="text-align:justify">মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার বলেন, তিনি এ ধরনের কোনো ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন। তবে সাইফুল ইসলাম মাঝেমধ্যে তার কাছে আসেন।</p> <p style="text-align:justify">গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন এবং এ নিয়ে খোঁজ নেবেন।</p>