ভারতীয়দের যুক্তরাষ্ট্রে ‘পাচার’ করতে দেশজুড়ে ৩৫০০ এজেন্ট

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ভারতীয়দের যুক্তরাষ্ট্রে ‘পাচার’ করতে দেশজুড়ে ৩৫০০ এজেন্ট
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা। ফাইল ছবি : এএফপি

ভিসা ছাড়া বেআইনিভাবে ভারতীয়দের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর কাজে জড়িত একটি চক্র নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এই চক্রের সঙ্গে শুধু সে দেশেই সাড়ে তিন হাজার এজেন্ট যুক্ত রয়েছে, যাদের বেশির ভাগই গুজরাটের। ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, একেজনকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করাতে ৫৫-৬০ লাখ ভারতীয় রুপি করে নেওয়া হতো বলে সন্দেহ ইডির।

কানাডা সীমান্ত হয়ে ভারতীয়দের অবৈধভাবে দেশটিতে প্রবেশ করানোর চক্রের কথা অতীতেও বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে। ইডির দাবি, এই চক্রের সঙ্গে কানাডার কিছু কলেজ ও ভারতের বেশ কয়েকটি সংস্থা জড়িত।

গণমাধ্যমটির তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে চার ভারতীয়র মৃত্যু হয়। তারা একই পরিবারের বাসিন্দা।

তাদের বাড়ি ছিল গুজরাটের একটি গ্রামে। অবৈধভাবে সীমান্ত পার করতে গিয়ে কনকনে ঠাণ্ডায় মৃত্যু হয় তাদের। ওই ঘটনায় গুজরাটের আহমেদাবাদে মামলা হয়। মূল অভিযুক্ত হিসেবে উঠে আসে ভবেশ অশোকভাই পটেলের নাম।
আহমেদাবাদ পুলিশের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মাঠে নামে ইডিও। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত আর্থিক দুর্নীতির তদন্তে একটি পৃথক মামলা করে ইডি।

ইডির তদন্তে উঠে আসে বিভিন্ন বেআইনি পথে কানাডা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হতো ভারতীয়দের। যারা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে চাইতেন, তাদের আগে কানাডার কিছু কলেজে ভর্তি করানোর ‘ব্যবস্থা’ করা হতো। তাদের জন্য করা হতো কানাডার স্টুডেন্ট ভিসাও।

কিন্তু কানাডায় পৌঁছনোর পর কলেজে ভর্তি করানোর বদলে কানাডা সীমান্ত দিয়ে বেআইনিভাবে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হতো যুক্তরাষ্ট্রে। এই চক্রে একেকজন ভারতীয়র কাছ থেকে ৫৫-৬০ লাখ রুপি করে নেওয়া হতো বলে সন্দেহ তদন্তকারী কর্মকর্তাদের।

সম্প্রতি এই মামলার তদন্তে মুম্বাই, নাগপুর, গান্ধীনগর ও বড়োদরার আটটি জায়গায় অভিযান চালায় ইডির কর্মকর্তারা। তাতে মুম্বাইয়ের দুটি সংস্থা ও নাগপুরের একটি সংস্থার এই অবৈধ চক্রের সঙ্গে যোগ পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের।

ইডির দাবি, এই চক্রের সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় সাড়ে তিন হাজার এজেন্ট জড়িয়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে এক হাজার ৭০০ জন এজেন্ট শুধু গুজরাটেই রয়েছে। এদের মধ্যে সক্রিয় রয়েছে অন্তত ৮০০ এজেন্ট।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

লন্ডনের মায়া ছেড়ে কোটিপতিরা পাড়ি জমাচ্ছেন এশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
লন্ডনের মায়া ছেড়ে কোটিপতিরা পাড়ি জমাচ্ছেন এশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে
সংগৃহীত ছবি

একসময় ধনীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল টেমস নদীর তীরে গড়ে ওঠা লন্ডন শহর। এই শহরের মায়ায় জড়িয়ে এখানে শিকড় গেঁথেছিল বহু ধনী অভিজাত পরিবার। স্থাপত্যের দিক থেকে এই শহরের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। বহু সংস্কৃতি ও ধারণার সঙ্গমস্থল।

৯০ লাখের বেশি মানুষের বাস এখানে।

প্রায় দুই হাজার বছরের পুরনো এই শহরের কদর বর্তমানে কমেছে। ইংল্যান্ডের রাজধানীর মুকুট থেকে খসে পড়েছে একটি পালক। বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ ধনী শহরের তকমা হারিয়েছে লন্ডন।

একসময় লন্ডন ছিল বিশ্বের ধনীদের আবাসস্থল। সেই লন্ডন ছেড়ে যাচ্ছেন তারা। এখন এই সংখ্যাটা কয়েক শতে সীমাবদ্ধ নেই।

millionaires are leaving London

বর্তমানে সবচেয়ে বেশি কোটিপতিকে হারানো শহর হিসেবে তালিকার শীর্ষে রয়েছে ব্রিটিশ রাজধানী।

গত এক দশকে লন্ডন তার ১২ শতাংশ ধনী বাসিন্দাকে হারিয়েছে।

লন্ডনে অবস্থিত ব্রিটিশ বিনিয়োগ অভিবাসন পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ‘হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স’-এর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির একটি নতুন প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ১১ হাজারেরও বেশি বিত্তবান ব্রিটিশ রাজধানী ছেড়েছেন। ধনীদের লন্ডন ছাড়ার প্রবণতা কয়েক বছর ধরেই চলছে। তবে তা এখন উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে।

এই ধনপতিদের বেশির ভাগই এশিয়া এবং আমেরিকার বিভিন্ন শহরকে বসবাসের জন্য বেছে নিয়েছেন। ধনীদের দেশত্যাগের প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি বিষয়। তার মধ্যে রয়েছে ক্রমবর্ধমান কর, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ব্রেক্সিট অর্থাৎ ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত।

যদিও এই অভিবাসন প্রবণতা লন্ডনের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নতুন নয়। তবে এই প্রবণতা গত বছর থেকেই উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে।

millionaires are leaving London

এক বছরের মধ্যে লন্ডনে মোট বিত্তবানের সংখ্যা ২ লাখ ২৭ হাজার থেকে কমে ২ লাখ ১৫ হাজার ৭০০-এ দাঁড়িয়েছে। কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো শহরটি বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ ধনী শহরের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। 

‘হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স’ ও ‘নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়েলথ’-এর যৌথভাবে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, লন্ডনের স্থান দখল করছে আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেস।

সেই রিপোর্ট বলছে, গত ১০ বছরে বিত্তবানদের মধ্যে পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো এবং সিলিকন ভ্যালিসহ সমুদ্রের উপকূলের এলাকাগুলো।

millionaires are leaving London

কোটিপতির সংখ্যার নিরিখে শীর্ষ ১০টি শহরের মধ্যে সাতটিই আমেরিকা ও এশিয়ার। তালিকার প্রথম পাঁচে রয়েছে নিউইয়র্ক সিটি, আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোর উপকূলবর্তী অঞ্চল, টোকিয়ো, সিঙ্গাপুর, লস অ্যাঞ্জেলেস।

তালিকায় লন্ডনের ঠাঁই হয়েছে ষষ্ঠ স্থানে। এ ছাড়া সেই তালিকায় রয়েছে প্যারিস, হংকং, সিডনি ও শিকাগো। এই শহরগুলোর মধ্যে সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়ায় কোটিপতি বাসিন্দার সংখ্যা ৯৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে এশিয়ার সিঙ্গাপুরে কোটিপতির সংখ্যা ৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

millionaires are leaving London

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিত্তশালী লোকের বাস আমেরিকাতেই। অধিকাংশ প্রযুক্তি কম্পানির আঁতুড়ঘর আমেরিকা। অ্যামাজন, ফেসবুক, মাইক্রোসফট, গুগলসহ বহু সংস্থার মালিক রয়েছেন মার্কিন ধনকুবেরের তালিকায়। পৃথিবীর ২১৫৮ জন ধনকুবেরের মধ্যে ৫৮৫ জনই আমেরিকার বাসিন্দা।‌

মন্তব্য

পোল্যান্ড ও বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোকে রুশ গোয়েন্দাপ্রধানের হুমকি

আলজাজিরা
আলজাজিরা
শেয়ার
পোল্যান্ড ও বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোকে রুশ গোয়েন্দাপ্রধানের হুমকি
রাশিয়ার বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান সের্গেই নারিশকিন। ফাইল ছবি : এএফপি

রাশিয়ার বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হুমকি দিয়েছেন, সম্মিলিত প্রতিরক্ষা গোষ্ঠী উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংগঠন (ন্যাটো) ‘আগ্রাসন’ চালালে পোল্যান্ড ও বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো প্রথমে হামলার শিকার হবে।

সের্গেই নারিশকিন মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা রিয়া নোভস্তিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ন্যাটো যদি রাশিয়া বা বেলারুশের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তবে মস্কো পুরো সামরিক জোটটির ‘ক্ষতি’ করবে। তবে প্রথমে ভুক্তভোগী হবে পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া ও এস্তোনিয়া।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের লক্ষ্য পূরণ হলে মস্কো যে ইউরোপের সাবেক পূর্ব ব্লকের সদস্যদের দিকে নজর ফেরাবে—রুশ কর্মকর্তার এই মন্তব্য এমন আশঙ্কাকে আরো জোরালো করবে।

নারিশকিন ন্যাটোর সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধিকে ইউরোপীয় মহাদেশে ‘বর্তমান বড়, অত্যন্ত বিপজ্জনক সংকটের’ জন্য দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘পোল্যান্ড ও বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো বিশেষভাবে আগ্রাসী, অন্তত কথার ক্ষেত্রে, তারা ক্রমাগত যুদ্ধের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘তাদের এটা বোঝা উচিত, যদিও তারা এখনো তা না বোঝে যে উত্তর আটলান্টিক জোট যদি ইউনিয়ন স্টেটের (রাশিয়া ও বেলারুশের জোট) বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালায়, তবে অবশ্যই পুরো ন্যাটো জোট ক্ষতির মুখে পড়বে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হবে সেই রাজনৈতিক মহলগুলোর সদস্যরা, যারা পোল্যান্ড ও বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোতে এ ধরনের ভাবনার ধারক।

এ ছাড়া পোল্যান্ড সম্প্রতি পরমাণু অস্ত্র সংগ্রহের আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে নারিশকিন বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।

গত মাসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ প্রস্তাব দিয়েছিলেন, ফ্রান্স ইউরোপীয় মিত্রদের জন্য তার পারমাণবিক ছাতা সম্প্রসারিত করতে পারে। এর প্রতিক্রিয়ায় পোলিশ প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা বলেন, এই পদক্ষেপ ‘পোল্যান্ডের নিরাপত্তার জন্য লাভজনক’ হবে।

রুশ গোয়েন্দাপ্রধান আরো দাবি করেন, পোল্যান্ড বেলারুশ ও কালিনিনগ্রাদ অঞ্চলের সীমান্ত বরাবর প্রায় ২০ লাখ ট্যাংকবিধ্বংসী মাইন বসানোর পরিকল্পনা করছে।

এদিকে গত মাসে পোল্যান্ড ও বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো ঘোষণা দেয়, রাশিয়ার আক্রমণাত্মক অবস্থানের আশঙ্কায় তারা অটোয়া কনভেনশন থেকে সরে আসছে। আন্তর্জাতিক এই চুক্তি স্থল মাইন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

এ ছাড়া নারিশকিন শান্তি আলোচনা নিয়ে রাশিয়ার কৌশলগত লক্ষ্য পুনরায় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ক্রেমলিন চায় না ইউক্রেনের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকুক এবং তারা ‘নিরস্ত্রীকরণ ও নাৎসিবাদমুক্তকরণ’ চায়।

অন্যদিকে সমালোচকদের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে কোনো যুদ্ধবিরতির চুক্তি করাতে চায়, তবে মস্কো এতে ভূখণ্ড ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত ছাড় পেতে পারে।

তাদের মতে, এ ধরনের ছাড় রাশিয়ার সম্প্রসারণবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে আরো উৎসাহিত করবে এবং তাদের নতুন করে সজ্জিত হয়ে ইউরোপের আরো গভীরে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ করে দেবে।

মন্তব্য

সুদান যুদ্ধের ২ বছর, এখনো অন্ধকারে শান্তির পথ

এএফপি
এএফপি
শেয়ার
সুদান যুদ্ধের ২ বছর, এখনো অন্ধকারে শান্তির পথ
১৩ এপ্রিল যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানে পালিয়ে যাওয়া মানুষ একটি খোলা মাঠে রান্নার জন্য জড়ো হয়েছে। ছবি : এএফপি

দুই বছর পেরিয়ে গেল সুদানে রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হওয়ার। কিন্তু এখনো কোনো শান্তিচুক্তি বা বিরতির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এই সময়ে প্রাণ গেছে হাজার হাজার মানুষের, বাস্তুচ্যুত হয়েছে এক কোটি ৩০ লাখের বেশি, আর বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটের জন্ম দিয়েছে এই যুদ্ধ।

২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দেশটির সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হয় এই সংঘর্ষ।

সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছেন জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান, অন্যদিকে আরএসএফের নেতৃত্বে তার এক সময়ের ডেপুটি মোহাম্মদ হামদান দাগলো।

সংঘাতের শুরুতেই রাজধানী খার্তুম রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে মৃতদেহ, লাখো মানুষ শহর ছেড়ে পালায়, আর যারা রয়ে যায় তাদের নামতে হয় প্রতিদিন টিকে থাকার লড়াইয়ে।

৫২ বছর বয়সী আব্দেল রাফি হুসেইন, যিনি আরএসএফের নিয়ন্ত্রণাধীন খার্তুমেই ছিলেন, বলেন, ‘আমি শরীরের অর্ধেক ওজন হারিয়ে ফেলেছি।

’ 

সেনাবাহিনী সম্প্রতি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিলেও রাফি জানান, ‘আমরা এখন নিরাপদে আছি, কিন্তু এখনো পানি ও বিদ্যুতের চরম সংকট চলছে, হাসপাতালগুলোর অধিকাংশই অচল।’

খার্তুম পুনর্দখল সেনাবাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হলেও যুদ্ধ থেমে নেই। আরএসএফ এখন পশ্চিমাঞ্চলের দুর্ভিক্ষপীড়িত দারফুর এলাকায় আরো গভীরে প্রবেশ করছে এবং আল-ফাশের দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটি দারফুর অঞ্চলে এখনো সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা শেষ প্রাদেশিক রাজধানী।

‘বিপর্যয় ডেকে আনছে অব্যাহত যুদ্ধ’
লন্ডনে মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের একটি বৈঠকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, ‘দুঃখজনক বাস্তবতা থেকে উত্তরণের একটি পথ নির্ধারণের লক্ষ্যেই আমাদের এই সম্মেলন।’ তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, যুদ্ধে কোনো পক্ষই এই বৈঠকে উপস্থিত হয়নি।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, ‘সুদানি জনগণ একই সঙ্গে যুদ্ধ, নির্যাতন, অনাহার ও অসম্মানের শিকার। বিশ্ব নীরব থাকলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘এই যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

সাবেক মার্কিন বিশেষ দূত টম পেরিয়েলোর দেওয়া তথ্য মতে, যুদ্ধের ফলে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে প্রায় দেড় লাখ মানুষ। তবে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানা সম্ভব হয়নি। যুদ্ধরত উভয় পক্ষকেই বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা, বাড়িঘরে গোলাবর্ষণ ও ত্রাণে বাধা দেওয়ার অভিযোগের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

ক্ষুধা, অনাহার ও শিশু হত্যা
জাতিসংঘের হিসেবে, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে প্রায় দুই হাজার ৭৭৬ শিশুর মৃত্যু বা পঙ্গুত্ব ঘটেছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় ২০ গুণ। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল জানান, এই যুদ্ধ লাখ লাখ শিশুর জীবন একেবারে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে।

দারফুরের জমজম শরণার্থীশিবিরে ১০ লাখ মানুষের বসবাস। সেখানে গত সপ্তাহে আরএসএফের হামলায় কমপক্ষে ৪০০ জন নিহত হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, ২০২৩ সাল থেকেই অঞ্চলটি দুর্ভিক্ষে রয়েছে।

আরএসএফ এখন দারফুরে আধিপত্য নিশ্চিত করতে এল-ফাশের দখলের জন্য আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। এই অঞ্চল দখল হলে দারফুরে তাদের নিয়ন্ত্রণ আরো পাকাপোক্ত হবে।

বাহ্যিক সহায়তা ও অস্ত্র প্রবাহ
জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস বলেছেন, ‘এই সংঘাতে বাইরের সহায়তা ও অস্ত্রের প্রবাহ বন্ধ করতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘যাদের এই পক্ষগুলোর ওপর প্রভাব রয়েছে, তাদের উচিত এই প্রভাব সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ব্যবহার করা, এই বিপর্যয় টিকিয়ে রাখার জন্য নয়।’

সুদানের সেনা সমর্থিত সরকার ইতিমধ্যে অভিযোগ তুলেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত আরএসএফকে অস্ত্র সরবরাহ করছে। যদিও উভয় পক্ষই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

মন্তব্য

ইউরোপীয় শহরগুলোতে ঝুঁকি বাড়ছে তীব্র গরম ও বন্যার

ডয়চে ভেলে
ডয়চে ভেলে
শেয়ার
ইউরোপীয় শহরগুলোতে ঝুঁকি বাড়ছে তীব্র গরম ও বন্যার
স্পেনের সেভিলে তীব্র তাপপ্রবাহের সময় মানুষ ঝর্ণার পানিতে শীতল হচ্ছে। ফাইল ছবি : এএফপি

২০২৪ সালে ইউরোপে রেকর্ড মাত্রায় গরম পড়েছিল, যা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক প্রতিবেদনে আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ইউরোপে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে তাপমাত্রা বাড়ছে।

ইইউর কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, এ ধরনের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মহাদেশটির লাখ লাখ মানুষ ঝুঁকির মুখে পড়ছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ইউরোপে চরম আবহাওয়ার ঘটনা বাড়ছে।

যেমন গত অক্টোবর ও নভেম্বরে স্পেনের ভ্যালেনসিয়ায় বন্যায় ২২০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। তার ঠিক এক মাস আগে বোরিস ঝড়ে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের আটটি দেশের বিভিন্ন শহরে বন্যা হয়। এতে চার লাখেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, একদিকে পূর্ব ইউরোপে তীব্র তাপদাহ এবং দক্ষিণ ইউরোপে শীতকালে দীর্ঘস্থায়ী খরা ছিল।

এ ছাড়া বলা হচ্ছে, শহরগুলো বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে শুষ্ক ও শক্ত মাটি বন্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। অথচ এগুলো দ্রুত বৃষ্টির পানি শোষণ করতে পারে না। প্যারিস, মিলান ও গ্লাসগোর মতো শহরগুলো সবুজ এলাকা ও পরিবেশ ঠাণ্ডা রাখার সুবিধা বাড়ানোর মাধ্যমে খাপ খাইয়ে নিতে নানা উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার প্রধান সেলেস্ট সাওলো বলেন, ‘অভিযোজন অপরিহার্য। অতি অল্প তাপমাত্রা বৃদ্ধিও আমাদের জীবন, অর্থনীতি ও পৃথিবীর জন্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।’

এত সব ঝুঁকির মধ্যেও একটি ইতিবাচক দিক হলো, ২০২৪ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ইউরোপের ৪৫ শতাংশ শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সৌর, বায়ু ও বায়োমাসের মতো শক্তি উৎসগুলোর ওপর নির্ভরতা বাড়ায় ভবিষ্যতে জলবায়ু ঝুঁকি কমবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ইউরোপের অর্ধেকেরও বেশি শহর চরম আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ