<p>কোলে পিঠে করে মানুষ করা একজন নারীকে হত্যার পর পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার মানুষ ‘থ’ খেয়ে গেছেন। এটাকে একটি পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তারা। এর পেছনে মাদককেই দায়ী করা হচ্ছে।</p> <p>এলাকাবাসী জানান, ঘাতক ফারহান ভূঁইয়া রনি প্রায় পাঁচ বছর ধরে নেশায় জগতে ডুবে যান। ভালো কাজ না পেয়ে প্রবাস থেকে ফেরার পর তিনি মাদকে মত্ত হন। জড়িয়ে পড়েন চুরি-ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধে। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়।</p> <p>ফারহানের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন খোদ তার বাবা আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহনেওয়াজ ভূঁইয়া। সপ্তাহ দুয়েক আগে দেওয়া ওই অভিযোগে তিনি নিজেই ছেলের হাতে খুন হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। ছেলের যন্ত্রণায় অতিষ্ট হয়ে তিনি কয়েকদিন আগে বাড়িও ছেড়েছেন।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="বাজারে দাম বেশি : সরকারি গুদামে ধান বিক্রির আগ্রহ নেই কৃষকদের" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/29/1735446368-7151184986aed9f8f418938930271d37.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>বাজারে দাম বেশি : সরকারি গুদামে ধান বিক্রির আগ্রহ নেই কৃষকদের</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/12/29/1462580" target="_blank"> </a></div> </div> <p>গত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের গাজীর বাজারে শারমীন বেগম ওরফে হরমুজা বেগম (৪৭) নামে এক নারীর পোড়া মরদেহ (কয়লা) উদ্ধার করে পুলিশ। ওই নারীর দেহ থেক বিচ্ছিন্ন মাথা উদ্ধার করা হয় পাশের একটি পুকুরের কাছের জমি থেকে। মাথাটিও গর্তে পুঁতে রাখা হয়েছিল। ঘাতক ফারহানের দেওয়া স্বীকারোক্তি মতে উদ্ধার করা হয় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি। ফারহানদের বাড়িতেই কাজ করতেন শারমীন বেগম। থাকতেন ফারহানের ফুফুর জায়গাতে।</p> <p>গত বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তি ফারহান জানান, শাসন করায় ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি এ হত্যাকাণ্ড ঘটান। এর আগে তিনি পুলিশকে জানিয়েছিলেন- এক মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য শারমীন বেগম তাকে তাবিজ করায় এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।</p> <p>স্থানীয় সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) শীতের সকালে চুরি যাওয়া হাঁস খুঁজতে বের হন দুই ভাই। হাঁস খুঁজতে গিয়ে তারা একটি পরিত্যক্ত টিনের ঘর থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন। এর কাছাকাছি ঘুরঘুর করছিলেন ফারহান। তাকে কি পোড়াচ্ছেন জিজ্ঞাসা করার পর তিনি জানান- খড়কুটো পোড়াচ্ছেন। তবে চুরি করে আনা হাঁসের পালকসহ অংশ বিশেষ পোড়াচ্ছিলেন বলে সন্দেহ হয় তাদের। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে হত্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন ফারহান। একই সঙ্গে মারতে তেড়ে আসেন। দলবদ্ধ হয়ে তাকে আটক করেন স্থানীয়রা। তুলে দেন পুলিশের হাতে। এরই মধ্যে দেখা যায়- খড়কুটো নয় পুড়ছিল মানবদেহ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে লোমহর্ষক হত্যার কাহিনী। উদ্ধার করা হয় নারীর দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা মাথা।</p> <p>এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছর ছয়েক আগে লিবিয়ায় যান ফারহানের বড় ভাই জনি। লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে জলদস্যুদের কবলে পড়েন তিনি। প্রায় ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে জনিকে ছাড়িয়ে আনা হয়। ২০১৯ সালে সৌদি আরবে যান ফারহান। সেখানে ভালো কাজ না পেয়ে ফিরে আসেন। আবার প্রবাসে যাওয়ার জন্য বাড়িতে তাগাদা দিতে থাকেন। কিন্তু যাওয়ার ব্যবস্থা না হওয়ায় তিনি বেকার সময় কাটাতে কাটাতে এক পর্যায়ে মাদকে জড়িয়ে পড়েন। সীমান্তবর্তী এলাকায় বাড়ি হওয়ায় তার কাছে মাদক ছিল সহজলভ্য। পরিবার বিষয়টি বুঝতে পারায় তাকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকেই পরিবারের ওপর শুরু হয় অত্যাচার। চুরি, ছিনতাইয়ের সঙ্গেও তিনি জড়িয়ে পড়েন। বছর দুয়েক যাবৎ ফারহান বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।</p> <p>গাজীর বাজারের ব্যবসায়ী মো. সাদেক জানান, মাদক সেবন করাটা ফারহানের জন্য ছিল ওপেন সিক্রেট। প্রবাস থেকে আসার পরই মূলত তিনি মাদকের নেশায় ডুবে যান। বাড়িতেও অত্যাচার করতেন তিনি। তার বাবা প্রায়ই বিষয়টি বলাবলি করে দুঃখ প্রকাশ করতেন। ফারহানের এমন ঘটনায় এলাকার মানুষ স্তম্ভিত হয়ে গেছে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="আগুনে পুড়ে প্রাণ গেল প্যারালিসিস রোগীর" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/29/1735445198-e06d061a77a7bde916b8a91163029d41.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>আগুনে পুড়ে প্রাণ গেল প্যারালিসিস রোগীর</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/12/29/1462577" target="_blank"> </a></div> </div> <p>উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব মো. মহসিন জানান, মাদকের নেশা ফারহানকে শেষ করে দিয়েছে। তার পরিবারও এ নিয়ে ভুক্তভোগী। এ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিচারও চেয়েছে তার পরিবার। শেষ পর্যন্ত ফারহান খুনের মতো ঘটনা ঘটালেন।</p> <p>এদিকে, শারমীনকে এভাবে পৈশাচিকভাবে হত্যার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না তার পরিবার। ঘাতক ফারহানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন তারা। এ ঘটনায় শারমীন বেগমের বড় মেয়ে রুমা আক্তার বাদী হয়ে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তবে মামলায় হত্যাকাণ্ডের নির্দিষ্ট কোনো কারণের কথা উল্লেখ করা হয়নি বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।</p> <p>সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, শারমীনদের পরিবার বেশ দরিদ্র। স্বামী নুরুল ইসলাম শ্রমিকের কাজ কিংবা হাত পেতে সংসার চালান। তিন মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। থাকতেন ফারহানের ফুফুর জায়গাতে। মাঝে মাঝে ফারহানদের বাড়ির কাজও করে দিতেন। সেই সুবাদে ফারহানকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন শারমীন বেগম। পারিবারিকভাবে ভালো সম্পর্ক ছিল তাদের। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাবার অসুস্থতার কথা বলে শারমীনকে ডেকে নিয়ে যান ফারহান। এরপর নৃশংসভাবে হত্যার পর মরদেহ পুড়ে ফেলেন।</p> <p>শারমীনের বড় মেয়ে রুমার দাবি, চুরি করা হাঁস রান্নার জন্য তার মাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তার মা হয়ত এটা করে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ কারণে তিনি হত্যা করেন। তারা এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।</p> <p>শারমীনের স্বামী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ফারহানদের সঙ্গে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক ভালো। তিনি কেন এমন করলেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে যা বললেন মিজানুর রহমান আজহারী" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/28/1735362583-7151184986aed9f8f418938930271d37.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে যা বললেন মিজানুর রহমান আজহারী</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/12/28/1462230" target="_blank"> </a></div> </div> <p>এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, গত মঙ্গলবার ফজরের নামাজের পর তিনি ঘর থেকে বের হন। তখনও তার স্ত্রী ঘরে ছিল। কখন বের হয়ে যান সেটা তিনি জানেন না।</p> <p>উবায়দুল নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, তার চাচাতো ভাইয়ের বাড়ি থেকে রাজহাঁস চুরি হয়। গত মঙ্গলবার সকাল সাতটার দিকে হাঁস খুঁজতে এসে শাহনেওয়াজ ভুইয়ার জায়গায় পরিত্যক্ত টিনের ভাঙা ঘর থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন। পাশেই ছিলেন ফারহান রনি। তাকে ধোঁয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান- তিনি পাতা পুড়ছেন। এ কথায় বিশ্বাস না করলে হাঁসের মালিক দুই ভাই এনামুল ও রোমান ঘরের ভেতরে কি আছে দেখতে চান। এ সময় ফারহান ক্ষুব্ধ হয়ে মারার হুমকি দেন। এতে সন্দেহ ঘনিভূত হলে তারাসহ গ্রামের লোকজন গিয়ে গর্তে মরদেহ পুড়তে দেখেন। পরে ফারহানকে আটকে পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে মরদেহ বের করে।</p> <p>আখাউড়া থানার ওসি মো. ছমিউদ্দিন বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ফারহানের বিরুদ্ধে মাদক ও চুরির মামলা রয়েছে। তার বাবাও নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে কিছুদিন আগে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। অবস্থা এমন যে যদি তিনি বাড়ি থাকতেন হয়ত তিনিই খুন হতেন। ফারহান মাদকাসক্ত ছিলেন।’</p>