২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রতিনিয়তই দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের বদলে সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা পত্রে ওষুধ লিখে দিচ্ছেন এ্যানেসথিয়া অ্যানেস্থেশিয়া অ্যাসিস্ট্যান্ট ও ডিপ্লোমাধারী চিকিৎসকরা (ডিএমএফ)। যা আইনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন বলেছেন খোদ চিকিৎসকরাই।
তারা বলছেন, এ্যানেসথিয়া অ্যাসিস্ট্যান্ট কিংবা ডিএমএফরা চিকিৎসকদের সহযোগী। তারা কোনোভাবেই রোগীর চিকিৎসাপত্র দিতে পারেন না।
এটা বেআইনি।
সরেজমিনে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের পুরাতন বিল্ডিংয়ে গিয়ে দেখা যায়, রোগীর দীর্ঘ লাইন, তবে নেই তেমন কোনো চিকিৎসক। ওই ভবনের নিচ তালার ৬ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, একজন ব্যক্তি রোগীর ব্যবস্থাপনা পত্র লিখছেন। তবে তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক নন।
তার নাম আশরাফুজ্জামান রনি। তিনি এই হাসপাতালে একজন এ্যানেসথিয়া অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত আছেন।
জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখানে মেডিক্যাল ডা. মোহাম্মদ নাজমুল ইমলাম স্যারের বসেন। তিনি আসেননি।
তত্ত্বাবধায়ক ও আরএমও স্যারের নির্দেশে আমি এখানে রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছি।’
আপনি আইনগত চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন কী না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘স্যাররা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন আমি বসেছি।’
তার কাছ থেকে সদ্য ওষুধ লিখে এনেছেন রহমত আলী (৪৫)। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, কালীগঞ্জ থেকে আসিছি। কোমড় ব্যাথা নিয়া ডাক্তার ওষুধ লিখি দেইল।
খাই দেখি কী হয়।
একই ভবনের ২৯ নং কক্ষে কে বসবেন তা নির্ধারিত নেই। তবে এখানে বসেন শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আলামিন মাসুদ। তিনিও উপস্থিত নেই। তবে সেখানে রোগী দেখনছেন মশিউর রহমান নামের একজন ডিপ্লোমাধারী চিকিৎসক। জানতে চাইলে তিনি চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে কালের কণ্ঠকে কোনো সদোত্তর দিতে পারেনি।
৯ বছর বয়সি সোহগের মা চিকিৎসাপত্র নিয়েছেন মশিউর রহমানের কাছে। সোহাগের মা আম্বিয়া খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেটার কাশ, যাত্রাপুর থাকি আসছি ডাক্তারক দেখাইলং, ওষুধ তো লেখি দেইল এলা দেখি কী হয়।
তবে এভাবে হাসপাতালে রোগী দেখাকে পুরোপুরি নিয়ম-বহির্ভূত মনে করছেন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) কুড়িগ্রাম জেলা শাখার আহ্বায়ক মাহফুজার রহমান মারুফ। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এভাবে সরকারি হাসপাতালে এ্যানেসথিয়া অ্যাসিস্ট্যান্ট, ডিএমএফ দিয়ে বহি:বিভাগে রোগী দেখা আইনবহির্ভূত কাজ। তারা এমবিবিএস চিকিৎসকের মত দক্ষ না, এতে করে রোগীর ক্ষতি হতে পারে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রাজ্য জ্যোতি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের সু-ব্যবস্থপনার জন্য তত্বাবধায়কে বলে আসছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তিনি দুই মাস সময় নিয়েছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। যার কারণে আমরা তাকে সম্প্রতি তিরস্কারের মালা দিয়েছি। তিনি আবার ও ১ মাস সময় নিয়েছে। যদি তিনি হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়ন না করেন, তাহলে এর থেকে আরো বড় তিরস্কার তাকে করা হবে।’
সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. শহিদুল্লাহকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাহিনুর রহমান শিপন বলেন, ‘এ্যানেসথিয়া অ্যাসিস্ট্যান্ট, ডিএমএফ কেন বহি:বিভাগে রোগীকে সেবা দিবে তারা তো চিকিৎসকের সহযোগী। আর আমরা কোনো নির্দেশনা দেই নি যে তারা রোগীদের সেবা দিবে। বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানি না। তবে বিষয়টি নিয়ে আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব।’