মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় দীর্ঘদিন থেকে প্রভাবশালী মহলের কয়েকটি সিন্ডিকেট চক্র সরকারি তিনটি জলমহালে মাছ লুট করে খেয়েছিল। এতে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছিল সরকার। গত ৫ আগস্টের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিন্দারাণির দিঘি, হ্যালিপ্যাড পুকুর ও কাটুয়া বিল প্রভাবশালীদের কাছ থেকে দখলমুক্ত করেন। যার ফলে অনেক রাজস্ব পাবে সরকার।
বিন্দারাণির দিঘি :
উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নে ৭ একরের পুকুরটি গত ২০১৪ সাল থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি পক্ষ বিভিন্ন মামলা মোকাদ্দমার নামে সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ভোগ করে আসছিল। এমনকি বিগত সময়ে বিন্দারাণির দিঘি নিয়ে দুই পক্ষের মামলা থাকলেও রাতের আধারে মিলেমিশে দুই পক্ষই মাছ লুট করেছিল। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা এই দিঘিতে রাতের আধারে মাছ চুরি করতো। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত ছিল।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন দিঘিটি সরকারের দখলে এনে পুনরায় ইজারা দেওয়ার কাজ শুরু করেন। দীর্ঘদিনের মামলার বিষয়টি নিষ্পত্তি করে ডিসেম্বর মাসে উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে ২ লাখ ৫ শত টাকা মূল্যে বছরের বাকি ৩ মাসের জন্য খাস আদায়ের ইজারা দেওয়া হয় এবং এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ১ বৈশাখ ১৪৩২ বাংলা থেকে পুনরায় ইজারা দেওয়ার কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। ফলে এই পুকুরটি দীর্ঘ ১১ বছর পর আবার সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসলো।
হ্যালিপ্যাড পুকুর :
উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের ঢুলিপাড়া এলাকায় অবস্থিত হ্যালিপ্যাড পুকুরটি ২ একর আয়তনের।
ফানাই নদীর একটি মুখ এই পুকুরের সীমানা ঘিরে বয়ে যাওয়ায় সারাবছর বিপুল পরিমাণ মাছের আনাগোনা হয়। তবে স্থানীয় রাজনৈতিক একটা মহলের যোগসাজশে এই পুকুরটিকে কখনোই সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। এই পুকুরটি মাছ আহরণের বিপুল সম্ভাবনাময় হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন পুকুরটিকে সায়রাত রেজিস্ট্রারভুক্ত করার জন্যে পদক্ষেপ নেন। গত ৫ মার্চ কাদিপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. আব্দুস শহীদ ওই হ্যালিপ্যাডে সরকারি একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে রাখেন। প্রথমে অবৈধ দখলের কবল হতে উদ্ধার করে সরকারি ব্যবস্থাপনায় মাছ ধরে নিলাম-বিক্রির মাধ্যমে সরকারের দখল ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে সরকারের সায়রাত রেজিস্ট্রারভুক্ত করা হয়েছে এবং সরকারি ব্যবস্থাপনায় ইজারার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
কাটুয়া বিল :
উপজেলার ভূকশিমইল ইউনিয়নের শশারকান্দি মৌজায় অবস্থিত কাটুয়া বিলের আয়তন ২৬ একর। বিলটি হাকালুকি হাওরের চকিয়া বিলের পার্শ্ববর্তী একটি বিল। সরকারের অগোচরে এই বিলটি স্থানীয় প্রভাবশালী মৎস্যজীবী মহল প্রতিবছর মাছ ধরার হরিলুটে ব্যস্ত থাকেন। চকিয়া বিলের পার্শ্ববর্তী হওয়ায় প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করা হতো কাটুয়া বিল থেকে। কিন্তু নিয়মিত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত ছিল সরকার। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিনের নজরে আসলে তিনি বিষয়টি জেলা প্রশাসক কার্যালয়কে অবগত করেন। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেনের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শাহিনা আক্তার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন ও ভূকশিমইল ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সরেজমিনে পরিদর্শন, রেকর্ডপত্র যাচাই করে কাটুয়া বিলটিকে সরকারের ৬ নম্বর রেজিস্ট্রারভুক্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কয়েক দফা নথি আদান প্রদান, সংশোধনের পর গত ২৫ মার্চ সিলেট বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে উক্ত বিলটি সরকারি জলমহাল হিসেবে অনুমোদন করা হয়। বর্তমানে বিলটি ইজারার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন স্যারের স্পষ্ট নির্দেশনা ছিল, সরকারি পুকুর, বিল, জলাশয়সহ বিভিন্ন সম্পত্তি পুনরুদ্ধারে যেকোনো উপায়ে অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধার করতে হবে। সেই নির্দেশনা মোতাবেক আমরা অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সরকারি কাজটি বাস্তবায়ন করেছি।
তিনি আরো বলেন, বিন্দারাণি দিঘি ও হ্যালিপেড পুকুর ইজারার কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং কাটুয়া বিল ইজারার কার্যক্রম জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে শুরু করা হবে। অবৈধ দখলমুক্ত করায় এখন থেকে সরকারের কোষাগারে প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব জমা হবে।