জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরাচার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে আমদানি ও রপ্তানি কমলেও বেড়েছে রাজস্ব আদায়।
সংশ্লিষ্টদের ধারণা, দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর দুদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রভাব পড়েছে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলে।
আরো পড়ুন
মিসরে বাংলাদেশ দূতাবাসের ই-পাসপোর্ট সেবা চালু
বন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই থেকে মার্চ) ভারতে প্রায় ২৮ লাখ ৪০ হাজার ৯৯ টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে প্রায় ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ৭১ টন পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।
হিসাব অনুযায়ী গত অর্থবছরের তুলনায় ১০ হাজার ২৭২ টন পণ্য কম রপ্তানি হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে ভারত থেকে প্রায় ১২ লাখ ৩৩ হাজার ৭৪৬ দশমিক ২৯ টন পণ্য আমদানি হয়েছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে প্রায় ১২ লাখ ৫২ হাজার ৭৬৭ দশমিক ২৯ টন পণ্য আমদানি হয়েছিল। হিসাব অনুযায়ী গত অর্থবছরের তুলনায় একই সময়ে ১৯ হাজার ২০ দশমিক ৮২ টন কম আমদানি হয়েছে।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, পণ্য আমদানি কিছুটা কমলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৩৬৩.৭৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। বেনাপোল কাস্টম হাউসে চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। সেই আলোকে অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৪৩২ দশমিক ৩ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ৫ হাজার ৭৯৭ দশমিক ৭৬ কোটি টাকা।
যার মধ্যে জুলাই মাসে ৪১৩.২২ কোটি টাকা, আগস্ট মাসে ৪০১.৫৫ কোটি টাকা সেপ্টেম্বর মাসে ৪৮৯.১১ কোটি টাকা, অক্টোবর মাসে ৫২৪.৬৩ কোটি টাকা, নভেম্বর মাসে ৬১৪.৭১, ডিসেম্বর মাসে ৭৭৮.৯৫ কোটি টাকা, জানুয়ারি মাসে ৬২১.৬৩ কোটি টাকা এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ৮১৮.০৫ কোটি টাকা এবং মার্চ মাসে ৭৭০.১১ কোটি রাজস্ব আদায় হয়েছে।
আরো পড়ুন
লিখন চরিত্রটা না করতে পারলে আফসোস থেকে যেত: সুনেরাহ
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি মহসিন মিলন বলেন, ‘দেশে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পরে দু-দেশের রাজনৈতিক টানাপোড়েন থাকার কারণে ভারত থেকে আমদানি কিছুটা কমলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেশিরভাগ আমদানিকারকরা বেনাপোল বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী। তবে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাজস্ব ফাঁকিরোধে কড়াকড়ি আরোপ করায় অসাধু ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন।’
বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বাণিজ্য সম্প্রসারণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। গত তিন মাস বেনাপোল বন্দরের শূন্য রেখায় চালু করা হয় বন্দর কার্গোভেহিকেল টার্মিনাল ও বন্দরে বসানো হয় স্ক্যানিং মেশিন।
দ্রুত পণ্য খালাস ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উদ্যোগে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাজস্ব ফাঁকিরোধে ও বাণিজ্য সহজীকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এতে বর্তমানে বাণিজ্যে অনেকটা গতি ফিরে হয়রানি কমেছে। যা সামনের দিনে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিগত স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের শেষ সময়ে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খুলতে ব্যাংক থেকে চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাওয়া যাচ্ছিল না। এ কারণে সে সময় পর্যাপ্ত এলসি খোলা সম্ভব ছিল না। কিন্তু বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ধীরে ধীরে ডলার সংকট কেটে গেছে। এখন আর আমদানিকারকদের এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে না।’
আরো পড়ুন
মিসরে বাংলাদেশ দূতাবাসের ই-পাসপোর্ট সেবা চালু
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মো. শামীম হোসেন জানান, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোর জন্য বেনাপোল স্থলবন্দরের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক বন্দর খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা বন্দরে পণ্য লোড-আনলোড এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া বন্দরে নতুন করে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। এসব কাজ শেষ হলে বাণিজ্য সম্প্রসারণে বড় ভূমিকা রাখবে।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান জানান, বৈধ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সহজীকরণের জন্য সময়োপযোগী প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এতে বেনাপোলে সার্বিক আমদানি কমলেও রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৩৬৩ দশমিক ৭৩ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে। রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশের উপরে। এরূপ পরিস্থিতি বিরাজ করলে অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে। এছাড়া রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ কমলেও রপ্তানি পণ্যের মূল্য ২৮ দশমিক ০৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেশের মোট ২৪টি স্থলবন্দরের মধ্যে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য হয় ১৬টি বন্দর দিয়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয় বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে।
আরো পড়ুন
ভাঙ্গায় বিয়েবাড়িতে সংঘর্ষ, কনে না নিয়ে ফিরে গেল বরপক্ষ
এ বন্দর দিয়ে আমদানি করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে শিল্প কারখানার কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, গার্মেন্টস, শিশু খাদ্য, মাছ, কেমিক্যালসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য। আর রপ্তানি পণ্যের মধ্যে পাট, পাটের তৈরি পণ্য, গার্মেন্টস, তৈরি পোশাক, কেমিক্যাল, টিস্যু পেপার, মেলামাইন ও মাছ উল্লেখযোগ্য।