পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার মজিদবাড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দাদের এখন মিরাজ বাহিনীর আতঙ্কে দিন কাটছে। ফিল্মের খলনায়ক স্টাইলে তার চলাফেরা। ২০-২৫টি মোটরসাইকেলের বিশাল বহর নিয়ে ইউনিয়নের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত চষে বেড়ান তিনি। সাথে থাকে রড, হকিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র।
মির্জাগঞ্জে মিরাজ বাহিনীর আতঙ্কে এলাকাবাসী
মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

অভিযুক্ত মিরাজ মিয়া (৩০) উপজেলার মজিবাড়িয়া ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া গ্রামের মৃত বারেক মিয়ার ছেলে ও উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঈদের ছুটিতে মজিদবাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক ছাত্রদলের সভাপতি মো. নাজমুল আহসান সজল ও সাইদুল ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন।
এ ছাড়া কয়েক দিন আগে দক্ষিণ চালিতাবুনিয়া গ্রামের ইমাম হোসেন নামের এক ছাত্রদলকর্মীকে অনুষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে মারধর করে মিরাজ বাহিনী বলে জানা যায়। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে দখলবাজি ও মাদক কারবারির অভিযোগ রয়েছে।
মিন্টু মিয়া, সগির খানসহ একাধিক স্থানীয়া বাসিন্দারা বলেন, মিরাজ বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি।
খলিশাখালী বাজারের ব্যবসায়ী ইদ্রিস মাহমুদ ও সাইদুল মোল্লা বলেন, ‘ঈদের দ্বিতীয় দিন দুপুরে মিরাজ বিশাল মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়ে খলিশাখালী বাজারের এসে সাইদুল ও সজলকে ধাওয়া দিয়ে হামলা করেন। এ সময় তাদের হাতে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ছিল। পরে আমরা সব ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা পাল্টা ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যান।’
নাজমুল আহসান সজল ও সাইদুল বলেন, ‘এলাকায় মিরাজ একটি বাহিনী গড়ে তুলেছে। ওরা এলাকায় মাদক কারবারসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করে বেড়ায়। এসব কাজের প্রতিবাদ করাতে আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে একাধিক বার হামলা করে। এমনকি গুলি করে প্রাণনাশেরও হুমকি দেয়। এ বিষয়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
অভিযুক্ত মো. মিরাজ মিয়া বলেন, ‘আমি মাদকের সাথে জড়িত না। আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা।’
মিরাজের সহযোগী আবুল কালাম বলেন, ‘আমি কোনো হুমকি দিইনি। সজল ভাই আমার আত্মীয় ও তার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক রয়েছে।’
পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শামিম চৌধুরী বলেন, ‘এই ব্যাপারে আমি আপনার কাছ থেকে প্রথম শুনলাম। ঘটনা সত্য হলে তদন্তপূর্বক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মির্জাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামীম হাওলাদার বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি জিডি হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এলাকায় তার অভিযোগের বিষয়ে লোক মুখে কিছু সত্যতা পাওয়া গেছে।’
সম্পর্কিত খবর

শিক্ষার আলোয় হরিজন সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা
নিয়ামুল কবীর সজল, ময়মনসিংহ

আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগেও হরিজন সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েদের স্কুল কলেজে যাওয়ার কথা কেউ চিন্তাও করতে পারত না। দারিদ্রতা, অশিক্ষা, পৃষ্টপোষকতার অভাব ইত্যাদি কারণে হরিজন সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ায় আগ্রহী ছিল না। আগ্রহ ছিল না তাদের অভিভাবকদেরও। নিজ সম্প্রদায়ের বাইরে এসে সমাজের অন্য দশ জনের সঙ্গে মিলেমিশে পড়াশোনা করাটাও তাদের অনুকূলে ছিল না।
তবে দিন বদলেছে। সময়ের সঙ্গে দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে সমাজের, সমাজের মানুষদের। তেমনি চিন্তা চেতনায় পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে হরিজন সমাজেও। দীর্ঘদিন ধরে নানাবিধ বৈষম্যের মধ্যেও শিক্ষার আলোয় একটি নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে চলেছে হরিজন ও বাঁশফোর সম্প্রদায়ের কিশোর-কিশোরীরা।
ময়মনসিংহের নতুনবাজার রেলক্রসিং সংলগ্ন হরিজনপল্লী এলাকায় হরিজন ও বাঁশফোর সম্প্রদায়ের বসবাস। হেলা পঞ্চায়েত প্রধান বিজয় হরিজনের দেওয়া তথ্যমতে, এই এলাকায় হরিজন ও বাঁশফোর মিলে প্রায় ৪০০ পরিবারের বাস এবং জনসংখ্যা প্রায় দুই হাজার জন। এ কমিউনিটির বেশিরভাগ মানুষ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করে থাকেন।
অল্প সংখ্যক মানুষ অন্য পেশায় জড়িত হলেও তা সংখ্যায় খুবই সীমিত।
তবে হরিজন ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় মূলত এগিয়ে এসেছে বেসরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্রকল্পটি শুরু থেকেই হরিজন সম্প্রদায় এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ৮০ শিক্ষার্থীকে তাদের শিক্ষার সুবিধায় মাসিক শিক্ষাবৃত্তি, ভর্তি ও অন্যান্য ফি ও শিক্ষা উপকরণ দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া কিশোর-কিশোরীদের জন্য ক্লাব গঠন, মানবাধিকার, নৈতিক মূল্যবোধ, জীবন দক্ষতা এবং বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত কর্মশালা করে থাকে। এতে এ কমিউনিটিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পুরনো ধ্যান-ধারণা ভেঙে হরিজন সম্প্রদায়ের মধ্যে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে। পারস্পারিক যোগাযোগ দক্ষতা ও নেতৃত্ব দক্ষতা বেড়েছে। বাল্যবিবাহ বিষয়ে অভিভাবক ও কমিউনিটি জনগণের সচেতনতা বেড়েছে।
বর্তমানে নতুন বাজার হরিজন কমিউনিটিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ২২০ জন, উচ্চবিদ্যালয়ে ৫৭ জন এবং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭ জন পড়াশোনা করছে। যা নতুন আশার সঞ্চার করে। এ কমিউনিটির শিশু-কিশোর-যুবরাও এখন স্বপ্ন দেখে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, পুলিশ-আর্মি অফিসার ও শিক্ষক হওয়ার।
এ সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী শাওন সরকার বর্তমানে এইচএসসি পাশ করে অনার্সে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি বলেন, তার স্বপ্ন একজন ব্যাংকার হওয়া।
হরিজন পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি বিনোদ হরিজন বলেন, হরিজন পল্লীতে শিক্ষার হার খুব কম ছিল। হরিজন কমিউনিটির অনেক ছেলে-মেয়ে এখন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। স্বপ্ন দেখছে, ভবিষ্যতে ভালো অবস্থানে যাওয়ার।
হরিজন যুব সঙ্গের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব হরিজন বলেন, হরিজন পল্লীর ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে নিজ কমিউনিটির বাইরে স্কুলগুলোতে ভর্তির আগ্রহ কম ছিল। বর্তমানে শিক্ষার বিষয়ে সচেতনতার ফলে তারা নিজ কমিউনিটির বাইরেও অনান্য বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে।
শান্তি মিত্র সমাজকল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সুবর্ণা পলি দ্রং বলেন, একটি ন্যায্য ও বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন আমরা সবাই দেখি। আমাদের কাজের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, নতুন বাজার হরিজন কমিউনিটির মানুষের মধ্যে শিক্ষার গুরুত্ব বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ছেলে শিশুর পাশাপাশি মেয়ে শিশুদের শিক্ষা ও অধিকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাল্য বিবাহ হ্রাস পেয়েছে।
জেলা শিক্ষা অফিসার মোহসীনা খাতুন বলেন, হরিজন শিশুরা আজ পড়াশোনায় এগিয়ে আসছে। এঠি ইতিবাচক দিক।

দিনাজপুরে এলজিইডি ভবনে আগুনে পুড়েছে নথিপত্র, তদন্তে কমিটি
দিনাজপুর প্রতিনিধি

দিনাজপুর এলজিইডি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুড়েছে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। আজ বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ভোর ৫ টার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ সময় ভবনটিতে সরকারি দুই কর্মকর্তা আটকে পড়েন।
উদ্ধার হওয়া কর্মকর্তারা হলেন- বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) যুগ্ম পরিচালক রবিউল ইসলাম ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী মুন্নাফ হোসেন। রবিউল ইসলামকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জানা গেছ,ভবনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার কার্যালয় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে দপ্তরটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে গেছে। এ সময় চতুর্থ তলায় রেস্ট হাউসে আটকা পড়ে দুই সরকারি কর্মকর্তা আহত হন।
দিনাজপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা ওবায়দুল ইসলাম জানান, ভোর ৫টার দিকে আমরা এলজিইডি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের খবর পাই।
ওবায়দুল ইসলাম আরো বলেন, ধারণা করা হচ্ছে ভবনের দ্বিতীয় তলায় বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এ সময় চতুর্থ তলায় দুই প্রান্তে দুটি কক্ষে দুজন আটকা পড়েছিলেন। তাদের একজনকে জানালার গ্রিল কেটে উদ্ধার করে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ৫তত্বাবধায়ক প্রকৌশল কার্যালয় দিনাজপুর অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামীম আখতারকে প্রধান করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ৭ দিনে মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
দিনাজপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান জানান, ভবনের দ্বিতীয় তলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে অফিসের কিছু ফাইলপত্র পুড়ে গেছে। চতুর্থ তলার আবাসিক কক্ষে দুজন অতিথি ছিলেন। একজন সামান্য আহত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে আমরা কাজ করছি।

নড়াইলের দেশীয় অস্ত্র-মাদক ও নগদ টাকাসহ ৬ মাদক কারবারি আটক
নড়াইল প্রতিনিধি

নড়াইলের কালিয়ায় সেনাবাহিনীর অভিযানে ইয়াবা, গাঁজা, দেশীয় অস্ত্র , অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম, বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ও ৭টি মোবাইলসহ ৬ জনকে আটক করেছে সেনাকাম্পের সদস্যরা।
গতকাল বুধবার (৯ এপ্রিল) রাতে অভিযান চালিয়ে খাশিয়াল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে তাদের আটক করে সেনাবাহিনী।
আটককৃতরা হলেন- চোরখালীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী রফিকুল মোল্যা, খাসিয়াল গ্রামের আকবর উদ্দিন, হাসমত বিশ্বাস, হাসমত বিশ্বাসের ছেলে নাঈম বিশ্বাস, হাসমত বিশ্বাসের স্ত্রী বিনা বেগম, পুঠিমারী গ্রামের আকাশ।
সেনাবাহিনী জানায়, নিয়মিত টহল চলাকালে পুটিমারী বাজারের পাশে একটি স্কুলের ফ্যান চুরি করার সময় আকাশ নামে একজন চোরকে আটক করে সেনাবাহিনী কাছে হস্তান্তর করে।

ঠাকুরগাঁও
সীমান্তে বাংলাদেশি যুবককে আটক করল বিএসএফ
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড় পলাশবাড়ী ইউনিয়নের নাগর ভিটা গ্রামের এক যুবককে আটক করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকাল ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে ভারতীয় সীমান্তের প্রায় ১০০ মিটার ভেতর থেকে তাকে আটক করা হয়।
আটক ব্যক্তির নাম মো. আব্দুল হামিদ (৩২)। তিনি ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সমির নগর (বাদামবাড়ি) এলাকার মো. জাহিদুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সকালে ভারী বৃষ্টি হচ্ছিল, সেই সময় নাগর ভিটা সীমান্তের ৩৭৬-৪ নম্বর মেইন পিলার এলাকা দিয়ে হামিদ সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় ভারতীয় বিএসএফের বেগুনবাড়ি ক্যাম্পের সদস্যরা ভারতীয় ভূখণ্ডের ভেতরে থাকা অবস্থায় তাকে আটক করে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। বিষয়টি নিয়ে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানা গেছে।