<p style="text-align:justify">হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ ধ্বংস করে এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত প্রকৃতি বিধ্বংসী ও জনবিরোধী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সংযোগ সড়ক বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সসহ (বিআইপি) পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।</p> <p style="text-align:justify">আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিআইপির কনফারেন্স হলে নাগরিক সংলাপে এ দাবি জানায় ৩১টি সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।</p> <p style="text-align:justify">নাগরিক সংলাপে বক্তরা বলেন, পৃথিবীর উন্নত ও আধুনিক শহরগুলো নগর এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য দিয়ে ফ্লাইওভারকেন্দ্রিক পরিবহন সমস্যা সমাধানের কৌশল থেকে সরে এসেছে। অথচ আমরা এখন যানজট সমস্যার সমাধান কৌশল হিসেবে ফ্লাইওভার নির্মাণ করছি, যা ব্যক্তিগত গাড়িকে উৎসাহিত করে। পরিবহন-ভূমি ব্যবহার-পরিবেশ-জনজীবন এর পারস্পরিক সম্পর্কজনিত প্রভাব যথাযথভাবে বিবেচনায় না নিয়েই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত নির্মাণের উদ্যোগ জনস্বার্থে অবিলম্বে সরকারকে বাতিল করতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে কম ব্যয়ে ও সহজে বাস্তবায়নযোগ্য অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবহন অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য পরিবহন ও নগর পরিকল্পনার কর্মকৌশল তৈরি করতে হবে। এই প্রকল্পের কারণে ইতিমধ্যে হাতিরঝিল এলাকায় জলাধার ভরাট এবং পান্থকুঞ্জ উদ্যানের সহস্রাধিক গাছ কাটা হয়েছে। হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ সংলগ্ন এলাকায় প্রস্তাবিত শতাধিক পিলারসমূহ এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জলাধারের পানিপ্রবাহ ও সার্বিক উপযোগিতা ধ্বংস করেছে। সংযোগ সড়ক প্রকল্পটি ইতিমধ্যেই পার্ক-উদ্যান-জলাধার সংরক্ষণ আইন, পরিবেশ সংক্রান্ত আইন ও বিভিন পরিকল্পনার ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। </p> <p style="text-align:justify">বক্তারা আরো বলেন, বিগত সরকারের আমলে পরিবহন অবকাঠামো সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে জনগণের মতামত গ্রহণ ও গণশুনানির আয়োজন ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। টপ ডাউন প্ল্যানিং বা ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া এ ধরনের পরিকল্পনা জনগণের প্রকৃত চাহিদাভিত্তিক সমাধানের সাথে সম্পৃক্ততাবিহীন। অন্তর্বর্তী সরকারকে এই ধরনের প্রবণতা পরিহার করতে হবে। একইসাথে বিগত সরকারের আমলে দেশীয় স্বার্থান্বেষী মহলের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারী রাষ্ট্র ও ঠিকাদারদের প্রভাবে ব্যয়বহুল পরিবহন অবকাঠামো প্রকল্প গ্রহণের যে প্রবণতা ছিল, সেটা থেকে রাষ্ট্র ও সরকারকে সরে আসতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">নাগরিক সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি বলেন, ‘২০০৫ সালে প্রণীত ঢাকার কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (এসটিপি) ঢাকার টেকসই যোগাযোগ পরিকল্পনার জন্য আমাদের আর্থ-সামাজিক ও পরিকল্পনাগত বাস্তবতার নিরিখে বিভিন্ন প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছিল। বাস্তবায়নের প্রাধিকারে সেখানে পেছনের সারিতেই ছিল ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। তব ঢাকার টেকসই পরিবহন পরিকল্পনার জন্য অল্প ব্যয়ে অধিক উপযোগী প্রস্তাবনাসমূহকে পেছনে রেখে ২০১১ সালে গৃহীত হয় ৩,২১৬ কোটি টাকার এই প্রকল্প। ঢাকাকে বাইপাস না করে, বরং ঢাকার একেবারে মধ্য দিয়ে গিয়ে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জাংশন বা মোড়ে জালের মত নতুন নতুন র‍্যাম্প যুক্ত করে দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে আরও যানজট বাড়ানোর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই প্রকল্প, যা ঢাকাবাসীর ভোগান্তির কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পরিবেশগত সমীক্ষা প্রতিবেদনে এই উড়াল সড়কের কারণে পলাশী, কাটাবন এলাকায় ট্রাফিক এর ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে এবং নিচের রাস্তার উপযোগিতা কমে যাবে বলা হয়েছে। পান্থকুঞ্জ পার্কে বৃক্ষ নিধন ও পরিবেশ প্রতিবেশ বিনষ্ট হবার বিষয়টাকে পরিবেশগত সমীক্ষা প্রতিবেদনে উপেক্ষা করা হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই এ নগর পরিকল্পনাবিদকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। এলাকাবাসীর মতামত ও যথাযথভাবে নেওয়া হয়নি এই প্রকল্পে। বিগত সরকারের জনগণের মতামতবিহীন অবকাঠামোগত উন্নয়নতত্ত্বের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে এই ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বা উড়াল সড়ক।’</p> <p style="text-align:justify">জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ও ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’র (ধরা) উপদেষ্টা ড. মুজিবর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ পার্ক হচ্ছে জনগণের সম্পত্তি, যা ধ্বংস করা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ পার্ক ধ্বংস করে জনবিরোধী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সংযোগ সড়ক নির্মাণ আগামী সাত দিনের মধ্যে বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি।’</p> <p style="text-align:justify">তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক সৈয়দা রত্না বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ সড়ক অবকাঠামো প্রকল্পসমূহের যথাযথ পূনুর্মূল্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে যথাযথ সংশোধনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে, জনগণের এটাই ছিল প্রত্যাশা। অথচ এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, হাতিরঝিল জলাধার ও পান্থকুঞ্জ পার্কের পরিবেশ ধ্বংস করে এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত চলমান এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সংযোগ সড়ক প্রকল্প নির্মাণ বাতিলের দাবিতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন ও বিশেষজ্ঞদের সম্মিলিত আন্দোলন এক মাসের অধিক পার হলেও এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল বিস্ময়কর নীরবতা পালন করছে।’</p> <p style="text-align:justify">এ সময় বক্তব্য দেন বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান, ধরা’র সদস্যসচিব শরীফ জামিল, ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্টের প্রতিনিধি মো. মিঠুন, বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজের (বারসিক) প্রতিনিধি সৈয়দ আলী বিশ্বাস, কলাবাগান ওয়েলফেয়ার সোসাইটি প্রতিনিধি মাসুদ করিম, বিআইপির  সহ-সভাপতি পরিকল্পনাবিদ সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন।</p> <p style="text-align:justify">সংলাপ থেকে কিছু প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে- এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগের কারণে হাতিরঝিল জলাধার ও পান্থকুঞ্জ পার্কের পরিবেশ ইতিমধ্যেই ধ্বংসের পাশাপাশি কাঠালবাগান-কাটাবন-নীলক্ষেতসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সামগ্রিক পরিবেশ ও পরিবহন ব্যবস্থা সীমাহীন সংকটে পড়বে। ফলে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক অনতিবিলম্বে বাতিল করতে হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কারণে হাতিরঝিল ভরাট করে স্থাপিত পিলারগুলো সরিয়ে নিয়ে জলাধারের পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার করে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। পান্থকুঞ্জ পার্কে চলমান প্রকল্পের কাজ অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং পার্কের আয়তন, সীমানা অনুযায়ী ও ঋতুগত ভিন্নতাকে বিবেচনায় রেখে দেশি প্রজাতির বৃক্ষরোপণ করে কার্যকর পরিকল্পনার মাধ্যমে পার্কটিকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা ইত্যাদি।</p> <p style="text-align:justify">নাগরিক সংলাপে অংশগ্রহণ করে এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইআরডিএ), ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট, কলাবাগান ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, গ্লোবাল ল’ থিংকারস সোসাইটি, জলপুতুল পাপেটস, টিম ইনক্লুশন বাংলাদেশ, তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলন, নারীপক্ষ, ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এনডিএফ), পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), পান্থকুঞ্জ প্রভাতী সংঘ, প্রাকৃতিক কৃষি, মিশন গ্রিন বাংলাদেশ, প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষা জাতীয় কমিটি, প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠন, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম, বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক), বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি), বাংলাদেশ ইকোলজিকাল নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম, বেঙ্গল ডিসকভার, ব্লু প্ল্যানেট ইনিশিয়েটিভ (বিপিআই), রিভার বাংলা, সেন্টার ফর ল’ অ্যান্ড পলিসি এফেয়ার্স এবং স্পৃহা।</p>