সংস্কৃতিকর্মীদের অংশগ্রহণে ‘সংস্কৃতি রক্ষা অভিযান’ গড়ে তোলাসহ পাঁচটি দাবি জানিয়েছে জাতীয় কবিতা পরিষদ। বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন নস্যাতের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানিয়েছেন জাতীয় কবিতা পরিষদের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসন ও গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান।
এ সময় বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ, জাতীয় কবিতা পরিষদের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য কবি মতিন বৈরাগী, সহসভাপতি শহীদু্ল্লাহ ফরায়েজী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক কবি শাহীন রেজা, কবি এ বি এম সোহেল রশিদ, কবি শ্যামল জাকারিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক নূরন্নবী সোহেল প্রমুখ।
আরো পড়ুন
মেয়ের হবু স্বামীর সঙ্গে পালালেন মা
লিখিত বক্তব্যে মোহন রায়হান বাংলা নববর্ষকে দেশের অন্যতম প্রাণের উৎসব মন্তব্য করে বলেন, “এটি শুধুমাত্র একটি ক্যালেন্ডার বছরের সূচনা নয়, এটি হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বহিপ্রকাশ। এই সর্বজনীন আনন্দঘন-উৎসব আজ একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের নিশানায়। কিছু গোষ্ঠী—যারা ইতিহাস অস্বীকার করে, যারা সাম্প্রদায়িক মতাদর্শকে সাংস্কৃতিক চেতনার ওপর চাপিয়ে দিতে চায়—তারা দীর্ঘদিন ধরে বাংলা নববর্ষকে ‘অনৈসলামিক’ বা ‘বিদেশি সংস্কৃতি’র অপপ্রচার বলে চালিয়ে যাচ্ছে।
যা মোটেও সঠিক নয় বরং ইতিহাস বিকৃতি ও ধর্মীয় অপব্যাখ্যা।” এই উৎসবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মানে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলেও মন্তব্য করা হয় লিখিত বক্তব্যে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকার ও জনগণের কাছে পাঁচটি দাবি ও আহ্বান তুলে ধরে কবিতা পরিষদ। সেগুলো হলো : নববর্ষ উদযাপনকে কেন্দ্র করে যেকোনো ষড়যন্ত্র বা সহিংসতার আশঙ্কা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও গণমাধ্যমে বাংলা নববর্ষের ইতিহাস ও তাৎপর্য তুলে ধরা, ধর্মীয় অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া, সংস্কৃতিকর্মীদের অংশগ্রহণে দেশব্যাপী ‘সংস্কৃতি রক্ষা অভিযান’ গড়ে তোলা এবং সাহস ও সচেতনতার মাধ্যমে নববর্ষ নিয়ে যেকোনো অপপ্রচারের বিরুদ্ধে জবাব দেওয়া।
আরো পড়ুন
চাকরির কথা বলে বাসায় এনে যুবককে ধর্ষণ, ক্ষোভে হত্যা
বাংলা নববর্ষের ইতিহাস তুলে ধরে কবি মোহন রায়হান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বের হওয়া ‘শোভাযাত্রা’ আজ ইউনেসকো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্য। কিন্তু কিছু গোষ্ঠী এটিকে মূর্তিপূজা আখ্যা দিয়ে কটূক্তি করছে। বিভিন্ন ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল ও গোপন গ্রুপে নববর্ষ উদ্যাপনকে ঘিরে উসকানিমূলক কনটেন্ট ছড়ানো হচ্ছে। এটি শুধু মতপ্রকাশ নয়, সাংস্কৃতিক জঙ্গিবাদের সূক্ষ্ম রূপ। এ সময় অতীতে বিভিন্ন সময়ে নববর্ষ উৎসবে হওয়া হামলার বিষয়টি উলেখ করে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
সরকারের পক্ষ থেকে এবারের নববর্ষ উদযাপনের আয়োজনে বাঙালিসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে তাদের জাতিসত্ত্বাকে ধারণ করে যেভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তার প্রশংসা করেছেন প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ। তিনি বলেন, ‘একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনে সরকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।’
এবারের নববর্ষের শোভাযাত্রায় ফিলিস্তিনের নির্যাতনের শিকার মানুষের পক্ষে জাতীয় কবিতা পরিষদ ফিলিস্তিনের পতাকা বহন করবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রেজা উদ্দীন স্টালিন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যারাই কাজ করবে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াব।’