বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আমরা দেখতে পাচ্ছি। এই চ্যালেঞ্জগুলো কিন্তু বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ছিল। দিনে দিনে সেগুলো প্রকট হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো এখন আমাদের মোকাবেলা করতে হবে।
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আমরা দেখতে পাচ্ছি। এই চ্যালেঞ্জগুলো কিন্তু বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ছিল। দিনে দিনে সেগুলো প্রকট হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো এখন আমাদের মোকাবেলা করতে হবে।
প্রথমত, আমাদের যেটা সমস্যা, সেটা হলো মূল্যস্ফীতির অপ্রতিরোধ্য ঊর্ধ্বগতি।
মূল্যস্ফীতি কোনোক্রমেই বাগে আসছে না। আমরা দেখতে পাচ্ছি, খাদ্য এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম বেড়েই চলছে। এতে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে গেছে। রোজা শেষ হয়ে যাচ্ছে।
আমরা দেখতে পাচ্ছি, সরকার নানা রকম চেষ্টা করছে। বাজারে নির্দিষ্ট পণ্যের দাম বেঁধে দিচ্ছে, কিন্তু সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
দ্বিতীয়ত, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিন্তু বাড়ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বহু চেষ্টা করছে রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য। টাকা-বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ কিছুটা বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। আবার ক্রলিং পেগ চালু করবে বলে শোনা যাচ্ছে। অর্থাৎ টাকার অবমূল্যায়নটা অল্প অল্প করে করবে। কিন্তু এসব সত্ত্বেও রিজার্ভ বাড়েনি, বরং রিজার্ভ কমছে। কারণ আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। আমদানি অত্যাবশ্যকীয়। সেই সঙ্গে এখন দেখছি, রেমিট্যান্সের গতিও হঠাৎ করে কমে যাচ্ছে। ঈদের সময় হয়তো বা রেমিট্যান্স বাড়বে কিছুটা। এতে কিন্তু আমাদের ডলারের সরবরাহ খুব বাড়বে না।
অন্যদিকে রপ্তানি যে খুব বাড়ছে, তা নয়। রিজার্ভের ধস ঠেকানো যাচ্ছে না। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে আইএমএফের একটা টার্গেট ছিল, সে টার্গেটটা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। টার্গেট পূরণ না করলে আইএমএফ কিস্তি দেবে কি না সংশয় আছে। তবে আমার মনে হয় না, সে কিস্তি আটকে থাকবে। কারণ যেটা বাংলাদেশ চেষ্টা করছে, বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেগুলো মোটামুটি তারা দেখতে পাচ্ছে যে চেষ্টার ত্রুটি হচ্ছে না, কিন্তু সেগুলো খুব কার্যকরও হচ্ছে না।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের যেটা করা সবচেয়ে বেশি দরকার, সেটা হলো আমাদের যে মুদ্রানীতি বা মনিটারি পলিসি এবং রাজস্বনীতি বা ফিসক্যাল পলিসি—দুটির মধ্যে সমন্বয় এবং বাস্তবায়ন করা। আমরা দেখছি, বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি প্রণয়ন করেছে, যাতে ইনফ্লেশনটা কমানো যায়। অর্থাৎ মুদ্রা সরবরাহ সীমিত করে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা সাধারণত মুদ্রানীতির একটা ধরন। কিন্তু বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সেটা যে খুব ফলপ্রসূ হবে, এমনটা মনে হচ্ছে না।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দেখছি, বলা হচ্ছে সুদের হারটাও বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং সুদের হার বেড়ে যাচ্ছে, যদিও সম্পূর্ণভাবে তা বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়নি। ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের যে গড়, সেটার ভিত্তিতে সুদের হার নির্ধারণ করা হচ্ছে। এখন আমরা দেখি যে ১৩ শতাংশ, মানে এখন আমরা সুদের হার দেখতে পাচ্ছি তেরোর দিকে পৌঁছেছে। ৬ ও ৯-এর বৃত্ত থেকে আমরা বেরিয়ে এসে সুদের হার তোরোর দিকে হচ্ছে। সেটা হওয়া স্বাভাবিক। কারণ এমনিতেই ব্যাংকে তারল্য সংকট আছে। ব্যাংকে মানুষের টাকা দেওয়ার প্রবণতা কমে গেছে।
এখন এ ব্যাপারে আমার মন্তব্য হলো, সুদের হার বাড়ছে, এই বাড়তি সুদের হারটাকে যাঁরা বড় ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা বড় ঋণগ্রস্ত আছেন, তাঁদের কিন্তু বাড়তি সুদের হারটাকে গ্রহণ করতে হবে। কারণ টাকা সেই আগের মতো চিপ মানি আর নেই। সস্তা বা সুলভ টাকা, একেবারে কম হারে সুদের টাকা পৃথিবীর কোনো দেশে এখন নেই। অন্যান্য দেশেও সুদের হার বাড়ছে। আর সুদের হার বাড়া মানেই যে যাঁরা ব্যবসায়ী, তাঁরা একেবারে বসে পড়বেন, তা নয়। সুদ হলো তাঁর খরচের একটামাত্র অংশ। এর বাইরে মজুরির ব্যাপার আছে, তাঁর দক্ষতারও ব্যাপার আছে। তাঁর বিদ্যুৎ-জ্বালানি বিলের ব্যাপার আছে, কাঁচামালের খরচ আছে। এসব বিবেচনা করেই ব্যবসায়ীকে এগোতে হবে। এসব যদি সাশ্রয়ীভাবে করেন, বিশেষ করে তাঁর উৎপাদনক্ষমতা যদি বৃদ্ধি করেন, যাতে তিনি এই সুদের হার বহন করতে পারেন।
অন্যদিকে সুদের হার বাড়ানোর একটা প্রয়োজন আছে। কারণ ওই দিকে যারা ডিপোজিটর, যারা টাকা রাখে, তাদের কিন্তু আগের মতো ৬-৭ শতাংশ হারে জমা রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ মূল্যস্ফীতির হার ৯-এর বেশি। অতএব আমানতকারীদের সুবিধার জন্য এটা অতি প্রয়োজন। তবে আমি বলব, একেবারে ঢালাওভাবে ১৩ শতাংশ সুদের হার সবখানে প্রযোজ্য করা ঠিক হবে না, বিশেষ করে কৃষিক্ষেত্রে। কৃষি উৎপাদন, কুটির শিল্প, ছোট শিল্প, নারী উদ্যোক্তা এবং কিছু সেক্টর আছে; যেমন—নানা রকম মসলা, যেগুলো আমরা উৎপাদন করি। এগুলো কিন্তু কম সুদে ঋণ না নিলে এগুলোর উৎপাদনকারীরা টিকতে পারবেন না।
এটা না করলে সার্বিকভাবে আবার আমরা বিপত্তির মুখে পড়ব। কারণ দেখা গেছে, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি হলেই কিন্তু ব্যাংকগুলো ছোট শিল্প এবং এ সমস্ত ক্যাটাগরির যাঁরা উদ্যোক্তা, তাঁদের ঋণ দিতে চায় না বা তাঁদের ঋণ দিতে এতটা উৎসাহী হয় না। ঋণ সংকোচন করলে খড়্গটা তাদের ওপরে পড়ে। বড় ঋণগ্রহীতারা এতটা অসুবিধায় পড়েন না। অর্থাৎ সংকোচনমূলক নীতির যে নেতিবাচক দিক, সেটা পরিহার করার জন্য কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবস্থা নিতে হবে। এখন এদিকে যদি আমরা দৃষ্টি না দিই, তাহলে এখান থেকে আমরা প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান কোনোটাই বাড়াতে পারব না।
আরেকটা জিনিস এখানে সবচেয়ে বড় হয়ে আসে, আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি মন্থর হয়ে গেছে। কভিড-উত্তর মোটামুটি একটা ভালো জায়গায় আসছিল, এখন কিন্তু আবার মন্থর হয়ে গেছে। কারণ এখানে মূল্যস্ফীতির চাপ, উচ্চ সুদের চাপ, ব্যাংকের তারল্য সংকটের চাপ—সব কটি মিলিয়েই কিন্তু আমাদের ব্যবসা, বিশেষ করে দেশীয় শিল্প বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এর ফলে কর্মসংস্থান তৈরিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কর্মসংস্থানে আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সেটা আগামী বাজেটে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
সবচেয়ে লক্ষণীয়, বাংলাদেশে কিন্তু শিক্ষিত বেকার যুবকের সংখ্যা অনেক। এটা অনেকে বলেন যে শিক্ষিত যুবকের সংখ্যা ৪০ শতাংশের ওপরে। সেই শতাংশের হিসাবে না গেলেও দেখা যাবে শিক্ষিত যারা—বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে আসছে বা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থেকে বেরিয়ে আসছে, তারা কিন্তু খুব সহজে চাকরি পাচ্ছে না। এটা আমাদের জন্য সবচেড়ে বড় একটা বিপত্তির দিক। কারণ যখন বেকার সমস্যা দেখা দেয়, এমনিতে আমাদের যে প্রবৃদ্ধির হার বা আমাদের মোট দেশজ যে উৎপাদন বাড়ানোর হার, সেটা কমে যাবে। দ্বিতীয়ত, যারা বেকার হয়েছে, তাদের জীবিকার সংস্থান বা তাদের নিজস্ব জীবনধারণ, তার পরিবারের জীবনধারণ—এটা কিন্তু খুব কঠিন হয়ে পড়ে।
অতএব এগুলো আমাদের ঠিক করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে, সামনে যে বাজেট দেওয়া হবে, হয়তো বা মোটামুটি বড় আকারের বাজেটই হবে, সেটা যেন বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধানে সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়। সঙ্গে সঙ্গে বাজেটের যে সম্পদ আহরণ করবে—দেশীয় সম্পদ হোক, বাইরে থেকে ধার করা মানে বাইরে থেকে বৈদেশিক ঋণ নেওয়া, সেটা সম্বন্ধে যথেষ্ট সজাগ থাকতে হবে। কারণ এখনো কিন্তু আমাদের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যে কর আদায় করছে, সেটা এখনো কিন্তু অনেকটা ঘাটতিতে আছে।
আর দ্বিতীয়ত, বাইরে থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা এখন তো বেড়ে গেছে। দেখা গেছে যে বিগত ১০ বছর বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ অনেক হারে বেড়ে গেছে। বৈদেশিক ঋণের আসল এবং সুদ পরিশোধ করা আমাদের ওপর বড় একটা বাড়তি বোঝা। বিশেষ করে বাজেটের বড় একটা অংশ কিন্তু এই খাতে চলে যাচ্ছে। অতএব এই দিকটাও আমাদের বিবেচনা করার সময় আসছে, আমরা কত ঋণ নেব—কোন উৎস থেকে নেব—সরকারের বৈদেশিক ঋণ নেওয়া, এটার যথাযথ ব্যবহার, এটা পরিশোধ করার সক্ষমতা, এগুলো বিবেচনা করতে হবে। সার্বিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আমরা কিভাবে উজ্জীবিত করব, এটা কিন্তু এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে নীতিনির্ধারকদের জন্য।
লেখক : সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক ও অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পর্কিত খবর
আমরা দৈনন্দিন জীবনে কথাবার্তার মাধ্যমে এমন অনেক শব্দ ব্যবহার করি, যার আক্ষরিক অর্থ খুবই কম জনই জানেন। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত শব্দটি হলো OK শব্দ। আমরা কোনো কিছু কাজ করার জন্য হ্যাঁ-এর পরিবর্তে অনেক সময় OK শব্দটি ব্যবহার করি। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন এই দুটি অক্ষরের শব্দে এমন কী আছে, যা একটি পূর্ণবাক্য হতে পারে? এসব প্রশ্নের উত্তর না জানা থাকলে এই প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে জানানো হলো।
জানিয়ে রাখি, ‘All Correct’-এর জন্য OK শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে ‘All Correct’ পরিবর্তন করে Oll Correct করা হয়েছে। এই কারণেই AC-এর পরিবর্তে OK শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে; যদিও এর পূর্ণরূপ All Correct, কিন্তু এর অর্থ হলো ‘সবই সঠিক’।
জানা যায়, ১৯ শতকের প্রথম দিকে শোনার জন্য OK শব্দটি তৈরি হয়েছিল। সেই সময় ইংরেজি শব্দকে আরো আধুনিক করে তোলার প্রবণতা ছিল। মানে ইংরেজি কথাগুলিকে অন্যভাবে বলা হচ্ছিল। এই কারণেই কিছু শব্দের বানান ভুল ছিল, যা তাদের আসল শব্দ থেকে পরিবর্তন করা হয়েছিল।
তবে OK শব্দটির পূর্ণরূপ নিয়েও বিভিন্ন লোকের বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। দুটি শব্দকে সংক্ষেপে OK বলা হয়। Oll Correct বা Olla Kalla-এর পূর্ণরূপ। এই শব্দ দুটি হলো গ্রিক শব্দ, এখন ইংরেজিতে পরিবর্তিত হয়ে All Correct হয়েছে, কিন্তু এর সংক্ষিপ্ত রূপ হিসেবে OK-এর পরিবর্তন হয়নি।
ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের প্রধান সংগঠক মাস্টারদা সূর্যসেনের আজ জন্মদিন। তিনি ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ২২ মার্চ (আজকের এই দিনে) চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
তার পুরো নাম সূর্যকুমার সেন। ডাক নাম কালু।
সূর্যসেন যখন নোয়াপাড়া উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ের ছাত্র তখন বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে বাংলায় স্বদেশী আন্দোলন শুরু হয়।
অধ্যাপক শতীশচন্দ্র চক্রবর্তী যুগান্তর নামক বিপ্লবী দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামে ফিরে ব্রিটিশ বিরোধী একটা বিপ্লবী দল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন।
শিক্ষকতা করার কারণে তিনি পরিচিত মহলে ‘মাস্টারদা’ আখ্যা পান। চট্টগ্রামে তখন বিপ্লবী দলে কাজ করতেন আম্বিকা চক্রবর্তী, অনুরূপ সেন, নগেন সেন (জুলু সেন), চারুবিকাশ দত্তসহ আরো অনেকে। কিন্তু তাদের তৎপরতা ছিল সীমিত পর্যায়ের।
১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রামের জেলা কংগ্রেসের সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। এতে সূর্যসেন সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। একই বছর ১৩ সেপ্টেম্বর লাহোর জেলে একটানা ৬৩ দিন অনশন করে বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মারা যান। এর প্রতিক্রিয়ায় সারা বাংলায় প্রচণ্ড বিক্ষোভ দেখা দেয়। বিক্ষোভ মিছিল ও সভায় নেতা সূর্যসেন বিপ্লবের পরবর্তী কার্যক্রমের পরিকল্পনা সদস্যদের সামনে তুলে ধরেন। বিপ্লবীরা স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করার শপথ নেন। এর জন্য তারা ‘মৃত্যুর কর্মসূচি’ ঘোষণা করেন।
‘যুগান্তর’ দলের চট্টগ্রাম শাখার নতুন সভাপতি তারকেশ্বর দস্তিদার সূর্যসেনকে চট্টগ্রাম জেল থেকে ছিনিয়ে আনার প্রস্ততি নেন। কিন্তু পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হয়। তারকেশ্বর এর সঙ্গে আরো কয়েকজন গ্রেপ্তার হন। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে সূর্যসেন, তারকেশ্বর দস্তিদার এবং কল্পনা দত্তের বিশেষ আদালতে বিচার হয়।
১৪ আগস্ট সূর্যসেন ও তারেকেশ্বর দস্তিদার এর ফাঁসির রায় হয় এবং কল্পনা দত্তের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কারাগারে উভয়ের ফাঁসি কার্যকর হয়।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল, এই নাম শুনলেই মনে হয় এক রহস্যময় জায়গা যেখানে জাহাজ ও বিমান অদৃশ্য হয়ে যায়। যুগ যুগ ধরে এই জায়গাকে নিয়ে নানা গল্প-কাহিনি ছড়িয়েছে, যা একে আরো রহস্যময় করে তুলেছে।
কিন্তু আসলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল কী? এর পেছনে কোনো অলৌকিক শক্তি আছে, নাকি সবই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মধ্যে পড়ে? চলুন, একে গভীরভাবে জানার চেষ্টা করি।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল আটলান্টিক মহাসাগরের একটি অঞ্চল, যা তিনটি জায়গার মধ্যে বিস্তৃত।
রহস্যের শুরু বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্য বহু বছর ধরে চলে আসছে। অনেকেই দাবি করেন, এখানে প্রবেশ করা জাহাজ ও বিমান কোনো কারণ ছাড়াই অদৃশ্য হয়ে যায়।
১) ফ্লাইট ১৯ (১৯৪৫) - পাঁচটি বিমান একসাথে উধাও ১৯৪৫ সালে মার্কিন নৌবাহিনীর পাঁচটি যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণের জন্য উড়েছিল, কিন্তু তারা আর ফিরে আসেনি। পাইলটদের শেষ রেডিও বার্তায় তারা বিমানের দিক হারানোর কথা বলেছিলেন। উদ্ধারকারী বিমানও তাদের খুঁজতে গিয়ে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যায়।
২) এমভি সাইক্লোপস (১৯১৮) - ৩০৯ জনের মৃত্যু একটি বিশাল জাহাজ, যা ৩০৯ জন নাবিক নিয়ে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে প্রবেশ করার পর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
৩) ফ্লাইট ডিসি থ্রি (১৯৪৮) - ৩২ জনের হাওয়া হয়ে যাওয়া একটি যাত্রীবাহী বিমান পুয়ের্তো রিকো থেকে ফ্লোরিডার দিকে যাচ্ছিল। মাঝ আকাশে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে উধাও হয়ে যায়।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে অলৌকিক শক্তি বা ভিনগ্রহের প্রাণীর কাজ বলে মনে করা হয়, কিন্তু বিজ্ঞানীরা একে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেন-
চৌম্বকীয় বিভ্রান্তি বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এলাকায় পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের কিছু ব্যতিক্রম দেখা গেছে। যা কম্পাস ও দিকনির্দেশক যন্ত্রকে বিভ্রান্ত করতে পারে। ফলে জাহাজ বা বিমান পথ হারিয়ে বিপদের সম্মুখীন হয়।
বিশাল গ্যাস বিস্ফোরণ এই অঞ্চলের সমুদ্রতলে প্রচুর পরিমাণ মিথেন গ্যাস জমে আছে। কোনো কারণে এটি ফেটে গেলে বিশাল বুদবুদ তৈরি হয়। যা পানির ভাসমান শক্তি কমিয়ে দেয়। এর ফলে জাহাজ মুহূর্তের মধ্যে ডুবে যেতে পারে।
হঠাৎ ঝড় ও বিশাল ঢেউ আটলান্টিক মহাসাগর অত্যন্ত উত্তাল এলাকা। যেখানে হঠাৎ করে ১০০ ফুট উঁচু ঢেউ সৃষ্টি হতে পারে। যা বড় বড় জাহাজকেও নিমিষে ডুবিয়ে দিতে পারে।
গলফ স্ট্রিম এখানে সমুদ্রের এক বিশেষ প্রবাহ আছে, যা খুবই শক্তিশালী। গলফ স্ট্রিম কোনো ছোট জাহাজকে মুহূর্তের মধ্যে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে পারে। ফলে তাদের খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যায়।
তাহলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল কি সত্যিই ভয়ংকর?
বিজ্ঞানীদের মতে, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল আসলে অন্যান্য সমুদ্র অঞ্চলের মতোই স্বাভাবিক। সেখানে প্রাকৃতিক নিয়মে দুর্ঘটনা ঘটে। সাম্প্রতিক সময়ে এই এলাকায় বিমান ও জাহাজ চলাচল স্বাভাবিকভাবেই চলছে।
সূত্র : ডিসকভার ম্যাগাজিন
‘বিশ্ব পানি দিবস’ আজ শনিবার (২২ মার্চ)। বিশ্বের অন্য সব দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচিতে পালিত হবে দিবসটি। ভূগর্ভস্ত পানির ব্যবহার নিশ্চিতে এবং অপচয় রোধে দিনটি বিশেষভাবে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক জাতিসংঘের সম্মেলনে পানি দিবসের ধারণাটি প্রস্তাবিত হয়।
পরবর্তীতে একই বছরের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ প্রতিবছর ২২ মার্চকে বিশ্ব পানি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে একটি প্রস্তাব পাস করে। ১৯৯৩ সাল থেকে প্রতি বছর পালিত হয়ে আসছে এ বিশেষ দিবসটি।
পৃথিবীর তিন-চতুর্থাংশই পানি। তবুও বিশুদ্ধ-নিরাপদ পানির জন্য আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়ে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্যমতে, বিশ্বের প্রায় ৭৭ কোটির বেশি মানুষ নিরাপদ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আর প্রতিবছর অনিরাপদ পানি ও দুর্বল পয়োনিষ্কাশনের জন্য প্রায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যায়।
অধিকাংশ মানুষই সচেতন কিংবা অসচেতনভাবেই পানি অপচয় করে থাকে, যা প্রাণীকুলের জন্য ক্ষতিকর। তাই পানির গুরুত্ব বোঝা এবং এর সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এ উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো পানি দিবস নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি ও সেমিনার করবে।
এবারের পানি দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে— ‘মাটির নীচের পানি অশেষ নয়, আপনার সন্তানের স্বার্থে পানি ব্যবহারে যত্নশীল হউন’।