<p>বিশ্বে ১০ কোটি নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। বাংলাদেশে প্রতিবছর নতুন করে ১৫ হাজারের বেশি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। এদের মধ্যে ৯৮ শতাংশের বেশি নারী ও দুই শতাংশ পুরুষ। প্রতিবছর এ রোগে মারা যায় সাড়ে ৭হাজার মানুষ।</p> <p>রবিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সাত্তার হল রুমে ‘বিশ্ব ক্যান্সার দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি বাংলাদেশ এ তথ্য জানায়। এর আগে দুপুরে সোসাটির পক্ষ থেকে জাতীয় শহীদ মিনার থেকে দোয়েল চত্বর হয়ে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত ক্যান্সার বিষয়ক জনসচেতনতামূলক র‌্যালি ও লিফলেট বিতরণ করা হয়। </p> <p>আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বিশ্বে প্রতিবছর ৮২ লাখ মানুষ ক্যান্সারে মারা যায়। বিশেষ করে সাড়ে ১০ কোটি নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। দ্বিতীয় এ মরণব্যাধিতে আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে সচেতনতা ও শিক্ষার অভাব এবং অর্থনৈতিক অবস্থাকে বাংলাদেশে ক্যান্সারও এ রোগে মৃত্যুর হার বৃদ্ধির জন্য দায়ী।</p> <p>বিশেষ প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ (ভাইস চ্যান্সেলর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়), বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী  অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন, প্রকল্প সমন্বয়ক ও প্রধান, ক্যান্সার প্রতিরোধ বিভাগ, গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক ক্যান্সার প্রতিরোধ ও গবেষণা কেন্দ্র), আলি নিয়ামত, প্রধান উপদেষ্টা, ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি বাংলাদেশ, ঢাবি অ্যালামনাই নিউজ, সম্পাদক ও ক্যাট সভাপতি, দৈনিক বঙ্গজননী, অ্যাডভোকেট ড. কামাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার স্যোসাইটি বাংলাদেশ।</p> <p>সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ হুমায়ুন কবীর, প্রেসিডেন্ট, ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার স্যোসাইটি বাংলাদেশ।</p> <p>আলোচনা সভায় জানানো হয়, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করছে ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি বাংলাদেশ। দিবসটি উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের ৬৪ জেলা শহরে ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি বাংলাদেশ’র উদ্যোগে র‌্যালি ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। মূলত, ক্যান্সার সচেতনতা, ক্যান্সার পরবর্তী পদক্ষেপ ও ক্যান্সার রোধে করণীয় বিষয়াদি নিয়ে সারা দেশে সংস্থাটি নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।</p> <p><strong>যেসব কারণে ক্যান্সার হতে পারে</strong><br /> আমাদের জীবনাযাপনের ধরন এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে, সেটি একটি কারণ। এ ছাড়া কারো পরিবারে স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে হতে পারে। কারো যদি ১২ বছরের আগে ঋতুস্রাব হয় এবং দেরিতে মেনোপজ বা ঋতু বন্ধ হয়, তারাও ঝুঁকিতে থাকে। সেই সঙ্গে তেজস্ক্রিয় স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।</p> <p>গবেষণায় দেখা যায়, দেরিতে সন্তান গ্রহণ, আবার যাদের সন্তান নেই বা সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, খাদ্যাভ্যাসে শাকসবজি বা ফলমূলের চাইতে চর্বি ও প্রাণিজ আমিষ বেশি থাকলে এবং প্রসেসড ফুড বেশি খেলে এবং অতিরিক্ত ওজন যাদের তাদেরও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।</p> <p>এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাচ্ছেন বা হরমোনের ইনজেকশন নিচ্ছেন, তারাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।একইসঙ্গে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে। বিশেষ করে ৫০ বছর বয়সের পর এই ঝুঁকি অনেক বেশি বেড়ে যায়। তখন আর করার কিছু থাকে না।</p> <p>স্তন ক্যান্সার সাধারণত দুভাবে শনাক্ত করা যায়- ১. স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ও ২. রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে। স্ক্রিনিং আবার দুভাবে করা যায়- ১. নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করা ও ২. ডাক্তার বা নার্সের সাহায্যে পরীক্ষা করা। স্তন রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও প্রধানত দুটি পদ্ধতি রয়েছে- ১. মেমোগ্রাম বা স্তনের বিশেষ ধরনের এক্স-রে ও ২. স্তনের আলট্রাসনোগ্রাম।</p> <p>এ ছাড়া এমআরআই এবং বায়োপসির মাধমেও স্তন ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়ে থাকে। স্তন ক্যান্সার শনাক্তকরণের পরবর্তী পর্যায় হলো এর সঠিক চিকিৎসা করা। স্তন ক্যান্সারের যে চিকিৎসাগুলো প্রধানত রয়েছে তা হলো সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ও হরমোন  থেরাপি।</p> <p><strong>ক্যান্সার প্রতিরোধী যেসব খাবার খেতে হবে </strong><br /> অনেক বেশি আঁশযুক্ত খাবার ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমাতে পারে। এর ফলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে। মটরশুঁটি, তাজা ফল, আস্ত শস্য এবং ফ্ল্যাভনয়েড, ক্রুসিফেরাস ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট (ব্রোকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি) ও ক্যারোটিনয়েড সমৃদ্ধ সবজি খেতে হবে। পেঁয়াজ, রসুন, পেঁয়াজ পাতা ইত্যাদি সবজিগুলো ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি র‌্যাডিকেলকে নিরপেক্ষ করে এবং ক্যান্সার কোষের বিভক্ত হওয়া প্রতিরোধ করে। এ ধরনের সবজি কাঁচা খেলেই সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। সয়াবিন ও অন্য সয়া পণ্য যেমন- টফু ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। কিন্তু মিষ্টি স্বাদের ও রিফাইন্ড সয়া পণ্য যেমন- সয়া দুধ ও সয়া তেল এড়িয়ে চলুন। মনে রাখবেন চিনি ক্যান্সারের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। চিনি ক্যান্সার জিনকে সক্রিয় করে এবং ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিতে জ্বালানি হিসেবে কাজ করে।</p> <p><strong>করতে হবে শারীরিক ব্যায়াম</strong><br /> যেসব নারীরা দৈনিক ৩০-৪৫ মিনিট ব্যায়াম করেন তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি যারা ব্যায়াম করে না তাদের চেয়ে কম। প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা সম্ভব হলে শুধু ক্যান্সারযুক্ত গোটা ও আশপাশের কিছু অংশ অপারেশন করে ফেলে দিলে এবং পরবর্তীকালে রেডিওথেরাপি দিলে রোগী সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করেন।</p>