<p style="text-align:justify">সচিবালয়ে বুধবার গভীর রাতের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডকে অনেকে স্বাভাবিক অগ্নিকাণ্ড বলে মনে করছে না। সচিবালয়ের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা থেকে ছবি সংগ্রহ করে দেখা হচ্ছে, রাতের বেলা কেউ ওই ভবনে গিয়ে আগুনের ঘটনা ঘটিয়েছে কি না। এ ছাড়া ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা থেকে আগুনের সূত্রপাত খোঁজার চেষ্টাও করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।</p> <p style="text-align:justify"><img alt="দুর্ঘটনা না নাশকতা নানা প্রশ্ন, সন্দেহ" height="240" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/27/1735244502-627c735dfe8bc2a9bcf62bba994e7be4.jpg" style="float:left" width="400" /></p> <p style="text-align:justify">এর আগেও সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা ঘটলেও এত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। ফলে পুরো ঘটনাটিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া সচিবালয়ের মতো কেপিআইভুক্ত এলাকায় আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ১০ ঘণ্টা সময় লেগে যাওয়া নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">ভবনটির দুই মাথায় আগুন লাগার বিষয়টিকেও অনেকে সন্দেহের চোখে দেখছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বৈদ্যুতিক তারের মাধ্যমে আগুন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছড়াতে পারে।</p> <p style="text-align:justify">খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সচিবালয়ের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা থেকে ছবি সংগ্রহ করে দেখা হচ্ছে, রাতের বেলা কেউ ওই ভবনে গিয়ে আগুনের ঘটনা ঘটিয়েছে কি না। এ ছাড়া ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা থেকে আগুনের সূত্রপাত খোঁজার চেষ্টাও করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।</p> <p style="text-align:justify">গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, তাঁর কাছে এটি স্বাভাবিক ঘটনা মনে হচ্ছে না। তবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের আগে বলা যাবে না নাশকতা কি না।</p> <p style="text-align:justify">বুধবার মধ্যরাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের ষষ্ঠ তলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর আগুনের ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ইউনিট পাঠাতে থাকে। পরে ১৯টি ইউনিট কাজ করে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। এরপর ঘটনাটি নাশকতা কি না তা খুঁজে বের করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">সচিবালয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণকারী এক ফায়ারফাইটার কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি বহুদিন ধরে আগুন নেভানোর কাজ করছেন। কিন্তু সচিবালয়ের যে আগুন, এমন আগুন এর আগে কখনো দেখেননি। অন্য জায়গায় আগুন ধরার পর একসঙ্গে পুরো তলা জ্বলে যায়। কিন্তু এখানে দেখা গেছে ভবনের দুই মাথায় আগুন। মাঝে কিছু হয়নি। যেখানে আগুন জ্বলেছে সেখানে তাপমাত্রা খুব বেশি ছিল। </p> <p style="text-align:justify">স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সচিবালয়ে ৭ নম্বর ভবনে আগুনের ঘটনাটি ষড়যন্ত্রের অংশ কি না, কিংবা এর পেছনে নাশকতা আছে কি না; সেটা তদন্তের আগে বলা যাবে না। এ ঘটনা তদন্তের জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">সচিবালয়ের মতো এত সুরক্ষিত একটা জায়গায় কিভাবে অগ্নিকাণ্ড ঘটল—এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘অ্যাকসিডেন্ট (দুর্ঘটনা) তো সব জায়গায় হতে পারে। এ জন্যই তো অ্যাকসিডেন্ট বলে। সচিবালয়ে হতে পারে বলেই তো ভেতরে (ফায়ার সার্ভিসের) গাড়ি রাখা হয়।’  প্রাথমিকভাবে নাশকতা মনে করছেন কি না, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা বলতে পারব না। একটা ইনভেস্টিগেশনের পরে বলতে পারব।’</p> <p style="text-align:justify">আগুনের উৎসর বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস কিছু জানিয়েছে কি না, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা তদন্তের পরে বলতে পারব। এখন কী হচ্ছে, আমরা দেখব। পুরোটা সার্চ করার পরে কিছু পাওয়া যায় কি না, আমরা জানাব।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>আগুন নেভাতে দেরির কারণ </strong></p> <p style="text-align:justify">খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সচিবালয়ে আগুন লাগার পর প্রথমে সচিবালয়ের ফায়ার ইউনিটের দুই সদস্য এক্সটিঙ্গুইশার নিয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে ৭ নম্বর ভবনের কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ থাকায় ঢুকতে পারেননি। পরে তালা কাটার যন্ত্রপাতি নিয়ে তালা কেটে ওপরে ওঠা হয়। ষষ্ঠ তলায় গিয়েও ফায়ারফাইটাররা আবারও দেখতে পান কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ।</p> <p style="text-align:justify">এসব কেটে পানির পাইপ ঢোকানো হয়। এতে কিছুটা সময় ব্যয় হয়। ততক্ষণে আগুন ওপরের দিকে উঠতে থাকে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগুনের ধরন দেখে রাসায়নিক ছিল কি না তা তদন্তর পর বোঝা যাবে। কারণ দ্রুতগতিতে আগুন ওপরের দিকে উঠে যায়।</p> <p style="text-align:justify">ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল জানান, ৭ নম্বর ভবনের প্রতিটি কক্ষ বন্ধ ছিল। এ কারণে বাইরে থেকে পানি দেওয়া কঠিন ছিল। তিনি বলেন, ‘বড় গাড়িগুলো সচিবালয়ে ঢুকতে না পারায় কাজে বেগ পেতে হয়। সামনের গেট ভেঙে দুটি গাড়ি ঢুকিয়েছি। ভবনের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম—এই চারটি তলায় আগুন ধরে।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করে সচিবালয়ে আগুন লাগানো হয়েছে : সারজিস আলম</strong></p> <p style="text-align:justify">সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডটি ‘ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পিত’ বলে মন্তব্য করেছেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। তিনি বলেন, ‘সচিবালয়ে যেভাবে আগুন লেগেছে এবং এটার ধরন, অবস্থান যেমন, এটা কখনোই সাধারণভাবে বা ন্যাচারালি বা কোনো দুর্ঘটনাবশত আগুন হতে পারে না। আমরা আমাদের জায়গা থেকে মনে করি, ষড়যন্ত্র করে, প্ল্যান (পরিকল্পনা) করে এই আগুন লাগানো হয়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">গতকাল পঞ্চগড় সরকারি অডিটরিয়ামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে মতবিনিময়সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।</p> <p style="text-align:justify">সারজিস আলম বলেন, ‘ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে যারা সরকারে প্রতিনিধিত্ব করছে, নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ; তাদের অফিসগুলো জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে গেছে। সেখানে খুনি শেখ হাসিনার দালালদের বিভিন্ন সময়ের অন্যায়, অপকর্ম, দুর্নীতির ফাইলগুলো ছিল। এই ফাইলগুলো তারা যখন বিভিন্নভাবে তদন্ত করছিল, সংরক্ষণ করছিল বিচারের জন্য, ঠিক তখনই সচিবালয়ে পরিকল্পনা করে এ রকম একটি অগ্নিকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।’ </p>