<p style="text-align:justify">সম্প্রতি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও খোলাবাজারে খাদ্যশস্য বিক্রির (ওএমএস) নতুন নীতিমালা জারি করেছে সরকার। এই দুই নীতিমালায় ডিলার নিয়োগ ও উপকারভোগী/সুবিধাভোগীদের বাছাইয়ে জেলা ও উপজেলা কমিটিতে জনপ্রতিনিধিদের (সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র) প্রতিনিধি রাখা হয়নি। </p> <p style="text-align:justify">আগের নীতিমালায় এসব কমিটিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মনোনীত প্রতিনিধি রাখার বিধান ছিল। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী এই দুই কর্মসূচিতে ডিলার ও ভোক্তা বাছাই করবেন জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা।</p> <p style="text-align:justify">এতে ডিলার নিয়োগ ও সুবিধাভোগী বাছাইয়ে রাজনৈতিক চাপ কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, অনিয়মের জন্য ডিলারদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যাবে।</p> <p style="text-align:justify">এসব বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে খাদ্যসচিব মাসুদুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি দেখব। আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই তাড়াহুড়া করে নতুন নীতিমালা করা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">স্টেকহোল্ডারদের মতামত ছাড়াই তা জারি করা হয়েছে। নীতিমালায় বেশ কিছু রদবদল আনা হয়েছে। কমিটিতে জনপ্রতিনিধিদের প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়নি। নীতিমালা তো প্রতিদিন করা হবে না।</p> <p style="text-align:justify">সেখানে বিকল্প সুযোগ রাখা যেত। তবে ডিলার নিয়োগ ও সুবিধাভোগী নির্বাচনে স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক চাপ কমবে বলে মনে করছি আমরা।’</p> <p style="text-align:justify">আমলারাই বাছাই করবেন ডিলার ও উপকারভোগীখাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ওএমএসের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী খাদ্যশস্য বিক্রির জন্য বিক্রয়কেন্দ্র ও ডিলার নির্বাচনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ অন্য সিটি করপোরেশন এবং জেলা ও উপজেলায় কমিটি থাকবে। ঢাকায় দুই সিটি করপোরেশনের কমিটির সভাপতি হবেন বিভাগীয় কমিশনার। অন্য সিটি করপোরেশনগুলোর কমিটিতেও সভাপতি হবেন বিভাগীয় কমিশনার।</p> <p style="text-align:justify">জেলা কমিটির সভাপতি হবেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা কমিটির প্রধান ইউএনও। আগের নীতিমালায় জেলা কমিটিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের মনোনীত প্রতিনিধি এবং উপজেলা কমিটিতে উপজেলা চেয়ারম্যানের একজন প্রতিনিধি রাখার বিধান ছিল।</p> <p style="text-align:justify">একইভাবে নতুন নীতিমালায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপজেলা কমিটি থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এর আগে, আওয়ামী লীগ সরকার সর্বশেষ ২০১৭ সালে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির নীতিমালা করেছিল। সেখানে সংসদ সদস্য উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির প্রধান উপদেষ্টা এবং উপজেলা চেয়ারম্যান উপদেষ্টা ছিলেন।</p> <p style="text-align:justify">খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এসব কর্মসূচির সুবিধাভোগী হওয়ার উপযুক্ত না হলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় কর্মসূচির সুবিধাভোগী হয়েছেন। যাঁরা উপযুক্ত নন, কিন্তু এই কর্মসূচির সুবিধা পাচ্ছেন, বর্তমান সরকার তাঁদের বাদ দিয়ে নতুন করে নীতিমালা অনুযায়ী উপযুক্তদের অন্তর্ভুক্ত করবে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>ওএমএসের নতুন নীতিমালায় যা আছে</strong></p> <p style="text-align:justify">নতুন নীতিমালা অনুযায়ী অনিয়মের জন্য ডিলারদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যাবে। আগের নীতিমালায় ওএমএস ডিলারদের অনিয়ম কিংবা শর্ত ভঙ্গের জন্য কোনো শাস্তির ব্যবস্থা ছিল না। নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো শর্ত লঙ্ঘন করলে বা দেশের প্রচলিত কোনো আইন অমান্য করলে, ডিলারশিপ বাতিল করা যাবে এবং অঙ্গীকারনামার শর্ত মোতাবেক তাঁর কাছ থেকে অর্থ আদায় করা যাবে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি বা দেওয়ানি মামলা দায়ের করা যাবে।</p> <p style="text-align:justify">ওএমএস ডিলার তাঁর অনুকূলে বরাদ্দ করা খাদ্যশস্য কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া যথাসময়ে উত্তোলন না করলে তাঁর ডিলারশিপ বাতিল বা জামানত বাজেয়াপ্ত করা যাবে। ডিলার নিয়োগের সময় ডিলারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকার ফেরতযোগ্য জামানত পে-অর্ডার আকারে গ্রহণ করতে হবে। আগের নীতিমালা অনুযায়ী, ২৫ হাজার টাকা জামানত নেওয়া হতো। খাদ্যশস্য আত্মসাৎ বা মাস্টাররোল ও মজুদ রেজিস্টার থেকে বাড়তি কিংবা ঘাটতি হলে ওই পরিমাণ খাদ্যশস্যের অর্থনৈতিক মূল্যের দ্বিগুণ হারে আদায়যোগ্য হবে এবং ডিলারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যাবে বলে নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">এতে আরো বলা হয়, ডিলার সময়মতো দোকান না খুললে বা ভোক্তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে কিংবা নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত বিক্রি করলে বা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি করলে, ওজন/পরিমাণে কম দিলে, যথাযথ ব্যানার দৃশ্যমান স্থানে টাঙানো না হলে এবং পরিদর্শন ও মজুদ রেজিস্টার, ডিও, বরাদ্দ আদেশ, চাল/আটার ভাউচার সংরক্ষণ না করাসহ বিবিধ অনিয়মের জন্য ডিলারের কার্যক্রম স্থগিত করা যাবে।</p> <p style="text-align:justify">ওএমএস কার্যক্রম চলাকালে ডিলার বা তাঁর প্রতিনিধি নির্ধারিত ওএমএস কেন্দ্রে উপস্থিত না থাকলে ডিলারশিপ কার্যক্রম স্থগিত করা যাবে। কোনো ডিলার একনাগাড়ে ১৫ দিন খাদ্যশস্য উত্তোলনে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ডিলারের ডিলারশিপ বাতিল করা হবে।</p>