বিশ্ব সম্মেলন

আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণ রোধে পদক্ষেপ আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণ রোধে পদক্ষেপ আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার
সংগৃহীত ছবি

পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আন্ত:সীমান্ত বায়ুদূষণ মোকাবিলায় কার্যকর আঞ্চলিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বায়ুদূষণের ৩০-৩৫ শতাংশ আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে।

তাই, এ সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক আলোচনার গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব পদক্ষেপ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জরুরি। তিনি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর কাঠমান্ডু রোডম্যাপ ও অন্যান্য সমঝোতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এগুলো যথেষ্ট নয়, আরো জোরালো উদ্যোগ প্রয়োজন।

বৃহস্পতিবার ভোরে কলম্বিয়ার কার্টাগেনায় অনুষ্ঠিত WHO দ্বিতীয় বৈশ্বিক সম্মেলনের বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া সাইড ইভেন্টে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। ঢাকাস্থ তাঁর বাসভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে তিনি বাংলাদেশের বায়ুদূষণ সমস্যা, বিশেষ করে ঢাকার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন।

উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের বহুমাত্রিক বায়ুদূষণ সমস্যা মোকাবিলায় বায়ু মান নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা WHO-এর অন্তর্বর্তীকালীন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই আইনি বিধিমালায় দূষণকারী খাতগুলোর জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

তিনি জানান, ২০২৪ সালে চূড়ান্ত হওয়া জাতীয় বায়ু মান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পিছিয়ে ছিল, তবে এখন তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো মানুষের দূষণজনিত ঝুঁকি কমানো ও পরিষ্কার বায়ুর দিন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

পরিবেশ উপদেষ্টা আরো জানান, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে শিগগিরই বাস্তবায়ন শুরু হবে। এই প্রকল্প নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করা, আইন প্রয়োগ জোরদার করা, শিল্প কারখানায় দূষণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং গণপরিবহন খাত আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দেবে।

তিনি ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলোকে ইটভাটা মুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনার কথা জানান, যেখানে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকবে। এছাড়া, ২০২৫ সালের মে থেকে পুরনো বাস ধাপে ধাপে তুলে দেওয়া হবে, যা পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে।

তিনি বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ ধুলাবালি দূষণ রোধে ঢাকা শহরের খোলা সড়কগুলোতে সবুজায়নের উদ্যোগ এবং রাস্তা পরিস্কারে আরো শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানান। অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানের ফলে ইতোমধ্যে বায়ু মানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তবে এই অগ্রগতি ধরে রাখতে কঠোর নজরদারি ও খাতসমূহের আধুনিকায়ন জরুরি।

রিজওয়ানা হাসান জানান, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় বিপুল পরিমাণ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায়, এবং ঢাকার মতো দূষিত শহরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৫-৭ বছর কমে যাচ্ছে।

এই সংকট আমাদের সবার জন্য, আমাদের শিশু, বাবা-মা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি। নিষ্ক্রিয়তার মূল্য অনেক বেশি—আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে, তিনি জোর দিয়ে বলেন।

আশাবাদী কণ্ঠে তিনি বলেন, আমি আশাবাদী কারণ আমি বিশ্বাস করি, এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রযুক্তি ও বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের হাতে রয়েছে, শুধু প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন দরকার। বায়ুদূষণ শুধুই পরিবেশগত ইস্যু নয়, এটি মানবিক সংকট।

সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি, পরিবেশ ও জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, গবেষক, স্থানীয় প্রশাসন, পরিবহন ও শিল্পখাতের বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তারা দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ রোধে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

শেষ মুহূর্তেও স্বস্তি নিয়ে ঢাকা ছেড়েছেন ঘরমুখো মানুষ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
শেষ মুহূর্তেও স্বস্তি নিয়ে ঢাকা ছেড়েছেন ঘরমুখো মানুষ
সংগৃহীত ছবি

প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে এবার স্বস্তিতে বাড়ি ফিরেছেন মানুষ। শেষ মুহূর্তেও কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীর তেমন ভিড় দেখা যায়নি, বেশিরভাগ ট্রেন খালি আসন নিয়েই ছেড়ে গেছে।

যাত্রীরা জানিয়েছেন, এবারের ব্যবস্থাপনা আগের চেয়ে অনেক ভালো ছিল। স্টেশনে আগেভাগে এলেও অতিরিক্ত ভিড় বা বিশৃঙ্খলার মুখে পড়তে হয়নি।

প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষমাণ কয়েকজন যাত্রী বলেন, ‘আমরা ভিড়ের আশঙ্কায় আগে এসেছি, কিন্তু এসে দেখলাম পরিবেশ অনেক স্বস্তিদায়ক। টিকিটধারীরাই নির্বিঘ্নে ট্রেনে উঠতে পারছেন।’

রবিবার (৩০ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টার দিকে কমলাপুর স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, যাত্রীরা নির্ধারিত ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন। ট্রেন ছাড়ার আগে টিটিইরা টিকিট যাচাই করেন।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বেশিরভাগ ট্রেন ছেড়ে গেছে। রাত পৌনে ১০টার দিকে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনটি আসন খালি নিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে যাত্রা করে।

কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের যাত্রী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ভাবছিলাম ট্রেন পেতে কষ্ট হবে, কিন্তু স্টেশনে এসে দেখলাম পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ট্রেনে উঠতে কোনো ঝামেলা হয়নি, সময়মতো ছাড়ার বিষয়টিও স্বস্তিদায়ক।

অন্য এক যাত্রী বলেন, ‘অন্যান্য বছর ট্রেনযাত্রা বেশ কষ্টকর হলেও এবার ব্যতিক্রম। ভিড় কম ছিল, ট্রেনের পরিবেশও ভালো ছিল। নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারছি, এটি সত্যিই আনন্দের।’

এর আগে রাত ৯টা ২০ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে মহানগর এক্সপ্রেস এবং রাত ৯টায় দ্রুতযান এক্সপ্রেস স্টেশন ছাড়ে। রাত ১২টার দিকে সর্বশেষ ট্রেন বেনাপোল এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।

এ পর্যন্ত কমলাপুর থেকে ৫০টিরও বেশি ট্রেন ছেড়ে গেছে।

কমলাপুর রেলস্টেশনের মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শেষ ভালো তো সব ভালো। এবারের ঈদযাত্রায় ট্রেন চলাচল স্বস্তিদায়ক ছিল। তবে গতকাল পোশাক কারখানাগুলো ছুটি হওয়ায় স্টেশনে উপচে পড়া ভিড় ছিল। আজকের সব ট্রেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ছেড়ে গেছে, অনেকগুলো ট্রেন খালি আসন নিয়েই যাত্রা করেছে।’

এদিকে মোবাইল অপারেটর কম্পানিগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত দুই দিনে প্রায় ৪১ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন।

মন্তব্য

রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
সংগৃহীত ছবি

‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।’

গানটি বেজে উঠলেই ছেলে-বুড়ো সবার মন দুলে ওঠে আনন্দে। প্রায় এক শ বছর ধরে বাঙালির ঈদ-আনন্দের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হয়ে আছে কাজী নজরুল ইসলামের লেখা গানটি। এ গান বাজার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনের আঙিনায় বানের মতো হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে স্মৃতির লহর।

 

ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়ার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে টেলিভিশনে, রেডিওতে বাজতে শুরু করে গানটি। এ গান ছাড়া রমজানের ঈদ আমাদের অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সত্যি বলতে কী, গানটি ছাড়া বাঙালির ঈদুল ফিতরের কথা তো ভাবাই যায় না। এটি হয়ে উঠেছে আমাদের জাতীয় ঈদ-সংগীত।

 

আরো পড়ুন
‘ঈদগাহের মোনাজাতে তাদের স্মরণ করতে ভুলব না’

‘ঈদগাহের মোনাজাতে তাদের স্মরণ করতে ভুলব না’

 

আপামর বাঙালির মননে গেঁথে যাওয়া এই গানটি কাজী নজরুল লিখেছিলেন জনপ্রিয় শিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমদের অনুরোধে, ১৯৩১ সালে। গানটি লেখার পেছনে আছে অসাধারণ এক গল্প।

আব্বাসউদ্দীন আহমদের আত্মজীবনী ‘আমার শিল্পী জীবনের কথা’ থেকে জানা যায়, নজরুলের সঙ্গে আব্বাসউদ্দীনের ছিল বেশ সুসম্পর্ক। আব্বাসউদ্দিন বয়সে একটু ছোট হলেও দুজনের সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতোই।

নজরুলকে তিনি শ্রদ্ধা করে, ভালোবেসে ডাকতেন কাজীদা। 

কাজী নজরুল ইসলাম তখন শ্যামাসংগীত লিখে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। অন্যদিকে তার লেখা কিছু গান রেকর্ড করেছেন আব্বাসউদ্দীনও। সেসবের মধ্যে অন্যতম ‘বেণুকার বনে কাঁদে বাতাস বিধুর’, ‘অনেক কিছু বলার যদি দুদিন আগে আসতে’, ‘গাঙে জোয়ার এল ফিরে তুমি এলে কই’, ‘বন্ধু আজও মনে পড়ে আম কুড়ানো খেলা’ ইত্যাদি।

এক রাতে রেকর্ডিং শেষে বাড়ি ফিরছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।

ফেরার পথে তাকে আটকালেন শিল্পী আব্বাসউদ্দীন। বললেন, ‘কাজীদা, একটা কথা মনে হয়। এই যে পিয়ারু কাওয়াল, কাল্লু কাওয়াল এরা উর্দু কাওয়ালি গায়, এদের গানও শুনি অসম্ভব বিক্রি হয়। এই ধরনের বাংলায় ইসলামী গান দিলে হয় না? তারপর আপনি তো জানেন কিভাবে কাফের-কুফর ইত্যাদি বলে বাংলার মুসলমান সমাজের কাছে আপনাকে অপাঙক্তেয় করে রাখার জন্য আদাজল খেয়ে লেগেছে একদল ধর্মান্ধ! আপনি যদি ইসলামী গান লেখেন, তাহলে মুসলমানের ঘরে ঘরে আবার উঠবে আপনার জয়গান।’

আরো পড়ুন
ঈদুল ফিতরের জন্য বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা যেভাবে সাজে

ঈদুল ফিতরের জন্য বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা যেভাবে সাজে

 

এ প্রস্তাব পেয়ে নজরুল পড়ে গেলেন দোটানায়। কারণ বাজারে তখন শ্যামা সংগীতের মোটামুটি একচ্ছত্র আধিপত্য। স্বয়ং নজরুলও শ্যামা সংগীত লেখেন, সুর করেন। ইসলামী ধারার গানের বাজারই গড়ে ওঠেনি তখন। এই অবস্থায় স্রোতের বিপরীতে গিয়ে কাজ করে সফল হতে না পারলে ক্যারিয়ারই বরবাদ হয়ে যেতে পারে। 

অন্যদিকে ইসলামের সঙ্গেও যে নজরুলের আবেগ জড়িয়ে আছে! ইসলামকে তো তিনিও ভালোবাসেন। কিন্তু চাইলেই তো গান রেকর্ড করে ফেলা যায় না, সেজন্য লাগে সরঞ্জাম, লাগে লগ্নি। এসব বন্দোবস্তের জন্য ধরনা দিতে হবে গ্রামোফোন কোম্পানির রিহার্সেল-ইন-চার্জ ভগবতী ভট্টাচার্যের কাছে। তাই নজরুল বললেন, 'আব্বাস, তুমি ভগবতীবাবুকে বলে তাঁর মত নাও। আমি ঠিক বলতে পারব না।'

এবার আব্বাসউদ্দীন গেলেন গ্রামোফোন কম্পানির রিহার্সেল-ইনচার্জকে ভগবতী ভট্টাচার্যের কাছে। প্রস্তাব শুনে ভগবতী বাবু তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন। এককথায় মানা করে দিলেন ইসলামি ধারার গান করার প্রস্তাব। চলতি স্রোতের বিরুদ্ধে গিয়ে গান করে ব্যবসায় লালবাতি জ্বালাতে রাজি না তিনি। অগত্যা মনের দুঃখ মনে চেপে চুপ মেরে গেলেন আব্বাসউদ্দীন। 

এরপর প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেল। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে একদিন দুপুরে। নিজের অফিস থেকে গ্রামোফোন কম্পানির রিহার্সেল ঘরে গেছেন আব্বাসউদ্দীন। গিয়ে দেখেন একটা ঘরে বেশ ফুরফুরে মেজাজে গল্প করছেন ভগবতীবাবু। তার খোশমেজাজ দেখে আব্বাসউদ্দীন ভাবলেন, এই তো সুবর্ণ সুযোগ।

আব্বাসউদ্দীন ঝটপট বলে ফেললেন, 'যদি কিছু মনে না করেন, তাহলে বলি। সেই যে বলেছিলাম ইসলামি গান দেবার কথা, আচ্ছা, একটা এক্সপেরিমেন্টই করুন না, যদি বিক্রি না হয় আর নেবেন না, ক্ষতি কী?' 

এত জনপ্রিয় শিল্পীকে এবার আর ফেরাতে পারলেন না ভগবত বাবু। হেসে বললেন, 'নেহাতই নাছোড়বান্দা আপনি, আচ্ছা আচ্ছা, করা যাবে।'

আরো পড়ুন
বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় ঈদ শুভেচ্ছা

বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় ঈদ শুভেচ্ছা

 

সেদিন আব্বাসউদ্দীনের ভাগ্য ছিল ভীষণ ভালো। ওখানে বসেই শুনলেন পাশের ঘরেই আছেন আছেন কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি তৎক্ষণাৎ গিয়ে নজরুলকে বললেন যে ভগবতবাবু রাজি হয়েছেন। 

নজরুল তখন ইন্দুবালাকে গান শেখাচ্ছিলেন। খবর শুনে তিনি ইন্দুবালাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে গান লিখতে বসলেন আব্বাসউদ্দীনের জন্য। তার জন্য এক ঠোঙা পান আর চা আনিয়ে দিলেন আব্বাসউদ্দীন। তারপর দরজা বন্ধ করে আধ ঘণ্টার মধ্যেই নজরুল লিখে ফেললেন সেই বিখ্যাত গান—'ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ'।

লেখার সঙ্গে সঙ্গে সুরসংযোগ করে শিখিয়ে দিলেন আব্বাসউদ্দীনকে। পরদিন তাকে ঠিক একই সময় যেতে বললেন নজরুল। পরদিন তিনি লিখলেন: 'ইসলামের ঐ সওদা লয়ে এলো নবীন সওদাগর'।

লেখার চারদিন পরে রেকর্ড করা হলো গান দুটো। তার দু-মাস পরে ঈদুল ফিতর। আব্বাসউদ্দীনকে বলা হলো, ঈদের সময় গান দুটো বাজারে বের হবে।

ঈদের ছুটিতে কলকাতা থেকে বাড়ি গেলেন আব্বাসউদ্দীন। বন্ধের সঙ্গে আরও বিশ-পঁচিশ দিন বাড়তি ছুটি নিয়েছিলেন। তাই নতুন ইসলামি গান কেমন চলল, তা জানার সুযোগ পাননি। তারপর ঈদে যে গানটি বাজারে ছাড়ার কথা রয়েছে, সে কথা ভুলেই গেলেন।

ঈদের ছুটি শেষে কলকাতা ফিরে এসে ট্রামে চড়ে অফিসে যাচ্ছেন আব্বাসউদ্দীন। হঠাৎ শুনলেন ট্রামে তার পাশে বসা এক যুবক গুনগুন করে গাইছে, 'ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে।' 

আরো পড়ুন
ঈদের নামাজ যেভাবে পড়বেন

ঈদের নামাজ যেভাবে পড়বেন

 

শুনে একটু অবাকই হলেন আব্বাসউদ্দীন। এই যুবক এ গান শুনল কীভাবে? অফিস ছুটির পর গড়ের মাঠে বেড়াতে গিয়েও শোনেন মাঠে বসে একদল ছেলের মাঝে একটি ছেলে গেয়ে উঠল—'ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে।' 

তখন আব্বাসউদ্দীনের মনে পড়ল এ গান তো ঈদের সময় বাজারে বের হবার কথা। সঙ্গে সঙ্গে চলে গেলেন সেনোলা রেকর্ড কোম্পানীর বিভূতিদার দোকানে গেলাম। আব্বাসউদ্দীনকে দেখেই তাকে জড়িয়ে ধরলেন বিভূতিবাবু। সন্দেশ, রসগোল্লা, চা আনিয়ে খেতে দিলেন। আব্বাসউদ্দীনের গান দুটো আর আর্ট পেপারে ছাপানো তার বিরাট ছবির একটা বান্ডিল সামনে রেখে বললেন, 'বন্ধু-বান্ধবদের কাছে বিলি করে দিও। আমি প্রায় সত্তর আশী হাজার ছাপিয়েছি, ঈদের দিন এসব বিতরণ করেছি। আর এই দেখ দু'হাজার রেকর্ড এনেছি তোমার।'

এ কথা শুনে আনন্দে নেচে উঠল আব্বাসউদ্দীনের মন। সঙ্গে সঙ্গে ছুটলেন কাজী নজরুলের বাড়িতে। সেখানে গিয়ে শুনলেন নজরুল রিহার্সেল রুমে গেছেন। সটান সেখানে গিয়ে হাজির হলেন আব্বাসউদ্দীন। তার গলার স্বর শুনে লাফিয়ে উঠলেন দাবা খেলায় মগ্ন নজরুল। তাকে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, 'আব্বাস তোমার গান কী যে—' 

ওইটুকু কথাতেই বুঝিয়ে দিলেন, তাদের গান তোলপাড় ফেলে দিয়েছে বাজারে। বাংলার মুসলমানের ঘরে ঘরে বাজছে তাদের গান। আনন্দে চট করে নজরুলকে কদমবুসি করে ফেললেন আব্বাসউদ্দীন।

ওদিকে গানের সাফল্যে মহাখুশি ভগবতীবাবুও। এরপর একের পর এক ইসলামি ধারার গান লিখলেন নজরুল, গাইলেন আব্বাসউদ্দীন। নতুন জোয়ার এল বাংলা গানের ধারায়। 

এভাবেই জন্ম হলো এক অবিস্মরণীয় গানের আর সেই গান হয়ে উঠল আমাদের ঈদ উদযাপনের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। আমাদের সবার শৈশব-কৈশোরের ঈদ উদযাপনের রঙিন স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে গেল ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’ গানটি।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ফ্যাসিবাদের পতনে ঈদ আনন্দে স্বস্তি যোগ হয়েছে : মাহফুজ আলম

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ফ্যাসিবাদের পতনে ঈদ আনন্দে স্বস্তি যোগ হয়েছে : মাহফুজ আলম
মাহফুজ আলম। ফাইল ছবি

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম।

আজ রবিবার এক শুভেচ্ছা বার্তায় উপদেষ্টা বলেন, ‘ঈদুল ফিতর আনন্দ, সহমর্মিতা, সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির এক মহিমান্বিত বার্তা নিয়ে এসেছে। ঈদ হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানি ভুলে মানুষকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার শিক্ষা দেয়।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতন হওয়ায় মানুষের ঈদ-আনন্দের সঙ্গে এবারে এক ধরনের স্বস্তি যোগ হয়েছে।

উপদেষ্টা আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সামর্থ্যবানদের প্রতি আহ্বান জানান। 

তিনি মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম উম্মাহর উত্তরোত্তর উন্নতি, সমৃদ্ধি ও অব্যাহত শান্তি কামনা করেন।

মন্তব্য
বিডা চেয়ারম্যান

৩০ চীনা কম্পানির ১০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি মিলেছে

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
৩০ চীনা কম্পানির ১০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি মিলেছে
সংগৃহীত ছবি

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরে দেশটির সরকার এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ, অনুদান ও বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশ পেয়েছে। এর মধ্যে ১০০ কোটি ডলারের বেশি হবে বিনিয়োগ।

রবিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘চীনের ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রতিশ্রুতির কথা আমরা বলছি।

এই অর্থ আগের সব বড় বড় অংকের থেকে একটি বড় কারণে ভিন্ন। কারণ আগে যে বড় অংকের অর্থ নিশ্চিত করে আসা হয়েছে সেগুলো ছিল ঋণ। ঋণের একটা ইতিবাচক দিক হলো, নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টাকা চলে আসে, নেতিবাচক হলো, এই টাকা আমাদের ফেরত দিতে হয়। সুতরাং আমাদের অর্থনীতিতে এই টাকা ঢোকে এবং সুদসহ বের হয়ে যায়।
সেই জায়গায় যদি বিনিয়োগ আসে, সেটি আমাদের অর্থনীতিতে থেকে যায়। এই টাকা কখনো এই দেশ থেকে যাবে না। এই বিনিয়োগের ফলে যে পরিমাণ কর্মসংস্থান হবে সেটা ঋণ থেকে কখনোই হয় না।

আশিক চৌধুরী বলেন, ‘এবার এই ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার থেকে ১ বিলিয়নের বেশি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি।

এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ৩০টি চীনা কম্পানি। এটি মূলত চট্টগ্রামের আনোয়ারাতে চীনা শিল্প ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের ওপর নির্ভর করে। প্রায় ৮০০ একর জমির ওপর এই শিল্পাঞ্চল তৈরির কাজ চলছে। এই জোনের কাজ অনেক আগেই শুরু হয়েছিল, কিন্তু ২০২২ সালের পর এটা নিয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। গত তিন মাসে আমরা এখানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি এবং অনেকগুলো বড় সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে।
তাদের সঙ্গে একটা নেগসিয়েশনে এসেছে, যে কারণে বিনিয়োগকারীরা এখন খুবই কনফিডেন্ট অনুভব করছেন যে, এই বছরের কোনো এক সময় আমরা নির্মাণকাজ শুরু করব। জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, এখন আমরা নির্মাণ কাজে যাব। সেটার ওপর নির্ভর করেই কিন্তু চীনা কম্পানি আমাদের এখানে আসার চিন্তা করছে।’

এবারের চীন সফরে স্বাস্থ্য সেবা একটা বড় বিষয় ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১২ শতাংশের মতো এসেছে অনুদান, যা প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলারের মতো। এর মধ্যে ১৫০ মিলিয়ন ডলার কারিগরি সহায়তার জন্য এবং ১০০ মিলিয়ন হাসপাতাল তৈরির জন্য। চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে বাংলাদেশে অত্যাধুনিক হাসপাতাল তৈরি করা এবং বাংলাদেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য যে যাত্রা ভারত-থাইল্যান্ডের দিকে হয়, আমরা চেষ্টা করছি, যাতে চীন থেকে সেই সাপোর্ট পাওয়া যায়।

তিনি আরো বলেন, ‘চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিষয়টি কিন্তু আমাদের জন্য বড় প্রভাব রেখেছে। আমরা অনেক দিন ধরে চীনের বিনিয়োগের কথা বলছি। চীনা বিনিয়োগের যে গুরুত্ব সেটা আমরা আবারও গিয়ে অনুধাবন করেছি। আমরা এই সুযোগ আসলে খুব কম গ্রহণ করেছি। চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা এখনো আছে কিন্তু খুব স্বল্প পরিসরে আছে। আমাদের আরো বেশি হারে চীনে যেতে হবে। চীন এমন একটি মহাদেশ, যেখান থেকে আমাদের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ আসা সম্ভব। লাস্ট আগস্ট থেকে এই মার্চ পর্যন্ত ৩৪টি চীনা কম্পানি বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ-বেপজাতে। এখানে আর্থিক প্রতিশ্রুতি প্রায় ১৬০ মিলিয়ন ডলারের মতো।’

এ সময় প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক বিশেষ দূত ড. খলিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ