উন্নতির কাছে আমাদের প্রত্যাশাটা কী? অবশ্যই সুখ। কিন্তু উন্নয়ন কেবল যে নদীর গলা টিপে ধরছে বা বনভূমি উজাড় করে দিচ্ছে শুধু তা-ই নয়, নাগরিকদের সুখও কেড়ে নিচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় গত এক বছরে প্রাণ হারিয়েছে ৬ হাজার ৫২৪ জন। খবর রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের।
উন্নতির কাছে আমাদের প্রত্যাশাটা কী? অবশ্যই সুখ। কিন্তু উন্নয়ন কেবল যে নদীর গলা টিপে ধরছে বা বনভূমি উজাড় করে দিচ্ছে শুধু তা-ই নয়, নাগরিকদের সুখও কেড়ে নিচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় গত এক বছরে প্রাণ হারিয়েছে ৬ হাজার ৫২৪ জন। খবর রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের।
আশাবাদী হওয়াটা খুবই দরকার, আশাবাদী হতে যারা আগ্রহী করছে তারা উন্নতির বিষয়ে নিশ্চিন্তবোধ করতে পারেন এটা লক্ষ করে যে, দেশে বড় একটা ভোক্তা শ্রেণির উত্থান ঘটেছে। তাতে বাংলাদেশে পণ্যের চাহিদা বেশ বেড়েছে। আর পণ্যের চাহিদা বাড়া মানেই তো উৎপাদন বাড়া।
শিল্পোদ্যোক্তাদের একজনকে জানি, ব্যক্তিগতভাবে যিনি অত্যন্ত সজ্জন, পাচারে বিশ্বাসী নন; তিনি একটি বই লিখেছেন, যাতে দেশের যে উন্নতি হচ্ছে তার প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রবৃদ্ধির।
নির্মম সত্যটা হলো, যতই উন্নতি ঘটছে ততই কমছে দেশপ্রেম। তাই বলে দেশপ্রেম কি একেবারেই নিঃশেষ হয়ে গেছে? না, মোটেই নয়। দেশপ্রেম অবশ্যই আছে। বিশেষভাবে আছে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে। তারা অন্য দেশে গিয়ে বসবাস করবে, এমনটা ভাবতেই পারে না। বেশির ভাগই দেশে থাকে। পরিশ্রম করে। এবং তাদের শ্রমের ফলেই দেশের যেটুকু উন্নতি তা সম্ভব হয়েছে। ভোক্তারা নয়, মেহনতিরাই হচ্ছে উন্নতির চাবিকাঠি। ঋণ করে, জায়গাজমি বেচে দিয়ে সুবিধাবঞ্চিতদের কেউ কেউ বিদেশে যায়; থাকার জন্য নয়, উপার্জন করে টাকা দেশে পাঠাবে বলে। বিদেশে গিয়ে অনেকেই অমানবিক জীবনযাপন করে, ‘অবৈধ’ পথে গিয়ে এবং প্রতারকদের কবলে পড়ে কেউ কেউ জেল পর্যন্ত খাটে। কিন্তু তারা বুক বাঁধে এ আশাতে যে দেশে তাদের আপনজনরা খেয়েপরে বাঁচতে পারবে। বিত্তবানরা যা ছড়ায় তাহলো হতাশা। এ দেশের কোনো ভবিষ্যৎ নেই, এটাই তাদের স্থির বিশ্বাস। হতাশা কিন্তু তারাই সৃষ্টি করে। বিশেষ করে সম্পদ পাচার উন্নতির কাছে আমাদের প্রত্যাশাটা কী? অবশ্যই সুখ। কিন্তু উন্নয়ন কেবল যে নদীর গলা টিপে ধরছেকরার মধ্য দিয়ে। এই যে দেশে এখন ডলার সংকট চলছে, এবং যার ফলে সবকিছুর দাম বেড়েছে, তার প্রধান কারণ টাকা ডলারে রূপান্তরিত হয়ে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এটা বিত্তবানদের কাজ। তারাই হতাশা সৃষ্টি করে এবং দেশের ভবিষ্যৎহীনতার বিশ্বাস ক্রমাগত বলীয়ান হতে থাকে। এবং নিজেদের ওই হতাশা তারা যে কেবল নিজেদের মধ্যেই আটকে রাখে তা নয়, অন্যদের মধ্যেও সংক্রমিত করে দেয়। সেটাই স্বাভাবিক। কারণ হতাশা হচ্ছে একটি রোগ, শুধু রোগ নয়, সংক্রামক রোগ বটে। একাত্তরে যখন আমরা চরমতম বিপদের মধ্যে ছিলাম, মৃত্যুর শঙ্কায় দিবা-রাত সন্ত্রস্ত থাকতাম তখন অমন চরমতম বিপদ ও সীমাহীন অত্যাচারের মুখেও আমরা কিন্তু হতাশ হইনি; কারণ আমরা জানতাম আমরা কেউ একা নই, আমরা সবাই আছি একসঙ্গে এবং লড়ছি একত্র হয়ে। ১৬ ডিসেম্বরেই কিন্তু সেই ঐক্যটা ভাঙার লক্ষণ দেখা দিয়েছে; এবং কিছুদিনের মধ্যেই ভেঙে একেবারে খান খান হয়ে গেছে। সমষ্টি হারিয়ে গেছে, সত্য হয়েছে ব্যক্তিগতভাবে উন্নতি করা, না পারলে কোনোমতে বেঁচে থাকা।
এমনটা কেন ঘটল? ঘটল এ কারণে যে, উত্থান ঘটল লুণ্ঠনের, জবরদখলের, ব্যক্তিগত সুবিধা বৃদ্ধির। এবং এসবই প্রধান সত্য হয়ে দাঁড়াল। একাত্তরে আমরা সমাজতন্ত্রী হয়েছিলাম, বাহাত্তরে দেখা গেল সমাজতন্ত্র বিদায় নিচ্ছে, পুঁজিবাদ এসে গেছে। এবং পুঁজিবাদেরই অব্যাহত বিকাশ ঘটেছে এ বাংলাদেশে। দেখা গেছে পরের সরকার আগেরটির তুলনায় অধিক মাত্রায় পুঁজিবাদী, এবং একই সরকার যদি টিকে থাকে তবে আগেরবারের তুলনায় পরেরবার পুঁজিবাদের জন্য অধিকতর ছাড় দিচ্ছে। পুঁজিবাদের বিকাশের প্রয়োজনে রাস্তাঘাট পরিষ্কার করার জন্য তো আমরা যুদ্ধ করিনি; পুঁজিবাদের বিকাশ তো পাকিস্তান আমলে বেশ গোছগাছ করেই এগোচ্ছিল। আমরা চেয়েছিলাম সবার মুক্তি; চেয়েছিলাম প্রত্যেকেই যাতে মুক্তি পায়।
দেশের মানুষ বিদেশে শিক্ষার জন্য যেমন যায়, তেমনি যায় চিকিৎসার জন্যও। বাংলাদেশে ভালো চিকিৎসকের কি অভাব আছে? আধুনিক যন্ত্রপাতি কি নেই? আকাল পড়েছে কি চিকিৎসা বিষয়ে জ্ঞানের? না, অভাব এসবের কোনো কিছুরই নয়। অভাব ঘটেছে একটা জিনিসেরই, সেটা হলো আস্থা। রোগী আস্থা রাখতে অসমর্থ হয় দেশি চিকিৎসকের চিকিৎসায়। তাই যাদের সামর্থ্য আছে তারা পারলে সিঙ্গাপুরে বা ব্যাংককে যায়, অত খরচে যারা অপারগ তারা চেষ্টা করে ভারতে যাওয়ার। এবং হতাশা যেমন, অনাস্থাও তেমনি- ভীষণ রকমের সংক্রামক।
আস্থার এ অভাবের কারণটা কী? কারণ হচ্ছে দেশি চিকিৎসকদের অধিকাংশই রোগীকে সময় দিতে পারেন না, পর্যাপ্ত মনোযোগ দানেও ব্যর্থ হন। না দিতে পারার কারণ তাঁদের তাড়া করার জন্য ঘাড়ের ওপর বসে থাকে অর্থোপাজনের নিষ্ঠুর তাগিদ। যত বেশি রোগী দেখবেন তত বেশি আয় হবে। রোগ সারানোর জন্য খ্যাত হওয়ার চেয়ে আগ্রহটা থাকে অপরের তুলনায় অধিক আয় করার দিকে। আমাদের নতুন স্বাস্থ্য উপদেষ্টাও দেখলাম আস্থার এ অভাবের কথাটা স্বীকার করেছেন। কিন্তু আস্থা কীভাবে ফেরত আনা যাবে তা যে তিনি জানেন এমনটা ভরসা করা কঠিন। আর জানলেও তা কার্যকর করার উপায় তাঁর হাতে না থাকারই কথা। কারণ ব্যাপারটা একজন-দুজন চিকিৎসকের নয়, ব্যাপারটা এমনকি চিকিৎসাব্যবস্থাতেও সীমাবদ্ধ নয়, এটি ছড়িয়ে রয়েছে গোটা রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ব্যবস্থাজুড়ে। সর্বত্রই আস্থাহীনতা বিরাজমান।
ভারতের পরিবর্তে চীনে চিকিৎসাসেবা গ্রহণের আলোচনা চলছে। বণিক চীন নাকি বিত্তবান বাংলাদেশিদের জন্য নিজ দেশে এবং বাংলাদেশেও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দেনদরবার করছে, সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে। অথচ দেশের সাধারণ মানুষের জন্য একমাত্র চিকিৎসার আশ্রয় সরকারি হাসপাতালগুলোর উন্নয়নে অতীতের সরকারের ন্যায় বর্তমান সরকারও উদাসীন। গরিবের পক্ষে থাকার সরকার দেশবাসী আজও পায়নি, তাই।
শুরুটা কিন্তু দেশের ভবিষ্যতের প্রতি আস্থার অভাব দিয়েই। সুবিধাপ্রাপ্ত লোকেরা মনে করে যে এদেশের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তাই অন্যত্র বসতি গড়তে পারলে ভালো। সেই চেষ্টাই তারা করতে থাকে। এবং চেষ্টার অংশ হিসেবে বৈধ-অবৈধ যে পথেই সম্ভব টাকাপয়সা যা সংগ্রহ করতে পারে তা পাচার করার পথ খোঁজে। তাদের এ আস্থাহীনতা অন্যদের মধ্যেও অতিসহজেই সংক্রমিত হয়ে যায়। এবং সংক্রমিত হয়ে যাচ্ছেও। কিন্তু আশা জাগানিয়ার পথ ক্রমাগত রুদ্ধ হয়ে পড়েছে।
লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পর্কিত খবর
পৃথিবীতে আজকের যে মানুষগুলো ইহুদি তারা হজরত মুসা (আ.)-এর বণী ইসরায়েলের বংশধর। মূলত তারা ছিল বেঈমান ও নাফরমান জাতি। হজরত মুসা (আ.) কে তারা অনেক কষ্ট দিয়েছে। মুসা (আ.) তাদের জন্য এত কষ্ট করেছিলেন তার পরও তারা বিভিন্নভাবে মুসা (আ.) কে বিভিন্ন অজুহাত দাঁড় করিয়ে বিচলিত ও পেরেশানিতে রাখত।
পৃথিবীতে ৫৭টি মুসলিম রাষ্ট্র রয়েছে। মোট জনসংখ্যা ২০০ কোটিরও বেশি। রয়েছে তাদের সংগঠন ওআইসি। অথচ মানবতা বিবর্জিত তারা যে হত্যাযজ্ঞের খেলায় মেতে উঠেছে তার কোন প্রতিবাদ বা কারো হুঁশিয়ারি বা হুংকার পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তুরস্ক, সৌদি আরব, পাকিস্তান, ইরান, জর্দান সবাই নীরব। মুসলিম দেশগুলো একে অপরের বিরোধী। সবাই কম বেশি আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল। ফিলিস্তানিদের মৃত্যু যন্ত্রণা, চোখের পানি ছিন্ন ভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, হাত বেঁধে গুলি করে হত্যা, আকাশ থেকে বিধ্বংসী বোমা ও অস্ত্রের গর্জন, একদিকে গুলি অন্যদিকে খাদ্য ও পানির অভাব শিশুদের মৃত্যু বিশ্বের বিবেকবান মানুষের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করেছে। অথচ সেই দেশে ঘুমিয়ে আছে মানবতার মুক্তির দূত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব নবীকূলের শিরোমনি হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)। তারই তারই জন্মভূমিতে রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা আছেন তাদের ভূমিকা নিষ্ক্রিয়।
পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক দেশে প্রতিদিন বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ হচ্ছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানসহ সারা বিশ্বের অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে কিন্তু ফিলিস্তানিদের আশেপাশে যে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো আছে তারা নির্বিকার তাদের দেহে রক্ত আছে কিন্তু সে রক্ত হিম শীতল। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটে রাস্তায় মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে তখন সাইকো ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কসাই নেতা নিয়াহু হাসিমুখে মিটিং চালিয়ে যাচ্ছেন, তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়ে হোয়াইট হাউজে আনা হয়েছে। আর আমরা মুসলিম বিশ্ব সেটা করুন ভাবে চর্ম চক্ষু দিয়ে দেখছি আর দীর্ঘশ্বাস ফেলছি। আফসোস আমাদের ঈমানী শক্তি। মনে পড়ে নবী করীম (সঃ) এর জীবনের যুদ্ধ গুলোর কথা। অল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে তিনি বড় বড় যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছেন। ইসলামের পতাকা উড্ডায়ন করে প্রতিষ্ঠা করেছেন ইসলামী শাসন। পরাশক্তি চীন রাশিয়া সহ অন্যান্য দেশ আমাদের সাথে অভিনয় করে মজা নিচ্ছে। আমরা মুসলমানেরা হয় আমেরিকা না হয় চীন বা রাশিয়ার দ্বারস্থ হচ্ছি। তারা দুই দিক দিয়ে অস্ত্র বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। আর আমরা হারাচ্ছি আমাদের ভাই-বোন এবং ছোট ছোট সোনামণিদের। তাদেরকে হাত বেঁধে গুলি করে গর্তের মধ্যে নিষ্ঠুরভাবে মাটি চাপা দেওয়া হচ্ছে। এই অকল্পনীয় এবং অভাবনীয় দৃশ্য ট্রাম প্রশাসন ও মধ্যপ্রাচ্যের কসাই নেতানিয়াহুর হৃদয় গলাতে পারেনি বরং তারা রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠেছে। এই কসাই নেতানিয়াহূর করুন পরিনতি পৃথিবীর ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি যারা সহানুভূতিশীল তারা দেখতে চায়। ফিলিস্তিনি মুসলমানদের হৃদয়হীন ভাবে আকাশ পথে স্থলপথে যে নির্যাতন নিপীড়ন ও মর্মান্তিকভাবে হত্যা করা হচ্ছে তাতে মনে হয় না পৃথিবীতে আমরা এখন সভ্য জাতি হিসেবে বসবাস করছি। হে আল্লাহ তোমার পবিত্র ভূমি মুসলমানদের প্রথম কেবলা আল আকসা মসজিদ। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেরাজে গমনের সময় পৃথিবীর সব পয়গম্বরদের সাথে নিয়ে এখানে নামাজ আদায় করেছিলেন। তাই এটা সমগ্র মুসলমানদের জন্য একটি পবিত্র ভূমি। যা রক্ষার দায়িত্ব সমগ্র মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি জনগণের।
হে আল্লাহ তুমি দয়াশীল ক্ষমাশীল এবং পরাক্রমশীল। তুমি আমাদের দয়া করো। আমরা আর ফিলিস্তিনিদের কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। নিষ্পাপ শিশুদের করুণ চাহনি ক্ষুধার কষ্ট মৃত্যু যন্ত্রণা নির্মমভাবে নারী-পুরুষ হত্যা আর যে সইতে পারছি না। বহিতে পারছি না তাদের কষ্ট। শহীদের রক্ত ও বারুদের গন্ধ বাতাস বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। হে আল্লাহ কোটি কোটি তোমার প্রিয় বান্দাদের দোয়া তোমার শাহী দরবারে পৌঁছে গেছে। হে আসমান জমিনের মালিক তুমি আরশে আজিমে বসে সবকিছু অবলোকন করছো। তুমি তাদের পাশে থেকে তাদেরকে হেফাজত করো। তাদের রক্ষা করো ইসলামের শত্রুদের ধ্বংস করো আমিন।
কয়েকদিন আগে গাজার একটি মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের ঘোষিত পরম করুণাময় মহা শক্তিধর আল্লাহর নিকট করুন নিবেদন যা ছিল খুবই হৃদয়বিদারক। হে ইসলামের অনুসারীরা তোমাদের কাছে সাহায্যের আবেদন করছি। সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে সব যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গেছে, পৃথিবীর মানুষের সাহায্য ফুরিয়ে গেছে। এখন হে আল্লাহ তুমি ছাড়া আর কেউ নেই। হে আল্লাহ তারা নিজেদের শক্তির উপর গর্ব করে। আমরা তোমার শক্তির মাধ্যমে তাদের ওপর বিজয়ের প্রার্থনা করি।
গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বাড়িঘর মাটির সাথে মিশে গিয়েছে। ওআইসি কে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করে ইজরাইলকে এক ঘরে করে ফেলতে হবে। ইজরাইলের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন এবং সকল প্রকার পণ্য বয়কট করতে হবে। ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়ে খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান চিকিৎসা ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করতে হবে। ওআইসি এর উচিত হবে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সাথে নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে কসাই নেতানিয়াহুর ও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বিচার নিশ্চিত করা। মুসলিম দেশগুলোকে যদি একই ফ্রেমে আনা যায় তাহলে পরাশক্তিগুলো আমাদের পিছনে পিছনে ঘুরবে এটা আমি ধারণ করি ও বিশ্বাস করি।
পরিশেষে বলতে পারি জাতিসংঘ হল একটি ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান। জাতিসংঘ থেকে যেদিন ভেটো ক্ষমতা রোহিত হবে সেদিন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। মূলত জাতিসংঘ হল পরা শক্তিধর দেশগুলোর ধারক ও বাহক। বিশ্ব মোড়লের বিশ্ব ক্রীতদাস হলো জাতিসংঘের মহাসচিব। আমেরিকার টাকায় পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। জাতিসংঘের যদি নিজস্ব মেরুদন্ড না থাকে, কোন প্রশাসনিক ক্ষমতা না থাকে, তাহলে এই প্রতিষ্ঠানের কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। ইউক্রেন যুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের গণহত্যায় যে সংস্থার কোন ভূমিকা নাই, দিনের পর দিন যে মহামূল্যবান প্রাণগুলো অকালে ঝরে পড়ছে, তাদের জীবনের স্বপ্ন মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে, সেখানে জাতিসংঘ নির্লজ্জ বেহায়ার মত বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। হায় জাতিসংঘ তুমি বড় অসহায়।
লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান সমাজকর্ম বিভাগ মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ, ঢাকা।
বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে যদি গণতন্ত্রের সুবাতাস প্রবাহিত হয় তাহলে সেখানে মানুষের বাকস্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। আর যখন দেশে গণতন্ত্রের পরিবর্তে স্বৈরতন্ত্রের আবির্ভাব ঘটে তখন মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। যুগে যুগে বিভিন্ন দেশে স্বৈরতন্ত্রের আবির্ভাব ঘটেছে এবং সেটাকে রোধ করার জন্য একজন মহান ব্যক্তির জন্ম হয়েছে, যার দক্ষ নেতৃত্বে স্বৈরতন্ত্রের অবসান ঘটেছে।
একেবারে গৃহিণী থেকে কালের বিবর্তনে পরিপক্ব রাজনীতিবিদ। যার নামের আগে শোভা পায় দেশনেত্রী, আপসহীন নেত্রী, গণতন্ত্রের মানস কন্যা। যাকে কোনো লোভ-লালসা স্পর্শ করতে পারেনি।
বাঙালি জাতিকে হতাশায় ডুবিয়ে কোনো দিকনির্দেশনা না দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানে পাড়ি জমিয়েছিলেন, তখন বেগম খালেদা জিয়া পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত মেজর জিয়াউর রহমানের পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছিলেন। তিনিও স্ত্রী-পুত্রের মায়া না করে দেশকে ভালোবেসে কোনো আপস না করে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর দলের প্রয়োজনে তাকে দলের দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হয়। কখনো সম্মুখ সারিতে, কখনো আত্মগোপনে থেকে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে কঠিন সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে দেশকে উপহার দিয়েছেন সোনালি সূর্য। এরশাদবিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ যখন সমগ্র বাংলাদেশ অগ্নিগর্ভ তখন তার ব্যক্তিত্ব, উদারতা, মননশীলতা, ধৈর্য, ত্যাগ বজ্রকঠিন সিদ্ধান্ত দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা অন্ধকারে আলোকবর্তিকা হিসেবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পাশে থেকে গন্তব্যে পৌঁছে গেছেন। পেয়েছেন সফলতা পাহাড়সম সম্মান, মর্যাদা। এরশাদ সরকারের ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে নামের আগে যুক্ত করেছেন আপসহীন নেত্রী অথচ শেখ হাসিনা তার অধীনে নির্বাচন করে খেতাব পেয়েছিলেন জাতীয় বেঈমানের। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। এমনভাবে বই-পুস্তক লেখা হয়েছে যাতে শেখ পরিবারের কথা ছাত্র-ছাত্রীরা মুখস্থ করতে করতে বড় হয়। স্বাধীনতার ঘোষক যে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেই কথা প্রমাণসহ আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতার বইয়ের মধ্যে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তার বড় সন্তান তারেক জিয়া, যার শ্বশুর নৌবাহিনীপ্রধান, তার স্ত্রী একজন দেশে এবং বিদেশে স্বনামধন্য চিকিৎসক। তার মেয়ে জায়মা রহমান একজন ব্যারিস্টার। বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান বাংলাদেশ ক্রিকেটের আধুনিক রূপকার। অথচ এই পরিবারকে ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী সহ্য করতে পারতেন না। ঈষান্বিত হয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, অশালীন মন্তব্য সব সময় করতেন, যা দেশপ্রেমিক জনগণও সুশীল সমাজের নিকট কাম্য ছিল না।
বেগম জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেছেন, কী খেলে লিভার সিরোসিস হয়, মরার বয়স হয়েছে এখানো কেন মরে না, অথচ ৫ আগস্ট গণভবন থেকে বের হওয়ার পর অনেক মানুষের হাতে বিদেশি দামি মদের বোতল দেখা গেছে। গণতন্ত্রের অহংকার, স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ, তারুণ্যের অহংকার, কোটি মানুষের নয়নমণি তারেক জিয়াকে কুলাঙ্গার বলেছেন। অথচ তারেক জিয়া একবার গোপালগঞ্জে গেলে শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করেছিলেন। এটা হলো জিয়া পরিবারের পারিবারিক শিক্ষা। ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী বলতেন, দশটা হুন্ডা, বিশটা গুণ্ডা, নির্বাচন ঠাণ্ডা।
ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী বলতেন, ‘আমার শুধু পাওয়ার চাই’। তিনি পাওয়ার নিয়েই ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ সালে দিনের ভোট রাতে করে গণতন্ত্রকে হত্যা করে স্বৈরশাসক পদবি পেয়েছিলেন। তিনি দেশ এবং দেশের মানুষদের নিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে যা ইচ্ছা, তাই করেছিলেন, কিন্তু মানুষের মন জয় করতে পারেননি। তার আমলে কত মায়ের বুক খালি হয়েছে। হত্যা, খুন, গুম, জেল, জুলুম, আয়নাঘর সবই ফ্যাসিস্ট সরকারের অত্যাচারের জ্বলন্ত উদাহরণ। কত মায়ের বুক খালি হয়েছে, কত সন্তান বাবা হারিয়েছে, কত মা সন্তান হারিয়েছে, কত স্ত্রী স্বামী হারিয়েছেন। তাদের কান্না ও চোখের পানিতে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়েছে। অথচ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার হৃদয় গলেনি।
তিনবারের প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের জননী তাকে বিনা দোষে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় যে টাকা তিনি স্পর্শ করেননি তাকে শেখ হাসিনা নাজিম উদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে মানবতার সব দিক বিসর্জন দিয়ে, মেরে ফেলার জন্য দিনের পর দিন বিনা চিকিৎসায় কারাগারে ফেলে রেখেছিলেন। আত্মীয়-স্বজন, চিকিৎসক—এমনকি আইনজীবীদের সঙ্গেও দেখা করতে দেননি। ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ছাড়ার সময় এবং কেন্দ্রীয় কারাগারে বেগম জিয়ার চোখের পানি আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছে অথচ শেখ হাসিনার হৃদয় গলেনি মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে তার প্রমাণ শেখ হাসিনা নিজেই। কতটুকু হৃদয়হীন হলে শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়াকে বলতে পারেন, মরার বয়স হয়েছে এখনো মরে না কেন, পদ্মায় চুবানোর কথা বলেছেন। আমাদের বাড়িতে গেলে বসার জায়গা পেত না, মোড়ায় বসত। যা ছিল শিষ্টাচারবহির্ভূত। অথচ সর্বকালের সেরা রাষ্ট্রপতি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন।
বেগম খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার বহু ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। সব ষড়যন্ত্র থেকে তাকে রক্ষা করেছেন আল্লাহ এবং দেশের জনগণের ভালোবাসা। তিনি বলেছিলেন, বিদেশে আমার কোনো বাড়ি-ঘর নেই। এটাই আমার দেশ। তিনি দেশের জনগণকে প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছেন বলেই তাদের দোয়ায় তিনি বেঁচে আছেন। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, তত দিন তিনি দেশপ্রেমিক জনগণের মনের মণিকোঠায় অবিসংবাদিত নেত্রী হিসেবে গণতন্ত্রের মানস কন্যা হিসেবে ভালোবাসার প্রতীক হয়ে মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে যথার্থই বলা যায়—
She is the man of honour, principle, mother of Democracy and humanity in a true sense.
লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান সমাজকর্ম বিভাগ, মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ, ঢাকা।
রাজনীতিতে এখন প্রতিহিংসা, আক্রমণ, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার অসহিষ্ণু প্রবণতা বেড়েছে ভীষণ। পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ যেন লোপ পেয়েছে। রাজনীতির মাঠে এখন কুৎসিত নোংরামি এবং কাদা ছোড়াছুড়ির জয়জয়কার। সহনশীলতা শব্দটি যেন আজ বিলুপ্ত।
এক পক্ষ অন্য পক্ষকে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করা, এমনকি প্রয়াত ব্যক্তিদের অসম্মান করার একটি রীতি আতঙ্কজনকভাবে বেড়ে গেছে। কিন্তু এটি প্রকৃত রাজনীতি নয়। এটি রাজনীতির শিক্ষাও নয়। রাজনীতি হলো রাষ্ট্র পরিচালনার কৌশল।
এই রাজনৈতিক শিষ্টাচারের জন্যই তাঁকে জনগণ শ্রদ্ধা ও সম্মান করে। তাঁরা অনুকরণীয় হন। কিন্তু কিছুদিন ধরে রাজনীতিতে যেমন বিভক্তি দেখা দিচ্ছে, বিভক্তির সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রতিহিংসা। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে নির্মমভাবে আক্রমণ, সুযোগ পেলেই প্রতিপক্ষকে নিঃশেষ করে দেওয়া এবং যেকোনো ভিন্নমত হলেই তাকে অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ ভাষায় দমন করা, কখনো কখনো পাশবিক শক্তি প্রয়োগের একটা হিংস্র প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। রাজনীতিতে হিংস্রতা এবং ভাষাজ্ঞানহীন কথাবার্তার প্রবণতা বাড়ছে। একজন প্রতিপক্ষের রাজনীতিবিদকে কী ভাষায় কথা বলতে হবে, ভিন্নমতের ব্যাপারে কী ধরনের শিষ্টাচার দেখাতে হবে, সেই বোধগুলো আমাদের রাজনীতি থেকে আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
এ রকম একটি অসহিষ্ণু রাজনৈতিক পরিবেশে এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম খালেদা জিয়া। তিনি রাজনীতিতে শিষ্টাচারের এক প্রতীক হয়ে উদ্ভাসিত হয়েছেন। বিশেষ করে ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর তিনি যখন প্রচণ্ড অসুস্থ অবস্থায় মুক্তিলাভ করেন, এর পর থেকে তাঁর প্রতিটি আচরণ এ দেশের মানুষকে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছে। দল-মত-নির্বিশেষে সবাই তাঁর প্রাজ্ঞ উদারতা, ধৈর্য ও ক্ষমাশীলতায় মুগ্ধ। এই মুহূর্তে রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি খালেদা জিয়া। নিজের ব্যক্তিত্ব দিয়ে সব মানুষের হৃদয় জয় করেছেন তিনি। তাঁর পরিমিতিবোধ, ব্যবহার, আচার-আচরণ এবং সংযত কথাবার্তা এ দেশের শান্তিকামী মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। খালেদা জিয়া সেই বিরল রাজনীতিবিদদের একজন, যিনি জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য গৃহবধূ থেকে রাজনীতির মাঠে এসেছিলেন। তাঁর আপসহীন নেতৃত্ব, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ অবস্থান এবং জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধের কারণে বারবার নিপীড়িত-নির্যাতিত হয়েও তিনি তাঁর নীতি এবং আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছেন, কিন্তু সেই সমালোচনা কখনো শিষ্টাচারবহির্ভূত হয়নি। অশালীন নোংরামির পর্যায়ে যায়নি। তিনি কোনো সময় প্রয়াত রাজনীতিবিদদের অসম্মানসূচক, অসত্য, কুৎসিত ভাষায় গালাগালি করেননি, আক্রমণ করেননি। এই ধারাটি তিনি অব্যাহত রেখেছেন গোটা রাজনৈতিক জীবনে। রাজনীতিতে নিজের অবস্থান আদর্শ থেকে এতটুকু চ্যুত না হয়েও যে একজন রাজনীতিবিদ শিষ্টাচার মেনে চলতে পারেন, নম্র ভদ্রোচিত ভাষায় তীব্র সমালোচনা করতে পারেন, সেই নজির তিনি রেখেছেন তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে। জনগণের প্রয়োজনে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করতে কার্পণ্য করেননি। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ব্যক্তির চেয়ে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন সব সময়। তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল ২০০৭ সালে এক-এগারোর সময়। সে শিষ্টাচারের রাজনীতি এবং বেগম জিয়াসময় খালেদা জিয়াকে ড. ফখরুদ্দীন সরকার মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে। শুধু তাঁকে নয়, তাঁর দুই পুত্রকেও গ্রেপ্তার করা হয়। চলে চরিত্র হননের চেষ্টা। এই সময় খালেদা জিয়া আপস করেননি। কারাগার থেকে বেরিয়ে যখন তিনি আবার রাজনীতিতে এসেছেন, তখন এক-এগারোর কুশীলবদের সমালোচনা করেছেন, কিন্তু সেই সমালোচনাটা শালীনতার সীমা কখনো অতিক্রম করেনি। বেগম জিয়া সম্ভবত সাম্প্রতিক সময়ে একমাত্র রাজনীতিবিদ, যিনি অশালীন শব্দ প্রয়োগ ছাড়াই বিরোধী পক্ষের কঠোর সমালোচনা করেন। এক-এগারোর ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে একটি অসত্য, ভিত্তিহীন মিথ্যা মামলায় তাঁকে প্রহসনের বিচারে নজিরবিহীনভাবে আটকে রাখা হয় কারাগারে। দিনের পর দিন কারা প্রকোষ্ঠে রেখে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। এই অবস্থায় তিনি প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেকেই মনে করেছিলেন যে খালেদা জিয়া যদি কখনো সুযোগ পান, তাহলে হয়তো ভয়ংকর প্রতিশোধ নেবেন। কিন্তু বেগম জিয়া যেন তাঁর ওপর সব নিপীড়নের বিচারের ভার জনগণের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁর ওপর নিপীড়নের ব্যাপারে একটি কথাও বলেননি। ৫ আগস্ট মুক্ত হয়ে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে একটি কটূক্তিও করেননি। এমনকি তাঁর নামটি পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। নোংরা ভাষায় কথা বলেননি। তিনি শুধু বলেছেন, ‘আল্লাহ বাংলাদেশের জনগণকে এই দিনটি দেখালেন, আলহামদুলিল্লাহ।’ এর বেশি তিনি কোনো কথা বলেননি। অথচ বিগত সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সবচেয়ে নিপীড়িত-নির্যাতিত ব্যক্তির নাম হলো খালেদা জিয়া। সাবেক সরকারের পাতি নেতারাও বেগম জিয়া সম্পর্কে যে কুৎসিত ভাষা প্রয়োগ করেছিলেন, তা চিন্তা করাও কুরুচির পরিচয় বহন করে। কিন্তু এসব অমার্জনীয় নোংরামির জবাব না দিয়ে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে। নীরবতাই তাঁর শক্তি। তাঁর প্রতিবাদহীনতাই যেন মানুষের ভালোবাসা। তাঁর তো সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ভাষা প্রয়োগ করার কথা ছিল, কিন্তু তাঁর পারিবারিক ও রাজনৈতিক এই শিক্ষা তাঁকে সেই স্বীকৃতি দেয়নি। বরং তিনি তাদের শুধু নীতির সমালোচনা করেছেন। তাদের ভোট চুরির সমালোচনা করেছেন। তাদের লুণ্ঠনের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু কোনো ব্যক্তিকে নোংরা, কুৎসিত ভাষায় তিনি আক্রমণ করেননি। খালেদা জিয়ার এই ধরনের রাজনৈতিক শিষ্টাচার আজকের দিনে সবার জন্য অনুকরণীয়।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে খালেদা জিয়ার বাড়ি থেকে তাঁকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল, যে বাড়িতে তাঁর প্রাণপ্রিয় স্বামী শেষ দিন পর্যন্ত ছিলেন। ক্যান্টনমেন্টে শহীদ মইনুল হোসেন সড়কের বাড়িটি কেবল একটি বাড়ি ছিল না, এটি ছিল ইতিহাসের একটি অংশ। সেই বাড়ি থেকে যখন তাঁকে এক কাপড়ে বের করে দেওয়া হয়, তখনো খালেদা জিয়া রাজনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে যাননি। নোংরা, কুৎসিত ভাষায় তিনি কথা বলেননি। এমনকি বাড়ি নিয়ে নজিরবিহীন অপপ্রচারে তিনি জবাব দেননি। খালেদা জিয়া মূলত এমন একজন ব্যক্তিত্ব, যিনি একজন আদর্শবান, জাতির অভিভাবকের মতোই আচরণ করেন। সবার ঐক্য, দেশের ভালো, দেশের মঙ্গল—এই বিষয়গুলো তাঁর সমস্ত বক্তব্যের মধ্যে উৎসারিত। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর খালেদা জিয়া কারাগার থেকে বেরিয়ে চিকিৎসার জন্য যান লন্ডনে, সেখানে ঈদ করেন তাঁর পুত্রের সঙ্গে। যুক্তরাজ্য থেকে তিনি ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে। সেখানেও তিনি বিভক্তির কথা বলেননি। অনৈক্যের কথা বলেননি, ধ্বংসাত্মক কথাবার্তা বলেননি, উসকানিমূলক বক্তব্য দেননি। এটিই একজন আদর্শ রাজনীতিবিদের বৈশিষ্ট্য। একজন রাজনীতিবিদ যে পরিশীলিত ভাষায় কথা বলেই জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন, তাঁর আদর্শের অবস্থানটা দৃঢ়ভাবে উচ্চারণ করার জন্য তাঁকে কোনো নোংরা বা অরুচিকর কথাবার্তা বলতে হয় না, তার প্রমাণ খালেদা জিয়া। আর এ কারণেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন উজ্জ্বল নক্ষত্র বেগম জিয়া। ৮০ বছর হতে চলল তাঁর। কিন্তু এখনো সাধারণ জনগণের মধ্যে তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তা। বিশেষ করে এই সময় যখন রাজনীতিতে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে নিঃশেষ করে দিতে চায়, এক পক্ষ অন্য পক্ষের চরিত্র হননের জন্য অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করে, সেই সময় খালেদা জিয়া যেন জাতির এক আলোকবর্তিকা। তিনি সব রাজনীতিবিদের জন্য একজন শিক্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। কিভাবে রাজনীতিবিদদের কথা বলতে হয়, সমালোচনা করেও কিভাবে মানুষকে সম্মান জানাতে হয়, সেটির উদাহরণ হলেন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া প্রতিশোধপ্রবণ নন। তিনি এক উদার গণতান্ত্রিক চেতনার ধারক-বাহক। এ কারণেই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে অন্যায়-অবিচারগুলো করা হয়েছে, সেই অন্যায়-অবিচারগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার তিনি দিয়েছেন দেশের আপামর জনগণকে। তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে এ পর্যন্ত কিছু কথা বলেছেন জনগণের উদ্দেশে, কিন্তু একটিবারও নিজের কথা বলেননি। জনগণের কথা বলেছেন। বাংলাদেশের স্বপ্নের কথা বলেছেন, নতুন করে দেশ বিনির্মাণের কথা বলেছেন। এটি তাঁর মহত্ত্ব। আমাদের রাজনীতিতে এখন উদারতার বড় অভাব, মহত্ত্বের বড় অভাব। এ রকম অবস্থায় বেগম জিয়ার মতো একজন অনুকরণীয় উদাহরণ বড় প্রয়োজন। সাধারণ মানুষ রাজনীতিতে প্রতিহিংসা, কুৎসিত আক্রমণ, গালাগালি ইত্যাদি পছন্দ করে না। আর পছন্দ করে না বলেই খালেদা জিয়া এখন অনিবার্যভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ। তিনি নিজেকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, যেখানে দল-মত-নির্বিশেষে সব মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধা করে। সব মানুষ মনে করে যে এ রকম একজন রাজনীতিবিদই যেন দেশের জন্য প্রয়োজন। সাধারণ মানুষ মনে করে, এ দেশের হাল ধরার মতো সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি হলেন তিনি। তিনিই যেন বাংলাদেশের অভিভাবক। একজন মানুষের জনগণের প্রতি ভালোবাসা, দেশপ্রেম এবং পারিবারিক শিক্ষা যে তাঁকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে, বেগম জিয়া তার প্রমাণ। তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম, যিনি প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করেন না, বরং জনগণের হাতে তার বিচারের ভার ছেড়ে দেন। জনগণের বিপুল জনপ্রিয়তায় তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে পরাজিত করেন। পেশিশক্তি প্রয়োগ বা কটূক্তি করে নয়, বরং জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে পরাজিত করেন।
লেখক : নাট্যকার ও কলাম লেখক
E-mail : auditekarim@gmail.com
আনিসুর বুলবুল
আজকের ডিজিটাল যুগে সোশ্যাল মিডিয়া শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি হয়ে উঠেছে অর্থোপার্জনের হাতিয়ার, সমাজের রুচির দর্পণ, এমনকি নৈতিকতার মাপকাঠি। কিন্তু এই প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তা যখন কেবল অশালীনতা, ভাঁড়ামি আর সস্তা সেন্সেশনের উপর নির্ভর করে, তখন তা সমাজের জন্য এক ভয়াবহ সংকটের ইঙ্গিত দেয়। একজন নারী যখন টাওয়েল বা নাইটি পরে নাচলে লাখো ভিউ পায়, আর একজন গুণী কবি বা জ্ঞানী ব্যক্তির কথায় মানুষ নাক সিঁটকায়, তখন বুঝতে হবে আমাদের সমাজের মূল্যবোধ কোথায় হোঁচট খাচ্ছে।
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো আজ মনিটাইজেশনের লোভে মানুষের নৈতিকতা ও লজ্জাকে পণ্যে পরিণত করেছে।
কমেডির নামে আজ যা চলছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই অশ্লীলতা ও খিস্তির মিশেল। পাবলিক হাসছে, কিন্তু সেই হাসির পেছনে লুকিয়ে আছে আমাদেরই রুচির দৈন্য। আমরা ভুলে যাচ্ছি যে, সমাজের উন্নতি ঘটে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও নৈতিকতার মাধ্যমে, নাইটি বা শারীরিক প্রদর্শনের মাধ্যমে নয়। যখন একজন মা-বোন স্কুলের পড়া ছেড়ে রিলস বানাতে উৎসাহিত হন শুধু টাকার লোভে, তখন আমাদের ভাবতে হবে—আমরা আসলে কোন ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছি?
মনিটাইজেশনের এই উন্মত্ততা আমাদের নতুন প্রজন্মকে কী শিক্ষা দিচ্ছে? তারা শিখছে যে, পড়াশোনা বা সততার চেয়ে সস্তা সেলিব্রিটি হওয়াটাই বড় সাফল্য।
সময় এসেছে জেগে ওঠার। সোশ্যাল মিডিয়ার অপসংস্কৃতি রোধ করতে হবে। প্যারেন্টস, টিচার্স ও ইনফ্লুয়েন্সারদের এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে, পেট চালানোর জন্য নৈতিকতা বিক্রি করা কখনই সমাধান নয়।