<p>সমাধানটা লুকিয়ে ছিল প্ল্যাঙ্ক-আইনস্টাইনের প্রতিষ্ঠা্ করা কোয়ান্টাম তত্ত্বে। কোয়ান্টাম তত্ত্ব বিকিরণের জন্য একটা সর্বনিম্ন শক্তির প্যাকেট নির্দিষ্ট করে দেয়। সেই প্যাকেটটির নাম ফোটন কণা। একটি ফোটনের চেয়ে কম শক্তির কোনো বিকিরণ কোথাও থেকে নির্গত হতে পারে না।</p> <p>তাহলে ইলেকট্রন যখন নিউক্লিয়াসের চারপাশে ঘুরতে থাকে, এর ফলে সে শক্তি বিকিরণ করে। ইলেকট্রন নিশ্চয়ই একবারে ফোটনের শক্তির সমান শক্তি বিকরণ করে। এরচেয়ে কম বিকিরণ করা সম্ভব নয়। ইলেকট্রন থেকে যে শক্তি বিকিরিতে হয়, সে পরিমাণ শক্তি ইলকট্রনের গতিশক্তি থেকে কমে। কমার হার ইচ্ছামতো কমানো সম্ভব নয়। এটা প্ল্যাঙ্ক যে শক্তির সর্বনিম্ন প্যাকেট বেঁধে দিয়েছেন, তারচেয়ে শক্তিকে আরও ক্ষুদ্র ভাগে ভাগ করা সম্ভব নয়। নিউক্লিয়াসের ইলেকট্রনের পতনের পথ অসীম পরিমাণ ক্ষুদ্র ভাগে ভাগ করতে হবে। আর তারজন্য বিকিরিত শক্তির কেও ভাগ করতে হবে অসীম ভগ্নাংশে। সেটা কোয়ান্টাম তত্ত্ব মতে সম্ভব নয়।</p> <p>য়ান্টামের এই বৈশিষ্ট্যই পথ  দেখায় ডেনিস পদার্থবিদ নিলস বোরকে। তিনি রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের এই সমস্যা সমাধানের কথা ভাবলেন কোয়ান্টাম তত্ত্ব দিয়ে।</p> <p>নিলস বোর বললেন, এই সমস্যা সমাধান সম্ভব, যদি ইলেকট্রনর যে শক্তি বিকিরণ করে, সেই বিকিরণ নিরবিচ্ছিন্ন না হয়। অর্থাৎ ম্যাক্স প্ল্যাংক সর্বনিম্ন শক্তির একটা সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণে ক্ষেত্রে, বোর বললেন, ইলেকট্রন যে শক্তি বিকিরণ করে তারও একটা সর্বনিম্ন মান থাকবে।</p> <p>সেই মানের চেয়ে কম মানের শক্তি ইলেকট্রন বিকিরণ করতে পারবে না। তেমনি সেই নির্দিষ্ট শক্তির ভগ্নাংশ মানের কোনো শক্তি ইলেকট্রন বিকিরণ করতে পারবে না। ধরা যাক, সেই নির্দিষ্ট শক্তির মান E। তাই ইলেকট্রন শুধু E এবং এর সরল গুণিতকের শক্তি বিকিরণ করতে পারবে, এর ভগ্নাংশ গুণিতকের কোন শক্তি বিকিরণ করতে পারবে না। ইলেকট্রন E, 2E, 3E...ইত্যাদি মানের শক্তি বিকিরণ করতে পারবে। কিন্তু 0.5E, 2/3E, 1.5E, 2.5E, 3.75E ইত্যাদি ভগ্নাংশ শক্তি বিকিরণ করতে পারবে না।</p> <p>কেন পারবে না? বোর বললেন, শক্তি হিসেবে ইলেকট্রন তো আলো বা ফোটনই বিকিরণ করে। ফোটন হলো আলোর কণা। কণা মানেই সরল গুণিতকের ব্যাপার স্যাপার এসে পড়ে। একটা, দুটো, তিনটে চারটে ফোটনকেই বাস্তবে পাওয়া যাবে, অর্ধেক, এক তৃতীয়াংশ, দেড় খানা কিংবা সাড়ে তিনখানা ফোটন তো আপনি বাস্তবে পাবেন না!</p> <p>একটা ফোটনই সেই সর্বনিম্ন শক্তিটুকু ধারণ করতে পারে। তারমানে আমরা যেটাকে E ধরছি, সেটা আসলে একটা ফোটনেরই শক্তি। </p> <p>তাই একটা ব্যাপার কিন্তু এখানে নিশ্চিত। ইলেকট্রনের পক্ষে সম্ভব নয় ভগ্নাংশ আকারে ফোটন নির্গত করা, তাই এর কক্ষপথও র‍্যান্ডমভাবে ছোট হওয়া সম্ভব নয়। </p> <p>নিরবিচ্ছিন্নভাবে যেহেতু ইলেককট্রনের গতিপথ কম সম্ভব নয়, তাই ইলেকট্রনের পক্ষে সম্ভব নয় সর্পিল গতিতে গিয়ে নিউক্লিয়াসের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়া।</p> <p>তাহলে ইলেকট্রনের গতিপথটা কেমন হবে? এটা নিয়েও দিক-নির্দেশনা দিলেন বোর। বললেন ইলেকট্রনের গতিপথ হবে গোলাকার। অর্থাৎ নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে একটা নির্দিষ্ট দূর থেকে ইলেকট্রন এর চারপাশে ঘুরবে। এটাই হলো ইলেকট্রনের কক্ষপথ বা শক্তিস্তর। </p> <p>সূত্র: নিউ সায়েন্টিস্ট<br />  </p>