<p>আজারবাইজানকে বলা হয় আগুনের দেশ। এই নামের পেছনে রয়েছে এক বিস্ময়কর ইতিহাস। দেশটির মাটির নিচে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত। কখনো কখনো ভূ-পৃষ্ঠে ফুটো হয়ে বেরিয়ে আসে এবং আগুনের শিখা জ্বলতে থাকে। এর সবচেয়ে বিখ্যাত উদাহরণ হলো ইয়ানার দ্যাগ, যার অর্থ ‘জ্বলন্ত পর্বতমালা।’</p> <p>ইয়ানার দ্যাগ আজারবাইজানের অন্যতম প্রাকৃতিক বিস্ময়। কথিত আছে, এখানে আগুন প্রায় চার হাজার বছর ধরে অবিরাম জ্বলছে। মাটির নিচে জমে থাকা গ্যাসের চাপে আগুনের এই শিখা তৈরি হয়। দিন-রাত অবিরাম জ্বলতে থাকা এই আগুন দেশ-বিদেশের পর্যটকদের একই সঙ্গে বিস্মিত এবং মুগ্ধ করে তোলে।</p> <p>শীতকালে এই স্থানটি আরও মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে। বরফ যখন মাটিতে পড়ার চেষ্টা করে, তখন আগুনের তাপে তা মাটিতে পৌঁছানোর আগেই বাতাসে গলে যায়। রাতে ইয়ানার দ্যাগের শিখা চারপাশে এক মায়াবী আবহ তৈরি করে।</p> <p>আজারবাইজানের এই অগ্নিকাণ্ডের কাহিনী বহু প্রাচীন। ১৩শ শতকে প্রখ্যাত পরিব্রাজক মার্কো পোলো আজারবাইজান ভ্রমণের সময় ইয়ানার দ্যাগের রহস্যময় আগুন সম্পর্কে লিখেছিলেন। ব্যবসায়িক পথ ধরে এই খবর ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বজুড়ে আজারবাইজান পরিচিত হয়ে ওঠে ‘অগ্নিভূমি’ নামে।</p> <p>একসময় আজারবাইজানের বিভিন্ন স্থানে এমন আগুন দেখা যেত। তবে ভূগর্ভস্থ গ্যাসের চাপ কমে যাওয়া এবং বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলনের ফলে এই আগুনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।</p> <p>ইয়ানার দ্যাগ আজারবাইজানের রাজধানী বাকু থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। এখানে তেমন কোনো বিশেষ অবকাঠামো নেই। পর্যটকদের জন্য একটি ছোট ক্যাফে রয়েছে। তবে স্থানটির প্রধান আকর্ষণই হলো এর চিরন্তন শিখা।</p> <p>আজারবাইজানের ইতিহাসে অগ্নি উপাসক সম্প্রদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো আতেশগাহ অগ্নি মন্দির। ‘আতেশগাহ’ ফারসি শব্দ, যার অর্থ “আগুনের ঘর।” এই মন্দির বাকু থেকে পূর্ব দিকে অবস্থিত। এটি একসময় অগ্নি উপাসকদের ধর্মীয় উপাসনালয় ছিল।</p> <p>ইয়ানার দ্যাগ এবং আতেশগাহ আজারবাইজানের অগ্নিময় ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রমাণ। এগুলো দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ইতিহাসকে অনন্য করেছে। আজও এই স্থানগুলো হাজারো পর্যটকের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। আজারবাইজান সত্যিই এক বিস্ময়ের দেশ, যেখানে প্রকৃতি এবং ইতিহাসের মেলবন্ধনে তৈরি হয়েছে আগুনের এক অনন্য অধ্যায়।</p>