<p>বক্সিং রিংয়ে সবেমাত্র ম্যাচ শুরু হয়েছে। কিন্তু ম্যাচের বয়স ৪৬ সেকেন্ড পার না হতেই কাঁদতে কাঁদতে রিং ছাড়ছেন এক নারী প্রতিযোগী। ম্যাচের তখন ৮ মিনিটের বেশি খেলা বাকি। এমন এক ঘটনাই ঘটেছে প্যারিস অলিম্পিকে।</p> <p>মেয়েদের ৬৬ কেজি ক্যাটাগরিতে গতকাল মুখোমুখি হয়েছিলেন ইমানে খেলিফ এবং অ্যাঞ্জেলা কারিনি। তিন রাউন্ডের এই প্রতিযোগিতায় প্রথম রাউন্ডের খেলা শুরু হতেই রিং ছাড়েন ইতালির কারিনি। প্রতিটি রাউন্ড ৩ মিনিট করে হয়। আলজেরিয়ার বক্সার খেলিফের দুই শক্তিশালী পাঞ্চ কারিনির মুখে লাগলে ইতালির বক্সারের নাক দিয়ে রক্ত ঝড়তে দেখা যায়। রিংয়ে এমন রক্ত ঝড়তে অসংখ্যবারই দেখা গেছে। তবে এবারের ঘটনাটি সম্পূর্ণ আলাদা। </p> <p>কারিনি অভিযোগ করেছেন যে এমন শক্তিশালী পাঞ্চ কোনো মেয়ের হতে পারে না। ইতালির বক্সার বোঝাতে চেয়েছেন খেলিফ আসলে নারী নন পুরুষ। তাই কয়েকটি পাঞ্চ বিনিময়ের পরেই রক্তাক্ত অবস্থায় হার মেনে নিয়ে রিং ছাড়েন কারিনি। এর আগে নিয়ম অনুযায়ী হাত মেলানোর কথা থাকলেও খেলিফের সঙ্গে তা না করে রিংয়ে শিশুর মতো কাঁদতে দেখা যায় নারী বক্সারকে।</p> <p>ম্যাচ শেষে সংবাদমাধ্যমকে কান্নারত কারিনি বলেছেন,‘প্রথম আঘাতের পর নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল। জাতীয় দলে প্রায়ই খেলি। ভাইয়ের সঙ্গেও অনুশীলন করি। ছেলেদের বিপক্ষে সব সময়ই লড়েছি। কিন্তু আজ (গতকাল) খুব ব্যথা লেগেছে।’</p> <p>এরপর থেকেই খেলিফ ছেলে নাকি মেয়ে এ নিয়ে প্যারিস অলিম্পিকে সমালোচনা শুরু হয়। ‘জেন্ডার এলিজিবিলিটি’ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। খেলিফের জেন্ডার নিয়ে এর আগেও বিতর্ক হয়েছে। গত বছর তো ভারতে হওয়া মেয়েদের বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে খেলিফ এবং তাইওয়ানের বক্সার লিন ইউ-তিংকে অযোগ্য ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন (আইবিএ)। অবশ্য অলিম্পিকে দুজনই খেলেছেন। তিন বছর আগে হওয়া টোকিও অলিম্পিকের মতো তাই প্যারিসেও সুযোগ পেয়েছেন।</p> <p>খেলিফ ও লিনকে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে অযোগ্য ঘোষণা করার বিষয়ে আইবিএ এক বিবৃতি বলেছে,‘এলিজিবিলিটির শর্ত পূরণ করতে না পারায় মেয়েদের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেননি তারা।’ অলিম্পিকে খেলার অনুমতি পাওয়ার বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে,‘অ্যাথলেটরা টেস্টোস্টেরন পরীক্ষায় অংশ নেননি। কিন্তু স্বতন্ত্র ও স্বীকৃত একটি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন, যেখানে সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো গোপনীয় থাকে।’</p> <p>দুই বক্সারকে নিয়ে তাই বির্তক শুরু হয়ে গেছে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ‘সমান পদক্ষেপ হয়নি’ জানিয়ে বলেছেন,‘যেসব অ্যাথলেটের মধ্যে পুরুষদের জিনগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তাঁদের মেয়েদের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেওয়া উচিত নয়।’ টেনিস কিংবদন্তি মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা ঘটনাটি ‘দুঃখজনক’ বলে অভিযোগ করে তিনি বলেছেন,‘খেলিফ জৈবিকভাবে একজন পুরুষ ছিলেন।’</p> <p>সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন,‘মেয়েদের খেলাধুলা থেকে ছেলেদের বাইরে রাখব আমি।’ হ্যারি পটার বইয়ের লেখিকা জেকে রোলিং আরো এক কাঠি সরেস হয়ে বলেছেন,‘কারিনির সঙ্গে নির্মম অবিচারের জন্য চিরকালের মতো কলঙ্কিত হবে প্যারিস অলিম্পিক। পরিশ্রম ও অনুশীলন করে এক তরুণ নারী বক্সার নিজেকে প্রস্তুত করেছিল, কিন্তু তার কাছ থেকে সব কিছু ছিনিয়ে নেওয়া হলো। কারণ, রিংয়ে তার বিপক্ষে পুরুষকে খেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’</p> <p>তবে খেলিফ আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটিকে (আইওসি) পাশেই পাচ্ছেন। আইওসির মুখপাত্র মার্ক অ্যাডামস বলেছেন,‘পাসপোর্ট অনুযায়ী তারা নারী ও তাদের নারী হিসেবেই বর্ণনা করা হয়েছে। দুই অ্যাথলেটের বিরুদ্ধে চড়াও হওয়ার কারণ বিধিবহির্ভূত সিদ্ধান্ত (আইবিএর সিদ্ধান্ত)।’</p>