<p>রাজধানীর বিজয় সরণির যানজটে বসে মোবাইল ফোনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম স্ক্রল করছিলেন আবু জাফর নামের মধ্যবয়সী এক বাস যাত্রী। একটি রিল ভিডিওতে চোখ আটকে গেল তাঁর। ক্রিকেট নিয়ে কাজ করা একটি ওয়েবসাইটের ফেসবুক পেজ থেকে ‘শারজা থেকে রাতে ফিরেই সকালে মিরপুরে শান্ত’ ক্যাপশনে শেয়ার করা ছোট সেই ভিডিওটি দেখা শেষ করার আগেই বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য করলেন তিনি। এই একটি চিত্রই বলে দেয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ঘিরে কতটা অভিমান জমেছে সমর্থকদের মধ্যে।</p> <p>সর্বশেষ ১০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচের ৯টিতে হার। নিজেদের সবচেয়ে প্রিয় সংস্করণ ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে অবনমন হয়েছে বাংলাদেশ দলের। ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করা আফগানিস্তানের কাছে টানা দুটি সিরিজ হেরে তাদের নিচে নেমে গেছেন নাজমুল হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজরা। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হার, ভারতে গিয়ে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের সব কটিতে নাস্তানাবুদ হয়ে আসেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।</p> <p>এসবের প্রভাব বেশ ভালোভাবে পড়েছে দর্শকমহলে। সবাই এক বাক্যে বলছে, বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখন ‘অন্ধকার যুগ’ চলছে।<br /> ঘরের মাঠে বাংলাদেশ দলের আন্তর্জাতিক সিরিজগুলো নিয়মিত মাঠে বসে দেখেন মিরপুরের বাসিন্দা প্রকৌশলী শরিফ উদ্দিন আনন্দ। তবে সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে স্টেডিয়ামমুখী হননি তিনি, ‘খেলা দেখে আগে যেমন আনন্দ পেতাম, এখন সেটা আর পাই না।</p> <p>আমার কাছে মনে হয়, বর্তমান দলে আগের মতো ঐক্য নেই। কী করতে হবে, খেলোয়াড়রা এমন নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামে বলে মনে হচ্ছে না। এভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট চলতে থাকলে পরিণতি আরো ভয়াবহ হবে বলে মনে হচ্ছে।’ একই রকম ভাবনা পেশায় ব্যবসায়ী সাইমুন ইসলাম তন্ময়ের, ‘আগে সব কাজ রেখে খেলা দেখতাম। এক দিনের জন্য ঢাকায় গেলেও এমন দিনে যেতাম যেন স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখতে পারি। এখন টেলিভিশনেও খেলা দেখতে ইচ্ছা করে না।’</p> <p>তবে শুধু মাঠের পারফরম্যান্স নয়, মাঠের বাইরের বিভিন্ন ঘটনাও এর সঙ্গে জড়িত বলে মনে করছে অনেকে। ড্রেসিংরুমে সিনিয়র ক্রিকেটারদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, ক্রিকেটারদের রাজনীতিতে যোগদান এর অন্যতম। তরুণ ক্রিকেটাররা নিজেদের মেলে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এর সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে খেলোয়াড়দের নিবেদন নিয়ে। ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিয়ান দিমান বলেন, ‘দলের মধ্যে বিভক্তির খবর এখন আর কারো অজানা নেই। এসবে তো মাঠে প্রভাব পড়েই।’</p> <p>ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হোসাইন আলম এসব কারণেই ক্রিকেটের ওপর থেকে আগ্রহ হারাচ্ছেন, ‘আগে খেলা দেখতে বসার সময় যে রোমাঞ্চ কাজ করত, এখন আর সেই অনুভূতি আসে না।’</p> <p>পেশায় রিকশাচালক ওসমান গনি তবু প্রিয় দলের খেলা দেখা বন্ধ করেননি। শত ব্যস্ততার মধ্যেও ঠিক সময় বের করে নেন এই তরুণ। তিনি বিশ্বাস করেন, দুর্দশা কাটিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ দল। তবে দরকার একজন যোগ্য নেতার, ‘আগে নেতৃত্ব বদলাতে হবে। নেতা হবে মাশরাফির মতো, যার কথা সবাই শুনবে। এখন যিনি অধিনায়ক, তাঁদের কথা কেউ শোনে বলে তো মনে হয় না। নেতা না বদলালে ভাগ্য বদলাবে না।’</p> <p>দিক হারানো নাজমুলরা কি বদলাতে পারবেন ক্রিকেটবিমুখ সমর্থকদের মনোভাব?</p>