ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫
২ বৈশাখ ১৪৩২, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫
২ বৈশাখ ১৪৩২, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৬

একজন শওকত, যার কারণে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ হয়েছে \'মানবিক ইউনিট\'

সাকিব সিকান্দার
সাকিব সিকান্দার
শেয়ার
একজন শওকত, যার কারণে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ হয়েছে \'মানবিক ইউনিট\'

'এক টুকরা পেস্ট্রি অথবা মিষ্টি অথবা কেকের অংশ অথবা একটা কমলা তারা কতদিন চোখে দেখে নাই', কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন পুলিশ কনস্টেবল শওকত। 

নিজের জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করছিলেন তিনি। বলছিলেন, আজকে দশ বছর কোনো নতুন শার্ট আমি কিনি নাই। এটা যদি যাচাই করতে চান চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের সমস্ত সিভিল স্টাফ, সমস্ত ডাক্তার, সমস্ত পুলিশ স্টাফ এবং আমার ফ্যামিলি মেম্বার আর আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে যদি জাস্টিফাই করেন তাহলে আরো ক্লিয়ার জানতে পাবেন।

দশ বছরে আমার একটা নতুন শার্ট অথবা নতুন প্যান্ট নাই। আপনারা প্রশ্ন করেন তাহলে তুমি চলো কীভাবে?...'

তিনি ২০০৫ সালে পুলিশ বিভাগে যোগ দেন। নোয়াখালী ট্রেনিং সেন্টারে ২৪তম ব্যাচ হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন শওকত। তারপর কনস্টেবল হিসেবে কাজে যোগ দেন।

কিন্তু এই চাকরি করতে গিয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। স্বপ্ন আর কল্পনার সাথে তিনি বাস্তবতার কোনো মিল খুঁজে পাননি। 'আমার রাগ চলে আসতো মনের মধ্যে। আমি বাবাকে বলতাম।
কয়েকবার ফোন করেছি যে, বাবা আমি আর পারবো না। আমার খুব অসুবিধা হচ্ছে। এই চাকরি আমার দ্বারা সম্ভব হবে না। আমি চলে আসতেছি, আমি পারবো না আর', বলতে থাকেন তিনি। তবে বাবা তাকে বোঝাতেন।
ছয় মাসের প্রশিক্ষণ, চাকরি নেওয়ার পেছনে এত সময় ইত্যাদি নিয়ে বাবা ছেলেকে বোঝানোর চেষ্টা করতেন। এতকিছুর পর মাত্র এক-দুই মাস চাকরি করার পর চলে আসার বিষয়টি বাবা চাইছিলেন না। সেই ২০০৫ সালে ২৮৫০ টাকা বেসিকে চাকরি শুরু করেন তিনি। সবকিছু মিলিয়ে ৫ হাজারের মতো বেতন পেতেন তিনি। এখন তিনি ২৫ হাজার টাকার মতো বেতন পান। 

পরে তিনি নিজের ওপর চ্যালেঞ্জ নিলেন। এই চাকরি তাকে কত খাটাতে পারে আর তিনি কত খাটতে পারেন সেই চ্যালেঞ্জ নিলেন। ২০০৫-২০০৯ সাল পর্যন্ত ঢাকায় চাকরি করেন তিনি। এরপর চট্টগ্রাম পুলিশে তার পোস্টিং হয়। পুলিশে থাকা অবস্থাতেই তিনি বাংলাদেশ কারিগরি বোর্ডের অধীনে মেডিক্যালে তিন বছরের ডিপ্লোমা এবং দুই বছরের প্যারামেডিক্যাল কোর্স সম্পন্ন করেন।   

২০০৯ সালে চট্টগ্রাম রেঞ্জ থেকে তার রাঙামাটিতে পোস্টিং হয়। আর মেডিক্যালে ডিপ্লোমা কোর্স থাকার কারণে ডেপুটেশনে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল হয় তার কাজের ঠিকানা। রাঙামাটি থেকে আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় সেখানে। ওই হাসপাতালে ওটিতে কাজেরও সুযোগ মেলে তার। সার্জারি ডাক্তারদের সহায়ক হিসেবে দায়িত্ব মেলে। ভালো কাজের সুবাদে একসময় ওটির ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পান। 

এখানে এসে জীবনের নিদারুণ কিছু অভিজ্ঞতা হয় তার। ধীরে ধীরে একজন মানবিক পুলিশ হয়ে ওঠেন শওকত। বললেন, 'যেমন একদিন দেখি একটা মানুষ ডাস্টবিনে পড়ে রয়েছে এবং তাকে পোকায় খেয়ে ফেলতেছে। তাকে তো আমি ফেলে আসতে পারি না। ওদিকে কেউ ভয়েও যায় না, লাশকাটা ঘরের পাশে। তারওপর পচা দুর্গন্ধ। অনেকে মনে করতেছে এটা কোনো পচা লাশের গন্ধ। আসলে ওটা জ্যান্ত মানুষ।' 

ফরেনসিক নিয়ে তার আগ্রহ ছিল। এসব বিষয় নিয়ে কেবল বই পড়ে বোঝা যায় না। প্র্যাকটিকেল অভিজ্ঞতা নিতে হয়। দেহের নানা অংশ সম্পর্কে ধারণা পেতে তিনি ডোমঘরের কদম আলীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। তিনি ধীরে ধীরে এক্সপার্ট হয়ে ওঠেন। এখন তার হাত পানির মতো চলে। 

পোকায় খাওয়া মানুষটিকে ধরে প্রথমে তিনি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। 'কিন্তু বিবেকের কাছে পরাজিত হই। এই লোকটা যদি আমার আপন ভাই হতো তাহলে আমি কি করতাম?' ডাস্টবিনে পড়ে থাকা মাঝবয়সী পুরুষ মানুষটা ক্ষুধার্ত ছিলেন। ভালো থাকা একটা হাত আর পা কিছুটা নাড়াতে পারছিলেন। বোঝাচ্ছিলেন তিনি কিছু খেতে চান। 'আমি যতটুকু বুঝেছিলাম তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন, হাত নিয়ে মুখে দেখাচ্ছিলেন তিনি কিছু খাবেন', বলেন শওকত। গ্লাভস কিনলেন তাকে ধরার জন্য। কিন্তু প্রমাণ সাইজের একটা মানুষকে তিনি কিভাবে একা বয়ে নিয়ে যাবেন? অনেককে ডেকেছেন। কিন্তু এমন অবস্থা দেখে কেউ আর এগিয়ে আসেননি। তারা ওই মানুষটিকে দেখে থুথু ফেলে চলে যান। এক ঘণ্টা ধরে অনুরোধ করেও তিনি কাউকে পাননি। পরে তিনি ফেরত যান। সেখান থেকে দুই সহকর্মীকে নিয়ে আসেন। একজন এখন কনস্টেবল এবং আরেকজন প্রমোশন পেয়ে এএসআই হিসেবে কর্মরত। তারা তিনজন মিলে এক ভ্যানগাড়িওয়ালাকে অনুরোধ করে নিয়ে আসেন। পরে কোনভাবে তাকে তুলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেও ভর্তি করতে সমস্যা হচ্ছিল। অবশেষে নিজে অভিভাবক হয়ে তাকে ভর্তি করেন শওকত। সেখানে শুরু হয় তার ড্রেসিং আর চিকিৎসা। প্রতিদিন রাতে একবেলা তিনি খাবার দিয়ে আসতেন রোগীকে। তার খাবার নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকতেন সেই মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি। আবার কর্মব্যবস্ততায় কোনদিন তিনি খাবার নিয়ে না যেতে পারলে রোগী না খেয়েই থাকতেন। রোগীর ড্রেসিং তিনি নিজেই করতে থাকলেন, একটানা তিন-চার মাস ধরে। যা কামাই করতেন বেশিরভাগ টাকাই এই রোগীর পেছনে খরচ হচ্ছিল তার। মাঝে মাঝে খারাপ লাগতো। এই অচেনা অজানা মানুষটার পেছনে তিনি এত টাকা কেন খরচ করছেন? 'কিন্তু যখন আমি তার কাছে যেতাম এবং সে আমার দিকে তাকিয়ে নিষ্পাপ হাসি দিতো, উপর আল্লাহ সাক্ষী, তখন আমার সব দুঃখ চলে যেতো। তখন আমার মনে হতো যে আমার পুরো বেতনটাই এর পেছনে দিলেও বিন্দুমাত্র আফসোস আসবে না। সে যে একটা জীবন ফেরত পেয়েছেন আর তার পেছনে আমি যে শ্রম দিয়েছি তাই আমার সবচেয়ে বড় আনন্দ।' এখন সেই মানুষটি ভালো আছেন। তবে তার ডান হাতটা অচল আর একটা পা হাঁচুর নিচ থেকে কেটে ফেলতে হয়েছে। 

আরেকটি ঘটনা। তার বোনের হাতে সিস্ট ধরা পড়ে। অপারেশন করতে চট্টগ্রামেই নেওয়া হয়। সেখানে বাবা, মা, ভাই সবাই ছিলেন। ওটি করতে গেলে রক্ত প্রয়োজন। 'আমার আর বোনের রক্তের গ্রুপ একই। বোনকে ওটিতে নিয়েছে। আমি তখন মেডিক্যালের গেটে। সেখানে দেখলাম পাঁচ-ছয় বছর বয়সের একটা বাচ্চাকে ঘিরে রয়েছে কয়েকজন মানুষ। তার পরনে পায়জামা-পাঞ্জাবি, রক্তে লাল।' দৌড়ে গেলেন শওকত। শুনলেন কোনো একটা এতিমখানার ছাত্র সে, গাড়ি দুর্ঘটনায় এই অবস্থা হয়েছে। আহত অবস্থায় মেডিক্যালের সামনে দিয়ে চলে গেলে লোকজন। সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি, 'বোনের ওখানে তো অন্য ভাইয়েরা আছে, বাবা আছে। কিন্ত বাচ্চাটার তো কেউ নাই। পরে নিজে ট্রলিতে করে তাকে দ্রুত নিয়ে গিয়েছি।' পায়ের হাড় ফেটে গেছে বাচ্চাটির। দ্রুত চিকিৎসা দিতে হবে। ওদিকে পরিবারের লোকজন তাকে ফোন দিচ্ছেন। শওকত কোনমতে জানালেন, তিনি হাসপাতালেই আছেন। জরুরি হলে তাকে জানালেই চলে আসবেন। বাচ্চাটির ওষুধ থেকে শুরু করে সারাদিন সেবা দেওয়ার দায়িত্বটা তিনি পালন করতে থাকলেন। ওদিকে বোনের ওটি শেষে তাকে কেবিনেও পাঠানো হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন তিনি। পরে বাচ্চার চাচা আসলে বোনকে দেখতে যান শওকত। বকা খেতে হয়েছে সবার কাছে। কিন্তু বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন পরিস্থিতি কেমন ছিল। 

কিছুদিন পরের ঘটনা। রাঙামাটি থেকে একজন নার্সিং পুলিশ ফোন দিলেন। জানালেন, একজন গরীব মানুষের বাচ্চা ট্রাক দুর্ঘটনায় পড়েছে। আপনি একটু দয়া করে দেখবেন। রাঙামাটি থেকে রোগী আসছে চট্টগ্রামে। 'তখন সম্ভবত রাত আড়াইটা বাজতেছে'। তখনই হেঁটে চলে গেলেন হাসপাতালে, যেখানে রোগী আসার কথা। আহত বাচ্চাটা আসলো। ডাক্তার জানালেন তাকে এখোনি আইসিইউতে নিতে হবে। না হলে নির্ঘাত মারা যাবে সে। চট্টগ্রাম মেডিক্যালে আইসিইউ বেড পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। 'একটা ফাঁকা হওয়া মানে সেখানে এক হাজার দরখাস্ত পড়া, জানালেন শওকত। তার চিকিৎসার জন্য খরচের পালা। তাদের কাছে রয়েছে সর্বসাকুল্যে ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু খরচ হবে আড়াই লাখ টাকা। পরে তার কয়েকজন সিনিয়র স্যারের মাধ্যমে বিলটাকে অর্ধেক করে নিয়ে আসা হয়। বাকি একলাখ টাকা দরকার। 'পরে হাসপাতল কর্তৃপক্ষকে পোশাক পড়া অবস্থায় একরকম পায়ে ধরা বাকি ছিলো আমার'। কিন্তু অন্তত আরো পঞ্চাশ হাজার লাগবেই জানিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। কি আর করা? দুটো ফার্মেসি ছিল তার। দুটোই বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বিক্রি করে হাতপাতালের বাকি বিল পরিশোধ করেন। এমনকি ওই বাচ্চাটাকে আইসিইউ পাইয়ে দিতেও তাকে অনেক কিছুর আশ্রয় নিতে হয়েছিল তখন। 

২০১১-২০১২ সাল থেকে বেওয়ারিশ, অসহায় মানুষদের সেবা দেয়ার জন্য তিনি চ্যারিটি করতে থাকেন। সেবা তার কাছে নেশার মতো। কিন্তু এর পেছনে খরচ বড় সমস্যা। মুখে অনেক কিছু বলা গেলেও বাস্তবে নামলে কত কঠিন তা বোঝা যায়। 

এসব করতে গিয়ে তার নিজের অবস্থাও শোচনীয়। শওকতের চিন্তা একটাই, 'আমি যদি এক হাজার টাকা নিয়ে একটা স্টাইলিশ গেঞ্জি কিনি, ওই টাকা দিয়ে আমি পোকায় খাওয়া মানুষগুলোর জন্যে ১০টা টি-শার্ট কিনতে পারবো'। এখন এই মানুষগুলা তাকিয়ে থাকে কখন শওকত নামের এই মানুষটির দেখা মিলবে। তিনি যাওয়া মানেই তাদের কপালে ভালো কিছু ঘটবে, তাদের খাওয়া জুটবে। 

তখন তার বিয়েশাদির চিন্তা চলছে। কিন্তু তার পরনের কাপড়টাও ভালো নয়। কোন পরিবার তার কাছে মেয়ে দেবে? প্রথম ফার্মেসিটা বিক্রি করেন যার সাথে, সেই মানুষটি শওকতের সততা ও মানবিক দিক সম্পর্কে জানেন। তিনিই তার শ্যালিকার জন্যে এই মানবিক পুলিশ সদস্যকে পছন্দ করলেন। সেই মেয়েটির সাথেই বিয়ে হয় তার। নতুন বউয়ের একটাই আবদার ছিলো। বর তাকে নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে যাবে। কিন্তু অর্থের অভাবে সেই কাজটি এখনো করতে পারেননি। তাদের ঘরে দেড় বছরের একটা ফুটফুটে সন্তানও রয়েছে। 

পনেরো বছর ধরে চাকরি করছেন তিনি। 'তিন বছর পর পর আমাদের একটা বিনোদন ভাতা দেয়। এটা আসলে ভ্রমণের জন্যেই। কিন্তু আমি এখন পর্যন্ত এই টাকা ঘোরাঘুরির পেছনে ব্যয় করতে পারি নাই', আক্ষেপহীন কণ্ঠে বললেন তিনি। 

বিয়ের সময় তার শেরোয়ানিটা ভাড়া করা ছিল, কিনতে পারেননি। আর বন্ধুরা মিলে একটা নতুন শার্ট, একটা প্যান্ট আর এক জোড়া জুতা কিনে দিয়েছিলেন। 

এখন পর্যন্ত তিনি কোনো নতুন জামা কিনতে পারেন না। তিনি জানেন, তার এই একটা নতুন জামার বিনিময়ে তিনি কয়েকটা জামা পাবেন সেই মানুষগুলোর জন্যে, যারা তার অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকে। 

তার এই সেবামূলক কাজে কোনো অনুদান নেই। তিনি তার সহকর্মীদের রাজি করিয়ে বর্তমানে ১০ জনের একটা দল গড়েছেন। যে যা পারেন তাই জমা করেন এবং সেই টাকা এসব কাজে ব্যয় করেন। কিন্তু তাদের এই সামান্য টাকায় তো আর চলে না। অবশেষে আরেকটি পদক্ষেপ নিলেন তিনি। বড়কর্তাদের এক সভায় তিনি মুখ খুললেন। স্যারদের সব খুলে বললেন। দারুণ সাড়া মিলল। বাংলাদেশ পুলিশে প্রথমবারের মতো যোগ হলো মানবিক ইউনিট। এখন এই ইউনিটের কাজই হচ্ছে নিঃস্ব, অসহায়, বেওয়ারিশ মানুষগুলোকে চিকিৎসা, খাদ্য, বস্ত্র এবং আইনি সহায়তা দেওয়া। এখন যেকোনো স্থান থেকে এই মানুষগুলোকে সহায়তা পাইয়ে দিতে কোনো সাধারণ মানুষও ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিচ্ছেন। নিকটস্থ থানায় খবর চলে যাচ্ছে। 'আর এসব থানা আমাদের সম্পর্কে অবগত। তারা আমাদের মানবিক টিমকে জানাচ্ছে। আমরা যত দ্রুত সম্ভব ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাচ্ছি।' 

তবে এই টিমের সদস্যদের মূল কাজ কিন্তু এটা নয়। তাদের নিয়মিত ডিউটি পালন করতেই হয়। যে যখন কিছুটা অবসর পান, তিনিই ছুটে যান সেবা দিতে। 

এখনো সেই আগের মতোই দুঃস্থদের জন্যে নিবেদিত শওকত। ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ঈদে তিনি পাঞ্জাবি কেনেননি।  

তবে অনেকেই প্রশ্ন করেন তাকে, 'এই যে তুমি এভাবে পাগল-ছাগলদের জন্য এভাবে খরচ করছো, নিজের জন্য জমাচ্ছো না। ধরো, তোমার ক্যান্সার হলো, বা কোনো অ্যাক্সিডেন্টে তোমার একটা পা নষ্ট হয়ে গেলো, কে তোমাকে খাওয়াবে?' 

'আমার বেশিরভাগ পেশেন্ট কিন্তু মৃত্যুপথযাত্রী। এদের অর্ধেক হয়তো ভালো হয়। বাকি অর্ধেক চলে যায়। এদের দেখলে যেকোনো মানুষ এটা সেটা ছুড়ে মারে। এরাই কিন্তু আমার জামা আকড়ে ধরে, যেনো আমি না চলে যাই। এটাই আমার সবচেয়ে বড় পাওনা।' এর বেশি কিছু আর ভাবতেও চান না শওকত। এটাই তার প্রাপ্তি, এটাই তার তৃপ্তি। 

(একটি রেডিও ইন্টারভিউ থেকে)

মন্তব্য

পরীক্ষায় ফেল, হতাশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে যা বললেন আহমাদুল্লাহ

শেয়ার
পরীক্ষায় ফেল, হতাশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে যা বললেন আহমাদুল্লাহ
শায়খ আহমাদুল্লাহ। ছবি : ফেসবুক থেকে নেওয়া

গত ১২ মে প্রকাশিত হয়েছে এসএসসি-২০২৩-এর ফল। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। গতবার পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। গতবারের তুলনায় এবার বেড়েছে পাসের হার।

এসএসসির ফল প্রকাশের পর অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মধ্য একটি অংশ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কিছু শিক্ষার্থী আত্মহত্যার মতো ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। এদের সম্পর্ক বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন শায়খ আহমাদুল্লাহ।

আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘এসএসসির ফলাফল প্রকাশের পর আটজন পরীক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।

এটা গণমাধ্যমে আসা খবর। প্রকৃত সংখ্যাটা আরো বেশি হতে পারে। আত্মহত্যার মূল কারণ ধর্মীয় শিক্ষার অভাব। দ্বিনি দিক্ষা পাওয়া মানুষ হতাশ হতে পারে না।
কারণ, তার ভরসার জায়গা আছে। পার্থিব জীবনের ক্ষণস্থায়ী দুঃখ থেকে বাঁচতে সে জাহান্নামের আজাবে ঝাঁপ দিতে পারে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘পরীক্ষার পাস-ফেলই সফলতা কিংবা বিফলতার মানদণ্ড নয়। অনেক ফেল করা ছাত্র কর্মজীবনে সফল হয়। আবার ঈর্ষণীয় রেজাল্টের পরও অনেকের কর্মজীবন সুখের হয় না।

এর অসংখ্য উদাহরণ আমাদের চোখের সামনে আছে। সামগ্রিক জীবনের তুলনায় পরীক্ষার রেজাল্ট বিশেষ বড় কোনো ঘটনা নয়।’

সন্তানদের আত্মহত্যার পেছনে অনেক বাবা-মায়েরও দায় থাকে মন্তব্য করে শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘নিজেদের অপূর্ণ স্বপ্নের বোঝা তারা এমনভাবে চাপিয়ে দেন সন্তানের কাঁধে, সেই ভার আর তারা বইতে পারে না। ফলে চক্ষুলজ্জায় তারা আত্মহননের পথ বেছে নেয়।’

তিনি বলেন, পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের চেয়ে বেশি জরুরি ভালো মানুষ হওয়া। আমরা যদি আমাদের সন্তানদের নৈতিক ও দিনি চেতনাসমৃদ্ধ ভালো মানুষ বানাতে পারি, তবে এই ব্যাধি থেকে আমরা মুক্ত হতে পারব। নয়তো এই সংখ্যাটা দিন দিন আরো বাড়তেই থাকবে।

মন্তব্য

‘গরমের তীব্রতা জাহান্নামের উত্তাপের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়’

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
‘গরমের তীব্রতা জাহান্নামের উত্তাপের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়’

দেশের ৫২ জেলায় মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চলমান এই তাপপ্রবাহ আরো এক সপ্তাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দেশের সব অঞ্চলে বর্ষা না আসা পর্যন্ত তাপপ্রবাহ কমার সম্ভাবনা নেই বলে মত আবহাওয়াবিদদের। দেশব্যাপী চলমান দাবদাহে অতিষ্ট মানুষ।

গরমের তীব্রতায় করণীয় সম্পর্কে বলছেন শায়খ আহমাদুল্লাহ। তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গরমে সবাইকে সচেতন হতে বলেছেন।

আহমাদুল্লাহ লিখেছেন, দেশ জুড়ে তীব্র দাবদাহ চলছে। নিকট অতীতে এই ধরনের গরম পরিলক্ষিত হয়নি।

সবাই বেশি করে পানি পান করি। খেটে খাওয়া শ্রমিকদের প্রতি সদয় হই। গরমের তীব্রতা আমাদেরকে জাহান্নামের উত্তাপের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

সুরা রুমের মধ্যে মহান আল্লাহ বলেছেন, জলে-স্থলে যত বিপর্যয় ঘটে, সব মানুষের হাতের কামাই।

 
একদিকে আমাদের জাগতিক বিশৃঙ্খলা ও অনিয়মের কারণে প্রকৃতি তার ভারসাম্য হারিয়ে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। অপর দিকে আমাদের গুনাহের কারণে আল্লাহ প্রাকৃতিক শাস্তি দেন।

এমতাবস্থায় জাহান্নামের কথা স্মরণ করে আমাদের তাওবা ও গুনাহ বর্জন করা প্রয়োজন। এর পাশাপাশি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন এবং অনাবৃষ্টি ও গরমের কারণ চিহ্নিত করে জাগতিক পদক্ষেপ নিতে হবে। অপরিকল্পিত নগরায়ণের মাধ্যমে ব্যাপক হারে বৃক্ষ নিধন করা হচ্ছে।

এতে আমরা নিজেরাই নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনছি।

সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, ব্যাপকভিত্তিক বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ এবং পরিকল্পিত নগরায়ণের দিকে ধাবিত না হলে দাবদাহের এই অভিশাপ থেকে আমরা সহজে পরিত্রাণ পাব না। 
খাদ্যের জন্য এখনো আমাদেরকে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। তার উপর খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হলে একদিকে দরিদ্র কৃষকেরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আমরাও খাদ্য সংকটে পড়ব।

তাই আসুন, আমরা গুনাহ বর্জন করি, আল্লাহর কাছে ফিরে আসি এবং দাবদাহ দূরীকরণে সামাজিক সচেতনতা ও শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করি।

হে আল্লাহ, আমাদের উপর উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ করুন। কৃষিনির্ভর এই ছোট্ট দেশটিকে আপনার রহমত দিয়ে সজীব বানিয়ে দিন। আমীন। 
 

মন্তব্য

মাকে কাঁধে নিয়ে তাওয়াফ, ভিডিও ভাইরাল

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
মাকে কাঁধে নিয়ে তাওয়াফ, ভিডিও ভাইরাল

পবিত্র কাবাঘর প্রদক্ষিণ (তাওয়াফ) করছেন এক ব্যক্তি। তার কাঁধে বসে আছেন একজন বৃদ্ধা। দুজনের মুখেই হাসি। এমনই চিত্র ধরা পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে।

টুইটারে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওর ক্যাপশেন লেখা হয়েছে, 'মুতামার তার মাকে কাঁধে নিয়ে কাবা প্রদক্ষিণ করেন ওমরাহ পালনের জন্য।' তবে ওই বৃদ্ধা ও তার ছেলে কোন দেশের নাগরিক তা জানা যায়নি।

ভিডিওতে দেখা যায়, ছেলের কাঁধে চড়ে ওমরাহ করা বৃদ্ধার চোখে-মুখে আনন্দের হাসি। কাঁধে বসেই ছেলের মুখ ধরে আদর করে দিচ্ছেন বৃদ্ধ মা।

কাবার পাশে মা-ছেলের এমন দৃশ্য দেখে ক্যামেরাবন্দি করছেন অনেকে। তাদের দেখে হাত নাড়েন। অপরদিকে তার মাও হাসিমুখে এদিক-ওদিকে তাকাতে থাকেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাঁধে চড়ে মাকে তাওয়াফ করানোর দৃশ্য দেখে ছেলেকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন নেটিজেনরা।

মন্তব্য

অবশেষে মুক্তি পেলেন ভাইরাল কালু

ভাইরাল ডেস্ক
ভাইরাল ডেস্ক
শেয়ার
অবশেষে মুক্তি পেলেন ভাইরাল কালু
ডামান্ট ও ভাইরাল কালু

অস্ট্রেলিয়ান ব্লগারকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে আটক দোভাষী আব্দুল্লাহ কালুকে ২০০ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে তাকে এক দিনের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। সোমবার (৩ এপ্রিল) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালত এ আদেশ দেন।

তবে তিনি জরিমানার টাকা পরিশোধ করে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানা থেকে মুক্ত হয়েছেন।

সোমবার কালুকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ।

পরে তিনি নিজের অপরাধ স্বীকার করলে আদালত তাকে ২০০ টাকা অর্থদণ্ডের বিনিময়ে মুক্তির আদেশ দেন। সিএমএম আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ জাহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

সম্প্রতি হোটেল থেকে বের হয়ে রাজধানীর কাওরান বাজার এলাকায় ব্লগ করছিলেন লুক ডামান্ট। সে সময় সাবলীল ইংরেজিতে তাকে স্বাগত জানান আব্দুল্লাহ কালু।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ