<p style="text-align:justify">শিক্ষা-দুর্নীতির নতুন নজিরের কথা শুনিয়েছেন ভারতের মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী রাও উদয় প্রতাপ সিং। রাইসেন জেলার বরেলিতে শিক্ষা মহাকুম্ভ অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে এমন ৫০০ শিক্ষককে চিনি যারা নিজেরা স্কুলে যান না। তাদের হয়ে পড়ানোর জন্য ১০-১৫ হাজার টাকা দিয়ে অন্যদের রেখেছেন।’</p> <p style="text-align:justify">রাও উদয় প্রতাপ সিং বলেছেন, ‘আমার নিজের জেলাতেই তো এ রকম ১০০ জন শিক্ষক আছেন। যদিও শিক্ষামন্ত্রী হয়েও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেননি।</p> <p style="text-align:justify">মধ্যপ্রদেশে ২০১৩ সালে শিক্ষা ও নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপম দুর্নীতি সামনে আসে। সেখানে পয়সা দিয়ে নিয়োগ পাওয়া, নিজে পরীক্ষা না দিয়ে চাকরি ও প্রবেশিকা পরীক্ষায় তার হয়ে অন্য ভালো পড়ুয়ার পরীক্ষা দিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে নানা ধরনের দুর্নীতি সামনে এসেছিল। কিন্তু তখনো নিজে চাকরি পেয়ে না পড়িয়ে, সামান্য টাকার বিনিময়ে কাজ করার জন্য প্রক্সি শিক্ষক নিয়োগ করার মতো কেলেঙ্কারি সামনে আসেনি।</p> <p style="text-align:justify"><strong>কংগ্রেসের প্রশ্ন</strong></p> <p style="text-align:justify">মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায় বিরোধী নেতা উমাঙ্গ সিংঘর বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রীর স্বীকারোক্তি ভয়ংকর। তিনি এ রকম ৫০০ শিক্ষকের এই দুর্নীতির কথা জানেন, তাহলে কেন তাদের এতদিন ধরে রক্ষা করে আসছেন?</p> <p style="text-align:justify">উমাঙ্গ সিংঘর বলেন, ‘যদি তিনি এই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারেন, তাহলে তাকে ইস্তফা দিতে হবে। অন্তত তার জেলার ১০০ জন দুর্নীতিপরায়ণ শিক্ষকের বিরুদ্ধে তাকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতেই হবে। না হলে, বুঝতে হবে তিনি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে পারছেন না।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>নিয়োগ জালিয়াতি</strong></p> <p style="text-align:justify">২০১৩ সালে ব্যাপম অনিয়ম সামনে আসে। মধ্যপ্রদেশে তখন ব্যবসায়িক পরীক্ষা মণ্ডল (ব্যাপম) ১৩টি প্রবেশিকা ও সরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগের পরীক্ষা নেওয়ার দায়িত্বে ছিল।  অভিযোগ, এই পরীক্ষার উত্তরপত্র চূড়ান্ত পর্যায়ে জালিয়াতি করা হতো। যারা পয়সা দিয়েছে, তাদের নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হতো। উত্তরপত্রের সঙ্গে নম্বরের যোগ থাকতো না।</p> <p style="text-align:justify">অভিযোগ ওঠে, পয়সা দিলে অনেক সময় নিজে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার দরকারও হতো না। মূল পরীক্ষার্থীর বদলে অন্য কেউ পরীক্ষা দিয়ে দিত।</p> <p style="text-align:justify">এই দুর্নীতির সঙ্গে রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ী, দালালরা জড়িত ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। এই দুর্নীতির অভিযোগে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে। বেসরকারি মতে, সংখ্যাটা শতাধিক।</p> <p style="text-align:justify"><strong>পশ্চিমবঙ্গেও ভয়াবহ</strong></p> <p style="text-align:justify">শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি অভিযোগ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতিও ভয়ংকর। কলকাতা হাইকোর্ট ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের রায় দিয়েছে। বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন।</p> <p style="text-align:justify">পশ্চিমবঙ্গেও টাকা দিয়ে নম্বর বদল করা, কম নম্বর পেয়েও ফলাফলে জালিয়াতি করা থেকে নানান অভিযোগ রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>ড্রপ আউট বেড়ে যাওয়া</strong></p> <p style="text-align:justify">মধ্যপ্রদেশে শিক্ষাখাতে সরকারি খরচের পরিমাণ বেড়েছে, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ড্রপ আউটের সংখ্যা।</p> <p style="text-align:justify">২০১৬-১৭-তে স্কুল শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দ ছিল ১৬ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২৯ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১০-১১-তে যে ড্রপ আউটের সংখ্যা ছিল, ২০২২-২৩ সালে তার থেকে ৪৬ লাখ ২২ হাজার বেশি ড্রপ আউট হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">কংগ্রেস বিধায়ক প্রকাশ গ্রেওয়াল বিষয়টি নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, এই সময়ে মধ্যপ্রদেশের জনসংখ্যা এক কোটি বেড়েছে, অথচ, স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা কমে যাচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">লোকসভায় একটি প্রশ্নের জবাবে মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান জানিয়েছেন, ২০২১-২২ সালে দশম শ্রেণিতে ড্রপ আউটের হার হলো ২০ শতাংশের বেশি।</p> <p style="text-align:justify">তিনি জানিয়েছেন, ওই বছর ১৯ কোটি পড়ুয়া পরীক্ষায় বসে। ১৬ কোটি পাস হয়। তিন কোটি পড়ুয়া আর একাদশ শ্রেণিতে যেতে পারেনি।</p> <p style="text-align:justify">ড্রপ আউটের তালিকায় এক নম্বরে ওড়িশা, তারপরেই আছে মেঘালয়, আসাম, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও গুজরাট।</p> <p style="text-align:justify">টাইমস অব ইন্ডিয়ার রিপোর্ট বলছে, মেয়েদের ড্রপ আউটের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ এক নম্বরে। পশ্চিমবঙ্গে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সি মেয়েদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক পড়াশুনা ছেড়ে দেয়। তারা পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে ঘরের কাজ করতে থাকে।</p>