<p>৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ খলিল উদ্দিন। ৯ বছর আগে স্ত্রী ইয়ানুর বেগম মারা যান। এর পর থেকেই তিন ছেলে নিয়ে জীবন চলে তার। এক সময় কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করলেও বয়সের ভারে বর্তমানে কোনো কাজ-কর্ম করতে পারেন না। শারীরিক অসুস্থতা নিয়েই দিন পার করছেন তিনি। তিন ছেলের মধ্যে মুফতি শিহাব উদ্দিনকে মাদরাসায় পড়ালেখা করিয়েছেন। সংসারে অভাবের কারণে মেজ ছেলে মো. লিটন ও ছোট ছেলে আবুল বাসারকে পড়ালেখা করাতে পারেননি। তারা দুজন গ্রামে কৃষি কাজ করেন।</p> <p>বড় ছেলে শিহাব উদ্দিন ২০১৮ সালের দিকে মাদরাসায় পড়ালেখা শেষ করে পার্শ্ববর্তী উপজেলায় একটি মাদরাসায় চাকরি নেন। সেখানে তিন বছর চাকরি করে ২০২২ সালের দিকে ঢাকায় কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকে চাকরি নেন তিনি। সেখান থেকে চলতি বছরের শুরুর দিকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি মাদরাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি একটি মসজিদে ইমামতির চাকরি নেন। চাকরি করে যে টাকা আয় করতেন তার একটি বড় অংশ প্রতিমাসে সংসারের খরচের জন্য গ্রামে বাবার কাছে পাঠাতেন।</p> <p>গত ১৯ জুলাই ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয় মারা যান শিহাব উদ্দিন (৩০)। শিহাব উদ্দিন ভোলার লালমোহন উপজেলার কালমা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের লেজছকিনা গ্রামের মো. খলিল উদ্দিনের ছেলে। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বেহুশ ছিলেন বাবা খলিল উদ্দিন। এখনো ছেলের কথা মনে করে কাঁদতে কাঁদতে দৃষ্টিশক্তি হারাতে বসেছেন তিনি।</p> <p>শহীদ মুফতি শিহাব উদ্দিনের বাবা খলিল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ৯ বছর আগে স্ত্রী ইয়ানুর বেগম হঠাৎ অসুস্থতাজনিত কারণে মারা যান। এর পর তিন ছেলেকে নিয়েই তার বেঁচে থাকা। তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে মুফতি শিহাব উদ্দিনকে মাদরাসায় পড়ালেখা করিয়েছেন। কিন্তু অভাবের কারণে অন্য দুই ছেলে মো. লিটন ও আবুল বাসারকে পড়ালেখা করাতে পারেননি। ছোট দুই ছেলে গ্রামে কৃষি কাজ করেন। বড় ছেলে শিহাব ঢাকার মাদানী নগর মাদরাসা থেকে পড়ালেখা শেষ করে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার একটি কওমি মাদরাসায় চাকরি নেন। এর পর গত তিন বছর আগে ঢাকায় কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের অফিসে চাকরি নেন।</p> <p>মারা যাওয়ার তিন-চার মাস আগে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি কওমি মাদরাসার শিক্ষকতার পাশাপাশি একটি মসজিদে ইমামতির দায়িত্ব নেন শিহাব উদ্দিন। প্রতি মাসে রোজগারের টাকা থেকে সংসারের খরচের জন্য পাঠাতেন তিনি। গত ১৯ জুলাই ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন তিনি। এক পর্যায়ে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে একটি পাঁচতলা ভবনে তিনিসহ চার-পাঁচ জন আশ্রয় নেন। সেখানেই তার ঘাড়ের পেছনের বাম পাশে একটি গুলি লাগে। ১৯ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিহাবের মোবাইল নম্বর থেকে অপরিচিত এক লোক ফোন করে বাসায় জানান, শিহাব যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। ঢাকায় শিহাবের আত্মীয়-স্বজনরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ১০-১২টি অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে আলাপ করলে কেউ মরদেহ নিতে রাজি হননি। পরে এক অ্যাম্বুলেন্স চালক মরদেহ নিতে রাজি হন। পরে ওইদিন বিকেলের দিকে শহীদ শিহাব উদ্দিনের মরদেহ নিয়ে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে রাত সাড়ে ৩টার দিকে বাড়িতে পৌঁছয়। পরদিন ২০ জুলাই সকাল ৯টার দিকে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।</p> <p>তিনি আরো জানান, চলতি বছরে (৫ আগস্টের আগে ও পরে) ছোট দুই ছেলে বিয়ে করেছেন। তবে শিহাব উদ্দিন নতুন চাকরিতে যোগদান করায় চলতি বছরের শেষের দিকে বিয়ে করার কথা ছিল। শিহাব মারা যাওয়ার পর তাদের সংসার অনেক কষ্টে চলছে। ছোট দুই ছেলে কৃষি কাজ করে যা আয় করেন তা দিয়েই ওদের চলতে কষ্ট হয়। এখন তিনি অনেক কষ্টে দিন পার করছেন। তিনি ছেলে হত্যার বিচার দাবি করেন।</p>