<p>ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার মাঠজুড়ে হালি পেঁয়াজের চারা রোপণের মহোৎসব চলছে। তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষকদের প্রস্তুত করা জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপণ করছেন শ্রমিকরা। এবার সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে হালি পেঁয়াজ আবাদের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কৃষি অধিদপ্তর।</p> <p>গতকাল শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সরেজমিনে সালথা-নগরকান্দার বিভিন্ন পেঁয়াজ ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, প্রস্তুত করা জমিতে একজন শ্রমিক হাত লাঙ্গল দিয়ে পিলি (বেড) কেটে দিচ্ছেন। আর শ্রমিকরা দলবেধে সারিবদ্ধভাবে বসে সেই বেডের মধ্য দিয়ে পেঁয়াজের চারাগুলো নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় রোপণ করছেন। অন্যদিকে গৃহস্থরা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বীজতলার ক্ষেত থেকে পেঁয়াজের চারা তুলছেন। আবার কেউ কেউ ক্ষেতে পেঁয়াজের চারা রোপণের শেষ হওয়া মাত্রাই শ্যালোমেশিন দিয়ে সেচ দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে সালথা-নগরকান্দার বিস্তীর্ণ এলাকার মাঠজুড়ে পেঁয়াজ আবাদের মহাকর্মযজ্ঞ চলতে দেখা গেছে।</p> <p>সালথার আটঘর ইউনিয়নের বিভাগদী গ্রামের তরুণ পেঁয়াজচাষি মো. সাইফুল ইসলাম কালের কণ্ঠ বলেন, ‘আমি এবার পাঁচ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রোপণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। পাঁচ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদের জন্য বিভিন্ন জাতের ৯ কেজি বীজ বপন করেছি। ইতিমধ্যে বীজতলা থেকে উৎপাদিত চারা রোপণের উপযোগী হয়ে গেছে। আশা করি, এই চারা দিয়ে আমি পাঁচ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেও অন্তত ৩০ হাজার টাকার চারা বিক্রি করতে পারব। আমি হয়তো দু-এক দিনের মধ্যেই পেঁয়াজের চারা রোপণের কাজ শুরু করব।’</p> <p>কামদিয়া গ্রামের পেঁয়াজচাষি কায়েম ফকির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের এলাকার মাঠে মাঠে পেঁয়াজের চারা রোপণের উৎসব চলছে। কৃষক-শ্রমিকরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন। আমরা কেউই বর্তমানে দম ফেলার ফুসরত পাচ্ছি না। আমি এবার চার বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করছি। চার বিঘা জমির জন্য ৭ কেজি বীজ বপন করেছিলাম। আমার ক্ষেতের বীজতলা থেকে ভালো মানের চারা উৎপাদিত হয়েছে। আবহাওয়া যদি ভালো থাকে, আশা করি যদি পেঁয়াজ ভালো হবে। তবে এবার শ্রমিক, সার-ওষুধ ও বীজের দাম বেশি। তাই আমাদের খরচও বেড়ে গেছে দ্বিগুণ।’</p> <p>সায়েম মোল্যা নামে আরেক পেঁয়াজচাষি বলেন, ‘এবার শ্রমিকের দাম বেপরোয়া। একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা দিতে হয়। তা-ও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। সার-ওষুধের দামও বেড়েছে। এক বস্তা সার এবার ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা করে কিনতে হচ্ছে। অন্যদিকে ভালো এক কেজি পেঁয়াজবীজ কিনতে এবার ১৮ হাজার থেকে ২৮ হাজার টাকা পর্যন্ত লেগেছে। সব মিলিয়ে এবার এক বিঘা জমিতে অন্তত ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়ে যাবে। এমন অবস্থায় যদি পেঁয়াজের দাম প্রতি মণ দুই হাজার থেকে ২৫০০ টাকা থাকে, তাহলে আমাদের জন্য ভালো। তা না হলে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’</p> <p>নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তিলোক কুমার ঘোষ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো এবারও নগরকান্দায় বিপুল পরিমাণে পেঁয়াজ আবাদ করা হচ্ছে। পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো যাতে হয়, সে জন্য আমাদের পক্ষ থেকে কৃষকদের সব সময় সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’</p> <p>সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন শিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সালথায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে এবার পেঁয়াজ আবাদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে আমাদের অফিসের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।’</p>