শ্রীলঙ্কায় ট্রেনের ধাক্কায় ৬ হাতির মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
শ্রীলঙ্কায় ট্রেনের ধাক্কায় ৬ হাতির মৃত্যু
২০ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কার পূর্বাঞ্চলীয় হাবারানায় লাইনচ্যুত একটি ট্রেন পরীক্ষা করছেন পুলিশ সদস্য ও রেলওয়েকর্মীরা। ছবি : এএফপি

শ্রীলঙ্কার মধ্যাঞ্চলে একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাছে হাতির পালকে যাত্রীবাহী ট্রেন ধাক্কা দিয়েছে। এতে ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয় ও ছয়টি হাতি মারা যায়। তবে যাত্রীদের কেউ হতাহত হয়নি। রাজধানী কলম্বোর পূর্ব দিকে হাবারানায় স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোরে দুর্ঘটনাটি ঘটে।

পুলিশের বরাত দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, দুটি আহত হাতির চিকিৎসা চলছে এবং এটিই ছিল দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্য প্রাণী দুর্ঘটনা।

শ্রীলঙ্কায় হাতির পালকে ট্রেনের ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা নতুন নয়। দেশটিতে মানুষ ও হাতির সংঘর্ষজনিত হতাহতের হার বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর শ্রীলঙ্কায় মানুষের সঙ্গে হাতির সংঘর্ষে ১৭০ জনের বেশি মানুষ ও প্রায় ৫০০ হাতি মারা গেছে।

এ ছাড়া প্রতিবছর প্রায় ২০টি হাতি ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যায়।

প্রাকৃতিক আবাসস্থল বন উজাড় ও খাদ্যের সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হাতিরা ক্রমে মানুষের কার্যক্রমের এলাকায় চলে আসছে। অনেকে ট্রেন চালকদের গতি কমানোর ও রেললাইনে আগে থেকেই ট্রেনের হর্ন বাজিয়ে হাতিদের সতর্ক করার আহ্বান জানিয়েছেন।

২০১৮ সালে হাবারানায় একটি গর্ভবতী হাতি ও তার দুটি বাচ্চা একইভাবে ট্রেনের ধাক্কায় মারা যায়।

তারা একটি বড় দলের সঙ্গে ভোরে রেললাইন পার হচ্ছিল। গত অক্টোবরে হাবারানা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে মিনেরিয়ায় একটি ট্রেন হাতির পালকে ধাক্কা দিলে দুটি হাতি মারা যায় ও একটি আহত হয়।

শ্রীলঙ্কায় প্রায় সাত হাজার বন্য হাতি রয়েছে। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে হাতিদের পবিত্র বলে গণ্য করা হয় এবং আইনের মাধ্যমে তাদের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। হাতি হত্যা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ, যার জন্য কারাদণ্ড বা জরিমানা হতে পারে।

সূত্র : বিবিসি

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

৬৬ বছর বয়সে স্বাভাবিকভাবে দশম সন্তানের মা হলেন জার্মান নারী

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
৬৬ বছর বয়সে স্বাভাবিকভাবে দশম সন্তানের মা হলেন জার্মান নারী
৬৬ বছর বয়সী আলেকজান্দ্রা হিল্ডেব্রান্ট ১৯ মার্চ ছেলে ফিলিপের জন্ম দেন। ছবি : টুডে

জার্মানির এক নারী সম্প্রতি ৬৬ বছর বয়সে স্বাভাবিকভাবে দশম সন্তানের মা হয়েছেন। তিনি কোনো ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) ছাড়াই গর্ভধারণ করেছিলেন। 

আলেকজান্দ্রা হিল্ডেব্রান্ট নামের এই নারী ১৯ মার্চ বার্লিনের চারিতে হাসপাতালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে ফিলিপ নামের এক ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। শিশুটির ওজন ছিল সাত পাউন্ড ১৩ আউন্স।

 

বার্লিনের চেকপয়েন্ট চারলির ওয়াল মিউজিয়ামের মালিক ও ব্যবস্থাপক হিল্ডেব্রান্ট সত্তরের দশকের শেষের দিকে তার প্রথম সন্তানের জন্ম দেন। এরপর ৫০ বছর বয়সের পর আরো আট সন্তান জন্ম দেন, যাদের সবাই সিজারিয়ানের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করে।

সংবাদমাধ্যম টুডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হিল্ডেব্রান্ট বলেন, ‘একটি বড় পরিবার শুধু চমৎকারই নয়, বরং এটি শিশুদের যথাযথভাবে লালন-পালনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।’

তার সন্তানরা হলো স্ভেতলানা (৪৬), আর্তিওম (৩৬), যমজ এলিজাবেথ ও ম্যাক্সিমিলিয়ান (১২), আলেকজান্দ্রা (১০), লেওপোল্ড (৮), আন্না (৭), মারিয়া (৪) ও ক্যাথারিনা (২)।

আরো পড়ুন
ভয়াবহ ভূমিকম্পের সময় রাস্তায় সন্তানের জন্ম : ভিডিও

ভয়াবহ ভূমিকম্পের সময় রাস্তায় সন্তানের জন্ম : ভিডিও

 

হিল্ডেব্রান্টের চিকিৎসক প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ড. উলফগ্যাং হেনরিশ জানিয়েছেন, তার রোগীর গর্ভাবস্থা মোটামুটি জটিলতামুক্ত ছিল। তিনি বলেন,  ‘তার চমৎকার শারীরিক অবস্থা ও মানসিক দৃঢ়তার কারণে তিনি গর্ভধারণ ভালোভাবেই সামলেছেন।’

নিজের বয়সে এভাবে গর্ভধারণের রহস্য জানতে চাইলে হিল্ডেব্রান্ট জানান, তিনি সব সময় সক্রিয় জীবনযাপন করেন এবং কখনোই জন্মনিয়ন্ত্রণের কোনো উপায় গ্রহণ করেননি। তিনি আরো বলেন, ‘আমি খুব স্বাস্থ্যকর খাবার খাই, নিয়মিত এক ঘণ্টা সাঁতার কাটি, দুই ঘণ্টা দৌড়াই, ধূমপান বা মদ্যপান করি না এবং কখনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করিনি।

তিনি আরো বলেন, ‘শিশুদের প্রতি সমাজে এক ধরনের বিরূপ মনোভাব দেখা যায়। কিন্তু যারা শিশুদের সঙ্গে সময় কাটান, তারা তাদের মতো বদলাতে বাধ্য। আমাদের আরো বেশি সন্তান নিতে মানুষকে উৎসাহিত করা উচিত!’

কোনো নারীর এত বেশি বয়সে মা হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে উগান্ডার সাফিনা নামুকওয়া ৭০ বছর বয়সে যমজ সন্তানের জন্ম দেন, যদিও তিনি আইভিএফ পদ্ধতির মাধ্যমে গর্ভধারণ করেছিলেন। এর আগে ২০২০ সালে তিনি একটি মেয়েসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন।

সূত্র : এনডিটিভি

মন্তব্য

সোমালিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বিমান

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
সোমালিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বিমান
ছবিসূত্র : এএফপি

মার্কিন সামরিক বাহিনী শনিবার সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড অঞ্চলে ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়েছে।এ হামলায় বেশ কয়েকজন আইএস সদস্য নিহত হয়েছে। আফ্রিকা কমান্ড এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বলে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে। 

এক বিবৃতিতে, ইউরোপ-ভিত্তিক কমান্ড আরো জানিয়েছে, সোমালিয়া সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে সর্বশেষ এ হামলা চালানো হয়।

হামলায় আইএসআইএস-এর একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়েছে। 

আফ্রিকমের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিমান হামলাটি উত্তর-পূর্ব সোমালিয়ার পান্টল্যান্ডের বোসাসোর দক্ষিণ-পূর্বে চালানো হয়েছে। আফ্রিকান বাহিনী জানিয়েছে, সর্বশেষ এই হামলার দুই দিন আগে একই ধরণের আরো একটি অভিযান চালানো হয়েছিল।

এতে আরো বলা হয়েছে, আফ্রিকমের প্রাথমিক মূল্যায়নে দেখা গেছে একাধিক আইএসআইএস-সোমালিয়া কর্মী নিহত হয়েছেন এবং কোনো বেসামরিক লোক আহত হয়নি।

 আফ্রিকান বলেছে, সোমালিয়ায় একটি বৃহত্তর সন্ত্রাসবিরোধী উদ্যোগ এটি।

সূত্র : এএফপি

মন্তব্য

গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রধান খলিল আল-হায়্যা। ছবি : এএফপি

হামাস দুই দিন আগে মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে পাওয়া গাজা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। রবিবার (৩০ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রধান খলিল আল-হায়্যা টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে শনিবার বলেছেন, ‘দুই দিন আগে আমরা মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে একটি প্রস্তাব পেয়েছি। আমরা এটি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছি।

২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া গাজায় হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরোক্ষ আলোচনায় হামাসের আলোচক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন খলিল আল-হায়্যা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আশা করি (ইসরায়েলি) দখলদাররা (ইসরায়েলিদের) ক্ষতি করবে না।’

বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ইসরায়েলের কাছ থেকে একটি নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের বিষয়ে মিসর ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছে, যার মধ্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন পর্যায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রস্তাবে হামাসকে প্রতি সপ্তাহে তাদের আটকে থাকা পাঁচজন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, ‘মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাব অনুসারে তারা একাধিক পরামর্শ দিয়েছে এবং ইসরায়েল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পূর্ণ সমন্বয় করে মধ্যস্থতাকারীদের কাছে একটি পাল্টা প্রস্তাব পৌঁছে দিয়েছে।’ রয়টার্স প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাছে জানতে চেয়েছিল যে তারা কি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে কি না, কিন্তু তারা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ ১৫ মাস ধরে চলা যুদ্ধের পর ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হয় এবং এর মধ্যে ছিল যুদ্ধ বন্ধ, হামাস কর্তৃক বন্দি কিছু ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি এবং কিছু ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া। এর পর থেকে প্রায় দুই মাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল, কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

তিন পর্যায়ের চুক্তির দ্বিতীয় ধাপটি অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের চুক্তির ওপর আলোকপাত করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। হামাস বলেছে, যেকোনো প্রস্তাবের জন্য দ্বিতীয় ধাপের সূচনাকে অনুমোদন দিতে হবে, অন্যদিকে ইসরায়েল প্রথম ৪২ দিনের ধাপ সম্প্রসারণের প্রস্তাব দিয়েছে।

ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বানের জবাবে হায়া বলেন, গোষ্ঠীটির অস্ত্রাগার একটি লাল রেখা এবং যতক্ষণ পর্যন্ত ইসরায়েলি দখলদারত্ব থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা নিরস্ত্রীকরণ করবে না।

সূত্র : রয়টার্স
 

মন্তব্য

মৃত্যুপুরীতে বিষণ্ণ ঈদ আজ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
মৃত্যুপুরীতে বিষণ্ণ ঈদ আজ
ছবিসূত্র : আনাদোলু এজেন্সি

ইসরায়েলি ভয়াবহ তাণ্ডবে গাজা এখন মৃত্যুপুরী। হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া এই নগরীতে আজ ঈদ। পুরো রমজান মাস ফিলিস্তিনিদের কেটেছে দুঃসহ কষ্টে। এ সময়ে তাদের সঙ্গী ছিল ইসরায়েলি বোমা, রক্ত আর মৃত্যুর ভয়।

শত শত ফিলিস্তিনি  ইসরায়েলি গোলায় নিহত হয়েছেন। রোজার মধ্যেও ছিল না খাবার, ছিল না মাথা গোঁজায় ঠাঁই, সারা দিন রোজা রেখে এক গ্লাস পানি পাওয়াও যেখানে কষ্ট সেখানে ঈদ এসেছে। 

টানা দ্বিতীয় বছরের মতো গাজায় ঈদুল ফিতরের উৎসবমুখর পরিবেশ নেই। হাজার হাজার পরিবার তাদের ঘরবাড়ি এবং প্রিয়জনদের হারানোর শোকে অস্থায়ী তাঁবুতে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ে আছে।

একসময়ের প্রাণবন্ত রাস্তাগুলো, যা সাধারণত সাজসজ্জায় সজ্জিত, শিশুদের হাসিতে ভরা ছিল, এখন তা ধ্বংসস্তূপ। ইসরায়েলি বোমাবর্ষের ফলে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের নীরব স্মারক এগুলো। 

ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুসারে, বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা রবিবার বা সোমবার ঈদুল ফিতরের প্রথম দিন উদযাপন করবে, যা চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু গাজায় ঈদ এলেও উদযাপন করার মতো আনন্দ নেই।

 

ফিলিস্তিনিরা বলছেন, ‘তাদের উদযাপনের কিছুই নেই’। ২০২৫ সালের ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল সকল ক্রসিং বন্ধ করে দেয়। সকল মানবিক, চিকিৎসা এবং ত্রাণ সহায়তা প্রবেশে বাধা দিয়ে গাজা উপত্যকায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করেছে ইসরায়েল। বাজার প্রায় খালি এবং অবশিষ্ট যা পণ্য রয়েছে তার দাম চড়া, যার ফলে যুদ্ধের কারণে দরিদ্র ফিলিস্তিনিদের জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

গত সপ্তাহে গাজা সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, হামলা এবং জীবন রক্ষাকারী সাহায্যের বাধার কারণে এই অঞ্চলটি দুর্ভিক্ষের প্রথম পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।

গাজা শহরের পশ্চিমে অবস্থিত আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে, ২৯ বছর বয়সী সুয়াদ আবু শাহলা একটি ছেঁড়া কাপড়ের তাঁবুর বাইরে বসে তার কান্নারত সন্তানকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন।

চার সন্তানের মা সুয়াদ ২০২৪ সালের নভেম্বরে ইসরায়েলি বাহিনী বোমাবর্ষণ করলে বেইত লাহিয়ায় তার বাড়ি হারিয়ে ছিলেন। তারপর থেকে, তিনি এবং তার পরিবার একটি ভঙ্গুর আশ্রয়স্থলে নির্মম পরিস্থিতি সহ্য করেছেন।

তিনি বলেন, ‘গাজায় ঈদের অর্থ এখন আর নেই। যুদ্ধের আগে, আমরা শিশুদের জন্য পোশাক এবং মিষ্টি কিনতাম। এখন আমরা রুটিও কিনতে পারি না। আমার বাচ্চারা আমাকে জিজ্ঞেস করে, 'আমরা কি নতুন পোশাক পাব? আমরা কি কখনও বাড়ি ফিরব?' কিন্তু আমার কাছে কোনো উত্তর নেই।’

গাজা শহরজুড়ে যুদ্ধের ক্ষত সর্বত্র। ধসে পড়া ভবন, ধ্বংসস্তূপে ভরা রাস্তা এবং ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো সংঘাতের ভয়াবহতা প্রতিফলিত হচ্ছে। আল-রিমাল পাড়ায়, যা একসময় গাজা শহরের সবচেয়ে সমৃদ্ধ এলাকাগুলোর মধ্যে একটি ছিল, তার বেশিরভাগ ভবন সমতল হয়ে গেছে অথবা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুড়ে যাওয়া গাড়ি এবং পতিত বিদ্যুৎ লাইন নির্জন রাস্তায় পড়ে আছে। 

মারওয়ান আল-হাদ্দাদ নামে একজন বলেন, ‘গত বছর যুদ্ধ সত্ত্বেও আমরা আনন্দের পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করেছি। এখন আমি আমার বাচ্চাদের জন্য মিষ্টিও কিনতে পারছি না। তিনি গত সপ্তাহে সাম্প্রতিক ইসরায়েলি উত্তেজনার পর বেইত হানুন থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ‘আমি কীভাবে আমার বাচ্চাদের বলতে পারি যুদ্ধ কবে শেষ হবে?’ তিনি আরো বলেন, ‘যখনই আমরা বোমা হামলার শব্দে ঘুম থেকে উঠি, তখনই আমরা বুঝতে পারি যে শান্তি এখনও অনেক দূরে।’

ব্যবসায়িক মালিকদের জন্য পরিস্থিতি ঠিক ততটাই ভয়াবহ। যুদ্ধের আগে গাজা শহরের কেন্দ্রস্থল ওয়েহদা স্ট্রিটে বেশিরভাগ দোকান এখন বন্ধ অথবা ধ্বংস হয়ে যায়। মিষ্টির দোকানের মালিক ইব্রাহিম সিয়াম তার ব্যবসার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, ‘ঈদের সময় আমি কেজি কেজি মিষ্টি বিক্রি করতাম। এখন, মানুষ রুটি খুঁজে পায় না।’ গাজা উপত্যকার উত্তরে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে বাজারের কার্যক্রম স্থবির রয়ে গেছে। পোশাকের দোকানের মালিক আব্দুল রহমান আল-জেইন বলেন, ‘ঈদের পোশাক কেনার সামর্থ্য খুব কম লোকেরই আছে। মানুষ বেঁচে থাকার দিকে মনোনিবেশ করছে।’

দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসে ৩২ বছর বয়সী ফাতিমা কুদেইহ বলেন, ‘আমার সন্তানরা জিজ্ঞাসা করে কেন আমরা আগের মতো নতুন পোশাক কিনি না, বাজারে যাই না। আমি তাদের বলি, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে আমরা পোশাক কিনব, কিন্তু তারা আমার কথায় বিশ্বাস হারাতে শুরু করেছে।’

বেঁচে থাকার সংকল্প

দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে। ফিলিস্তিনি নারীরা কাক নামে ঐতিহ্যবাহী ঈদের বিস্কুট তৈরি করছেন। ১৮ মার্চ ২০২৫ তারিখে পুনরায় শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক আক্রমণ সত্ত্বেও এই নারীরা চাচ্ছেন সন্তানদের মনোবল কিছুটা চাঙ্গা করতে। এক সমুদ্র শোক, যুদ্ধ, ঘরবাড়ি ও প্রিয়জনদের হারানো এই মানুষগুলো আপ্রাণ চেষ্টা করছে তাদের সন্তানদের মন ভালো করতে। 

কাওসার হুসেন আশ্রয়কেন্দ্রের কোণে একটি মাটির চুলার পাশে বসে ঈদের বিস্কুট বেক করার জন্য আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করছেন, তখন ইসরায়েলি আর্টিলারি গাজা উপত্যকার কাছাকাছি এলাকায় গোলাবর্ষণ করছে। যুদ্ধের কারণে রান্নার গ্যাস নেই, তাই নারীরা রান্নার জন্য পিচবোর্ড এবং কাঠ ব্যবহার করছেন, যা সময়সাপেক্ষ এবং ক্লান্তিকর। ধোঁয়া উপেক্ষা করে হুসেন সাবধানে ট্রেতে বিস্কুট রেখে বেক করা শুরু করেন।

তিনি বলেন, ‘এখানকার পরিবেশ খুবই দুঃখজনক। আমরা অনেক আত্মীয়স্বজন এবং প্রিয়জনকে হারিয়েছি। আমরা একটি বড় মানবিক সংকটে ভুগছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এমন এক জাতি যারা জীবনকে ভালোবাসি। আমরা চাই না আমাদের সন্তানরা বঞ্চনার মধ্যে থাকুক। আমরা তাদের যা কিছু সম্ভব তাই দেওয়ার চেষ্টা করি, এমনকি যদি তা সামান্যও হয়।’

যুদ্ধের আগে তিনি ঈদের সময় প্রায় ৯ কিলোগ্রাম (১৯.৮ পাউন্ড) বিস্কুট বানাতেন। এই বছর, তিনি মাত্র এক কিলোগ্রাম (২.২ পাউন্ড) কুকিজ তৈরি করছেন শুধুমাত্র যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের জন্য কিছুটা সান্ত্বনা বয়ে আনার আশায়। যদিও তাদের চারপাশে শোক বিরাজ করছে। তবুও তিনি বিশ্বাস করেন, ঈদ উদযাপন করা উচিত।

যুদ্ধের মধ্যে আনন্দ

আরেকজন ফিলিস্তিনি নারী উম্মে মোহাম্মদও তার সন্তানদের এবং নাতি-নাতনিদের জন্য বিস্কুট তৈরি করে তাদের ঈদের আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি আনাদোলুকে বলেন, ‘গণহত্যার সময় ঈদের আচার-অনুষ্ঠান থেকে শিশুদের যা হারিয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য আমরা সামান্য কিছু বিস্কুট তৈরি করতে পেরেছি।’  তিনি আরো বলেন, ‘শিশুরা কষ্টে আছে আমরা খুশি করার চেষ্টা করছি এবং আমরা কেবল এটাই দিতে পারি।’

২০২৫ সালের ১৮ মার্চ ইসরায়েল গাজায় নতুন করে হামলা শুরু করেছে। এতে গত ১১ দিনে ৮৯০ জন নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলা শুরুর পর থেকে ইতিমধ্যে ইসরায়েলি হামলায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। অন্যদিকে এ মাসের শুরু থেকে গাজায় ত্রাণসহায়তা পৌঁছাতে দেয়নি ইসরায়েল। হামাসের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য ইসরায়েল এই কৌশল নিয়েছে।  

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নভেম্বরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। ছিটমহলে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হচ্ছে।

সূত্র : আলজাজিরা, আনাদোলু, সিনহুয়া

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ