প্রমত্তা পদ্মার ওপর সেতু হবে—একসময় এটি বিশ্বাস করতেও কষ্ট হতো। তাই ২০০১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন পদ্মা সেতুর ফলক উন্মোচন করেন, তখনো অনেকে তা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। অথচ এমন একটি সেতুর স্বপ্ন অনেক দিন ধরেই দেখে আসছিল দেশের মানুষ, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষ। আজ সেটি আর কোনো স্বপ্ন নয়।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পূর্ণ বাস্তব
- দুই পারকে এক করেছে নির্মিত সড়ক
অন্যান্য

স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে দৃশ্যমান বাস্তবতায় নিয়ে আসতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারকে অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়েছে, অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু কোনো অর্থ ছাড় করার আগেই ২০১২ সালে ‘দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে সরে যায় বিশ্বব্যাংক। বলা হয়, কানাডার এসএনসি-লাভালিনকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার শর্তে ঘুষ নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। পরে কানাডার আদালতেও এই অভিযোগ ডাহা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে।
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর বাস্তব রূপায়ণের জন্য বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ। আশা করি এই সেতু দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করবে। অবহেলিত জনপদ হিসেবে চিহ্নিত দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
সম্পর্কিত খবর

নতুন উচ্চতায় দুই দেশের সম্পর্ক
- প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর

বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার চীন। পদ্মা সেতু, পায়রা বিদ্যুৎ হাব, রেলসংযোগসহ অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে চীনের সহায়তায়। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যকার সেই সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীন জলবিদ্যুৎ, পূর্বাভাস, বন্যা প্রতিরোধ ও দুর্যোগ হ্রাস, নদী খনন, পানিসম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, পানিসম্পদ উন্নয়ন এবং সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি বিনিময়ের ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারে সম্মত হয়েছে।
এশিয়ার বোয়াও ফোরামের মহাসচিবের আমন্ত্রণে অধ্যাপক ইউনূস গত ২৬ ও ২৭ মার্চ চীনের হাইনান প্রদেশে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেন।
শুক্রবার বেইজিংয়ের ‘দ্য প্রেসিডেনশিয়াল’-এ চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এক বিনিয়োগ সংলাপে অংশ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহবান জানান।
আমরা আশা করি, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বিদ্যমান ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উত্তরোত্তর আরো জোরদার হবে এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে চীন আগামী দিনগুলোতে আরো বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় হোক
- পবিত্র ঈদুল ফিতর

দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার পর আনন্দের বার্তা নিয়ে এসেছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলমানদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম এই ঈদুল ফিতর। প্রতিবছর ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র-নির্বিশেষে সবাই শরিক হয় এই আনন্দ উৎসবে। যে যার সাধ্যমতো এই দিনটি আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করে থাকে।
দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে প্রত্যেক মুসলমান নৈতিক, আত্মিক ও সামাজিক পরিশুদ্ধির শিক্ষায় পরিশীলিত হয়। তাকওয়ার শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নতুন জীবন শুরুর উদ্দীপনা পায়।
ঈদুল ফিতর একাধারে আনন্দোৎসব ও ইবাদত। এই আনন্দ আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা প্রাপ্তির, জাহান্নাম থেকে মুক্তির। এই আনন্দ সিয়াম-কিয়ামের শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতার। এই আনন্দে নেই কোনো পাপ-পঙ্কিলতা। এই আনন্দে কেবলই সওয়াব ও পূর্ণতা। ধীরে ধীরে এই আনন্দ সবার মাঝে সঞ্চারিত হতে থাকে। এই দিনে হতদরিদ্র, এতিম, দুস্থ, নিঃস্ব ও ছিন্নমূল মানুষের মুখেও হাসি ফোটে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ব্যবসায়ী ও কর্মজীবীরাও এ সময় ব্যস্ত হয়ে পড়েন সমান তালে। ঈদ উপলক্ষে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সুবিধা তাঁরাও ভোগ করেন। এভাবেই সর্বজনীন হয়ে ওঠে ঈদ।
ঈদ মুসলমানদের জন্য শুধু একটি ধর্মীয় উৎসবই নয়, সম্প্রীতি-সৌভ্রাতৃত্ব শেখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষও। এই উৎসবের মাধ্যমে প্রত্যেক মুসলমান একে অপরের আরো কাছাকাছি আসে। শুধু মুসলমান নয়, অন্যান্য ধর্মের মানুষের সঙ্গেও আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়। পবিত্র রমজান আমাদের চিত্তশুদ্ধির যে শিক্ষা দিয়েছে, ঈদুল ফিতর হচ্ছে সেই শিক্ষা কাজে লাগানোর দিন। আজ একটি দিনের জন্য হলেও ধনী-গরিব সবাই দাঁড়াবে এক কাতারে। ভুলে যেতে হবে সব বৈষম্য, সব ভেদাভেদ। হিংসা, বিদ্বেষ ও হানাহানি থেকে নিজেদের মুক্ত করতে হবে। শান্তিপ্রিয় মানুষ হিসেবে সারা বিশ্বে মুসলমানদের মর্যাদা ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে। ইসলাম যে প্রকৃত অর্থেই শান্তির ধর্ম, সেটি প্রমাণ করতে হবে।
ঈদের সামাজিক দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ। রোজা ও ঈদের সময় দরিদ্রদের প্রতি সমবেদনা ও সহযোগিতার মনোভাব বৃদ্ধি পায়। বৈষম্যের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলে ঈদ। ঈদ মানে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন বৃদ্ধি। আমাদের ঘরে ঘরে ফিরে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি। সুদৃঢ় হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য। সবার ঘরে পৌঁছে যাক ঈদের সওগাত। আমাদের অসংখ্য পাঠক, গ্রাহক, বিজ্ঞাপনদাতা, বিপণনকর্মী, শুভানুধ্যায়ীসহ সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

এই ধারা অব্যাহত থাক
- প্রবাস আয়ের রেকর্ড

অর্থনীতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের জন্য একটি বড় সুখবর হচ্ছে রেমিট্যান্স বা প্রবাস আয়ের ক্রমাগত বৃদ্ধি। রেমিট্যান্সযোদ্ধারা বৈধ পথে ক্রমেই বেশি করে অর্থ পাঠাচ্ছেন। ফলে প্রতি মাসেই বাড়ছে প্রবাস আয়ের পরিমাণ। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঈদের আগে চলতি মাসের প্রথম ২৬ দিনে ২৯৪ কোটি ডলারের প্রবাস আয় এসেছে।
নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ক্রমেই বেশি করে রেমিট্যান্স আসছে।
আমরা মনে করি, বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসাকে আরো নানাভাবে উৎসাহিত করতে হবে। পাশাপাশি হুন্ডি ব্যবসার দৌরাত্ম্য কমাতে হবে। একই সঙ্গে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও দক্ষ জনশক্তি প্রেরণে আরো বেশি জোর দিতে হবে।

দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিন
- থেমে নেই মুদ্রাপাচার

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে একটি প্রধান বাধা হচ্ছে বিদেশে মুদ্রাপাচার। মুদ্রাপাচার রোধে অনেক আলোচনা হলেও কাজের কাজ প্রায় কিছুই হয় না। ফলে ক্রমাগতভাবে বাড়ছে মুদ্রাপাচারের পরিমাণ। মুদ্রাপাচার রোধের দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।
জানা যায়, অর্থপাচারে অভিযুক্তরা হলেন ফকর ব্রাদার্সের চেয়ারম্যান ফকর উদ্দিন আলী আহমেদ ও তাঁর ছেলে ফকরুস সালেহিন নাহিয়ান।
বাংলাদেশ থেকে নিয়মিত অর্থ পাচার করা হচ্ছে। অভিযোগ আছে, গত দেড় দশকেই প্রায় ৩০ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। অতীতে পাচারবিরোধী বিভিন্ন সংস্থার তদন্তেও অনেকের নাম এসেছে। মুদ্রাপাচারে জড়িত অনেকের নাম পানামা পেপারসসহ আরো অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। কিন্তু পাচারের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির উদাহরণ নেই বললেই চলে। আমাদের বিশ্বাস, মুদ্রাপাচার বিরোধী সব সংস্থা সমন্বিতভাবে উদ্যোগী হলে এ ধরনের আরো অনেক ঘটনাই বেরিয়ে আসবে। ফকর ব্রাদার্সের মুদ্রাপাচারের অভিযোগগুলোর দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি মুদ্রাপাচারের জমে থাকা মামলাগুলোর বিচারকাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।