বছরে দুটি ঈদ বাঙালি মুসলমানদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসব। কাজের প্রয়োজনে যে যেখানেই থাকুক, এ সময় সুস্থ-সবল প্রায় সবাই নাড়ির টানে পরিবার বা স্বজনদের কাছে ফিরবেই। সামনে ঈদুল ফিতর। এখনো সপ্তাহ দুয়েক বাকি।
বছরে দুটি ঈদ বাঙালি মুসলমানদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসব। কাজের প্রয়োজনে যে যেখানেই থাকুক, এ সময় সুস্থ-সবল প্রায় সবাই নাড়ির টানে পরিবার বা স্বজনদের কাছে ফিরবেই। সামনে ঈদুল ফিতর। এখনো সপ্তাহ দুয়েক বাকি।
গবেষণা ও সচেতনতামূলক প্রতিষ্ঠান সেভ দ্য রোডের তথ্য মতে, গত আট মাসে সড়ক, রেল ও নৌপথে চার হাজার ৫০৫টি ছিনতাই এবং ২৫৫টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শুধু সড়কপথে এক হাজার ৮৬৮টি ছিনতাই আর ১১৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে ১৬৮ জন। এ ছাড়া ফুটপাত বা চলার পথে দুই হাজার ৪৩২টি ছিনতাই ও ৩৫টি ডাকাতির ঘটনায় এক হাজার ১৭ জন আহত এবং একজন নারীসহ দুজন নিহত হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য মতে, গত বছর জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যা ৫৪ হাজার ৪৭৪।
আমরা চাই, এবারের ঈদ যাত্রা নিরাপদ ও আনন্দদায়ক হোক। ডাকাতি-ছিনতাই থেকে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা রোধেও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
সম্পর্কিত খবর
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাস আয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস জনশক্তি রপ্তানি। বরাবরই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার ছিল সৌদি আরব। এর পাশাপাশি ছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান।
দুঃখের বিষয় হচ্ছে, অতীতে বিভিন্ন সময়ে শ্রমবাজার নিয়ে সিন্ডিকেটসহ নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বন্ধ হয়ে যায় ওমানের শ্রমবাজার।
বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) মনে করে, মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত, ওমান বন্ধ ও কুয়েত, জর্দান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্যে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা কমা এবং সৌদির ওপর চাপ পড়লেও তার কোনো প্রভাব পড়েনি শ্রমবাজারে। কাতার, সিঙ্গাপুর, ইতালি ও জাপানে কর্মী যাওয়া বেড়েছে। একসময় ইউরোপের নানা দেশেও জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ ছিল। প্রচলিত বাজারের বাইরে আমাদের বাজার হচ্ছে ইউরোপ। ইউরোপের বাজারের বড় সমস্যা, যেসব দেশ বাংলাদেশি কর্মী নেয়—এমন অনেক দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস নেই।
জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাব। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের বাস্তবতায় বাংলাদেশের শ্রমিকরা তুলনামূলকভাবে অদক্ষ। ফলে যেসব দেশে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ আছে, সেসব দেশে জনশক্তি রপ্তানি করা সম্ভব হয় না। বর্তমান সময়ে দক্ষতার বিকল্প নেই, কিন্তু বাংলাদেশের শ্রমিকরা তুলনামূলকভাবে অদক্ষ। অনেক পেশায় আমাদের কর্মীরা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দক্ষতা অর্জন করতে পারেননি। তাই ভালো ও বেশি আয়ের পেশায় বাংলাদেশিদের নিয়োগ কম। পর্যাপ্ত দক্ষতা নিশ্চিত করতে পারলে এসব পেশায় বাংলাদেশিদের নিয়োগ করা সম্ভব হতো। আমাদের এখন শ্রমবাজারের চাহিদার পরিবর্তন ও দক্ষতার বিষয়ে নজর দিতে হবে। বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায় শিক্ষিত ও দক্ষতাসম্পন্নদের কদর বাড়ছে। দক্ষ জনশক্তি নিজ নিজ ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে নিতে পারে। বিকাশমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাই জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। দক্ষ জনশক্তির রপ্তানি বাড়াতে পারলে রেমিট্যান্সও বাড়বে। জনশক্তিকে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলে জনসংখ্যা জনসম্পদে পরিণত হবে।
সাধারণত অঘ্রান মাসে আমন ধান তোলার সময় বাজারে চালের দাম অনেকটাই কমে আসে। এবার তা হয়নি। আমনের ভরা মৌসুমেও চালের দাম না কমে বরং বেড়েছে। চালের দাম বাড়ার সে ধারা অব্যাহত আছে।
চালের দাম বেড়ে গেলে তা নিম্ন ও নিম্নমধ্যম আয়ের মানুষের জীবনে অনেক বড় প্রভাব ফেলে। দরিদ্র মানুষ ভাতের জোগান থাকলে লবণ-মরিচ দিয়েও দু-এক বেলা পার করে দিতে পারে। কিন্তু চালের আকাল হলে তাদের সামনে আর কোনো পথই খোলা থাকে না।
বাজারে সবজির দামে এখনো কিছুটা স্বস্তি আছে। তবে বোতলজাত সয়াবিন তেল এখনো কম মিলছে। দামও বেশি নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু চালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে আছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) পূর্বাভাস দিয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় এ বছর বাংলাদেশে চালের উৎপাদন চার লাখ টন কমে যেতে পারে। এতে চাহিদার তুলনায় ঘাটতি আরো বেড়ে যাবে এবং বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাবই পড়বে।
আমরা মনে করি, দেশে চালের উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর আরো জোর দিতে হবে। এর আগে বাজারে চালের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আমদানি আরো বাড়াতে হবে। সিন্ডিকেট ও মজুদদারির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। টিসিবির ট্রাক সেল ও ওপেন মার্কেট সেলের (ওএমএস) মতো অন্যান্য কর্মসূচি চালু করতে হবে। যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে।
রমজান সংহতি সফর শেষে বাংলাদেশ ছেড়ে গেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। চার দিনের সফরে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসেন তিনি। শুক্রবার তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কক্সবাজার সফর করেন। সেখানে তাঁরা লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারে অংশ নেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশ সফর শেষে গতকাল রবিবার সকালে ঢাকা ছেড়ে যান। ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে গত শনিবার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই বলে আশ্বস্ত করেছেন যে ‘জাতিসংঘ শান্তি, জাতীয় সংলাপ, আস্থা ও নিরাময়কে উৎসাহিত ও সহায়তা করতে প্রস্তুত।
বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায় জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফর নিঃসন্দেহে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কারণ বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। মানবিক কারণে বাংলাদেশ কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে।
সামরিক অভিযানের মুখে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মায়ানমার সরকার শুধু টালবাহানা করছে। বাংলাদেশ সফরে এসে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মায়ানমারের সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে ভূমিকা রাখতে হবে।
বাংলাদেশ এখন এক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের কাজ হাতে নিয়েছে। আগামী দিনের উজ্জ্বল বাংলাদেশে জাতিসংঘ তার সহায়তা দিয়ে যাবে, জাতিসংঘ মহাসচিব সে বার্তাই দিয়ে গেলেন।
জনস্বার্থে রাষ্ট্রীয়ভাবে নানামুখী প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। কিন্তু প্রকল্প গ্রহণ থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত পুরো কাজ যদি সঠিকভাবে সম্পন্ন না হয়, তাহলে জনপ্রত্যাশা যেমন পূরণ হয় না, তেমনি রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হয়। নিকট অতীতে এমন অনেক নজির রয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) থেকে এসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
আইএমইডির সাবেক সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রথম দিকে দেখা যায়, অনেক সময় তড়িঘড়ি করে প্রকল্প নেওয়া হয়।
আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির আওতায় মোট ৩২৫টি প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্য ছিল। বাস্তবায়িত হয় ২৭৭টি এবং লক্ষ্যের বাইরে থেকে যায় ২৪টি প্রকল্প। এগুলোর মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ না করেই বিভিন্ন পর্যায়ে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় ১২৯টি প্রকল্প।
আমরা চাই, রাষ্ট্রীয় অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হোক। প্রকল্পের সম্পূর্ণ ও মানসম্মত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।