<p>যখন কোনো কিছু সুন্দর ও শৈল্পিকভাবে তৈরি করা হয়, তখন তা শিল্প হয়ে ওঠে। শিল্পের এই কাজ বা সৌন্দর্যকে বলা হয় শিল্পকলা। বাংলাদেশে অনেক রকম শিল্পকলা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন ও অন্যতম হলো মৃৎশিল্প বা মাটির শিল্প। কুমার সম্প্রদায়ের হাতের নৈপুণ্য ও কারিগরি জ্ঞানের মাধ্যমে মাটি দিয়ে তৈরি শিল্পকর্মকে মাটির শিল্প বা মৃৎশিল্প বলা হয়। এই শিল্পকর্মের মধ্যে রয়েছে মাটির কলস, হাঁড়ি, সরা, বাসনকোসন, পেয়ালা, সুরাই, মটকা, জালা, পিঠা তৈরির ছাঁচ, খেলার পুতুল, শখের হাঁড়ি ইত্যাদি।</p> <p>প্রাচীনকাল থেকেই এ দেশে মৃৎশিল্পের চর্চা হয়ে আসছে। বাংলার অনেক পুরনো মৃৎশিল্প টেরাকোটা। ময়নামতির শালবন বিহার, বগুড়ার মহাস্থানগড় ও বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদে পোড়ামাটির ফলক বা টেরাকোটার নিদর্শন পাওয়া যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে নরসিংদী জেলার উয়ারী-বটেশ্বরে হাজার হাজার নিদর্শন পাওয়া গেছে। এর বেশির ভাগই মাটির তৈরি জিনিসপত্র, যা হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্য।</p> <p>মৃৎশিল্পের অন্যতম আরেক নির্দশন টেপা পুতুল। কুমাররা নরম এঁটেল মাটির চাক হাতে নিয়ে টিপে টিপে এই পুতুল তৈরি করেন বলে এর নাম টেপা পুতুল।</p> <p>মৃৎশিল্পে সব মাটি কাজে লাগানো যায় না। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় পরিষ্কার এঁটেল মাটি। এ ধরনের মাটি বেশ আঠালো। আবার এঁটেল মাটি হলেই যে এ মাটি দিয়ে শিল্পের কাজ করা যাবে তা-ও নয়। এতে অনেক যত্ন আর শ্রমের দরকার হয়। তা ছাড়া দরকার হাতের নৈপুণ্য ও কারিগরি জ্ঞান। প্রয়োজন কিছু ছোটখাটো যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম। কুমাররা গোল আকৃতির জিনিস বানানোর জন্য একটি ঘুরন্ত চাকা ব্যবহার করেন। এটাকে চলতি কথায় ‘চাক’ বলে। শত শত বছর ধরেই বাংলাদেশের মৃৎশিল্ল্পীরা মেধা, মননশীলতা ও শ্রমের বিনিময়ে এই শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন।</p> <p>সময়ের আবর্তনে অন্যান্য বস্তু যেমন প্লাস্টিক বা ধাতু নির্মিত পণ্যের উদ্ভব ও ব্যবহার মৃৎশিল্পের ব্যাপক অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে তৈজসপত্র হিসেবে মাটির পাত্রের ব্যবহার অনেকটাই কমে গেছে।</p> <p>তবে আশার কথা হলো, কিছু শৌখিন ও শিল্পমনা মানুষের কাছে এখনো মৃিশল্পের কদর রয়েছে। তাই বড় ব্র্যান্ডগুলো মাটির জিনিসপত্র তাদের বিপণিবিতানগুলোতে প্রদর্শন ও বিক্রি করছে। সরকারি-বেসরকারি ভবনে আজকাল সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য নানা রকম নকশা করা মাটির ফলক ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব মৃৎশিল্প বিদেশেও বেশ সমাদৃত।</p> <p> </p> <p>♦ আতিফ আতাউর</p>