ঢাকা, শনিবার ২২ মার্চ ২০২৫
৮ চৈত্র ১৪৩১, ২১ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, শনিবার ২২ মার্চ ২০২৫
৮ চৈত্র ১৪৩১, ২১ রমজান ১৪৪৬
সাক্ষাৎকার

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় অগ্রাধিকার

  • বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক কর্মসূচি বিস্তৃত করার বিষয়সহ বড় পাঁচটি চ্যালেঞ্জ দেখছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসুদ রুমী
শেয়ার
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় অগ্রাধিকার
মোস্তাফিজুর রহমান

কালের কণ্ঠ : আসন্ন বাজেটে বড় ধরনের কী কী চ্যালেঞ্জ দেখছেন?

মোস্তাফিজুর রহমান : ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মূল চ্যালেঞ্জ হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হবে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বিস্তৃত করা, তৃতীয় চ্যালেঞ্জ ঘাটতি অর্থায়ন কিভাবে করা হবে সেটা ঠিক করা। চতুর্থ চ্যালেঞ্জ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য প্রকল্প বাছাই। এবার তো কিছুটা আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেই করতে হবে।

পঞ্চমত সংস্কার কর্মসূচি। বিশেষত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) শক্তিশালী করে সম্পদ আহরণ বাড়ানো। এনবিআরকে যে টার্গেট দেওয়া হবে, প্রকৃত  সম্পদ আহরণের পরিপ্রেক্ষিতে তা বেশ বড় টার্গেটই হবে মনে হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
বেশ কিছু সংস্কার কর্মসূচি আছে, যেগুলো এবারের বাজেটে করতে হবে। সুদের হার, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারএগুলোকে বাজারভিত্তিক করতে হবে। সেই বিষয়গুলোও বাজেটে থাকবে।

সেটা করতে গেলে অর্থনীতিতে যে অভিঘাত হবে, সেটাকে সামাল দেওয়া কঠিন হবে।

বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করতে গেলে হয়তো কিছুটা মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে। আর সুদহার বাজারভিত্তিক করলে বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সেগুলো সামাল দেওয়া এবারের বাজেটে বড় চ্যালেঞ্জ।

 

কালের কণ্ঠ : বাজেটের চ্যালেঞ্জগুলো কিভাবে সামাল দেওয়া যায়?

মোস্তাফিজুর রহমান : সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির যে সমস্যাগুলো, তার মূলে রয়েছে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিগত সমস্যা। এ ছাড়া কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়নে সঠিক যে তথ্য-উপাত্ত দরকার, তার সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

সঠিকভাবে সুবিধাভোগী নির্বাচনে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কর্মসূচির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণেও আমাদের দুর্বলতা আছে।

এবারের বাজেটে যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা হবে, তাতে সীমিত আয়ের মানুষের ওপর প্রভাব পড়বে। এসব চ্যালেঞ্জ সামাল দিতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির কিছুটা বিস্তৃতি লাগবে। একই সঙ্গে এর ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে হবে। বাস্তবায়ন শক্তিশালী করতে হবে। যারা পাচ্ছে, তাদের পাশাপাশি আরো নতুন মানুষকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে বলে মনে হচ্ছে।

 

কালের কণ্ঠ : অন্য বছরের বাজেটের চেয়ে এবারের বাজেটটি নির্বাচনপূর্ব বাজেট। নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও তা কি জনতুষ্টিমূলক হবে বলে আপনি মনে করেন?

মোস্তাফিজুর রহমান : আমাদের রাজস্ব আহরণের যে ব্যবস্থা রয়েছে, সেটাকে শক্তিশালী করতে হবে। নির্বাচনী বছরে জনতুষ্টিমূলক প্রকল্প হাতে নেওয়ার খুব একটা সুযোগ নেই। অর্থনীতি যে রকম চাপের মধ্যে আছে, সেই বাস্তবতা মাথায় রাখলে এটা কঠিন হবে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি হয়তো কিছুটা বাড়তে পারে। এটাকে পপুলিস্ট একটা পদক্ষেপ বলে মনে করা হতে পারে। কিন্তু অন্যান্য বার প্রকল্প বাড়ানো, এমপিদের বাড়তি প্রকল্প দেওয়াসেই পথে না গিয়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, প্রবৃদ্ধির আগের ধারা সেটাকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। নির্বাচনী বছর বলে এমন উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নেওয়া ঠিক হবে না। বর্তমানে অর্থনীতি নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ব্যালান্স অব পেমেন্ট, মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভসহ বিভিন্ন সূচক স্থিতিশীল নয়। বর্তমানে যে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে, তা বিবেচনায় নিয়ে সরকার সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করি।

 

কালের কণ্ঠ : আইএমএফের ঋণের কিছু শর্ত আছে, যেগুলো পূরণ করে মানুষকে স্বস্তি দেওয়া কতটা সম্ভব?

মোস্তাফিজুর রহমান : আর্থিক ও রাজস্ব খাতের সংস্কার, ভর্তুকি ব্যবস্থাপনাসহ আইএমএফের বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ আছে। এটার একটা চাপ তো থাকবেই। যেমন আইএমএফ বলেছে, পয়েন্ট ৫ শতাংশ করে রাজস্ব বাড়াতে হবে। সেটা করতে গেলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রাও বাড়বে। বাস্তবে এই বছরে যে রাজস্ব সংগ্রহ করা হচ্ছে, তার চেয়ে একটা বড় জাম্প দিতে হবে।

 

কালের কণ্ঠ : বর্তমান পরিস্থিতিতে রিজার্ভ নিয়ে আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা কিভাবে পূরণ করা সম্ভব হবে?

মোস্তাফিজুর রহমান : আমরা মার্চ মাসেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারিনি। রিজার্ভের যে প্রবণতা, তাতে জুনের মধ্যে নিট রিজার্ভ ২৪.৪৬ বিলিয়ন ডলার নিশ্চিত করা খুবই কঠিন হবে। সরকারের নানা পদক্ষেপে আমদানি কমেছে। কিন্তু বর্তমানে জ্বালানি খাত নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এবং ঈদের ভোগ্য পণ্য আমদানিতে ডলার লাগবে। আমদানি আরো কমিয়ে কিংবা রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল কমিয়ে হয়তো সেটা করতে পারে। কিন্তু অর্থনীতির ওপর কী চাপ সৃষ্টি করবে, সেটা বিবেচনায় নিতে হবে। আমাদের দুটিই করতে হবে।

 

কালের কণ্ঠ : অনেক সক্ষম মানুষ আয়কর দিচ্ছেন না। আবার যাঁরা কর দিচ্ছেন, তাঁদের ওপর চাপ বাড়ছে। এই বাস্তবতায় এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়বে কি?   

মোস্তাফিজুর রহমান : যার করসীমা পর্যন্ত আয় নেই, তার ওপর তো কর বসানো যৌক্তিক হবে না। যাঁরা রিটার্ন দাখিল করবেন, তাঁদের ওপর এনবিআর হয়তো কোনো ধরনের ফি বা চার্জ রাখতে পারে। টিআইএন নাম্বার যাঁদের আছে, তাঁদের কর দেওয়া উচিত। করখেলাপ যেখানে আছে, সেখানে যাঁরা দিচ্ছেন, তাঁদের ওপর চাপ না বাড়িয়ে নতুন করদাতা সন্ধান করতে হবে। ভিত্তি আরো বিস্তৃত করে এটা করতে হবে। যেমন আমরা বলি আড়াই কোটি মানুষ হোল্ডিং ট্যাক্স দেন। কিন্তু সেখানে টিআইএন নাম্বার আছে ৮৭ লাখ মানুষের। তার মধ্যে ৫০ লাখ মানুষও আয়কর দাখিল করেন না। যাঁরা দিচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই শূন্য আয় দেখান। সেই হিসাবে মাত্র ২০ লাখ মানুষ আয়কর দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতে ডিজিটাইজেশনসহ বেশ কিছু শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

রাজধানীজুড়ে বিশেষ নিরাপত্তা চৌকি, সতর্ক অবস্থান যৌথ বাহিনীর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রাজধানীজুড়ে বিশেষ নিরাপত্তা চৌকি, সতর্ক অবস্থান যৌথ বাহিনীর

সাম্প্রতিক নানা ইসু্য সামনে রেখে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়। সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্তক অবস্থানে ছিল যৌথ বাহিনী। প্রস্তুত ছিল পুলিশের রায়টকারসহ বিশেষ সরঞ্জাম।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র তালেবুর রহমান বলেন, চলমান মিছিল ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারেএমন আশঙ্কায় সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে রাজধানীর নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

বায়তুল মোকাররম ঘিরে সর্তকতা : গতকাল সকাল থেকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনের এলাকায় সেনাবাহিনী, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জলকামান, এপিসি মোতায়েন ছিল আশপাশের এলাকায়।

এ সময় পল্টনে তোপখানা রোডের আশপাশের বিভিন্ন মোড়ে যৌথ বাহিনীকে সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলাসহ বিভিন্ন দেশে মুসলিমদের নিপীড়নের প্রতিবাদে বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠন ঢাকায় বিক্ষোভের ডাক দিয়ে সড়ক অবরোধ করলে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এরই মধ্যে জুমার নামাজের পর মসজিদটির বাইরে লোকজনকে কালো পতাকা হাতে মিছিলসহ ফিলিস্তিনে হামলার বিচার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। কারো কারো হাতে ফিলিস্তিনসহ বিভিন্ন পতাকা ছিল।

খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার বিচার দাবি করেছে। দলটির নেতারা বায়তুল মোকাররম মসজিদে জুমার নামাজের পর মসজিদের উত্তর গেটে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর স্লোগান দেন। পরে তাঁরা বিভিন্ন স্লোগানসহ মিছিল নিয়ে পল্টন মোড়ের দিকে চলে যান।

অন্যদিকে নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররম মসজিদের পূর্ব পাশে সমাবেশ শুরু করে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর শাখা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পল্টন মোড়ে রাখা হয়েছে ডিএমপির জলকামান, এপিসি কার ও দুটি প্রিজন ভ্যান। বায়তুল মোকাররম মসজিদের প্রবেশমুখে অবস্থান নিয়েছেন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

আর নাইটিঙ্গেল মোড়ে অবস্থান করছেন বিজিবি সদস্যরা।

প্রসঙ্গত, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে জুমার নামাজের পর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ মিছিল করবে; এ ছাড়া ছাত্রশিবির ও জামায়াতের সদস্যরা মসজিদ এলাকায় উপস্থিত আছেন- এই খবরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়।

বায়তুল মোকাররম মসজিদে প্রবেশের সময় মুসল্লিদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করেন পুলিশ সদস্যরা। এ ছাড়া সাদা পোশাকে ও ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) বিপুলসংখ্যক সদস্যকে জ্যাকেট পরে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কোনো পুলিশ সদস্য মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অন্যান্য এলাকায় সতকর্তা : গতকাল বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট, প্রেস ক্লাব, পল্টন, হাইকোর্ট, সার্ক ফোয়ারার সামনে সর্তক অবস্থানে থাকতে দেখা যায় যৌথ বাহিনীর সদস্যদের। এ সময় মুসল্লি ও পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে তল্লাশি করতেও দেখা গেছে। এ ছাড়া নাইটিঙ্গেল মোড়ে বিজিবি সদস্যরা অবস্থান করছিলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাব ও শাহবাগ মোড়ে ছিল পুলিশের অবস্থান।

এর বাইরে গুলশান, উত্তরা, মিরপুর, রমনা, পুরান ঢাকা ও মতিঝিলের বিভিন্ন এলাকা এবং রামপুরা টিভি স্টেশনসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সামনের নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি দেখা গেছে সকাল থেকেই।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডিএমপির ৫০টি থানা এলাকায় জননিরাপত্তা বিধানে দুই পালায় ডিএমপির ৬৬৭টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করে। এর মধ্যে রাতে ৩৪০টি ও দিনে ৩২৭টি টিম দায়িত্ব পালন করে। টহল টিমগুলোর মধ্যে ছিল মোবাইল পেট্রোল টিম ৪৭৯টি, ফুট পেট্রোল টিম ৭৩টি ও হোন্ডা পেট্রোল টিম ১১৫টি। এ ছাড়া মহানগর এলাকার নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থানে ডিএমপি ৭১টি পুলিশি চেকপোস্ট পরিচালনা করে।

 

 

মন্তব্য

গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলার প্রতিবাদে গতকাল জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলাম। ছবি : কালের কণ্ঠ

গাজায় নির্যাতিত মুসলমানদের ওপর ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলা ও ভারতে মুসলিমদের ওপর আগ্রাসনের প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার রাজধানীসহ সারা দেশে সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম, খেলাফতে মজলিস, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন, ধর্মপ্রাণ মুসল্লি, সিপিবি ও বাসদ।

গতকাল দুপুরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম। সমাবেশে সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, পৃথিবীর মানচিত্র মুসলমানদের রক্তে রঞ্জিত করা হচ্ছে। ভারত ও ইসরায়েল যৌথভাবে মুসলিম নিধন করছে।

এই যৌথ শক্তিকে রুখতে বিশ্বের মুসলমান ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

মামুনুল হক বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের প্রতি আমাদের আহ্বান, দ্রুত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হোক। ফিলিস্তিন মুক্ত করতে বিশ্বে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হতে আরব লিগ ও ওআইসিসহ মুসলমানদের সব সংগঠনকে আমরা আহ্বান জানাই।

তিনি বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যুর পাশাপাশি ভারতের মুসলমানদের রক্ত দিয়ে হোলি খেলার পাঁয়তারা চলছে।

মুসলমানদের তিন শ বছরের ঐতিহ্যকে মুছে ফেলতে তারা আওরাঙ্গজেব আলমগীর (রহ.)-এর সমাধি উত্খাতের ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ভারতকে বলতে চাই, তারা ওই সমাধিতে আঘাত করলে ভারতকে খান খান করে দেব।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি জুনায়েদ আল হাবিব। এ ছাড়া বক্তব্য দেন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, নায়েবে আমির আহমাদুল কাসেমী প্রমুখ।

গণহত্যার বিচার দাবি করেছে সিপিবি ও বাসদ

যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করে সম্প্রতি ফিলিস্তিনের গাজা, খান ইউনিসসহ বিভিন্ন স্থানে জায়নবাদী ইসরায়েলি বাহিনীর দ্বারা পরিচালিত নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ।

গতকাল সকালে সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাব হয়ে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এর আগে রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন সিপিবির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সসহ নেতারা।

বক্তারা বলেন, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত এই গণহত্যার জন্য মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার আরব সহযোগীদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

এদিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাসদ আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ।

সমাবেশে বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতনসহ নেতারা।

নেতারা ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ, দেশে দেশে পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্ট সব যুদ্ধ এবং যুদ্ধ উন্মাদনার বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে প্রতিবাদ প্রতিরোধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে গাজায় মানবিক সংকট মোকাবেলায় জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানান তাঁরা।

এ ছাড়া চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলাম, সিলেটে বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় হেফাজতে ইসলাম, গাইবান্ধায় ইসলামী ছাত্রশিবির, ঝালকাঠির নলছিটিতে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সর্বদলীয় ইসলামী ছাত্রঐক্য পরিষদ, টাঙ্গাইলে ছাত্রশিবির, পঞ্চগড়ে ঈমান আকিদা রক্ষা কমিটি, চাঁদপুরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গোপালগঞ্জে ওলামা পরিষদ, কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে তৌহিদী মুসলিম জনতা, চুয়াডাঙ্গার দামুরহুদায় দর্শনা প্রেস ক্লাব, বগুড়ার ধুনটে সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা, দিনাজপুরের হিলিতে তৌহিদী জনতা, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন, কুমিল্লার মুরাদনগরে হেফাজতে ইসলাম, জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে তৌহিদী জনতা, মাদারীপুরের শিবচরে পৃথকভাবে ইসলামী ছাত্রশিবির ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ,  রাজবাড়ীতে সাধারণ মুসলিম সমাজ ও শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয় বলে কালের কণ্ঠর সংশ্লিষ্ট নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।

 

মন্তব্য
রুহুল কবীর রিজভী

জনগণ আ. লীগকে ক্ষমা করলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জনগণ আ. লীগকে ক্ষমা করলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই
রুহুল কবীর রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু বিচার নিয়ে কোনো কথা হচ্ছে না। ছাত্র-জনতার গণহত্যায় দোষীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিচারপ্রক্রিয়া শেষে আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। যদি জনগণ তাদের ক্ষমা করে তাহলে আমাদের (আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া) কোনো আপত্তি নেই।

গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখানে ফায়দাবাদ মধ্যপাড়া হাজী শুকুর আলী মাদরাসাসংলগ্ন মাঠে দুস্থদের মধ্যে ঈদ সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

জুলাই আন্দোলনে গণহত্যায় জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করে রুহুল কবীর রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এখন যে নেতৃত্বে আসবে, সে যদি ছাত্র হত্যা, অপরাধ, অর্থ লোপাট ও টাকা পাচার না করে থাকে তাহলে সেই আওয়ামী লীগ কেন রাজনীতি করতে পারবে না?

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কি না এমন প্রশ্ন উঠছে। অথচ এই প্রশ্ন উঠছে না, যারা গণহত্যা চালিয়েছে, তাদের বিচার হবে কি না? কারা এই কাজ করেছে, এটা কি মানুষ দেখেনি? যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার হতেই হবে। আর কোনো ফ্যাসিবাদের উত্থান যেন না হয়, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি শাখার আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের একটি গোষ্ঠী ৫ আগস্টের পর সংস্কারের কথা বলছে। কিন্তু গত ছয় মাসে দৃশ্যমান কোনো সংস্কার দেখা যায়নি। দেশের কোথাও স্থিতিশীলতা নেই। এখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

এর জন্য দরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার গঠন করলে তবেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে।

অনুষ্ঠানে মহানগর উত্তর বিএনপি নেতা এস এম জাহাঙ্গীর, কফিল উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

 

মন্তব্য
আসিফ মাহমুদ

আ. লীগকে ফেরানোর খায়েশ বিপজ্জনক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আ. লীগকে ফেরানোর খায়েশ বিপজ্জনক
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া

আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফেরানোর ইচ্ছা বা পরিকল্পনা বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। গতকাল শুক্রবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি।

আসিফ মাহমুদ বলেন, আমরা কবে থেকে জার্মানি, ইতালির চেয়ে বেশি ইনক্লুসিভ ডেমোক্রেটিক হয়ে গেলাম? গণহত্যার বছর না ঘুরতেই আওয়ামী লীগকে ফেরানোর খায়েশ বিপজ্জনক।

ফেসবুকে আরেক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, নির্বাচন পিছিয়ে যাবে, অনিশ্চয়তা তৈরি হবেএসব শঙ্কার কথা বলে কেউ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে জনতার ঐক্যে ফাটল ধরাতে আসবেন না।

আসিফ লিখেছেন, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্টভাবে বারবার বলছেন ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইলেকশন হবে। আমি নিশ্চয়তা দিতে চাই সরকার এই কথা রাখবে। সুতরাং নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই।

তিনি লিখেন, গণহত্যাকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ শুধু জাতীয়ভাবে নয়, আন্তর্জাতিকভাবে ইউএন (জাতিসংঘের) রিপোর্টের মাধ্যমে স্বীকৃত।

জনতার ঐক্য জিন্দাবাদ।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ