ইসলামে জাকাতের গুরুত্ব

আহমাদ ইজাজ
আহমাদ ইজাজ
শেয়ার
ইসলামে জাকাতের গুরুত্ব

জাকাত ইসলামের অন্যতম রুকন বা স্তম্ভ। ইসলাম মানব সমাজে অর্থনৈতিক সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এবং সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে বিত্তশালীদের ওপর নির্দিষ্ট হারে জাকাত ফরজ করেছে। আর জাকাতকে বলা হয়েছে গরিবের অধিকার। এটা কোনোক্রমেই গরিবের প্রতি ধনীর দয়া বা অনুগ্রহ নয়।

ইরশাদ হয়েছে, তাদের (ধনীদের) সম্পদে অধিকারবঞ্চিত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অধিকার আছে। (সুরা : আল-মাআরিজ, আয়াত : ২৪)

ইসলামী বিশ্বকোষের তথ্যমতে, আল-কোরআনে প্রত্যক্ষভাবে জাকাতের কথা এসেছে ৩২ বার। এর মধ্যে নামাজ ও জাকাতের কথা একত্রে এসেছে ২৮ বার।

দ্বিতীয় হিজরিতে রোজা ফরজ হওয়ার পরপরই শাওয়াল মাসে জাকাত ফরজ হয় এবং নবম হিজরিতে এটি পূর্ণাঙ্গরূপে কার্যকর করা হয়।

জাকাতব্যবস্থা অতীতের সব নবীর উম্মতের ওপর অপরিহার্য পালনীয় ছিল। তবে সম্পদের পরিমাণ ও ব্যয়ের খাত বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ছিল। যেমনইবরাহিম (আ.) ও তাঁর বংশের নবীদের কথা উল্লেখ করার পর আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, আর তাদের করেছিলাম নেতা। তারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে পথ প্রদর্শন করত।

তাদের ওহি প্রেরণ করেছিলাম সৎকর্ম করতে, নামাজ কায়েম করতে এবং জাকাত প্রদান করতে।

(সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৯৩)

ইসমাঈল (আ.) সম্পর্কে বলা হয়েছে, সে তার পরিবার-পরিজনকে নামাজ ও জাকাতের নির্দেশ দিত। (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ৫৫)

ঈসা (আ.)-এর প্রসঙ্গে এসেছে, তিনি বলেছেন, যেখানেই আমি থাকি না কেন, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যত দিন জীবিত থাকি তত দিন নামাজ ও জাকাত আদায় করতে।

(সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ৩১)

মোটকথা, প্রাচীনকাল থেকেই সব নবী-রাসুলের উম্মতের ওপর নামাজ ও জাকাত ফরজ হিসেবে পালনীয় ছিল।

তবে মুসলমানদের ওপর ধনীদের সম্পদ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে হিসাব করে প্রতিবছর জাকাত আদায় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

 

জাকাত কার ওপর ফরজ?

জাকাত স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক এমন মুসলিম নর-নারী আদায় করবে, যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে। তবে এর জন্য শর্ত হলো

এক. সম্পদের ওপর পূর্ণাঙ্গ মালিকানা থাকতে হবে।

দুই. সম্পদ উৎপাদনক্ষম ও বর্ধনশীল হতে হবে।

তিন. নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে।

চার. সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর পর অতিরিক্ত সম্পদ থাকলেই শুধু জাকাত ফরজ হবে।

পাঁচ. জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য ঋণমুক্ত হওয়ার পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা শর্ত।

ছয়. কারো কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকলেই শুধু ওই সম্পদের ওপর জাকাত দিতে হবে।

 

জাকাতের নিসাব

ক. সোনা ৭.৫ তোলা=৯৫.৭৪৮ গ্রাম প্রায়। খ. রুপা ৫২.৫ তোলা=৬৭০.২৪ গ্রাম প্রায়।

(আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৩৯৪, আল ফিকহুল ইসলামী : ২/৬৬৯)

দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও ব্যাবসায়িক পণ্যের নিসাব নির্ধারণে সোনা-রুপা হলো পরিমাপক। এ ক্ষেত্রে ফকির-মিসকিনদের জন্য যেটি বেশি লাভজনক হবে, সেটিকে পরিমাপক হিসেবে গ্রহণ করাই শরিয়তের নির্দেশ। তাই মুদ্রা ও পণ্যের বেলায় বর্তমানে রুপার নিসাবই পরিমাপক হিসেবে গণ্য হবে। তাই যার কাছে ৫২.৫ তোলা সমমূল্যের দেশি-বিদেশি মুদ্রা বা ব্যাবসায়িক পণ্য মজুদ থাকবে, তার ওপর জাকাত ওয়াজিব হবে।

যে সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ, তার ৪০ ভাগের এক ভাগ বা ২.৫০ শতাংশ জাকাত দিতে হবে।

সম্পদের মূল্য নির্ধারণ করে শতকরা আড়াই টাকা বা হাজারে ২৫ টাকা হারে নগদ অর্থ কিংবা ওই পরিমাণ টাকার কাপড়চোপড় বা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে দিলেও জাকাত আদায় হবে।

(আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৭২; সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৬২৩)

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কোরআন থেকে শিক্ষা

    পর্ব, ৭৩০
শেয়ার
কোরআন থেকে শিক্ষা

আয়াতের অর্থ : আমি তোমাদের কাছে অবতীর্ণ করেছি সুস্পষ্ট আয়াত, তোমাদের পূর্ববর্তীদের দৃষ্টান্ত এবং মুত্তাকিদের জন্য উপদেশ। আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর জ্যোতি, তাঁর জ্যোতির উপমা যেন একটি দীপাধার, যার মধ্যে আছে একটি প্রদীপ, প্রদীপটি একটি কাচের আবরণের মধ্যে স্থাপিত, কাচের আবচরণটি উজ্জ্বল নক্ষত্রসদৃশ্য; তা প্রজ্বলিত করা হয় পূতঃপবিত্র জায়তুনগাছের তেল দ্বারা, যা প্রাচ্যের নয়, প্রতীচ্যেরও নয়... (সুরা : নুর, আয়াত : ৩৪-৩৫)

আয়াতদ্বয়ে আল্লাহর নুর বা জ্যোতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

শিক্ষা ও বিধান

১. কোরআনের মৌলিক দান বা সুফল হলো দ্বিনের অকাট্য প্রমাণ, আবশ্যক জ্ঞান ও উপদেশ।

২. আল্লাহর নুর বা জ্যোতি হলো মানবজীবনের সবচেয়ে বড় পাথেয়।

তা হলো আসমানি হিদায়াত। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে হিদায়াত দেন।

৩. পাঁচটি আমল মুমিনের অন্তর্দৃষ্টি তৈরি করে : ক. সুন্নতের অনুসরণ, খ. আল্লাহর স্মরণ ও ধ্যান, গ. হারাম দৃষ্টি থেকে বাঁচা, ঘ. প্রবৃত্তি থেকে বাঁচা, ঙ. হালাল খাদ্য গ্রহণ।

৪. যে ব্যক্তি হারাম বিষয় থেকে নজর বা দৃষ্টি সংযত রাখে আল্লাহ তাঁর চোখে নুর দান করেন।

৫. মুমিনের প্রজ্ঞা হলো জ্যোতি আর তার সঙ্গে যখন কোরআন-হাদিসের জ্ঞান যুক্ত হয় তখন জ্যোতির ওপর জ্যোতি হয়।

(আল কোরআন তাদাব্বুর ওয়া আমল : ১৯/১৩)

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
পর্ব : ২৩

তারাবিতে কোরআনের বার্তা

শেয়ার
তারাবিতে কোরআনের বার্তা

সুরা ইয়াসিন

সুরার শুরুতে কোরআনের কসম করে বলা হয়েছে যে মহানবী (সা.) অবশ্যই আল্লাহর রাসুল। তিনি সঠিক পথে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁকে পাঠানো হয়েছে এমন একটি সম্প্রদায়কে ঈমানের দাওয়াত দেওয়ার জন্য, যাদের পূর্বসূরিদের সতর্ক করা হয়নি। এরপর মক্কার কাফিরদের ঈমান না আনার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে তাদের অন্তর তালাবদ্ধ।

পরে কিয়ামত সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা আনা হয়েছে। কিয়ামতের দিন জাহান্নামবাসীদের পৃথক করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জান্নাতবাসীদের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এরপর বলা হয়েছে যে মহানবী (সা.) কবি নন, বরং তিনি স্পষ্ট কোরআনের মাধ্যমে সতর্ককারী।
গাছ থেকে আগুন সৃষ্টির তত্ত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. আলেমদের কাজ পৌঁছে দেওয়া।

(আয়াত : ১৬-১৭)

২. মানুষ নিজের অমঙ্গল নিজে ডেকে আনে। (আয়াত : ১৯)

৩. মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করো।

(আয়াত : ২১)

৪. দ্বিন নিয়ে উপহাসকারীদের জন্য আফসোস। (আয়াত : ৩০)

৫. শস্য উৎপাদন আল্লাহর দান।

(আয়াত : ৩৩)

৬. আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করো। (আয়াত : ৩৪-৩৫)

৭. আল্লাহর নিদর্শন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। (আয়াত : ৪৬)

৮. জান্নাতে মুমিনের সব প্রত্যাশা পূরণ হবে।

(আয়াত : ৫৭-৫৮)

৯. শারীরিক সুস্থতা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। (আয়াত : ৬৬)

১০. কোরআন কোনো কাব্য নয় এবং আলেমদের জন্য কাব্যচর্চা শোভনীয় নয়। (আয়াত : ৬৯)

১১. পাপীদের কথায় ব্যথিত হয়ো না। (আয়াত : ৭৬)

১২. নিজের অস্তিত্বের কথা ভুলে যেয়ো না। (আয়াত : ৭৭)

১৩. আল্লাহর উপমা সৃষ্টি কোরো না। (আয়াত : ৭৮)

১৪. সর্বময় ক্ষমতা আল্লাহর জন্য।

(আয়াত : ৮৩)

সুরা সাফফাত

সুরা সাফফাতের মধ্যে প্রধানত তিনটি গায়েবি বিষয় যথাফেরেশতা, জিন ও পরকাল সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। শুরুতেই ফেরেশতাদের শক্তিমত্তা এবং আল্লাহর হুকুম পালনে একনিষ্ঠতা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এরপর জিনদের বিষয় আনা হয়েছে। জিনদের একটি দল ফেরেশতাদের পারস্পরিক কথাবার্তা জানার জন্য আকাশে ওঠার চেষ্টা করে। আর তখনই জ্বলন্ত উল্কা তাদের ধাওয়া করে। এই সুরায় কাফিরদের কিয়ামতের দিনের করুণ পরিণতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে। উপদেশের জন্য নুহ, ইবরাহিম, ইসমাঈল, হারুন, ইলিয়াস, লুত ও ইউনুস (আ.)-এর ঘটনার কিছু অংশ আনা হয়েছে। ফেরেশতাদের প্রশংসা করে সুরাটি শেষ করা হয়েছে।

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. মন্দ লোকেরাই উপদেশ গ্রহণ করে না। (আয়াত : ১৩)

২. আল্লাহর নিদর্শন নিয়ে উপহাস কোরো না। (আয়াত : ১৪-১৫)

৩. আল্লাহ একনিষ্ঠ বান্দাদের সম্মানিত করবেন। (আয়াত : ৪০-৪১)

৪. পূর্বসূরিদের ভ্রান্তপথ পরিহার করো। (আয়াত : ৬৯-৭০)

৫. আল্লাহর কাছে বিশুদ্ধ মনে উপস্থিত হও। (আয়াত : ৮৪)

৬. সুসন্তান লাভের জন্য প্রার্থনা করো। (আয়াত : ১০০)

৭. আল্লাহর সাহায্যেই মানুষ বিজয়ী হয়। (আয়াত : ১১৬)

সুরা সাদ

এই সুরায় দাউদ, সুলায়মান, আইয়ুব ও আদম (আ.)-এর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। অন্যান্য মাক্কি সুরার মতো এই সুরায়ও তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাত সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। মুশরিকদের ভ্রান্ত আকিদা খণ্ডন করা হয়েছে। জান্নাতের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও জাহান্নামের আজাবের ভয়াবহতা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। নুহ (আ.)-এর জাতি, ফেরাউনের জাতি, আদ জাতি, সামুদ জাতি, লুত (আ.)-এর জাতি ও মাদিয়ানবাসীদের ধ্বংসের ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। আনা হয়েছে ইয়াকুব, ইসমাঈল, ইয়াসআ ও জুলকিফল (আ.)-এর ঘটনা। একেবারে শেষের দিকে আদম (আ.)-এর ঘটনা আনা হয়েছে।

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. কোরআন উপদেশপূর্ণ কিতাব।

(আয়াত : ১)

২. কোরআন অবিশ্বাসকারীদের জন্য রয়েছে শাস্তি। (আয়াত : ৮)

৩. সৃষ্টিজগৎ আপন কাজের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করে। (আয়াত : ১৮)

৪. ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়ক জ্ঞানী ও বাগ্মী হবে। (আয়াত : ২০)

৫. শরিকদের প্রতি অবিচার কোরো না। (আয়াত : ২৪)

৬. মুমিন ভুল স্বীকার করে অনুতপ্ত হয়। (আয়াত : ২৪)

৭. খেয়ালখুশির অনুসরণ মানুষকে সত্যচ্যুত করে। (আয়াত : ২৬)

৮. আল্লাহর কোনো সৃষ্টিই অনর্থক নয়। (আয়াত : ২৭)

৯. কোরআন নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করো এবং অনুধাবনের চেষ্টা করো।

(আয়াত : ২৯)

১০. আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে দান করো। (আয়াত : ৩৯)

১১. বিপদে আল্লাহকে স্মরণ করো।

(আয়াত : ৪১)

১২. পাপের উপলক্ষ হইয়ো না।

(আয়াত : ৬১)

১৩. নিষ্ঠাবানরাই শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচতে পারে।

(আয়াত : ৮২-৮৩)

গ্রন্থনা : মুফতি আতাউর রহমান

 

মন্তব্য

প্রশ্ন-উত্তর

    সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা
শেয়ার
প্রশ্ন-উত্তর

কয়েকজন পালাক্রমে ইতিকাফ করে ১০ দিন পূরণ করা

প্রশ্ন : আমাদের মসজিদে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করার লোক খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই সবাই মিলে এটা নির্ধারণ করে নেয় যে লোকজন পালাক্রমে ১০ দিন ইতিকাফ করবে। প্রশ্ন হলো, এর দ্বারা এলাকার সবার পক্ষ থেকে ইতিকাফ আদায় হবে?

মাসরুর, ঝিনাইদহ

উত্তর : ইতিকাফ মাসনুন আদায় হওয়ার জন্য একই ব্যক্তিকে রমজানের শেষের ১০ দিন ইতিকাফ করতে হয়। সুতরাং প্রশ্নে বর্ণিত পদ্ধতিতে ইতিকাফ আদায় হবে না, বরং মহল্লার সবার জিম্মায় সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া থেকে যাবে।

(বুখারি, হাদিস : ২০২৭, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৩/১৫২-১৫৬, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৫/৪৯০)

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ইসলামী আইনে মব জাস্টিসের কোনো সুযোগ নেই

নুর মোহাম্মদ
নুর মোহাম্মদ
শেয়ার
ইসলামী আইনে মব জাস্টিসের কোনো সুযোগ নেই

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে মব জাস্টিসের প্রবণতা দেখা দেয়, যা কখনো পরিকল্পিত আবার কখনো অপরিকল্পিত। পরিকল্পিত এ দৃষ্টিকোণ থেকে যে পূর্বেই ঘোষণা দিয়ে কারো ওপর আক্রমণ করে বসা। আর অপরিকল্পিত এ বিবেচনায় যে কোথাও সন্দেহভাজন কাউকে পাওয়া গেল অথবা কাউকে অপরাধী মনে হলো অথবা প্রকৃত পক্ষেই অপরাধীফলে প্রথমে দু-একজন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করল, সন্তোষজনক না হলে তাকে মারধর করে কিংবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মব তৈরি করে। অতঃপর দেখা যায় আরো কিছু লোক জড়ো হয়ে এক পর্যায়ে সবাই মারধর করতে থাকে।

কোনো কোনো সময় পরিস্থিতির শিকার উক্ত ব্যক্তি মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। প্রকৃত ঘটনা বুঝে ওঠার আগেই অনেকে এতে জড়িত হয় এবং মনে করে উক্ত ব্যক্তি যেহেতু অপরাধী, তাই তাকে শায়েস্তা করার অধিকার তাদের রয়েছে!

প্রকৃত পক্ষে এ ধরনের মব জাস্টিসকে প্রচলিত ও ইসলামী আইনের কোথাও অনুমতি দেওয়া হয়নি। ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ কাউকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা ইসলামে দেওয়া হয়নি। কেউ অপরাধ করলে ইসলামের বিধান হলো, আইন ও বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

আর শাস্তি কার্যকর করার ক্ষমতা সরকার কিংবা সরকার কর্তৃক মনোনীত প্রতিনিধির। এ ব্যাপারে ফুকাহায়ে কিরামের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-২৮০)

ন্যায়সংগত কর্তৃপক্ষ ছাড়া অন্য কারো দণ্ড কার্যকর করার ক্ষমতা নেই। ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা (রহ.) বলেন, ইসলামী দণ্ডবিধি যথাযথভাবে প্রয়োগ করা রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব।

এই দায়িত্ব পালন করা হয় যখন করণীয় কাজ ত্যাগ এবং বর্জনীয় কাজে লিপ্ত হওয়ার কারণে শাস্তি দেওয়া হয়।

(আল-হিসবাহ, পৃষ্ঠা-৪৫)

সুতরাং রাষ্ট্র কিংবা রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়োজিত ব্যক্তি ছাড়া ফৌজদারি অপরাধের বিচারকার্য সম্পন্ন করার সুযোগ নেই।

ব্যক্তি পর্যায়ে কাউকে শায়েস্তা করার প্রবণতা পাল্টাপাল্টি প্রতিশোধের সংস্কৃতিতে রূপ দিতে পারে, যা সমাজকে অস্থিতিশীলতা ও অরাজকতার দিকে ঠেলে দেবে। বিদায় হজের ভাষণের এক পর্যায়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের জন্য আফসোস অথবা ধ্বংস! তোমরা আমার পরে একে অপরের গর্দানে আঘাত করে কুফরির দিকে ফিরে যেয়ো না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪০৩)

উপর্যুক্ত হাদিস যারা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে যারা আইন নিজের হাতে তুলে নেয়, তাদের জন্য ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে।

এমনকি তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে কুফরির দিকে প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। অতএব, সামাজিক শৃঙ্খলা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সর্বোপরি ন্যয়াবিচারের স্বার্থে কোনো ধরনের মব জাস্টিস সমীচীন নয়।

লেখক : পিএইচডি গবেষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ