<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিস্ময়কর হলেও সত্য, আওয়ামী লীগেরও জন্ম হওয়ার এক বছর আগে জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের। তখন নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। এর এক বছর পরে জন্ম হয় আওয়ামী লীগের। কোনো সন্দেহ নেই, ভাষা আন্দোলন, স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনেও বড় ভূমিকা রেখেছিল ছাত্রলীগ। তবে স্বাধীনতার পরে অনেকের মতে নানাভাবে বিতর্কিত হয়ে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস গ্রন্থে ড. মোহাম্মদ হান্নান লিখেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশ বিভক্ত হয়ে যে ছাত্রসংগঠনটি সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়, তা হচ্ছে নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। কারণ যে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য কর্মসূচিকে ভিত্তি করে এরা ছাত্ররাজনীতি করে এসেছে, তারই ফসল হচ্ছে পাকিস্তান।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইতিহাস থেকে জানা যায়, ভাষা আন্দোলন ও পরবর্তী আন্দোলনের ১৯৫৫ ছাত্রলীগের নাম থেকে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মুসলিম</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। ড. মোহাম্মদ হান্নান ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি এক সাক্ষাৎকারে বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্তমানে ক্ষমতায় আছে, এমন একটি রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন হিসেবে এখন ছাত্রলীগকে যেভাবে গণমাধ্যমে মানুষ দেখছে, কিন্তু এটাই তো ছাত্রলীগের পুরো ইতিহাস না। আমরা ছাত্রলীগকে বরাবর দেখেছি তার সংগ্রামমুখর ভূমিকার জন্য। সেই ১৯৪৮ সালের পর থেকে যখন পূর্ববঙ্গে বা পূর্ব পাকিস্তানে কোনো বিরোধী দল ছিল না, তখন ছাত্রলীগ ছিল। তারাই বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভাষা আন্দোলন থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল ছাত্রলীগ। তারপর ছাত্রলীগের মূল ভূমিকা আমরা দেখেছি ষাটের দশকে। আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রশক্তি নামের নানা সংগঠন ছিল, কিন্তু মূল ছিল ছাত্রলীগ।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি লিখেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছাত্রলীগ বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে যায় ছয় দফা আন্দোলনের মাধ্যমে। ইতিহাসে দেখা গেছে, ছয় দফা নিয়ে সারা পাকিস্তানেই নয়, বরং আওয়ামী লীগের মধ্যেই বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ছয় দফাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ তখন প্রায় ভাগ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ছয় দফাকে পুরোপুরি সমর্থন দান করে ছাত্রলীগ। ছয় দফাকে সারা দেশে জনপ্রিয় করে তুলেছিল ছাত্রলীগ। তারাই প্রথম এই ছয় দফার সঙ্গে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জয় বাংলা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ধ্বনি তোলে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইতিহাসে দেখা যায়, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের আগে সারা দেশে যে আন্দোলন হয়েছে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে এবং শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে; ছাত্রলীগ সারা দেশে সেই আন্দোলন জনপ্রিয় করে তোলে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রধান সহায়ক হয়েছিল ছাত্রলীগ।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়েছিল ছাত্রলীগ। জাতীয় সংগীত কী হবে, পতাকা কী হবে, সেটার পেছনেও ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল। তারাই প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতেও শুরু করেছিল। পরবর্তী সদয়ে মুজিববাহিনী নামে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নেয়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যেভাবে বিতর্কিত হয়ে ওঠে ছাত্রলীগ : লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ একবার বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৯৭১ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগ ছিল একটি সরকারবিরোধী ছাত্রসংগঠন। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হলেও ছাত্রলীগের মধ্যে এক ধরনের স্বাতন্ত্র্য কাজ করছিল। তাদের মধ্যে স্বকীয়তা, স্বাধীনতা ছিল। প্রায় প্রতিবছর কাউন্সিল হতো, নেতৃত্বের পরিবর্তন হতো। কিন্তু একাত্তর-পরবর্তী সময়ে আমরা দেখলাম, আওয়ামী লীগ সরকারে গেল আর সরকারি দলের অঙ্গসংগঠন হলে যা হয়, যেটা আমরা পাকিস্তান আমলে এনএসএফের (তখনকার সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন) মধ্যেও দেখেছি, সেই চরিত্র আস্তে আস্তে ছাত্রলীগের মধ্যে প্রবিষ্ট হতে থাকল। ধীরে ধীরে একটা লড়াকু ছাত্রসংগঠন আস্তে আস্তে তার চরিত্র বদলে একটা ক্ষমতাসীন দলের লাঠিয়াল সংগঠনের দিকে যাত্রা শুরু করল।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এটা ঠিক, গত ১৫ বছরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের মতো ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি, চাঁদাবাজিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠার পর ২০১৯ সালে ছাত্রলীগের তৎকালীন কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। এর পরও বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, অর্থের বিনিময়ে কমিটি গঠনের মতো অভিযোগ ওঠে। যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০১৯ সালে সিলেটের এমসি কলেজে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছয় ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেই বছর বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিচার চলছিল বুয়েট ছাত্রলীগের ১৯ নেতাকর্মীর। এ ছাড়া ২০১২ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশ্যে বিশ্বজিৎ দাসকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তাদের আটজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের একসময়ের নেতা এবং বর্তমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও মন্তব্য করেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অপকর্ম করবে, এমন ছাত্রলীগ চাই না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্লেষকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতাদের দূরদর্শিতার অভাবে ছাত্রলীগ স্বাধীন সত্তা হারিয়ে ক্যাম্পাসভিত্তিক আওয়ামী লীগের সংগঠনে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে গত ১৫ বছরে ছাত্রলীগের কোনো স্বাধীন সত্তা ছিল বলে মনে হয়নি। তিন-চার বছর পরে ছাত্রলীগের কাউন্সিল হয়, নিয়মিত হয় না। কাউন্সিলে কোনো নেতা নির্বাচিত হন না, নেতা নির্বাচন করে দেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি। বলা যায়, ছাত্রলীগ আর ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করত না, এটা প্রতিনিধিত্ব করত ক্ষমতাসীন দলকে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সংগঠনটি প্রায় সব সময় ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, খুন, লুটপাট, যৌন সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে আসছিল। বিশেষ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা জসিমউদ্দিন মানিক ১০০ ছাত্রীকে ধর্ষণের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেঞ্চুরি উৎসব</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> পালন করেছিল। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০১৩, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মিছিল করে এবং আন্দোলকারীদের ওপর রড, লাঠি, হকিস্টিক, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। চলতি বছরের ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে নারীদের ওপরও সহিংসতার অভিযোগ রয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>