চলতি শীত মৌসুমে গত ডিসেম্বরের শুরু থেকে দেশজুড়ে ঘন কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। ঘন কুয়াশায় সড়কে যান চলাচলে ফগ লাইট ব্যবহারের রীতি থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ফগ লাইটের মূল্য মোটেও বেশি নয়। এর পরও যানবাহনের মালিক কিংবা চালকরা এ ব্যাপারে উদাসীন।
প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল সড়কে
- স্বল্পমূল্যের ফগ লাইট কিনতে অনীহা
ওমর ফারুক

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে দেশে মোট ৫০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৩৯ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো ৭৬৪ জন। এসব দুর্ঘটনার বেশির ভাগ ঘটেছে যানবাহনে ফগ লাইট না থাকায়।
গত ১৫ ডিসেম্বর বরগুনার আমতলী-পটুয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে সুরভী পরিবহনের একটি দূরপাল্লার বাস ঘন কুয়াশার মধ্যে দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে রিমা আক্তার (৪১) নামের এক নারী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আর আহত হয় শিশু ও নারীসহ আরো চারজন।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই দিন ভোর ৫টার দিকে আমতলী-পটুয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে আমতলীর তুলার মিল এলাকায় বাসটি ঘন কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনায় পড়ে।
আরেক ঘটনায় গত শুক্রবার ভোরে যাত্রী নিয়ে একটি মিনিবাস ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেস ওয়ে দিয়ে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ঢাকার দিকে আসছিল। বাসটি শ্রীনগর থানার হাসাড়া যাত্রীছাউনির সামনে পৌঁছানোর পর সামনে থাকা একটি কাভার্ড ভ্যানকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই বাসের সুপারভাইজার ও হেলপার নিহত হন। পুলিশ জানায়, ওই সময় এক্সপ্রেসওয়েতে ছিল প্রচণ্ড কুয়াশা।
আবার গত বছর ১১ ডিসেম্বর সকালে নওগাঁর পোরশা এলাকায় প্রবল কুয়াশার মধ্যে দ্রুতগতিতে একটি বাস চালিয়ে যাচ্ছিলেন চালক। সকাল ৬টার দিকে পোরশা-নওগাঁ আঞ্চলিক সড়কের মাটিন্দর ব্রিজের কাছে পৌঁছলে বাসটি উল্টে যায়। এতে নূর বানু নামের এক বৃদ্ধা নিহত হন। পোরশা থানার ওসি শাহীন রেজা জানান, কয়েক দিন ধরে ওই অঞ্চলের পুরো এলাকা ও সড়ক ঘন কুয়াশায় ঢাকা। ঘন কুয়াশার কারণেই বাসটির নিয়ন্ত্রণ হারান চালক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘন কুয়াশার মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এসব দুর্ঘটনা রোধে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেই। বাস মালিক ও চালকরাও উদাসীন। কুয়াশার মধ্যে চলতে ফগ লাইট ব্যবহার করলে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব। কিন্তু এক-দুই হাজার টাকা মূল্যের ফগ লাইট কিনে ব্যবহার করতে যানবাহন মালিকদের অনীহার শেষ নেই।
তাঁরা আরো বলছেন, কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমার সমস্যা হওয়ায় চালকদের মধ্যে ঝুঁকি তৈরি হয়। এ কারণে শীত মৌসুমে দেশে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। তবে চালক বা পরিবহন মালিকরা এগুলোকে ঝুঁকি মনে করেন না। এক্সপ্রেসওয়েগুলোতেও তাঁরা কুয়শার মধ্যেও সর্বোচ্চ গতিতে গাড়ি চালান। ফলে সেখানে দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে।
তবে বাস মালিকরা বলছেন, দেশে ভালো মানের ফগ লাইট পাওয়া না যাওয়ায় তাঁরা সেটি ব্যবহার করছেন না। ফলে কুয়াশার সময় হেডলাইট জ্বালিয়ে রাখতে নির্দেশ দেওয়া আছে চালকদের।
শীত মৌসুমে কুয়াশার কারণে বছরের অন্য সময়ের চেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে উল্লেখ করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কুয়াশার সময় ধীরগতিতে গাড়ি চালানোর নির্দেশনা রয়েছে, যে নির্দেশনা মানা হয় না। ফগ লাইট ব্যবহার করলে কুয়াশার মধ্যে অনেক দুর্ঘটনা কমে। কিন্তু কেউ সেটিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না।’ তিনি বলেন, ‘হেডলাইটের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর হলুদ আলোর ফগ লাইট, যেটার আলোতে অনেক দূর পর্যন্ত চালক দেখতে পান।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ও শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশে যে ফগ লাইটগুলো পাওয়া যায় সেগুলো নিম্নমানের, যে কারণে লাগানো হয় না। তবে আমরা চালকদের নির্দেশনা দিয়ে রেখেছি যাতে দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালায়। কুয়াশায় হেডলাইট কাজ করে।’
বিষয়টি নিয়ে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। এই সময়ে এসে কুয়াশার কারণে রোড অ্যাকসিডেন্ট বাড়ছে। গত কদিনে দেখা গেছে, এক্সপ্রেসওয়েতে ট্রাক ধীরগতিতে চলছে। আর পেছন থেকে দ্রুতগতির বাস এসে তাতে ধাক্কা দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। এসব কারণে আমরা এক্সপ্রেসওয়েতে সমগতিতে যানবাহন চালানো এবং গাড়ি না থামানোর নির্দেশ দিয়েছি। কুয়াশার মধ্যে গাড়ি থামানো থাকলে আরেকটি দ্রুতগামী গাড়ি এসে ধাক্কা দেওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটছে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক মামলা দিচ্ছি। এ ছাড়া নির্দেশ দেওয়া রয়েছে, কুয়াশার সময় দৃষ্টিশক্তি অনুযায়ী গাড়ি চালাতে হবে। প্রয়োজনে ১০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালাবে।’
ফগ লাইটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারি গাড়িগুলোয় ফগলাইট ব্যবহার করা হয়। আমরা ব্যক্তিমালিকানাধীন যানবাহনেও দ্রুত ফগ লাইট ব্যবহারের নির্দেশনা দেব।’
ফগ লাইট বিক্রি প্রতিষ্ঠান বাইক বাজারের অনলাইন থেকে জানা যায়, হাইওয়েতে তীব্র কুয়াশা বা মুষলধারে বৃষ্টির সময় ফগ লাইট আলোর অভাব দূর করে। তীব্র কুয়াশা ভেদ করে চলার পথকে দৃশ্যমান করে। এমনকি হেডলাইটের আলো যদি কমও হয়, ফগ লাইট সে আলোর স্বল্পতা দূর করে। মোটরসাইকেলের একটি ফগ লাইটের দাম ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা। আর বড় যানবাহনের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ফগ লাইটের দাম দুই হাজার টাকা। এর চেয়ে কম দামেও ফগ লাইট কিনতে পাওয়া যায়।
সম্পর্কিত খবর

পোশাক শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ


মন্ত্রণালয়ে দৌড়ঝাঁপ
পুনর্বিবেচনার আবেদন পদোন্নতিবঞ্চিত শতাধিক কর্মকর্তার
উবায়দুল্লাহ বাদল

গত বৃহস্পতিবার রাতে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন প্রশাসনের ১৯৬ জন কর্মকর্তা। এর মধ্যে নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে বিসিএস ২৪তম ব্যাচের পদোন্নতিযোগ্য ৩২০ জনের মধ্যে পদোন্নতি পেয়েছেন ১৩৭ জন। বাদ পড়েছেন ১৮৩ জন। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্তত ১০০ জনই রবিবার সকালে দল বেঁধে মন্ত্রিপরিষদসচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমানের সঙ্গে দেখা করে পদোন্নতির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন দিয়েছেন।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রশাসনে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পান ১৯৬ জন উপসচিব। এর মধ্যে স্বাস্থ্য, খাদ্য ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টার একান্ত সচিবসহ (পিএস) ২১ জন জেলা প্রশাসকও (ডিসি) রয়েছেন।
পদোন্নতির পর প্রথম কর্মদিবস রবিবার সকাল ৯টায় বঞ্চিত কর্মকর্তারা দল বেঁধে প্রথমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পরে মন্ত্রিপরিষদসচিবের কাছে যান। তাঁরা এসএসবির প্রভাবশালী দুই কর্মকর্তার কাছেই যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানান। পাশাপাশি তাঁরা প্রত্যেকে আলাদাভাবে পদোন্নতি পুনর্বিবেচনার আবেদন দেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে।
একাধিক বঞ্চিত কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দুই স্যারই আমাদের কথা মনোযোগ সহকারে শুনেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৪ ব্যাচের একজন বঞ্চিত কর্মকর্তা জানান, ‘যেখানে অন্যান্য ব্যাচের যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার হার কমবেশি ৭০ শতাংশ, অথচ আমাদের ব্যাচের এই হার মাত্র ৪২.৮১ শতাংশ। সালমান এফ রহমানের পিএস যদি পদোন্নতি পান, তাহলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পিএস কি দাবি করতে পারেন না? সে ক্ষেত্রে আমাদের অপরাধটা কী? যে বৈষম্যের অবসানের জন্য জুলাই বিপ্লব হলো, এ সরকারের আমলে তা যদি আরো প্রকট হয়, তাহলে তা হবে চরম হতাশার। আমরা শুধু ন্যায়বিচার চাই। আমরা বলেছি যাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা নেই, দুর্নীতির মামলা তো দূরের কথা, কোনো অভিযোগও নেই, এসিআরের নম্বর ভালো ও বিরূপ কোনো মন্তব্য নেই, শিক্ষাগত যোগ্যতায় রেজাল্ট ভালো, তাঁরা কেন বঞ্চিত হবেন? তাঁদের যেন সঠিক জাজমেন্ট হয়।’

সুন্দরবনে ১৯ বছরে ৩০ বার আগুন, জ্বলছে নতুন এলাকা
- নাশকতা আছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে
বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী, বাগেরহাট

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের টেপার বিলে জ্বলতে থাকা আগুন নেভার আগেই নতুন করে শাপলার বিল এলাকা আগুনে পুড়ছে। নতুন স্থানে আগুনের ভয়াবহতা অনেক বেশি।
গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাগেরহাট জেলাধীন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর টহল ফাঁড়ির শাপলার বিল এলাকায় গহিন বনে আগুন দেখতে পায় বন বিভাগ। কলমতেজি ক্যাম্পের টেপার বিল এলাকায় যেখানে শনিবার সকালে আগুন দেখা গেছে, সেখান থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে এই শাপলার বিল এলাকা।
তবে টেপার বিল এলাকায় জ্বলতে থাকা আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণ করা হয়েছে বলে বন বিভাগ এবং ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানান। এক দিনের ব্যবধানে সুন্দরবনের সাত কিলোমিটারের মধ্যে পৃথক স্থানে আগুনের ঘটনায় নাশকতা আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে বন অধিদপ্তর।
১৯ বছরে ৩০ বার আগুন
বন বিভাগের তথ্যমতে, সুন্দরবনে গত ১৯ বছরে ৩০ বার আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় পুড়েছে প্রায় ৯০ একর বনভূমি।
সুন্দরবনে আগুনের ঘটনায় প্রতিবারই বন বিভাগ তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু কমিটির প্রতিবেদন সুপারিশ কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকে, কাজের কাজ কিছুই হয় না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। গত ২০২৪ সালের মে মাসের আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি সুন্দরবনের ২৪, ২৫ এবং ২৭ নম্বর কম্পার্টমেন্টে মধু আহরণের পাস (অনুমতি) বন্ধ রাখার জন্য সুপারিশ করেছে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে সুন্দরবনে মধু আহরণ মৌসুম শুরু হবে।
এবারও টেপার বিল এলাকায় আগুনের পর গতকাল তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বন বিভাগ।
গত দুই দিনের দুটি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে বন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হবে বলে প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী জানিয়েছেন।
শাপলার বিলে আগুন
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম জানান, আগুন যাতে বনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে না পারে এ জন্য ফায়ার লাইন কাটা হচ্ছে। কাছাকাছি পানির উৎস না থাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের ভোলা নদী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি এনে আগুন নেভানো হবে।
চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দ্বীপেন চন্দ্র দাস জানান, আগুনের খবর পাওয়ার পর ড্রোনের মাধ্যমে বনের গহিনে তারা আগুন দেখতে পান। এরপর তাঁরা দ্রুত ফায়ার লেন কাটতে থাকেন। কিন্তু এর মধ্যেই কয়েকটি স্থানে আগুন ফায়ার লেন অতিক্রম করে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ফায়ার লেন কাটার কাজ চলছে। লেন কাটা শেষ হলেই ভোলা নদী থেকে পানি এনে আগুন নেভানোর কাজ শুরু হবে। কিভাবে আগুন লেগেছে তার কারণ জানাতে পারেননি তিনি।
বাগেরহাট ফায়ার স্টেশনের ডিএডি সাকরিয়া হায়দার জানান, আগুন নেভানোর কাজে অংশ নিতে তাঁরা সুন্দরবনের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেননি। খুলনা, বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ, মোল্লাহাট এবং শরণখোলার ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।
টেপার বিলের আগুন নির্বাপণ
বাগেরহাট জেলার শরণখোলায় সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজি ক্যাম্পের টেপার বিল এলাকার আগুন সম্পূর্ণভাবে নির্বাপণ করা হয়েছে। ভোলা নদী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি নিয়ে আগুন নেভানোর আগেই ওই এলাকায় প্রায় চার একর বনভূমি পুড়ে গেছে।
বাগেরহাট ফায়ার স্টেশনের ডিএডি সাকরিয়া হায়দার জানান, গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আগুন সম্পূর্ণভাবে নির্বাপণ করা হয়।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম জানান, সুন্দরবনের টেপার বিলে এখন আগুনের অস্তিত্ব নেই। কোথাও ধোঁয়াও দেখা যাচ্ছে না। এর পরও বন বিভাগের স্টাফরা আগামী ২৪ ঘণ্টা সেখানে পর্যবেক্ষণে থাকবেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আগুনের সূত্রপাত এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।
ডিএফও নুরুল করিমের ধারণা, মৌসুম শুরুর আগেই অবৈধভাবে কোনো মৌয়াল সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারেন। মৌয়ালের মশাল অথবা বিড়ি-সিগারেটের অংশ থেকে সুন্দরবনে আগুন ধরতে পারে। এ ছাড়া আইন ভঙ্গ করে কোনো কোনো রাখাল ভোলা নদী পাড়ি দিয়ে তাদের গবাদি পশু নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। ওই রাখালদের ফেলে রাখা বিড়ি-সিগারেটের আগুন থেকেও সুন্দরবনে আগুনের ঘটনা ঘটতে পারে।
নাশকতার আশঙ্কা
প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, এক দিনের ব্যবধানে দুটি পৃথক স্থানে আগুনের ঘটনায় নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। নাশকতামূলকভাবে কেউ সুন্দরবনে আগুন দিয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

জি এম কাদের ও তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ
নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) ও তাঁর স্ত্রী শেরিফা কাদেরের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। গতকাল রবিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) দেশের সব ব্যাংকে চিঠি দিয়ে তাঁদের হিসাব জব্দ করতে বলা হয়েছে।
সিআইসি সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শাখায় পরিচালিত হিসাবগুলো থেকে অর্থ উত্তোলন বা স্থানান্তর স্থগিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ জন্য দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
আরেকটি চিঠিতে জি এম কাদের, তাঁর স্ত্রী শেরিফা কাদের, মেয়ে ইশরাত জাহান কাদের ও ভাই মাহফুজ আহমেদের ব্যাংক হিসাব বিবরণী পাঠাতে বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে করদাতার একক বা যৌথ নামে অথবা তাঁর মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত যেকোনো মেয়াদি আমানত হিসাব, এফডিআর, এসটিডি, যেকোনো মেয়াদের সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ হিসাব, ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড, লকার বা ভল্ট, সঞ্চয়পত্র বা অন্য কোনো ধরনের সেভিংস ইনস্ট্রুমেন্ট, ইনভেস্টমেন্ট স্কিম বা ডিপোজিট স্কিমের হালনাগাদ বিবরণী ও ঋণের বিপরীতে রক্ষিত জামানতের বিবরণী সাত দিনের মধ্যে পাঠানোর অনুরোধ করা হলো। এই সময়ের মধ্যে বা আগে হিসাব শুরু হয়ে তা বন্ধ হয়ে গেলে অথবা শেষ হয়ে গেলে বা সুপ্ত অবস্থায় থাকলেও তথ্য পাঠাতে হবে।
এর আগে বিভিন্ন সময়ে অনুসন্ধানের স্বার্থে বিভিন্ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এনবিআরকে সহযোগিতা করেনি বলে উল্লেখ করেছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে জাতীয় পার্টি সব সময়ই একটি সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। ভোট কারচুপি ও আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে এই দলটি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।