ফলে পুরো রমজান মাসে বড় ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটলে দলগুলোর দলীয়ভাবে কোনো কর্মসূচি থাকছে না।
ভোটের দাবিতে কর্মসূচি বাড়াবে বিএনপি : দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের সময় নিয়ে সরকার বা অন্য কোনো পক্ষ বাড়াবাড়িতে গেলে বিএনপি মাঠের কর্মসূচি জোরদার করবে। একই সঙ্গে সংস্কারের নাম করে ভোটের তারিখ পেছানোর চেষ্টাও মানবে না দলটি। বিএনপি ছাড়াও তাদের জোট শরিক, বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ধর্মভিত্তিক কিছু দলও দ্রুত নির্বাচন চায়।
দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বলেন, ঈদের পর কর্মসূচি জোরদার করতে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এবার বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করার কথা ভাবা হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল নেতারা জানান, সম্প্রতি বিভিন্ন মহল থেকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে দাবি উঠেছে, সেটাকে একেবারেই গুরুত্ব দেবে না বিএনপি; বরং দলটি জাতীয় নির্বাচনকে মুখ্য করেই পরবর্তী সাংগঠনিক কর্মসূচি তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতরের পরপরই নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মসূচি ও তৎপরতা বাড়াবে। সরকারকে দ্রুত নির্বাচনে বাধ্য করতে কর্মসূচির ব্যাপকতাও বাড়বে।
গত শনিবার এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সরকারকে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে এক মাসের আলটিমেটাম দেন। নইলে জোটসঙ্গীদের নিয়ে সঙ্গে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন বলেও জানান তিনি।
গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বিএনপির বর্ধিত সভায়ও জাতীয় নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে তৃণমূলের মতামত নেওয়া হয়। সভায় কয়েকজন নেতা দ্রুত নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপে রাখার মত দেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচনের জন্য ১৭ বছর ধরে আমরা আন্দোলন করিনি। আমাদের নেতাকর্মীরা গুম-খুন ও হামলা-নির্যাতনের শিকার হয়েছে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য। সুতরাং নির্বাচন দিতে গড়িমসি করা হলে মাঠের কর্মসূচি জোরদার করতেই হবে।’
মাঠ ধরে রাখতে চায় জামায়াত : জামায়াতে ইসলামী আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার, তারপর নির্বাচন চায়। তারা আগে স্থানীয় নির্বাচন করারও পক্ষে। এ দাবিতে দলটি মাঠে সোচ্চার আছে। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো কর্মসূচি না দিলেও সব কর্মসূচিতে এ দাবি তুলছে দলটি।
জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। তাঁর মুক্তি বিলম্ব হলে আরো কর্মসূচি পালন করবে দলটি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতেও কর্মসূচি পালন করার পরিকল্পনা আছে দলের নীতিনির্ধারকদের। ঈদের পর বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এসব কর্মসূচির মাধ্যমে জামায়াত মূলত সংস্কার শেষে নির্বাচন এবং সংসদের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে চায়। দলটি প্রথম থেকেই এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য স্পষ্ট করেছে।
সম্প্রতি চাঁদপুরে এক সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, জনদুর্ভোগ নিরসনে স্থানীয় নির্বাচন দিতে হবে। স্থানীয় নির্বাচন হলেই জনগণের এ দুর্ভোগ কাটবে। এরপর অবশ্যই জাতীয় নির্বাচনও দিতে হবে। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে জনগণ কিছু মৌলিক সংস্কার চায়।
জামায়াতের ঈদ-পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে দলটির নায়েবে আমির ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সেই বিবেচনা করে কর্মসূচির ধরন পরিবর্তন হতে পারে। তবে ঈদের পর আমরা বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করব, তারপর সব জেলায় সমাবেশ হবে।’ তিনি বলেন, এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তি বিলম্ব হলেও জামায়াত বড় কর্মসূচিতে যাবে।
নতুন দল কী করবে : জুলাই অভ্যুত্থানের ওপর গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল এনসিপির আগামী দিনের কর্মসূচি কী হবে, সে বিষয়ে তারা এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। তবে তাদের কর্মসূচি নিয়ে জনমনে আগ্রহ আছে।
দলটির নেতারা জানান, রোজার মধ্যে বা ঈদের পরই নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদন করবেন তাঁরা। একই সঙ্গে সংস্কারের পর ভোট ও গণপরিষদ নির্বাচনের লক্ষ্যে কর্মসূচি পালন করা হবে।
এনসিপি মূলত ব্যাপকভিত্তিক সংস্কার, আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিচারের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধিতা করছেন তাঁরা। ঈদের পরও দ্রুত নির্বাচনের বিপক্ষে তাঁরা জোরালো বক্তব্য তুলে ধরবেন।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদদের কবর জিয়ারত ও দোয়া মোনাজাত শেষে উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো মানুষ, কোনো রাজনৈতিক দল ভুল করেও যেন অন্য কিছু চিন্তা না করে। যত দিন না আমরা খুনি হাসিনাকে ওই ফাঁসির মঞ্চে না দেখছি, তত দিন এই বাংলাদেশে কেউ যেন নির্বাচনের কথা না বলে।’
এনসিপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলীয় কার্যালয়ের জন্য এলাকা বাছাই, লোগো তৈরি, গঠনতন্ত্র তৈরি, কমিটি বৃদ্ধিসহ নানা সাংগঠনিক কাজ চলছে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ঘিরে থাকছে বিশেষ অনুষ্ঠান।
জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার কালের কণ্ঠকে জানান, গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে জনমত গড়ে তুলতে ঈদের পর কর্মসূচি দেওয়া হবে।