হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক

ওমর ফারুক
ওমর ফারুক
শেয়ার
হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক
সংগৃহীত ছবি

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর শিথিলতায় দেশে আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করছে মাদকের ব্যবহার। গত কয়েক মাসে মাদকসেবীর সংখ্যা অন্তত ২০ লাখ বেড়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন। হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। সেই সঙ্গে মাদক ব্যবসায় দেশ থেকে অর্থপাচারও বাড়ছে।

২০২৩ সালের জুনে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আংকটাড (ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, প্রতিবছর শুধু মাদকের কারণে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বর্তমানে পাঁচ হাজার ৮৪১ কোটি টাকারও বেশি) পাচার হয়ে যায়। অবৈধ মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অর্থপাচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম এবং এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদক সেবন এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। কোনো রাখঢাক নেই।

কিন্তু এর নিয়ন্ত্রণে কার্যত সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢিলেঢালা অবস্থা আর পুলিশের শিথিলতার কারণে সারা দেশে প্রায় অবাধে ছড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের মাদক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের মাদক নিয়ে গভীর কোনো গবেষণা নেই। দেশে কত মাদক কারবারি ও মাদকসেবী রয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান মেলে না।

যা বলা হয়, তা অনেকটাই অনুমানভিত্তিক। মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য সঠিক গবেষণা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইয়াবা নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানাচ্ছেন খোদ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তরাই। পুলিশ, বিজিবি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানের শিথিলতার সুযোগে রাজধানীসহ সারা দেশে মাদক কারবারের ব্যাপকতা অতীতের যেকোনো সময়কে ছাড়িয়ে গেছে।

মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) তথ্য মতে, দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা বেড়ে এখন দেড় কোটির কাছাকাছি। সংস্থাটির প্রধান ডা. অরূপ রতন চৌধুরী গতকাল বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদের গবেষণা বলছে, করোনার সময় থেকে মাদকসেবীর সংখ্যা বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। গত কয়েক মাসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর শিথিলতার কারণে ২০ লাখের মতো মাদকসেবী বেড়েছে। আমরা বলছি, দেশে বর্তমানে প্রায় দেড় কোটি মাদকসেবী রয়েছে।

সূত্র জানায়, মাদকসেবীর বেশির ভাগই তরুণ এবং তারা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। একসময় ছাত্ররা মাদক সেবনের সঙ্গে জড়িত থাকলেও বর্তমানে ছাত্রীরাও মাদক ব্যবহার করছে। গত ১ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্য সেবনরত অবস্থায় ৯ শিক্ষার্থীকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ছাত্রীও ছিলেন। গত ৯ মার্চ যৌথ বাহিনীর অভিযানে নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয় দেওয়া মো. জিদান নামের এক যুবকসহ দুজনকে মাদকসহ আটক করা হয়। হাসপাতালের ভেতরে ইয়াবা সেবনসহ বিক্রিও করত তারা। এ বিষয়ে কয়েকজন ভুক্তভোগী সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ করলে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে হাসপাতালের ভেতর থেকে জিদান ও তার সহযোগী দালাল ইকবালকে আটক করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সংগঠক মো. জিদানকে আটকের খবর ছড়িয়ে পড়লে সংগঠন থেকে জিদানকে বহিষ্কার করা হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তল্লাশি ও নজরদারিতে শিথিলতা তৈরি হওয়ায় বিভিন্ন কৌশলে দেশে মাদকের চালান আনছে মাদক কারবারিরা। অ্যাম্বুল্যান্স এবং সবজিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য পরিবহনের গাড়িতে করে ইয়াবা, ফেনসিডিল ও হেরোইন নিয়ে আসছে কারবারিরা। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টেকনাফের ইয়াবা কারবারিরা ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবার চালান পাঠাচ্ছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. আবদুল ওয়াদুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। শক্তিশালী করা হচ্ছে অভিযান। গত রবিবার ৪০ হাজার পিস ইয়াবা ধরা হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে।

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনেক কর্মকর্তাই স্টেশনে থাকেন না। তাঁদের অনেকের পরিবারের সদস্য থাকে ঢাকায়। তাঁদের পোস্টিং মফস্বলে হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় কম অবস্থান করেন। এমন কর্মকর্তাও আছেন, যাঁরা ৩৬৫ দিনের মধ্যে কর্মস্থলে মাত্র কয়েক দিন দায়িত্ব পালন করেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য চেষ্টা করা হলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফোন ধরেননি।

সূত্র মতে, একদিকে পুলিশ অভিযানে শিথিলতা দেখাচ্ছে, আবার ঘুষ খাওয়া বন্ধ নেই। মাদকের ক্ষেত্রে এই অভিযোগ সবচেয়ে বেশি কক্সবাজারের পুলিশের দিকে। ওই অঞ্চল দিয়েই ইয়াবার মতো ভয়াবহ মাদক পাচার হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। গত জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তৎকালীন এসপি মুহাম্মদ রহমত উল্লাহর ইয়াবা সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার বিষয় উঠে আসে। এরপর হৈচৈ পড়ে যায়। পরে এসপিকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমান এসপির দায়িত্ব পালন করছেন মো. সাইফ উদ্দিন শাহীন। তাঁর সঙ্গে মাদকের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি মিডিয়া অফিসারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। কিন্তু মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত এসপি মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী ফোনই ধরেননি। 

পুলিশের ডিআইজি পর্যায়ের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, পুলিশের অনেকে মনোবলের কথা বলে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করেন। আবার তাঁদেরই কারো কারো বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এটি অদ্ভুত বিষয় যে ঘুষের ক্ষেত্রে মনোবলের অভাব হচ্ছে না। পুলিশের তরফ থেকে সেই সব কর্মকর্তার তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। 

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, ইয়াবা রোধ করাটা আসলে চ্যালেঞ্জিং। এই মাদকের টাইপটা অনেক ছোট হওয়ায় মাদক কারবারিরা সহজে বহন করতে পারে। আর রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ এর সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে পরিস্থিতি আরো কঠিন হয়ে পড়েছে। সীমান্তে সন্দেহভাজন ছাড়া সবাইকে তল্লাশি করাও যায় না। সীমান্তে তারকাঁটার বেড়া থাকলে কিছুটা কমানো যেত। ওপেন ল্যান্ডের কারণে মায়ানমার থেকে সহজে দেশে মাদকের চোরাচালান আসছে।

এ বিষয়ে বিজিবির কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফারুক হোসাইন খান কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা মাদকের চোরাচালান রোধের চেষ্টা করছি। মাদক কারবারিদেরও ধরছি।

সার্বিক এই পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইকবাল কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশে মাদক নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা নেই। যে যার মতো তথ্য হাজির করে। মাদক নিয়ে গভীর গবেষণা হওয়া উচিত। প্রকৃত অর্থে দেশে কত মাদকসেবী রয়েছে, কারবারি রয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া দরকার।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত মাদক প্রতিরোধে তরুণসমাজের ভূমিকা শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা বলেন, মাদকাসক্তি আধুনিক সভ্যতার বিপজ্জনক রোগ। এইডস, ক্যান্সার ও হৃদরোগের মতো মাদকাসক্তিও ভয়াবহ একটি রোগ। এটি পারমাণবিক বোমার চেয়েও ক্ষতিকর। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা কার্যালয়ের উপপরিচালক (গোয়েন্দা) খোরশেদ চঞ্চল বলেন, মাদকের ভয়াল থাবায় ধ্বংসের পথে তরুণ প্রজন্ম। শহর থেকে গ্রাম, স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়সর্বত্রই মাদক পাওয়া যাচ্ছে হাতের নাগালে। মাদকের কারণে বেড়ে যাচ্ছে সামাজিক অবক্ষয়। তরুণসমাজ হারিয়ে ফেলছে তাদের নৈতিক মূল্যবোধ। এই ভয়াল মাদকের কারণে ভেঙে যাচ্ছে পারিবারিক বন্ধন, নষ্ট হচ্ছে আস্থা-বিশ্বাস, পরিবার ও সমাজে তৈরি হচ্ছে নতুন আতঙ্ক।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

রাজধানীজুড়ে বিশেষ নিরাপত্তা চৌকি, সতর্ক অবস্থান যৌথ বাহিনীর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রাজধানীজুড়ে বিশেষ নিরাপত্তা চৌকি, সতর্ক অবস্থান যৌথ বাহিনীর

সাম্প্রতিক নানা ইসু্য সামনে রেখে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়। সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্তক অবস্থানে ছিল যৌথ বাহিনী। প্রস্তুত ছিল পুলিশের রায়টকারসহ বিশেষ সরঞ্জাম।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র তালেবুর রহমান বলেন, চলমান মিছিল ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারেএমন আশঙ্কায় সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে রাজধানীর নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

বায়তুল মোকাররম ঘিরে সর্তকতা : গতকাল সকাল থেকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনের এলাকায় সেনাবাহিনী, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জলকামান, এপিসি মোতায়েন ছিল আশপাশের এলাকায়।

এ সময় পল্টনে তোপখানা রোডের আশপাশের বিভিন্ন মোড়ে যৌথ বাহিনীকে সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলাসহ বিভিন্ন দেশে মুসলিমদের নিপীড়নের প্রতিবাদে বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠন ঢাকায় বিক্ষোভের ডাক দিয়ে সড়ক অবরোধ করলে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এরই মধ্যে জুমার নামাজের পর মসজিদটির বাইরে লোকজনকে কালো পতাকা হাতে মিছিলসহ ফিলিস্তিনে হামলার বিচার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। কারো কারো হাতে ফিলিস্তিনসহ বিভিন্ন পতাকা ছিল।

খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার বিচার দাবি করেছে। দলটির নেতারা বায়তুল মোকাররম মসজিদে জুমার নামাজের পর মসজিদের উত্তর গেটে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর স্লোগান দেন। পরে তাঁরা বিভিন্ন স্লোগানসহ মিছিল নিয়ে পল্টন মোড়ের দিকে চলে যান।

অন্যদিকে নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররম মসজিদের পূর্ব পাশে সমাবেশ শুরু করে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর শাখা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পল্টন মোড়ে রাখা হয়েছে ডিএমপির জলকামান, এপিসি কার ও দুটি প্রিজন ভ্যান। বায়তুল মোকাররম মসজিদের প্রবেশমুখে অবস্থান নিয়েছেন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

আর নাইটিঙ্গেল মোড়ে অবস্থান করছেন বিজিবি সদস্যরা।

প্রসঙ্গত, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে জুমার নামাজের পর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ মিছিল করবে; এ ছাড়া ছাত্রশিবির ও জামায়াতের সদস্যরা মসজিদ এলাকায় উপস্থিত আছেন- এই খবরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়।

বায়তুল মোকাররম মসজিদে প্রবেশের সময় মুসল্লিদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করেন পুলিশ সদস্যরা। এ ছাড়া সাদা পোশাকে ও ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) বিপুলসংখ্যক সদস্যকে জ্যাকেট পরে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কোনো পুলিশ সদস্য মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অন্যান্য এলাকায় সতকর্তা : গতকাল বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট, প্রেস ক্লাব, পল্টন, হাইকোর্ট, সার্ক ফোয়ারার সামনে সর্তক অবস্থানে থাকতে দেখা যায় যৌথ বাহিনীর সদস্যদের। এ সময় মুসল্লি ও পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে তল্লাশি করতেও দেখা গেছে। এ ছাড়া নাইটিঙ্গেল মোড়ে বিজিবি সদস্যরা অবস্থান করছিলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাব ও শাহবাগ মোড়ে ছিল পুলিশের অবস্থান।

এর বাইরে গুলশান, উত্তরা, মিরপুর, রমনা, পুরান ঢাকা ও মতিঝিলের বিভিন্ন এলাকা এবং রামপুরা টিভি স্টেশনসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সামনের নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি দেখা গেছে সকাল থেকেই।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডিএমপির ৫০টি থানা এলাকায় জননিরাপত্তা বিধানে দুই পালায় ডিএমপির ৬৬৭টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করে। এর মধ্যে রাতে ৩৪০টি ও দিনে ৩২৭টি টিম দায়িত্ব পালন করে। টহল টিমগুলোর মধ্যে ছিল মোবাইল পেট্রোল টিম ৪৭৯টি, ফুট পেট্রোল টিম ৭৩টি ও হোন্ডা পেট্রোল টিম ১১৫টি। এ ছাড়া মহানগর এলাকার নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থানে ডিএমপি ৭১টি পুলিশি চেকপোস্ট পরিচালনা করে।

 

 

মন্তব্য

গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলার প্রতিবাদে গতকাল জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলাম। ছবি : কালের কণ্ঠ

গাজায় নির্যাতিত মুসলমানদের ওপর ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলা ও ভারতে মুসলিমদের ওপর আগ্রাসনের প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার রাজধানীসহ সারা দেশে সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম, খেলাফতে মজলিস, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন, ধর্মপ্রাণ মুসল্লি, সিপিবি ও বাসদ।

গতকাল দুপুরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম। সমাবেশে সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, পৃথিবীর মানচিত্র মুসলমানদের রক্তে রঞ্জিত করা হচ্ছে। ভারত ও ইসরায়েল যৌথভাবে মুসলিম নিধন করছে।

এই যৌথ শক্তিকে রুখতে বিশ্বের মুসলমান ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

মামুনুল হক বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের প্রতি আমাদের আহ্বান, দ্রুত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হোক। ফিলিস্তিন মুক্ত করতে বিশ্বে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হতে আরব লিগ ও ওআইসিসহ মুসলমানদের সব সংগঠনকে আমরা আহ্বান জানাই।

তিনি বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যুর পাশাপাশি ভারতের মুসলমানদের রক্ত দিয়ে হোলি খেলার পাঁয়তারা চলছে।

মুসলমানদের তিন শ বছরের ঐতিহ্যকে মুছে ফেলতে তারা আওরাঙ্গজেব আলমগীর (রহ.)-এর সমাধি উত্খাতের ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ভারতকে বলতে চাই, তারা ওই সমাধিতে আঘাত করলে ভারতকে খান খান করে দেব।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি জুনায়েদ আল হাবিব। এ ছাড়া বক্তব্য দেন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, নায়েবে আমির আহমাদুল কাসেমী প্রমুখ।

গণহত্যার বিচার দাবি করেছে সিপিবি ও বাসদ

যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করে সম্প্রতি ফিলিস্তিনের গাজা, খান ইউনিসসহ বিভিন্ন স্থানে জায়নবাদী ইসরায়েলি বাহিনীর দ্বারা পরিচালিত নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ।

গতকাল সকালে সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাব হয়ে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এর আগে রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন সিপিবির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সসহ নেতারা।

বক্তারা বলেন, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত এই গণহত্যার জন্য মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার আরব সহযোগীদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

এদিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাসদ আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ।

সমাবেশে বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতনসহ নেতারা।

নেতারা ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ, দেশে দেশে পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্ট সব যুদ্ধ এবং যুদ্ধ উন্মাদনার বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে প্রতিবাদ প্রতিরোধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে গাজায় মানবিক সংকট মোকাবেলায় জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানান তাঁরা।

এ ছাড়া চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলাম, সিলেটে বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় হেফাজতে ইসলাম, গাইবান্ধায় ইসলামী ছাত্রশিবির, ঝালকাঠির নলছিটিতে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সর্বদলীয় ইসলামী ছাত্রঐক্য পরিষদ, টাঙ্গাইলে ছাত্রশিবির, পঞ্চগড়ে ঈমান আকিদা রক্ষা কমিটি, চাঁদপুরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গোপালগঞ্জে ওলামা পরিষদ, কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে তৌহিদী মুসলিম জনতা, চুয়াডাঙ্গার দামুরহুদায় দর্শনা প্রেস ক্লাব, বগুড়ার ধুনটে সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা, দিনাজপুরের হিলিতে তৌহিদী জনতা, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন, কুমিল্লার মুরাদনগরে হেফাজতে ইসলাম, জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে তৌহিদী জনতা, মাদারীপুরের শিবচরে পৃথকভাবে ইসলামী ছাত্রশিবির ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ,  রাজবাড়ীতে সাধারণ মুসলিম সমাজ ও শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয় বলে কালের কণ্ঠর সংশ্লিষ্ট নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।

 

মন্তব্য
রুহুল কবীর রিজভী

জনগণ আ. লীগকে ক্ষমা করলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জনগণ আ. লীগকে ক্ষমা করলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই
রুহুল কবীর রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু বিচার নিয়ে কোনো কথা হচ্ছে না। ছাত্র-জনতার গণহত্যায় দোষীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিচারপ্রক্রিয়া শেষে আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। যদি জনগণ তাদের ক্ষমা করে তাহলে আমাদের (আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া) কোনো আপত্তি নেই।

গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখানে ফায়দাবাদ মধ্যপাড়া হাজী শুকুর আলী মাদরাসাসংলগ্ন মাঠে দুস্থদের মধ্যে ঈদ সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

জুলাই আন্দোলনে গণহত্যায় জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করে রুহুল কবীর রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এখন যে নেতৃত্বে আসবে, সে যদি ছাত্র হত্যা, অপরাধ, অর্থ লোপাট ও টাকা পাচার না করে থাকে তাহলে সেই আওয়ামী লীগ কেন রাজনীতি করতে পারবে না?

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কি না এমন প্রশ্ন উঠছে। অথচ এই প্রশ্ন উঠছে না, যারা গণহত্যা চালিয়েছে, তাদের বিচার হবে কি না? কারা এই কাজ করেছে, এটা কি মানুষ দেখেনি? যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার হতেই হবে। আর কোনো ফ্যাসিবাদের উত্থান যেন না হয়, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি শাখার আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের একটি গোষ্ঠী ৫ আগস্টের পর সংস্কারের কথা বলছে। কিন্তু গত ছয় মাসে দৃশ্যমান কোনো সংস্কার দেখা যায়নি। দেশের কোথাও স্থিতিশীলতা নেই। এখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

এর জন্য দরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার গঠন করলে তবেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে।

অনুষ্ঠানে মহানগর উত্তর বিএনপি নেতা এস এম জাহাঙ্গীর, কফিল উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

 

মন্তব্য
আসিফ মাহমুদ

আ. লীগকে ফেরানোর খায়েশ বিপজ্জনক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আ. লীগকে ফেরানোর খায়েশ বিপজ্জনক
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া

আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফেরানোর ইচ্ছা বা পরিকল্পনা বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। গতকাল শুক্রবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি।

আসিফ মাহমুদ বলেন, আমরা কবে থেকে জার্মানি, ইতালির চেয়ে বেশি ইনক্লুসিভ ডেমোক্রেটিক হয়ে গেলাম? গণহত্যার বছর না ঘুরতেই আওয়ামী লীগকে ফেরানোর খায়েশ বিপজ্জনক।

ফেসবুকে আরেক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, নির্বাচন পিছিয়ে যাবে, অনিশ্চয়তা তৈরি হবেএসব শঙ্কার কথা বলে কেউ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে জনতার ঐক্যে ফাটল ধরাতে আসবেন না।

আসিফ লিখেছেন, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্টভাবে বারবার বলছেন ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইলেকশন হবে। আমি নিশ্চয়তা দিতে চাই সরকার এই কথা রাখবে। সুতরাং নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই।

তিনি লিখেন, গণহত্যাকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ শুধু জাতীয়ভাবে নয়, আন্তর্জাতিকভাবে ইউএন (জাতিসংঘের) রিপোর্টের মাধ্যমে স্বীকৃত।

জনতার ঐক্য জিন্দাবাদ।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ