বিশেষ সাক্ষাৎকার

স্বাধীন দেশে গণপরিষদ নির্বাচন লাগবে কেন?

শেয়ার
স্বাধীন দেশে গণপরিষদ নির্বাচন লাগবে কেন?
শামসুজ্জামান দুদু

শামসুজ্জামান দুদু। আশির দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের রাজনীতি দিয়ে যাত্রা শুরু। এরপর কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক হয়েছিলেন। সেখান থেকে হন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা।

এখন তিনি দলটির ভাইস চেয়ারম্যান। দুইবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন কালের কণ্ঠের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক শিহাবুল ইসলাম

 

প্রশ্ন : প্রায় সাত মাস দেশে নতুন সরকার, সামগ্রিক অবস্থা কেমন দেখছেন?

উত্তর : ইদানীং বাজারে কিছু পণ্যের দাম কমেছে।

এই না যে সব পণ্যের দাম কমছে। অর্থাৎ কিছু সম্ভাবনা দেখা দিলেও, কিছু কিছু দ্রব্যের দাম আগের মতোই। আগে ছাত্রলীগের নামে হলগুলোতে দখলবাজি ছিল। এখন অন্যরা দখলবাজি করছে।
হাসিনা কেড়ে নিয়েছে ভোটাধিকার, এখন সেই অবস্থাই আছে। সামগ্রিক সংকটের মধ্যে দেশ নিমজ্জিত।

 

প্রশ্ন : আপনারা দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছেন। বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনায় তো ভালো করছে।

উত্তর : বাড়ির কর্তা যেভাবে সংসার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, বাড়ির দারোয়ান সেটা করতে পারে না।

কখনো কখনো বাড়ির কর্তাকে দারোয়ানের ওপর নির্ভর করতে হয়, যখন সে বাইরে যায়, যা অল্প সময়ের জন্য। কিন্তু উপযুক্ত হচ্ছে কর্তা—এটি মনে রাখতে হবে।

 

প্রশ্ন : এখন আওয়ামী লীগ মাঠে নেই। তাহলে যদি নির্বাচন দ্রুত হয় তাহলে আপনারা কি কিছুটা সুবিধা পাবেন না?

উত্তর : রাষ্ট্র পরিচালনা করে দৃশ্যত একটি রাজনৈতিক দল; কিন্তু অদৃশ্যত জনগণ। নির্বাচিত হয়ে আসার পাঁচ বছর পর, ওই জনগণের কাছে তাদের ফিরে যেতে হয়। অতীতে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে, জনগণ কর্তৃক রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। এখন যে সরকার আছে, সেটি তো জনগণের সরকার নয়।

 

প্রশ্ন : এনসিপি ও জামায়াত চাচ্ছে সংস্কারের পরে নির্বাচন। তাদের চাওয়াটা কিভাবে দেখছেন?

উত্তর : নির্বাচন সম্পর্কে কেউ যদি আস্থাশীল হয়, তাহলে সে যেকোনো সময় নির্বাচনকে স্বাগত জানাবে। আর যদি আস্থাশীল না হয়, তাহলে একটি ভিন্ন পথ খুঁজবে।

 

প্রশ্ন : এনসিপি গণপরিষদ নির্বাচন চাচ্ছে, আর বিএনপি নির্বাচিত সংসদে সংবিধান সংশোধন চাচ্ছে। নতুন গঠিত দলসহ অন্যদের সঙ্গে আপনাদের চাওয়ার পার্থক্য হয়ে যাচ্ছে না?

উত্তর : না, এখানে পার্থক্য নেই। আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। ছাত্রদের পড়াতেও পারতাম; কিন্তু আমার মনে হয়েছে রাজনীতি করাটা আমার জন্য ঠিক। এ জন্য রাজনীতিতে এসেছি। আমার বুঝে আসে না, সেকেন্ড রিপাবলিক কেন লাগবে? স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে গণপরিষদ নির্বাচন লাগবে কেন?

 

প্রশ্ন : তারা তো বর্তমান সংবিধান বাদ দিয়ে নতুন সংবিধান চায়?

উত্তর : সংবিধান বাদ দেওয়া যায় না, সংবিধান সংস্কার করা যায়। এমনকি নতুন সংবিধান করতে হলে সংসদে যেতে হবে। সংসদে যেতে হলে সংসদ বানাতে হবে। আর এটা বানাতে হলে নির্বাচন দরকার। যাদের কাছে ৭১ মানে স্বাধীনতা মনে হয় না, তারাই ২৪-কে দ্বিতীয় স্বাধীনতা মনে করে।

 

প্রশ্ন : ছাত্র আন্দোলনকারীদের দুজন এখন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন। অন্যদিকে ছাত্ররা নতুন দল গঠন করেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে আপনি কি মনে করেন আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে?

উত্তর : গত সাত-আট বছরে মানুষের মধ্যে যে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে সরকারের পক্ষে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব কি না? কারণ এই বর্তমান সরকারপ্রধান শিক্ষার্থীদের দল গঠনে উৎসাহিত করেছে প্রকাশ্যে। সরকারে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের রেখেছে। যে সরকার আলাদা একটি দল গঠনে ও ওই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাদের প্রতিনিধি সরকারে থাকে, স্বাভাবিক কারণে ওই সরকার ক্ষমতায় আসুক, সেই প্রক্রিয়া, সেই ইঞ্জিনিয়ারিং, সেই ব্যবস্থাপনা করবে না এটা বিশ্বাসযোগ্য না।

 

প্রশ্ন : তাহলে কি আপনারা সন্দেহ করছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না?

উত্তর : সরকার গঠনে দুই উপদেষ্টা ও তাদের সহযোগীরা যে কাজগুলো করছে তাতে সন্দেহ না, বাস্তবতায় মনে হচ্ছে ওই দিকেই সরকার যাচ্ছে।

 

প্রশ্ন : এনসিপিসহ আরো কিছু দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায়। গত ১৫-১৬ বছরে আওয়ামী লীগের মাধ্যমে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে আপনারা দাবি করেন। তাহলে তাদের সঙ্গে আপনারা কেন একমত হতে পারছেন না?

উত্তর : এগুলো রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি। আমরা নির্বাচন চাইলে, নির্বাচন দেয় না সরকার। অন্যদিকে আমরা কেন সরাসরি আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ চাচ্ছি না, সেটা আবার বলে তারা। আগের সরকারকে (আওয়ামী লীগকে) বাতিল করতে হবে। প্রেস নোট দিতে হবে। কিন্তু সরকারপ্রধান বলছে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পরিস্থিতি দেশে নেই।

 

প্রশ্ন : অনেক ক্ষেত্রে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আসছে, দল থেকেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তার পরও কেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না?

উত্তর : যারা চাঁদাবাজি করে, তারা বিএনপি করে না। ছাত্রদল করে না। স্বেচ্ছাসেবক দল করে না। আমি অন্তত বিশ্বাস করতে চাই না, কোনো ছাত্রদলের নেতাকর্মী চাঁদাবাজি করবে। ছাত্রদলের কিছু নির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে, রাজনীতি আছে, নেতৃত্ব আছে। ওটা যে অস্বীকার করবে, অস্বীকার করে চাঁদাবাজি করবে, সে তখন ছাত্রদলের কেউ না।

 

প্রশ্ন : জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির কী গভীর দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে?

উত্তর : জামায়াতসহ অন্যান্য ছোট রাজনৈতিক দল আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কমিউনিস্ট পার্টিও আমাদের কাছে আসে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সময় জামায়াতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক হয়েছে। কিন্তু যখন কেউ ফ্যাসিবাদের দোসর হবে; শুধু জামায়াত না, অন্য যেকোনো সংগঠন, তখন সে আর আমার বন্ধু না। এখানে দূরের, কাছের বলে কোনো কিছু নেই। তবে জামায়াতের সিদ্ধান্ত অতীত থেকে একদম ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভুলে ভরা। বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ভুল করেনি তা বলব না, কিছু ভুল থাকতে পারে। কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে তুলনীয় নয়।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ছুটির ঘোষণা

শেয়ার
ছুটির ঘোষণা

আজ ১৪ এপ্রিল সোমবার বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কালের কণ্ঠের সব বিভাগ বন্ধ থাকবে। তাই কাল মঙ্গলবার পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। তবে আমাদের অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়া চালু থাকবে। সম্পাদক

মন্তব্য

আধাপাকা ধান কাটার উৎসব

শেয়ার
আধাপাকা ধান কাটার উৎসব
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন হাওরাঞ্চলে চলছে আধাপাকা ধান কাটার উৎসব। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকরা ছুটছেন মাঠে। দাবদাহ উপেক্ষা করে ধান কাটা, মাড়াই ও ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। গতকাল সরাইল থেকে তোলা। ছবি : ফোকাস বাংলা
মন্তব্য

মডেল মেঘনার আটকাদেশ কেন অবৈধ নয় : হাইকোর্ট

    গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না : আইন উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
মডেল মেঘনার আটকাদেশ কেন অবৈধ নয় : হাইকোর্ট
মেঘনা আলম

মিস আর্থ বাংলাদেশ বিজয়ী-২০২০ মডেল মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদেশ কেন অবৈধ নয়, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল রবিবার এ বিষয়ে এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এই আদেশ দেন। অন্যদিকে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইন উপদেষ্টা বলেছেন, মডেল মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না।

আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলেছেন আদালত।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন ও আইনজীবী জাহেদ ইকবাল।

মেঘনা আলমকে ৩০ দিনের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, কেন তাঁকে মুক্তি দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং কেন তাঁকে গ্রেপ্তার ও আটকের প্রক্রিয়াটি অসাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে নারুলে হাইকোর্ট এসব বিষয় জানতে চেয়েছেন।

আদালত স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, পুলিশের আইজি, ডিএমপি কমিশনার, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলেছেন।

এর আগে গত ১০ এপ্রিল আবেদনের ভিত্তিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহ মডেল মেঘনা আলমকে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন।

আদেশে বলা হয়, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২(এফ) ধারার জননিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী ক্ষতিকর কার্য থেকে নিবৃত্ত করার জন্য এবং আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে আবশ্যক অনুভূত হওয়ায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(১) ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে মেঘনা আলমকে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এই আটকাদেশ স্বাক্ষরের তারিখ থেকে ৩০ দিন কারাগারে আটক রাখার আদেশ প্রদান করা হলো। পরে তাঁকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।

 

গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না : আইন উপদেষ্টা

এদিকে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, মডেল মেঘনা আলমকে রাতে যে প্রক্রিয়ায় বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা সঠিক ছিল না।

তিনি বলেন, আমরা স্বীকার করছি, গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি।

গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি মানে উনার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের আলামত বা অভিযোগ নেই, সেটি নয়। সেটির ব্যাপারে করণীয় কী আছে, সে বিষয়ে অচিরেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

 

 

মন্তব্য

জয়নুল আবদিন ফারুকের বক্তব্যের প্রতিবাদ জামায়াতের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জয়নুল আবদিন ফারুকের বক্তব্যের প্রতিবাদ জামায়াতের

জামায়াত নিয়ে বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুকের বক্তব্যকে অসত্য উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। গতকাল রবিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক গত ১০ এপ্রিল একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে জামায়াতে ইসলামী মসজিদে মসজিদে মহিলাগুলোকে একত্র করে বেহেশতের টিকিট দেওয়া শুরু করেছে মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেন, আমি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তাঁর এই বক্তব্যে সত্যের লেশমাত্রও নেই। তাঁর এ বক্তব্য হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

জামায়াতের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়েই তিনি জামায়াতের বিরুদ্ধে আজগুবি, বানোয়াট ও হাস্যকর বক্তব্য দিয়েছেন।

জয়নুল আবদিন ফারুকের মতো একজন ব্যক্তির মুখে এ ধরনের বক্তব্য মানায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াতের সমালোচনা করার মতো কোনো কিছু না পেয়ে জয়নুল আবেদিন ফারুক ইসলামের দাওয়াত সম্পর্কে কটাক্ষপূর্ণ হাস্যকর বক্তব্য দিয়ে নিজের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছেন। এভাবে বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা অত্যন্ত হাস্যকর।

বিবৃতিতে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, নিজের অবস্থান ও মর্যাদার কথা চিন্তা করেই জামায়াত সম্পর্কে বানোয়াট ও হাস্যকর মিথ্যা বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য আমি বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুকের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ