মক্কা নগরীতে কুরাইশ বংশের বিস্তার

আহমদুল ইসলাম চৌধুরী
আহমদুল ইসলাম চৌধুরী
শেয়ার
মক্কা নগরীতে কুরাইশ বংশের বিস্তার

মক্কা মোকাররমাকেন্দ্রিক কুরাইশ বংশের ইতিহাস মুসলমানদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এটি উম্মতে মুহাম্মদির কাছে বিশ্বের বুকে শ্রেষ্ঠ বংশ হিসেবে স্বীকৃত।

মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর বংশধররা কুরাইশ বংশের অন্তর্গত। এ বংশ থেকেই মহানবী (সা.)-এর আগমন ঘটেছে।

আবার এ বংশের লোকজনই মহানবী (সা.)-এর নবুয়ত বিষয়ে চরম বিরোধিতা করেছে। তাদের কারণে নিরাপত্তার অভাবে মহানবী (সা.) মদিনা মুনাওয়ারা হিজরত করেন। আবু বক্কর ছিদ্দিক (রা.) খলিফা হওয়ার যোগ্যতা ও যৌক্তিকতার পেছনে যে কয়েকটি যুক্তি উপস্থাপন করেছিলেন, তার অন্যতম হলো তিনি ছিলেন কুরাইশ বংশের।

মক্কা মোকাররমার কুরাইশ বংশের দিকে দৃষ্টি দিলে জানা যায়, আদম (আ.)-কে প্রথম পুরুষ হিসেবে গণ্য করে ইবরাহিম (আ.)-কে তাঁর বিংশতিতম অধস্তন পুরুষ হিসেবে দেখানো হয়।

গড়ে ৩০ বছর করে প্রতি বংশ স্তরের পার্থক্য মেনে নিলে ইবরাহিম (আ.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন আদম (আ.)-এর ৬০০ বছর পর। তাঁর পূর্বপুরুষ হিসেবে নুহ (আ.)-এর নামও উল্লেখ রয়েছে। তাঁকে আদম (আ.)-এর দশম অধস্তন পুরুষ হিসেবে দেখানো হয়।

ইবরাহিম (আ.)-এর দুই পুত্রের মধ্যে ইসমাইল (আ.)-এর বংশে জন্মগ্রহণ করেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)।

তাঁর অন্য পুত্র ইসহাক (আ.)-এর বংশধর হলেন বর্তমানের ইসরায়েলি ইহুদিরা। 

ইসমাইল (আ.)-এর অধস্তন, আদনান থেকে শুরু করে ফিহর বিন মালিক পর্যন্ত যে বংশধর, তাতে কোনো মতান্তর বা সন্দেহ নেই। বলা হয়ে থাকে, এ ফিহরই মক্কা মোকাররমায় কুরাইশ বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর ডাকনাম কুরাইশ থেকেই মক্কা মোকাররমায় বসবাসকারী ইসমাইল (আ.)-এর বংশধরদের ‘কুরাইশ’ নামে চিহ্নিত করা হয়। এ কুরাইশরা মক্কা মোকাররমায় কাবা শরিফের ধর্মীয় প্রতিনিধি হিসেবে খ্যাতি ও প্রসিদ্ধি লাভ করে।

বিশ্বখ্যাত মুসলিম গ্রন্থকার সুহাইল এবং ইতিহাসবিদ ইবনে জাবির তাবারিও উপরোক্ত সিদ্ধান্ত সমর্থন করেন। তাঁরা উভয়েই বলেছেন যে আদনান বিন উদদ বিন হামিশা থেকেই ইবরাহিম (আ.)-এর পার্থক্য ৪০ পুরুষের।

উল্লেখ্য যে প্রতি বংশের পার্থক্য গড়ে ৩০ বছর ধরলে আদম (আ.) থেকে মহানবী (সা.)-এর সময়ের পার্থক্য হয় দুই হাজার ৭০০ বছর। তার অর্থ এই যে দুই হাজার ৭০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে নবী পাক (সা.)-এর জন্ম ৫৭০ খ্রিস্টাব্দ বাদ দিলে খ্রিস্টাব্দপূর্ব ২১৩০ খ্রিস্টাব্দে আদম (আ.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু হিসাবে এটা সত্য নয়। কেননা পৃথিবীর প্রথম মানুষ ‘আদম’ শব্দের অর্থ মানুষ। প্রথম মানুষ জন্মগ্রহণ করেছিলেন বহু আগেই।

ইতিহাসে মতপার্থক্য থাকলেও কুরাইশ গোষ্ঠীগত বংশধরদের তালিকা সংগৃহীত ইবনে সাদ ‘তবকাত’ নামক গ্রন্থ থেকে। তিনি ছিলেন নবী করিম (সা.)-এর আরেক জীবনীকার আল ওয়াকিদির সেক্রেটারি। ইবনে সাদ ইন্তেকাল করেন ২৩০ হিজরির ৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে।

মক্কা মোকাররমায় কুরাইশ বংশের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা ছিল। কুরাইশ বংশের ১৫টি গোষ্ঠীর মধ্যে ৯টি গোষ্ঠী মক্কা মোকাররমায় কাবা শরিফকেন্দ্রিক মূর্তিপূজা নিয়ে ব্যবসা করত। এই স্বার্থপররা নতুন ধর্ম তথা ইসলামকে স্বীকার করতে চায়নি। নবী (সা.) নিজের ঘরে, তারপর তাঁর আত্মীয়-স্বজনদের ইসলামের কথা শোনালেন। সঙ্গে সঙ্গে তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে ঈমান আনলেন। এতে সর্বপ্রথম উম্মে খাতুন মোমেমিন খাদিজাতুল কুবরা, আলী (রা.) এবং সেবক ও পালিত পুত্র জায়েদ ইবনে হারিসা (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন। কিছু দিনের মধ্যেই নবী (সা.)-এর একান্ত আপন আবু বক্কর ছিদ্দিক (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর গোপনে গোপনে ইসলাম প্রচার চলতে থাকে। দাস ও দাসি শ্রেণির অবহেলিত মানুষেরা নতুন ধর্মকে মুক্তির আহ্বান বলে মেনে নেয়। তাঁদের মালিকদের অগোচরে এবং বিনা অনুমতিতেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। ইসলাম ধর্মে যেসব শ্রেণির মানুষের কল্যাণকেই কামনা করা হয়েছিল, তা তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন। অর্থাৎ ইসলামে মানুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হয়নি। তাই গরিব, অনারব ও ক্রীতদাস-দাসীরা ইসলাম ধর্মের মধ্যে খুঁঁজে পেয়েছিলেন সত্যিকার মুক্তি।

ইসলামের অবতরণের প্রায় চার বছর পর ৬১৩ খ্রিস্টাব্দে নবী (সা.) কুরাইশদের আহ্বান জানালেন সাফা পাহাড়ে ইসলামের বাণী শোনানোর জন্য। কিন্তু তাতে কোনো ফল হলো না। কুরাইশপ্রধানরা উত্তেজিত হয়ে উঠলেন বিরোধিতায়।

ফলে নবী করিম (সা.) ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবাদের ৬১৪ খ্রিস্টাব্দ আবিসিনিয়ায় (বর্তমান নাম ইথিওপিয়া) গমন করার নির্দেশ দেন। পরবর্তী সময় মক্কা মোকাররমার পৌত্তলিকরা অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠেন। তাঁরা একত্র হয়ে হাশেমিদের বয়কট করেন। বাধ্য হয়ে ৬১৬ খ্রিস্টাব্দে নবী (সা.) তাঁর সাহাবাদের নিয়ে তাঁর অপর এক সাহাবা সাফা পাহাড়ের মাখজুম গোষ্ঠীর সন্তান হজরত আল আরকাম বিন আবদ মানাফের ঘরে অবস্থান নেন। কিন্তু সেখানে ওই অবস্থায় ইসলাম প্রচারের কাজ থেমে থাকেনি। এতে গোপনে মানুষ ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে। অন্তরীণ থাকা অবস্থায় নবী (সা.)-কে ইসলাম গ্রহণ না করেও যে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি সহায়তা করেছিলেন, তারা ছিলেন উম্মে খাতুন মোমেনিন হজরতুল খাদিজার নিজের গোষ্ঠীর সন্তান এবং তাদের প্রচেষ্টায় হজরত ওমর (রা.) ও আবু বকর (রা.)-এর প্রচেষ্টায় ৬১৮ খ্রিস্টাব্দে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু মাত্র এক বছরের মাথায় উম্মে খাতুন মোমেনিন খাদিজাতুল কুবরা এবং তাঁর পাঁচ সপ্তাহ পর পিতৃব্য আবু তালেব ইন্তেকাল করেন। এতে অবিশ্বাসী কুরাইশরা সুযোগ মনে করে আবারও নানা রকম ষড়যন্ত্র করতে থাকে। ফলে নবী করিম (সা.) ৬১৯ খ্রিস্টাব্দে তায়েফ গমন করেন। কিন্তু সেখানেও প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হন।

এখানে উল্লেখ্য, কুরাইশ বংশের মধ্যে ১৫টি গোষ্ঠীর বর্ণনা পাওয়া যায়। তার মধ্যে নবী করিম (সা.)-এর হাশেমি গোষ্ঠীর আবু লাহাবকে নিয়ে মোট সাতটি গোষ্ঠীর নেতারা ইসলাম উত্খাত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। তাঁর প্রবল শত্রুর সংখ্যা বেশি ছিল মাখজুমি ও শামস গোষ্ঠীতে। আসলে কাবা শরিফকে কেন্দ্র করে কুরাইশদের আর্থিক স্বার্থ ছিল বলেই ইসলাম ধর্মে তাদের সর্বনাশ দেখতে পেয়েছিল। অন্যদিকে হাশেমি গোষ্ঠীর একজন এতিম নিরাশ্রয় ব্যক্তির কাছ থেকে তারা ধর্মের শিক্ষা নিতে আগ্রহী ছিল না। সে জন্য কুরাইশদের মধ্যে শত্রুপক্ষীয় প্রধান দুই গোষ্ঠী  মাখজুমি ও আবদ শামস—যারা জনসংখ্যায়, ধনে ও সম্পত্তিতে ছিল তুঙ্গে, তারা নতুন ধর্ম গ্রহণ করতে অস্বীকার করে কঠোরভাবে। নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ও গুরুত্ব কোনো প্রকারে তারা নষ্ট করতে চায়নি। তাই তারাই সবচেয়ে ভয়ংকর শত্রু হয়ে ওঠে ইসলামের। পরবর্তী সময় হজকে কেন্দ্র করে মদিনা মুনাওয়ারার বাসিন্দাদের সঙ্গে সংযোগ হওয়ার সুযোগ হয় নবী পাক (সা.)-এর। এই সুযোগে আবিসিনিয়ায় হিজরতকারীদের পরে মক্কা মোকাররমায় মুসলমানদের নবী পাক (সা.) পর্যায়ক্রমে মদিনা মুনাওয়ারায় পাঠিয়ে দেন। অতঃপর আবু বক্কর ছিদ্দিক (রা.)-কে সঙ্গে নিয়ে ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন নবী (সা.) মক্কা মোকাররমা ত্যাগ করেন। মদিনা মুনাওয়ারায় অবস্থান করে বদর, ওহুদ, খন্দকসহ বড় বড় তিনটি চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ নবী পাক (সা.)-কে মোকাবেলা করতে হয়। এরপর হুদায়বিয়ার সন্ধির মাধ্যমে আরব উপদ্বীপে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়ে যায়। অষ্টম হিজরিতে বিনা যুদ্ধে অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবে মক্কা মোকাররমা বিজয় হয়। কাবা শরিফ পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। মদিনা মোনাওয়ারা জজিরাতুল আরব তথা আরব উপদ্বীপ ইসলামের রাজধানী হিসেবে পূর্ণাঙ্গতা লাভ করে। কুরাইশদের মধ্যে বেশির ভাগ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। কুরাইশদের মধ্যে যাঁরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেননি, তাঁরা হতাশায় ভুগতে ভুগতে দুনিয়া ত্যাগ করেন।

লেখক : গ্রন্থকার ও গবেষক

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কোরআন থেকে শিক্ষা

    পর্ব, ৭২৭
শেয়ার
কোরআন থেকে শিক্ষা

আয়াতের অর্থ : যদি তোমরা ঘরে কাউকেও না পাও তাহলে তাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়া হয়। যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ফিরে যাও, তবে তোমরা ফিরে যাবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম। আর তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।

যে ঘরে কেউ বাস করে না তাতে তোমাদের জন্য দ্রব্যসামগ্রী থাকলে সেখানে তোমাদের প্রবেশে কোনো পাপ নেই।... (সুরা : নুর, আয়াত : ২৮-২৯)

আয়াতদ্বয়ে অন্যের ঘরে প্রবেশের বিধান বর্ণনা করা হয়েছে।

শিক্ষা ও বিধান

১. বসবাস করে এমন ঘরে যদি কেউ না থাকে তবু তাতে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না। আর যে ঘর মানুষের বসবাসের জন্য নয় একান্ত প্রয়োজনে তাতে অনুমতি ছাড়াও প্রবেশ করা যায়।

২. ঘরের দরজা বন্ধ থাকুক বা খোলা তাতে প্রবেশের আগে অনুমতি গ্রহণ করা আবশ্যক।

৩. ঘরের সাবালক বাসিন্দার মতো নাবালক বাসিন্দাও ঘরে প্রবেশের অনুমতি দিতে পারে।

৪. বিরান ও পরিত্যক্ত বাড়িতে প্রবেশের জন্য অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজন নেই। কেননা এর সঙ্গে মানুষের আব্রু ও ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা রক্ষার প্রশ্ন জড়িত নয়।

৫. ওমর (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি দরজার ছিদ্র দিয়ে উঁকি দিল সে ফিসকে (প্রকাশ্য পাপাচার) লিপ্ত হলো।

(তাফসিরে কুরতুবি : ১৫/১৯৮)

 

 

মন্তব্য
দেশে-বিদেশে

ইফতারের বড় পাঁচ আয়োজন

    ইবাদতের পাশাপাশি বর্তমানে ইফতার হয়ে উঠেছে মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষঙ্গ। ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক মেলবন্ধনকে শক্তিশালী করতে মুসলিম বিশ্বের বহু স্থানে ইফতারের নানা আয়োজন করা হয়। মুসলিম বিশ্বের বড় পাঁচ ইফতার আয়োজন নিয়ে লিখেছেন আবরার আবদুল্লাহ
শেয়ার
ইফতারের বড় পাঁচ আয়োজন

১. মক্কা ও মদিনায় : পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইফতারের আয়োজন হয় মক্কার মসজিদুল হারামে। তারপরই রয়েছে মসজিদে নববীর স্থান। প্রতিদিন কয়েক লাখ ওমরাহ প্রার্থী এখানে ইফতার আয়োজনে অংশগ্রহণ করে। গত ১৭ মার্চ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে পবিত্র দুই মসজিদের পরিচালনা পর্ষদ জানিয়েছে, ১৭ রমজান পর্যন্ত তারা পবিত্র দুই মসজিদে ১১ মিলিয়ন (এক কোটি ১০ লাখ) ইফতারের প্যাকেট বিতরণ করেছে এবং সমপরিমাণ খেজুরের প্যাকেটও বিতরণ করেছে।

তারা আরো বলেছে, প্রতিবছর রমজানে ওমরাহ পালনকারীর সংখ্যা বাড়ছে। তবু তারা চেষ্টা করছে সবাইকে যেন মানসম্মত খাবার পরিবেশন করা যায়।

(অ্যারাব নিউজ)

২. শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ : সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যতম নান্দনিক স্থাপনা আবুধাবির শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ। প্রতিদিন হাজার হাজার মুসল্লির ইফতারের ব্যবস্থা থাকে এখানে।

শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ সেন্টারের তত্ত্বাবধানে ‘আওয়ার ফাস্টিং ইনিশিয়েটিভ’-এর আওতায় রমজান মাসজুড়ে ২১ লাখের বেশি ইফতার বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে মসজিদ প্রাঙ্গণে সাড়ে ছয় লাখ এবং সাড়ে ১০ লাখ ইফতার আবুধাবির বিভিন্ন স্থানে বিতরণ করা হয়। তা ছাড়া রমজানের শেষ ১০ রাতে ৩০ হাজার সাহরি বিতরণ করা হয়। (কালের কণ্ঠ)

৩. ইসতিকলাল মসজিদ : ইন্দোনেশিয়ার ইসতিকলাল মসজিদে হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহত্ ইফতার আয়োজন।

এখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার রোজাদার ইফতার করে থাকে। তাদের সংখ্যা সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজারে উন্নীত হয়। মসজিদ কমিটি স্থানীয় দানশীল ব্যক্তিদের সহযোগিতায় এই আয়োজন করে থাকে। (এপি নিউজ)

৪. মিসরে গণ-ইফতার : প্রতিবছর রমজান মাসের ১৫ তারিখ মিসরের রাজধানী কায়রোতে আয়োজন করা হয় একটি গণ-ইফতারের। এতে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেয়।

২০১৩ সালে শুরু হওয়া এই সামাজিক সম্প্রীতিমূলক আয়োজন এরই মধ্যে এক যুগ পার করেছে। বর্তমানে সরকারের শীর্ষ ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রতিটি অঙ্গনের খ্যাতিমান ব্যক্তিরা এই আয়োজনে অংশ নেন। গণ-ইফতার মুসলিম ও অমুসলিম সবার জন্য উন্মুক্ত। বহু পর্যটকও এই ইফতার আয়োজনে অংশ নিয়ে থাকেন। গতবছর গণ-ইফতারে অংশ নিয়েছিল ৩০ হাজার ব্যক্তি। আর তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল ৭০০ টেবিল। এ বছর প্রায় ৫০ হাজার ব্যক্তি তাতে অংশ নেয়। (এসআইএস ডটগভ ডটইজি ও সিবিসি নিউজ)

৫. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম : বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নিতে পারে যেকোনো মানুষ। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুসারে বায়তুল মোকাররম মার্কেটের ব্যবসায়ী, তাবলিগ জামাত, মুসল্লি ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতায় এই গণ-ইফতারের আয়োজন করা হয়। বহু বছর  ধরে বায়তুল মোকাররমের এই জনসেবামূলক কার্যক্রমটি চলছে।

 

 

মন্তব্য

রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের গুরুত্ব

মাইমুনা আক্তার
মাইমুনা আক্তার
শেয়ার
রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের গুরুত্ব

রহমত ও মাগফিরাতের দশক শেষ হওয়ার পর আমাদের মধ্যে হাজির হলো নাজাতের দশক। পবিত্র রমজানের এই দশক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্ভরযোগ্য মতানুযায়ী রমজানের শেষ দশকে শান্তির বার্তা নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কোরআন। যে রাতকে মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদর আখ্যা দিয়েছেন।

মোবারক এই রাতকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম করেছেন। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আমি একে নাজিল করেছি মহিমান্বিত রাতে (লাইলাতুল কদর)। আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রাত কী? মহিমান্বিত রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেই রাতে প্রতিটি কাজের জন্য ফেরেশতারা এবং রুহ তাদের প্রতিপালকের আদেশক্রমে অবতীর্ণ হয়।
সেই রাতে শান্তিই শান্তি, ফজর হওয়া পর্যন্ত।

(সুরা : কদর, আয়াত : ১-৫)

বিভিন্ন হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, উল্লিখিত আয়াতে মহিমান্বিত যে রাতের কথা বলা হয়েছে, তা এই শেষ দশকেই লুকিয়ে আছে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান করো। (বুখারি, হাদিস : ২০১৭)

আমাদের নবীজি (সা.) নিজেও শেষ দশকে ইবাদতের মাত্রা বাড়িয়ে দিতেন।

এ সময় তিনি যেভাবে ইবাদত করতেন, যা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি হতো। এমনকি ইবাদতের মাধ্যমে পূর্ণ সময় কাটানোর আশায় তিনি প্রতিবছর শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ইন্তেকাল পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন। এরপর তাঁর স্ত্রীরাও ইতিকাফ করেছেন। (বুখারি, হাদিস : ১৮৬৮; মুসলিম, হাদিস : ২০০৬)

শেষ দশকে অধিক ইবাদতের পাশাপাশি অধিক পরিমাণে দোয়াও করতে হবে।

কেননা নবীজি (সা.) রমজানের শেষ দশকে বেশি বেশি দোয়া করতেন। উম্মতকে শেষ দশকে বেশি বেশি দোয়া করার পরামর্শ দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, যদি আমি লাইলাতুল কদর জানতে পারি, তাহলে সে রাতে কী বলব? তিনি বলেন, তুমি বোলো, (উচ্চারণ) আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফাফু আন্নি। (অর্থ) হে আল্লাহ, আপনি সম্মানিত ক্ষমাকারী, আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৩)

এ ছাড়া যেহেতু এটি নাজাতের দশক, এই দশকে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত পাওয়ার জন্য আমরা বেশি বেশি তাওবা করতে পারি। কেননা এই মাস মহান আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফ করিয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার মাস। কোনো ব্যক্তি যদি রমজানে তার গুনাহ ক্ষমা করাতে ব্যর্থ হয়, তবে তার প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হুঁশিয়ারি আছে। তিনি বলেছেন, ওই ব্যক্তির নাক ধুলিধূসরিত হোক, যে রমজান পেল এবং তার গুনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৫)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

 

মন্তব্য
পর্ব : ২০

তারাবিতে কোরআনের বার্তা

সুরা কাসাস
সুরা কাসাস
শেয়ার
তারাবিতে কোরআনের বার্তা

এই সুরায় ফেরাউনের শক্তিমত্তা, ঔদ্ধত্য ও রাজত্ব সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। সে বনি ইসরাঈলে নারীদের দাসী বানিয়ে পুরুষদের হত্যা করত। সেই দিনগুলোতে মুসা (আ.)-এর জন্ম হয়। ফেরাউনের বাহিনীর ভয়ে মুসা (আ.)-এর মা তাঁকে সাগরে ভাসিয়ে দেন।

ফেরাউনের পরিবার এই বাচ্চাটি পেয়ে রাজপ্রাসাদে আদর-যত্নে লালন-পালন করতে থাকে। অতঃপর তিনি মিসর থেকে মাদায়ান চলে যান। সেখানে গিয়ে শোয়াইব (আ.)-এর মেয়েকে বিয়ে করেন। ১০ বছর তাঁর রাখাল হিসেবে জীবন পার করেছেন।
এই ঘোষণার মাধ্যমে সুরা শেষ করা হয়েছে যে জান্নাত তাদের জন্য, যারা দুনিয়ার জীবনে উদ্ধত হয় না এবং কোনো ফিতনা-ফ্যাসাদে লিপ্ত হয় না।

 

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. বিভক্তি জাতিসত্তা দুর্বল করে দেয় এবং অন্য জাতিকে কর্তৃত্ব স্থাপনের সুযোগ করে দেয়। (আয়াত : ৪)

২. আল্লাহ চাইলে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীকেও শাসকের মর্যাদা দেন। (আয়াত : ৫-৬)

৩. সন্তানের জন্য মায়ের ভালোবাসা আল্লাহ প্রদত্ত।

(আয়াত : ১০)

৪. সন্তানকে মা থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া নিন্দনীয়। (আয়াত : ১৩)

৫. বয়সের সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞানেও পরিপক্বতা আসে। (আয়াত : ১৪)

৬. অপরাধকারীকে সাহায্য করাও অপরাধ। (আয়াত : ১৭)

৭. চলাফেরার শালীনতা নারী জীবনের সৌন্দর্য। (আয়াত : ২৫)

৮. শ্রমিক হবে শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য।

(আয়াত : ২৬)

৯. যোগ্য লোকের সহযোগিতা গ্রহণ করো। (আয়াত : ৩৪)

১০. জয় ও পরাজয় আল্লাহ নির্ধারণ করেন। (আয়াত : ৩৫)

১১. মুমিন সত্য গ্রহণে দেরি করে না।

(আয়াত : ৫৩)

১২. ধৈর্যশীলদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ প্রতিদান। (আয়াত : ৫৪)

১৩. অর্থহীন কাজ পরিহার করো।

(আয়াত : ৫৫)

১৪. পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করো।

(আয়াত : ৭৭)

১৫. পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি কোরো না।

(আয়াত : ৭৭)

 

সুরা আনকাবুত

আলোচ্য সুরা আনকাবুতে যুগে যুগে কিভাবে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়, তার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। দুর্বল-সবল ও বিশ্বাসী-অবিশ্বাসীর দ্বন্দ্ব চিরন্তন। এই সুরায় ঈমানদারদের পার্থিব জীবনে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সবর ও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে বলা হয়েছে। কোরআনের অলৌকিকতা উল্লেখ করে মহানবী (সা.)-এর নবুয়ত সপ্রমাণ করা হয়েছে। নির্যাতিত ঈমানদারদের হিজরতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। হারাম শরিফকে নিরাপদ নগরী ঘোষণা করা হয়েছে। এবং সবশেষে এই চিরন্তন রীতি উল্লেখ করা হয়েছে যে যারাই পরিশ্রম করবে, অব্যাহত প্রচেষ্টা চালাবে, তারা সফলতা পাবে।

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. পরকালীন মুক্তির জন্য ঈমানের ঘোষণাই যথেষ্ট নয়। (আয়াত : ২)

২. পাপীদের বাড়বাড়ন্তে হতাশার কিছু নেই। কেননা পাপীরা আল্লাহর আয়ত্তের বাইরে নয়। (আয়াত : ৪)

৩. মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।

(আয়াত : ৮)

৪. দ্বিন পালনের কষ্টকে শাস্তি মনে কোরো না। (আয়াত : ১০)

৫. মুনাফিকের পরিচয় গোপন থাকে না। (আয়াত : ১১)

৬. আল্লাহভীতি মুমিনের জীবনে উত্তম পাথেয়। (আয়াত : ১৬)

৭. পৃথিবীতে ভ্রমণ কোরো। কেননা তা জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে। (আয়াত : ২০)

৮. সৃষ্টিজগতে আল্লাহর নির্দেশ অপরিহার্য। (আয়াত : ২২)

৯. আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। (আয়াত : ২৩)

১০. বিপর্যয়কারীদের ব্যাপারে আল্লাহর সাহায্য চাও। (আয়াত : ৩০)

১১. আল্লাহ ছাড়া সব শক্তিই ক্ষণস্থায়ী। (আয়াত : ৪১)

১২. নামাজ মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। (আয়াত : ৪৫)

১৩. আল্লাহর স্মরণ সবচেয়ে বড় এবং তা ইবাদতের প্রাণ। (আয়াত : ৪৫)

১৪. বিতর্কে শিষ্টাচার রক্ষা করো।

(আয়াত : ৪৬)

১৫. প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। (আয়াত : ৫৭)

১৬. জীবিক আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত।

(আয়াত : ৬২)      

গ্রন্থনা : মুফতি আতাউর রহমান

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ