মক্কা মোকাররমাকেন্দ্রিক কুরাইশ বংশের ইতিহাস মুসলমানদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এটি উম্মতে মুহাম্মদির কাছে বিশ্বের বুকে শ্রেষ্ঠ বংশ হিসেবে স্বীকৃত।
মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর বংশধররা কুরাইশ বংশের অন্তর্গত। এ বংশ থেকেই মহানবী (সা.)-এর আগমন ঘটেছে।
মক্কা মোকাররমাকেন্দ্রিক কুরাইশ বংশের ইতিহাস মুসলমানদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এটি উম্মতে মুহাম্মদির কাছে বিশ্বের বুকে শ্রেষ্ঠ বংশ হিসেবে স্বীকৃত।
মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর বংশধররা কুরাইশ বংশের অন্তর্গত। এ বংশ থেকেই মহানবী (সা.)-এর আগমন ঘটেছে।
মক্কা মোকাররমার কুরাইশ বংশের দিকে দৃষ্টি দিলে জানা যায়, আদম (আ.)-কে প্রথম পুরুষ হিসেবে গণ্য করে ইবরাহিম (আ.)-কে তাঁর বিংশতিতম অধস্তন পুরুষ হিসেবে দেখানো হয়।
ইবরাহিম (আ.)-এর দুই পুত্রের মধ্যে ইসমাইল (আ.)-এর বংশে জন্মগ্রহণ করেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
ইসমাইল (আ.)-এর অধস্তন, আদনান থেকে শুরু করে ফিহর বিন মালিক পর্যন্ত যে বংশধর, তাতে কোনো মতান্তর বা সন্দেহ নেই। বলা হয়ে থাকে, এ ফিহরই মক্কা মোকাররমায় কুরাইশ বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর ডাকনাম কুরাইশ থেকেই মক্কা মোকাররমায় বসবাসকারী ইসমাইল (আ.)-এর বংশধরদের ‘কুরাইশ’ নামে চিহ্নিত করা হয়। এ কুরাইশরা মক্কা মোকাররমায় কাবা শরিফের ধর্মীয় প্রতিনিধি হিসেবে খ্যাতি ও প্রসিদ্ধি লাভ করে।
বিশ্বখ্যাত মুসলিম গ্রন্থকার সুহাইল এবং ইতিহাসবিদ ইবনে জাবির তাবারিও উপরোক্ত সিদ্ধান্ত সমর্থন করেন। তাঁরা উভয়েই বলেছেন যে আদনান বিন উদদ বিন হামিশা থেকেই ইবরাহিম (আ.)-এর পার্থক্য ৪০ পুরুষের।
উল্লেখ্য যে প্রতি বংশের পার্থক্য গড়ে ৩০ বছর ধরলে আদম (আ.) থেকে মহানবী (সা.)-এর সময়ের পার্থক্য হয় দুই হাজার ৭০০ বছর। তার অর্থ এই যে দুই হাজার ৭০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে নবী পাক (সা.)-এর জন্ম ৫৭০ খ্রিস্টাব্দ বাদ দিলে খ্রিস্টাব্দপূর্ব ২১৩০ খ্রিস্টাব্দে আদম (আ.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু হিসাবে এটা সত্য নয়। কেননা পৃথিবীর প্রথম মানুষ ‘আদম’ শব্দের অর্থ মানুষ। প্রথম মানুষ জন্মগ্রহণ করেছিলেন বহু আগেই।
ইতিহাসে মতপার্থক্য থাকলেও কুরাইশ গোষ্ঠীগত বংশধরদের তালিকা সংগৃহীত ইবনে সাদ ‘তবকাত’ নামক গ্রন্থ থেকে। তিনি ছিলেন নবী করিম (সা.)-এর আরেক জীবনীকার আল ওয়াকিদির সেক্রেটারি। ইবনে সাদ ইন্তেকাল করেন ২৩০ হিজরির ৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে।
মক্কা মোকাররমায় কুরাইশ বংশের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা ছিল। কুরাইশ বংশের ১৫টি গোষ্ঠীর মধ্যে ৯টি গোষ্ঠী মক্কা মোকাররমায় কাবা শরিফকেন্দ্রিক মূর্তিপূজা নিয়ে ব্যবসা করত। এই স্বার্থপররা নতুন ধর্ম তথা ইসলামকে স্বীকার করতে চায়নি। নবী (সা.) নিজের ঘরে, তারপর তাঁর আত্মীয়-স্বজনদের ইসলামের কথা শোনালেন। সঙ্গে সঙ্গে তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে ঈমান আনলেন। এতে সর্বপ্রথম উম্মে খাতুন মোমেমিন খাদিজাতুল কুবরা, আলী (রা.) এবং সেবক ও পালিত পুত্র জায়েদ ইবনে হারিসা (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন। কিছু দিনের মধ্যেই নবী (সা.)-এর একান্ত আপন আবু বক্কর ছিদ্দিক (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর গোপনে গোপনে ইসলাম প্রচার চলতে থাকে। দাস ও দাসি শ্রেণির অবহেলিত মানুষেরা নতুন ধর্মকে মুক্তির আহ্বান বলে মেনে নেয়। তাঁদের মালিকদের অগোচরে এবং বিনা অনুমতিতেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। ইসলাম ধর্মে যেসব শ্রেণির মানুষের কল্যাণকেই কামনা করা হয়েছিল, তা তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন। অর্থাৎ ইসলামে মানুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হয়নি। তাই গরিব, অনারব ও ক্রীতদাস-দাসীরা ইসলাম ধর্মের মধ্যে খুঁঁজে পেয়েছিলেন সত্যিকার মুক্তি।
ইসলামের অবতরণের প্রায় চার বছর পর ৬১৩ খ্রিস্টাব্দে নবী (সা.) কুরাইশদের আহ্বান জানালেন সাফা পাহাড়ে ইসলামের বাণী শোনানোর জন্য। কিন্তু তাতে কোনো ফল হলো না। কুরাইশপ্রধানরা উত্তেজিত হয়ে উঠলেন বিরোধিতায়।
ফলে নবী করিম (সা.) ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবাদের ৬১৪ খ্রিস্টাব্দ আবিসিনিয়ায় (বর্তমান নাম ইথিওপিয়া) গমন করার নির্দেশ দেন। পরবর্তী সময় মক্কা মোকাররমার পৌত্তলিকরা অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠেন। তাঁরা একত্র হয়ে হাশেমিদের বয়কট করেন। বাধ্য হয়ে ৬১৬ খ্রিস্টাব্দে নবী (সা.) তাঁর সাহাবাদের নিয়ে তাঁর অপর এক সাহাবা সাফা পাহাড়ের মাখজুম গোষ্ঠীর সন্তান হজরত আল আরকাম বিন আবদ মানাফের ঘরে অবস্থান নেন। কিন্তু সেখানে ওই অবস্থায় ইসলাম প্রচারের কাজ থেমে থাকেনি। এতে গোপনে মানুষ ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে। অন্তরীণ থাকা অবস্থায় নবী (সা.)-কে ইসলাম গ্রহণ না করেও যে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি সহায়তা করেছিলেন, তারা ছিলেন উম্মে খাতুন মোমেনিন হজরতুল খাদিজার নিজের গোষ্ঠীর সন্তান এবং তাদের প্রচেষ্টায় হজরত ওমর (রা.) ও আবু বকর (রা.)-এর প্রচেষ্টায় ৬১৮ খ্রিস্টাব্দে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু মাত্র এক বছরের মাথায় উম্মে খাতুন মোমেনিন খাদিজাতুল কুবরা এবং তাঁর পাঁচ সপ্তাহ পর পিতৃব্য আবু তালেব ইন্তেকাল করেন। এতে অবিশ্বাসী কুরাইশরা সুযোগ মনে করে আবারও নানা রকম ষড়যন্ত্র করতে থাকে। ফলে নবী করিম (সা.) ৬১৯ খ্রিস্টাব্দে তায়েফ গমন করেন। কিন্তু সেখানেও প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হন।
এখানে উল্লেখ্য, কুরাইশ বংশের মধ্যে ১৫টি গোষ্ঠীর বর্ণনা পাওয়া যায়। তার মধ্যে নবী করিম (সা.)-এর হাশেমি গোষ্ঠীর আবু লাহাবকে নিয়ে মোট সাতটি গোষ্ঠীর নেতারা ইসলাম উত্খাত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। তাঁর প্রবল শত্রুর সংখ্যা বেশি ছিল মাখজুমি ও শামস গোষ্ঠীতে। আসলে কাবা শরিফকে কেন্দ্র করে কুরাইশদের আর্থিক স্বার্থ ছিল বলেই ইসলাম ধর্মে তাদের সর্বনাশ দেখতে পেয়েছিল। অন্যদিকে হাশেমি গোষ্ঠীর একজন এতিম নিরাশ্রয় ব্যক্তির কাছ থেকে তারা ধর্মের শিক্ষা নিতে আগ্রহী ছিল না। সে জন্য কুরাইশদের মধ্যে শত্রুপক্ষীয় প্রধান দুই গোষ্ঠী মাখজুমি ও আবদ শামস—যারা জনসংখ্যায়, ধনে ও সম্পত্তিতে ছিল তুঙ্গে, তারা নতুন ধর্ম গ্রহণ করতে অস্বীকার করে কঠোরভাবে। নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ও গুরুত্ব কোনো প্রকারে তারা নষ্ট করতে চায়নি। তাই তারাই সবচেয়ে ভয়ংকর শত্রু হয়ে ওঠে ইসলামের। পরবর্তী সময় হজকে কেন্দ্র করে মদিনা মুনাওয়ারার বাসিন্দাদের সঙ্গে সংযোগ হওয়ার সুযোগ হয় নবী পাক (সা.)-এর। এই সুযোগে আবিসিনিয়ায় হিজরতকারীদের পরে মক্কা মোকাররমায় মুসলমানদের নবী পাক (সা.) পর্যায়ক্রমে মদিনা মুনাওয়ারায় পাঠিয়ে দেন। অতঃপর আবু বক্কর ছিদ্দিক (রা.)-কে সঙ্গে নিয়ে ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন নবী (সা.) মক্কা মোকাররমা ত্যাগ করেন। মদিনা মুনাওয়ারায় অবস্থান করে বদর, ওহুদ, খন্দকসহ বড় বড় তিনটি চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ নবী পাক (সা.)-কে মোকাবেলা করতে হয়। এরপর হুদায়বিয়ার সন্ধির মাধ্যমে আরব উপদ্বীপে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়ে যায়। অষ্টম হিজরিতে বিনা যুদ্ধে অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবে মক্কা মোকাররমা বিজয় হয়। কাবা শরিফ পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। মদিনা মোনাওয়ারা জজিরাতুল আরব তথা আরব উপদ্বীপ ইসলামের রাজধানী হিসেবে পূর্ণাঙ্গতা লাভ করে। কুরাইশদের মধ্যে বেশির ভাগ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। কুরাইশদের মধ্যে যাঁরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেননি, তাঁরা হতাশায় ভুগতে ভুগতে দুনিয়া ত্যাগ করেন।
লেখক : গ্রন্থকার ও গবেষক
সম্পর্কিত খবর
আয়াতের অর্থ : ‘যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে মর্মন্তুদ শাস্তি এবং আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউই নিষ্কৃতি পেত না এবং আল্লাহ দয়ালু ও পরম দয়ালু। হে মুমিনরা! তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না। কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করলে শয়তান অশ্লীলতা ও মন্দ কাজের নির্দেশ দেয়।
(সুরা : নুর, আয়াত : ১৯-২১)
আয়াতগুলোতে অশ্লীলতা প্রসারের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।
শিক্ষা ও বিধান
১. অশ্লীলতা যৌনতায় সীমাবদ্ধতা নয়, যেকোনো অন্যায় ও অনৈতিক কাজই অশ্লীল এবং তা বর্জনীয়।
২. পাপ, পাপাচারের বিস্তার এবং পাপাচারবিষয়ক চর্চা—সবই নিন্দনীয়। বিনা প্রয়োজনে পাপের সংবাদ প্রচার করাও অনুচিত।
৩. আয়াতে মুমিনদের কথা বলা হয়েছে, তারা ঈমানের বিচারে শ্রেষ্ঠ বলে। নতুবা যেকোনো সমাজে পাপ ও অশ্লীলতার বিস্তার নিন্দনীয়।
৪. যারা সমাজে অন্যায়, পাপাচার ও অশ্লীলতা ছড়ায় তাদের জাগতিক শাস্তি শরয়ি হদ।
৫. পবিত্র জীবন আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ। তাই আল্লাহর কাছে পূতঃপবিত্র জীবনের প্রার্থনা করা আবশ্যক।
(তাফসিরে আবু সাউদ : ৬/১৬৩)
সুরা তাহা
এই সুরায় মানুষের ওপর কোরআনের প্রভাব সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে কোরআন তাদের জন্য উপদেশ, যারা আসমান ও জমিনের রবকে ভয় করে। এরপর আল্লাহর সঙ্গে মুসা (আ.)-এর কথোপকথন বিশদভাবে বিবৃত হয়েছে। তাঁর লাঠি ও সাদা হাতের মুজেজা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।
আদেশ-নিষেধ-হেদায়েত
১. কিয়ামতের দিন আল্লাহ ঐশী জ্ঞানের ধারকদের ক্ষমা করে দেবেন।
(আয়াত : ২-৩)
২. আল্লাহ ও তাঁর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তা কেমন, কিসের মতো ও কিসের সদৃশ জাতীয় প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়াই নিরাপদ।
(আয়াত : ৫)
৩. শালীনতা নবীদের বৈশিষ্ট্য। এ জন্য মুসা (আ.) লোকালয় থেকে দূরে গিয়ে ইস্তিঞ্জা করতেন।
(আয়াত : ১০)
৪. স্ত্রীর সুখ-স্বস্তির ব্যবস্থা করা স্বামীর দায়িত্ব। বিশেষত যখন সে গর্ভে সন্তান ধারণ করে।
(আয়াত : ১০)
৫. জুতায় নাপাকি থাকার ভয় থাকলে মসজিদে প্রবেশ ও নামাজের সময় তা খুলে রাখা ওয়াজিব।
(আয়াত : ১২)
৬. হাতে লাঠি রাখা নবী-রাসুলদের সুন্নত। মহানবী (সা.)-ও লাঠি ব্যবহার করতেন।
(আয়াত : ১৮)
৭. কোনো বিষয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির ভয় থাকলে বক্তার দায়িত্ব তা স্পষ্ট করা। (আয়াত : ২২)
৮. দ্বিনি কাজ সহজতার সঙ্গে করাই উত্তম।
(আয়াত : ২৬)
৯. সুযোগ থাকলে অধিকসংখ্যক মানুষকে দ্বিনি কাজে সঙ্গী করা উত্তম।
(আয়াত : ৩২)
১০. জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নবী-রাসুলদের পুরো জীবন আল্লাহর নিরাপত্তায় আবৃত থাকে।
(আয়াত : ৩৯)
১১. আল্লাহর জিকির ইবাদতের প্রাণ। তাই জিকিরে শিথিলতা নিন্দনীয়।
(আয়াত : ৪২)
১২. নাম লিপিবদ্ধ করার সময় মর্যাদায় অগ্রগামীদের নাম প্রথমে আনা উত্তম।
(আয়াত : ৪২)
১৩. সত্যের ধারক হয়েও বাতিলপন্থীদের কথা শোনা এবং আক্রমণ না করা নবীদের বৈশিষ্ট্য।
(আয়াত : ৫২-৫৩)
১৪. রাসুলুল্লাহ (সা.) লেখার মাধ্যমে জ্ঞান সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন।
(আয়াত : ৫২)
১৫. সমাবেশের জন্য এমন স্থান ও সময় নির্ধারণ করা উচিত যেন সহজে বেশি মানুষ সমবেত হতে পারে।
(আয়াত : ৫৯)
১৬. সম্মিলিত চিন্তা-ভাবনা ও প্রচেষ্টা লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক। (আয়াত : ৬০)
১৭. শত্রুর প্রতিও কল্যাণকামিতা নবী-রাসুলদের বৈশিষ্ট্য।
(আয়াত : ৬১)
১৮. জীবন-জীবিকার ভয় দেখিয়ে জনসাধারণকে নিয়ন্ত্রণ করা শাসকদের পুরাতন কৌশল।
(আয়াত : ৬৩)
১৯. জাদুবিদ্যা প্রকৃতপক্ষে মিথ্যা খেয়াল বা মনের বিভ্রম মাত্র। (আয়াত : ৬৬)
২০. খাঁটি ঈমানে পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ হয়।
(আয়াত : ৭৩)
২১. মানুষের দ্বিনি অধঃপতনে আলেমরা ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত হন।
(আয়াত : ৯৪)
২২. গুরুতর অপরাধের শাস্তি হিসেবে সামাজিকভাবে বয়কট করার অবকাশ আছে।
(আয়াত : ৯৭)
২৩. কোরআন শেখার শিষ্টাচার হলো তাড়াহুড়া না করে প্রথমে পূর্ণ মনোযোগসহ শোনা। অতঃপর তা আত্মস্থ করা। (আয়াত : ১১৪)
২৪. পৃথিবীতে মানুষের জীবিকা পরিশ্রম ও কষ্টের ভিত্তিতে অর্জিত হয়। (আয়াত : ১১৮)
২৫. যে কোরআন মুখস্থ করে তা ভুলে যায়, কিয়ামতের দিন সে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়ে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। (আয়াত : ১২৬)
গ্রন্থনা : মুফতি আতাউর রহমান
রমজান হলো রোজা, ইবাদত ও কোরআনচর্চার মাস। রমজান এমন একটি পবিত্র মাস, যখন মুসলমানরা খাদ্য ও পানীয় এবং শরিয়ত নির্ধারিত বিষয় থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আত্মিক পরিশুদ্ধি লাভ করে এবং আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হয়। রমজানে পাল্টে যায় মুসলিম জীবনের চিরায়ত ধারা। ঐতিহাসিক ইস্তাম্বুল নগরেও এই আধ্যাত্মিকতা, আল্লাহপ্রেম ও পরিবর্তিত জীবনধারা চোখে পড়ে।
যারা ইস্তাম্বুলে রমজান উপভোগ করার সুযোগ পায় তারা প্রায়ই গণ-ইফতারের বড় বড় আয়োজন করে, রমজানের রাতে নাগরিক জীবনের কোলাহল এবং শহরের আলোকিত মসজিদগুলো তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এর বাইরে ইস্তাম্বুলের একটি লুকানো ঐতিহ্য রয়েছে, যা শুধু তারাই দেখতে পায় যারা গভীরভাবে অনুসন্ধান করে।
ধর্মীয় বিধি-বিধানের বাইরে রমজানের যে একটি সামাজিক দিকও রয়েছে ইস্তাম্বুলে গেলে আপনি তা যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন। বিশেষ করে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের ভিড়ে জনসমাগম স্থান, পার্ক ও মসজিদের প্রাঙ্গণ পূর্ণ হয়ে যায়। শহরের কিছু বিখ্যাত স্থাপত্য যেমন—আইয়ুপ সুলতান মসজিদ, সুলাইমানিয়া মসজিদ ও ব্লু মসজিদে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়। অনেকেই শহরের সরবরাহকৃত গণ-ইফতারে যোগদান করে।
এশার নামাজের সময় ঘনিয়ে আসতেই মসজিদে মুসল্লির ভিড় বাড়তে থাকে।
তারাবি শেষ হওয়ার পরে দোকান, রেস্তোরাঁ ও ক্যাফেগুলো খাবার ও মিষ্টি সরবরাহ করে। প্রায় সারা রাত ইস্তাম্বুলের হোটেল ও ক্যাফেগুলো খোলা থাকে। ইস্তাম্বুলের কোনো এলাকায় একদল লোক ঢোল পিটিয়ে মানুষকে সাহরির জন্য ডেকে দেয়। তারা সুরে সুলে ঢোল পিটিয়ে মানুষ জাগিয়ে দেয়। এটা মূলত একটি উসমানীয় রীতি।
ইস্তাম্বুলের একটি অনন্য রমজান ঐতিহ্য মহানবী (সা.)-এর স্মৃতি ও ভালোবাসার সঙ্গে জড়িত। এই শহরে মাসজুড়ে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র চুল প্রদর্শন করা হয়, যা জনসাধারণের জন্য প্রিয় নবী (সা.)-এর ভালোবাসা ও বরকত লাভের একটি বিরল সুযোগ। ঐতিহাসিক এই নিদর্শন খ্রিস্টীয় ১৬ শতকে বাগদাদ থেকে ইস্তাম্বুলে স্থানান্তরিত হয়। প্রথমে এটি সুলতানদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ধনভাণ্ডারের অংশ ছিল। পরবর্তী সময়ে তা জাদুঘরে স্থানান্তরিত হয়। অধিকসংখ্যক লোককে পবিত্র চুল স্পর্শ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য নিদর্শনগুলো এক মসজিদ থেকে অন্য মসজিদে স্থানান্তরিত হয়।
নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সঙ্গে যুক্ত আরেকটি ঐতিহ্য হলো তাঁর খিরকা বা আলখাল্লা দেখা। বিখ্যাত মুসলিম মনীষী উয়াইস আল কারনির (রহ.) বংশধররা যখন জনসাধারণের জন্য এই ধন উন্মুক্ত করেন, তখন থেকে এটি মাসজুড়ে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়।
তুরস্ক এখনো একটি ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র। তাই দিনের বেলায় রেস্তোরাঁ ও ক্যাফে খোলা থাকে। বিশেষ করে ইস্তাম্বুলে আসা অমুসলিম পর্যটকদের বিবেচনা করেই তা করা হয়। তবে যারা রমজানে ইস্তাম্বুলের প্রকৃত ও অন্তর আত্মাকে দেখতে চায় তাদের জন্য উত্তম হলো রাতের ইস্তাম্বুলকে প্রত্যক্ষ করা।
সিক্রেট ফুটস্টেপস অবলম্বনে
সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যতম নান্দনিক স্থাপনা আবুধাবির শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ। প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক মসজিদটি দেখতে যায়। পবিত্র রমজান মাসজুড়ে মসজিদ প্রাঙ্গণে থাকে মুসল্লির উপচে পড়া ভিড়। প্রতিদিন হাজার হাজার মুসল্লির ইফতারের ব্যবস্থা থাকে এখানে।
শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ সেন্টারের তত্ত্বাবধানে ‘আওয়ার ফাস্টিং ইনিশিয়েটিভ’-এর আওতায় রমজান মাসজুড়ে ২১ লাখ প্যাকেটের বেশি ইফতারি বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে মসজিদ প্রাঙ্গণে সাড়ে ছয় লাখ এবং আবুধাবির বিভিন্ন স্থানে সাড়ে ১০ লাখ প্যাকেট ইফতারি বিতরণ করা হয়। তা ছাড়া রমজানের শেষ ১০ রাতে ৩০ হাজার জনকে সাহরি বিতরণ করা হয়।
গ্র্যান্ড মসজিদ আয়োজিত সুবিশাল ইফতার আয়োজনে অংশ নেন মিসরীয় নাগরিক মোহাম্মদ আবদুল হামিদ।
শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ সেন্টার জানিয়েছে, ২০২৪ সালে মসজিদটিতে ৬৫ লাখ ৮২ হাজার ৯৯৩ জন মুসল্লি ও পর্যটকের আগমন ঘটেছে।
১৯৯৬ সালে মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ২০০৭ সালে ঈদুল আজহায় মসজিদটি উন্মুক্ত করা হয়। প্রায় ৫৪৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে তৈরি মসজিদটির আয়তন পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার বর্গমিটার। এখানে একসঙ্গে ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ নামাজ পড়তে পারে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের নামানুসারে মসজিদটির নাম রাখা হয়েছে। তিনিই এই মসজিদ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। এই মসজিদ নির্মাণের স্থাপত্যবিষয়ক নির্দেশনা তাঁরই ছিল। ২০০৪ সালে তিনি মারা গেলে মসজিদ চত্বরে তাঁকে কবর দেওয়া হয়।
তথ্যসূত্র : গালফ নিউজ