<p>এক সপ্তাহ পর আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিছু দেশ বেশ উৎকণ্ঠা নিয়েই ২০ জানুয়ারির অপেক্ষায়। জার্মানি, ব্রিটেন, নরওয়ে অবশ্য তার আগে থেকেই উদ্বিগ্ন ট্রাম্পের এক ঘনিষ্ঠ মিত্রকে নিয়ে। ট্রাম্পের কোন মিত্রের কথা বলা হচ্ছে, তা হয়তো অনেকেই বুঝতে পেরেছেন। হ্যাঁ, ইলন মাস্ক।</p> <p>ডেয়ার শপিগেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রবার্ট হাবেক বলেছেন, ‘মাস্ক, আমাদের গণতন্ত্র থেকে আপনার হাত সরিয়ে রাখুন।’ জার্মানির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অনধিকার চর্চা করায় ইলন মাস্কের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে এমন মন্তব্য করেছেন তিনি। জার্মান ভাইস চ্যান্সেলর ও অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী হাবেকের এ মন্তব্য অবশ্য টেসলার প্রতিষ্ঠাতা মাস্ককে নিবৃত্ত করতে পারেনি।</p> <p>ফেব্রুয়ারিতে জার্মানিতে আগাম সংসদ নির্বাচন। তার আগে উগ্র ডানপন্থী দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) প্রতি মাস্কের সমর্থন প্রকাশ জার্মানির চ্যান্সেলর ও সামাজিক গণতন্ত্রী (এসপিডি) দলের প্রধান ওলাফ শোলজকেও অস্বস্তিতে ফেলেছে। তবে নির্বাচনের আগে ধনকুবের মাস্কের জার্মান রাজনীতিতে নাক গলানোর বিষয়টিকে কার্যত বেশি আমলে নেননি শোলজ। জার্মানির ম্যাগাজিন স্টার্নকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘এ তো নতন কিছু নয়। ধনী মিডিয়া উদ্যোক্তারা সামাজিক গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রশংসা কখনোই করে না এবং তাদের এমন মতামত প্রকাশ কখনো থামায়ও না।’</p> <p>তবে শোলজ মনে করেন, এএফডির মতো দলের প্রতি মাস্কের সমর্থন ব্যক্ত করার বিষয়টি খুব উদ্বেগজনক। স্টার্নকে তিনি বলেন, ‘মাস্ক যে এএফডির মতো দলকে সমর্থন করছেন, এটা আমার কাছে খুবই উদ্বেগজনক মনে হয়। আসলে এএফডি তো সেই চরম ডানপন্থী দল, যারা পুতিনের রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্কের কথা বলে এবং ট্রান্স আটলান্টিক সম্পর্ক দুর্বল করতে চায়।’</p> <p><strong>ব্রিটেনে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ইলন মাস্ক</strong><br /> সাউথ আফ্রিকান প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা মাস্ক এখন ব্রিটেনের রাজনীতিতেও আলোচিত-সমালোচিত নাম। সেখানে তিনি নজর কাড়েন গত বছরের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে। ব্রিটেনেও তিনি নিজের পছন্দের দল ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেছে নিয়েছেন। না, লেবার পার্টি বা কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষে যাননি তিনি। বরং দল দুটির বিকল্প খুঁজে নিতেই ব্রিটেনের ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। সেখানে তার সমর্থন ছিল রিফর্ম ইউকে পার্টির পক্ষে।</p> <p>বলা বাহুল্য, ব্রিটেনকে নতুন করে গড়ে তোলার লক্ষ্যের কথা বলা রিফর্ম ইউকেও ডানপন্থী ভাবাদর্শের। মাস্ক শুধু দলটিকে সমর্থন জানাননি, গত মাসে দলের নেতা নাইজেল ফারাজের সঙ্গে হাসিমুখে ছবিও তুলেছেন। ব্রিটেনের রাজনীতিতে ফারাজের বৃহস্পতি তখন তুঙ্গে। জুলাইয়ের নির্বাচনে ব্রিটেনের ভোটের ১৪ শতাংশ, অর্থাৎ ৪১ লাখ ভোট পেয়ে পাঁচটি আসনও জিতেছে তার দল। ওই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ইলন মাস্ককেও পেয়েছেন পাশে। তাই ব্রেক্সিট আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ফারাজ খুশি তো হবেনই। তবে সেই খুশি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।</p> <p>সবাইকে অবাক করে দিয়ে রবিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে মাস্ক লিখেছেন, ‘রিফর্ম পার্টির নতুন একজন নেতা দরকার। (এমন পদে থাকার জন্য) যা দরকার, ফারাজের তা নেই।’</p> <p>তার এমন মন্তব্য ফারাজকে খুব বিস্মিত ও বিব্রত করেছে। কারণ সম্প্রতি ফারাজ জানিয়েছিলেন, লেবার ও কনজারভেটিভ পার্টির মতো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লড়তে রিফর্ম ইউকেকে আর্থিক অনুদান দেবেন মাস্ক। আরো জানিয়েছিলেন, এ বিষয়ে মাস্কের সঙ্গে তার আলোচনা চলছে।</p> <p>হঠাৎ কী এমন হলো যে ফারাজের দিক থেকে কার্যত মুখ ফিরিয়ে নিলেন মাস্ক? এ প্রশ্নের উত্তর ফারাজেরও অজানা। তাই নিজের বিষয়ে মাস্কের অবস্থান বদল নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি রিফর্ম ইউকের নেতা। তবে মাস্ক যে সম্প্রতি অভিবাসীবিরোধী ও মুসলিমবিরোধী অ্যাক্টিভিস্ট স্টিফেন ইয়াক্সলি-লেননকে (ছদ্মনাম টমি রবিনসন) সমর্থন জানিয়েছেন, সেই বিষয়ে বলেছেন, ‘আমি খুব বিস্মিত! ইলন ব্যক্তি হিসেবে চমৎকার। তবে এ বিষয়ে আমি তার সঙ্গে পুরোপুরি দ্বিমত পোষণ করছি। আগের মতো আমি এখনো মনে করি, টমি রবিনসন রিফর্মের (পার্টি) জন্য সঠিক ব্যক্তি নন।’</p> <p><strong>নরওয়েতেও মাস্ক!</strong><br /> ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিশ্বের অনেক দেশেই চলছে ২০ জানুয়ারির অপেক্ষা। সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো শপথ নেবেন ট্রাম্প। দ্বিতীয় দফায় তার সরকারের পররাষ্ট্রনীতি, বৈদেশিক বাণিজ্যনীতি, আঞ্চলিক সম্পর্ক, আন্ত জোট সম্পর্ক ইত্যাদি কেমন হয় তা নিয়ে কৌতূহল ও উৎকণ্ঠার শেষ নেই। তবে ট্রাম্পের মিত্র হিসেবে পরিচিত ইলন মাস্ক তার আগেই দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছেন জার্মানি, ব্রিটেনসহ বেশ কিছু দেশকে। এবার নরওয়ের নামও যোগ হয়েছে সেই তালিকায়।</p> <p>মাস্ক নরওয়ের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ বা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন জানিয়ে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইয়োনাস গার স্তোরে। নরওয়ের জাতীয় সংবাদমাধ্যম এনআরকেকে তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে ব্যাপকভাবে যুক্ত ও অর্থনৈতিক সম্পদে এতটা সমৃদ্ধ একজন মানুষের অন্য দেশের রাজনীতিতে এভাবে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়টিকে খুব উদ্বেগজনক মনে করি। গণতন্ত্রে ও মিত্রদের মাঝে এমন হওয়া উচিত নয়।’</p> <p>কিন্তু মাস্ক এমন কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেলে কী করা যাবে? কিভাবে দেশের রাজনীতেকে তার প্রভাবমুক্ত রাখা যাবে? নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, শুধু একটা উপায়েই তা সম্ভব। আর তা হলো প্রত্যেক দেশের রাজনীতিবিদদের সম্মিলিতভাবে ইলন মাস্কের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানো।</p>