রাশিয়ার বুকে ইসলামের আলো

আতাউর রহমান খসরু
আতাউর রহমান খসরু
শেয়ার
রাশিয়ার বুকে ইসলামের আলো

মহানবী (সা.)-এর ইন্তেকালের মাত্র ২২ বছর পর রাশিয়ার মাটিতে ইসলামের আলো পৌঁছে যায়। বর্তমান রাশিয়ার দাগিস্তান অঞ্চল সর্বপ্রথম মুসলিম শাসনাধীন হয়। এরপর ইতিহাসের নানা পর্যায়ে উমাইয়া, আব্বাসীয়, উসমানীয় ও সেলজুক শাসকরা বর্তমান রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল বিজয় করেন। ১৫৭১ খ্রিস্টাব্দে ক্রিমিয়ান ও তুর্কি বাহিনী রাশিয়ার রাজধানী মস্কো পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

কিন্তু খেলাফত তথা কেন্দ্রীয় মুসলিম শাসনব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যাওয়ার পর রুশ অঞ্চলে একাধিক স্বাধীন মুসলিম রাজ্য গড়ে ওঠে। আঠারো শতকের শুরু থেকে রুশ সাম্রাজ্য প্রতিবেশী এসব রাজ্য দখল করে নেয়।

পিউ রিসার্চের মতে, বর্তমানে রাশিয়ার মোট জনসংখ্যার ১১.৪ শতাংশ মুসলিম। ২০১৭ সালের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাশিয়ায় মুসলিমদের সংখ্যা ১০ লাখ ২২ হাজার।

তবে রুশ মুসলিমরা মনে করে, রাশিয়ায় মুসলমানের প্রকৃত সংখ্যা ২৫ লাখেরও বেশি। দীর্ঘ রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের পরও বর্তমানে রাশিয়ার সাতটি অঞ্চলে মুসলিমরা তাদের সংখ্যাধিক্য ধরে রেখেছে। যার বেশির ভাগ রুশ ফেডারেশনের অধীন স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র। নিম্নে সে অঞ্চলগুলোর পরিচিতি তুলে ধরা হলো—

 

১. ইঙ্গোশেটিয়া : ইঙ্গোশেটিয়ার প্রাতিষ্ঠানিক নাম ‘ইঙ্গোশেটিয়া প্রজাতন্ত্র’।

এটি রাশিয়ার একটি স্বায়ত্তশাসিত কেন্দ্রীয় প্রাশাসনিক অঞ্চল। তিন হাজার ছয় শ ২৮ বর্গ কিলোমিটারের ছোট্ট ইঙ্গোশেটিয়ার ৯৬ শতাংশ অধিবাসী মুসলিম। মাগাস তার রাজধানী। ইঙ্গোশ মুসলিম শাফেয়ি মাজহাব ও সুন্নি মতবাদের অনুসারী। বেশির ভাগ মানুষ ইঙ্গোশ ভাষা ব্যবহার করে।
উনিশ শতকে এটি রুশ সাম্রাজ্যের অধীন হয়। ১৯৩৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ইঙ্গোশেটিয়াকে চেচনিয়ার সঙ্গে যুক্ত করে ‘দ্য চেচেন-ইঙ্গোশ অটোনমাস রিপাবলিক’ ঘোষণা করে। ১৯৯১ সালে চেচনিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করলে ইঙ্গোশেটিয়া নব গঠিত রুশ ফেডারেশনে যোগদান করে। প্রচুর খনিজ সম্পদের অধিকারী হলেও এটি অন্যতম দারিদ্র্য অঞ্চল। বর্তমানে ইঙ্গোশেটিয়া চার শর বেশি মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

 

২. চেচনিয়া : চেচনিয়া প্রজাতন্ত্রও রাশিয়ার একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। চেচনিয়ার ৯৫ শতাংশ নাগরিক মুসলিম। ১৭ হাজার তিন শ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের চেচনিয়ার রাজধানী শহর গ্রোজনি। ধারণা করা হয়, ৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে চেচনিয়ায় ইসলামের আগমন হয়। তবে ইসলামী শাসন স্থিতিশীল হয় ৭৩০ খ্রিস্টাব্দের পর। ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে চেচনিয়ায় রুশ আগ্রাসন শুরু হয়। এরপর তিন শতাব্দীকালেও শেষ হয়নি চেচেন মুসলিমদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। নিকট-অতীতেও চেচনিয়া দুটি ভয়াবহ যুদ্ধের মুখোমুখি হয়। ১৯৯৪-৯৬ প্রথম রুশ-চেচেন যুদ্ধ এবং ১৯৯৯-২০০০ দ্বিতীয় রুশ-চেচেন যুদ্ধ। ২০০১ সালে রাশিয়া ও চেচনিয়ার মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং ২০০৩ সালে  রাশিয়া চেচনিয়ার জন্য নতুন সংবিধান রচনা হলে চেচেনিয়ায় শান্তি ফিরতে শুরু করে।

 

৩. দাগিস্তান : ২০ হিজরিতে ওমর (রা.)-এর শাসনামলে সাসানিদের পরাজিত দাগিস্তানের ‘বাবুল আবওয়াব’ শহর জয় করেন সাহাবি সুরাকা ইবনে আমর (রা.)। এরপর থেকে দাগিস্তান ওই অঞ্চলে ইসলামের দুর্গ হিসেবেই ভূমিকা পালন করে আসছে। ‘দাগিস্তান প্রজাতন্ত্রে’ জন্মগ্রহণ করেন কিংবদন্তি স্বাধীনতাসংগ্রামী ইমাম শামিল। রুশ বিপ্লবের পর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে দাগিস্তানকে সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত করা হয় এবং রুশ ফেডারেশন গঠিত হওয়ার পর স্বায়ত্তশাসন অক্ষুণ্ন রাখা হয়। তবে স্থানীয় মুসলিমরা কখনোই রুশ আগ্রাসন মেনে নেয়নি। ১৯৯৯ সালে দাগিস্তান স্বাধীনতা ঘোষণা করে। দাগিস্তানের আয়তন ৫০ হাজার তিন শ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যার ৮২.৬০ শতাংশ মুসলিম। রাজধানী শহর মাকাসকালা। রুশ বিপ্লবের আগে দাগিস্তানে এক হাজার ৭০০ মসজিদ ও ৭৬৬ মাদরাসা ছিল, যা পরিচালনা করতেন আড়াই হাজার আলেম ও কাজি। সোভিয়েত সরকার তা বন্ধ করে দেয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর দাগিস্তানে মুসলিম জাগরণ হয়। সেপ্টেম্বর ২০০৩-এর পরিসংখ্যান অনুসারে বর্তমানে দাগিস্তানে ৫৫৭টি সাধারণ মসজিদ, ১০৯১টি নামাজ কক্ষ, ১৬টি ইসলামী কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, ১৪১টি মাদরাসা এবং ৩২৪টি মসজিদভিত্তিক মক্তব রয়েছে।

 

৪. কারচে-চের্কেসিয়া : হিজরি দ্বিতীয় শতকে মুসলিমরা আর্মেনিয়া জয় করার পর ওই অঞ্চল মুসলিম শাসনাধীন হয়। খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতক থেকে চের্কেসিয়ায় রুশ আগ্রাসন শুরু হয়। কারচে-চের্কেসিয়ার আয়তন ১৪ হাজার ২৭৭ বর্গ কিলোমিটার। চের্কেসিয়ার জনসংখ্যার ৬৪.২ শতাংশ মুসলিম। ১৯২২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত হয় এবং ১৯২৮ সালে স্বায়ত্তশাসন লাভ করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার চের্কেস নেতারা রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত হয়।

 

৫. বাশকোরতুস্তান : রুশ সংবিধান অনুযায়ী এটি রুশ ফেডারেশনের অধীন একটি সার্বভৌমত্বহীন স্বাধীন রাষ্ট্র। আয়তন এক লাখ ৪৩ হাজার ৬০০ বর্গ কিলোমিটার। রাজধানী উফা। এটি রাশিয়ার সবচেয়ে জনবহুল ও খনিজসমৃদ্ধ এলাকা। বাশকোরতুস্তানকে সংক্ষেপে বাশখিরও বলা হয়। বাশখিরের জনসংখ্যার ৫৮.৬২ শতাংশ মুসলিম। ধারণা করা হয়, খ্রিস্টীয় দশম শতকে এখানে ইসলামের আগমন হয় এবং মোগল মুসলিমদের মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা পায়। তবে ষষ্ঠদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে রুশ আগ্রাসনে তারা স্বাধীনতা হারায়। বাশখির সোভিয়েত রাশিয়ার প্রথম গঠিত প্রজাতন্ত্র। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ১১ অক্টোবর ১৯৯০ স্বাধীনতা ঘোষণা করে। তবে রহস্যজনক কারণে তা প্রত্যাহার করে বাশখির নেতারা রুশ ফেডারেশনে যোগদান করে।

 

৬. কাবার্ডিনো-বালকারিয়া : কাবার্ডিনো-বালকারিয়া অঞ্চলে ইসলামের আগমন ঘটে খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে। মুসলিমরা খাজার রাজ্য জয় করার পর সেখানে ইসলামের অগ্রযাত্রা শুরু হয় এবং তা অব্যাহত থাকে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত, যখন রুশ সাম্রাজ্যের কাছে অত্র অঞ্চল স্বাধীনতা হারায়। কাবার্ডিনো-বালকারিয়ার মোট আয়তন ১২ হাজার ৫০০ বর্গ কিলোমিটার। রাজধানী শহর নলচিক। ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট এলব্রাস এখানে অবস্থিত। কাবার্ডিনো-বালকারিয়ার জনসংখ্যার ৫৫.৪ শতাংশ মুসলিম।

 

৭. তাতারস্তান : রাশিয়ার একটি স্বায়ত্তশাসিত কেন্দ্রীয় অঞ্চল। খ্রিস্টীয় দশম শতকে এখানে ইসলামের বিস্তার ঘটে এবং দ্বাদশ শতকে ব্যাপক প্রসার লাভ করে। ১৪৩৮ খ্রিস্টাব্দে চেঙ্গিস খানের একজন বংশধর কাজানকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে, যা ১৫৫২ খ্রিস্টাব্দে রুশ সাম্রাজ্যের কাছে স্বাধীনতা হারায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পরও তাতার মুসলিমরা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ১৯৯৪ সালে তাতার জনগণ গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু তাতার নেতারা ১৯৯৪ সালে সম্পাদিত এক চুক্তির অধীনে রুশ ফেডারেশনে যোগদান করে। তাতারস্তানের আয়তন ৬৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার। রাজধানী শহর কাজান। জনসংখ্যার ৫৩.৮ শতাংশ মুসলিম।

 

তথ্যসূত্র : আল জাজিরা

আল মিসবার, আল মাআরিফা

বিবিসি, রোর বাংলা ও উইকিপিডিয়া

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কোরআন থেকে শিক্ষা

    পর্ব : ৭২৯
শেয়ার
কোরআন থেকে শিক্ষা

আয়াতের অর্থ : তোমাদের মধ্যে যারা আইয়িম (জীবনসঙ্গীহীন) তাদের বিয়ে সম্পাদন কোরো এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও। তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। যাদের বিয়ের সামর্থ্য নেই, আল্লাহ তাদের নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে এবং তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদের মধ্যে কেউ তার মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি চাইলে তাদের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হও... (সুরা : নুর, আয়াত : ৩২-৩৩)

আয়াতদ্বয়ে বিয়েতে অভিভাবকের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

 

শিক্ষা ও বিধান

১. হানাফি মাজহাব অনুসারে সাবালক নারী ও পুরুষ নিজে নিজে বিয়ে করলে তা বৈধ। যদিও তা অপছন্দনীয়।

২. ইসলামের শিক্ষা হলো নারী ও পুরুষ উভয়ে অভিভাবকের মাধ্যমে বিয়ে করবে। সাবালক ব্যক্তিও যদি অভিভাবক ছাড়া বিয়ে করে, তবে তাকে তিরস্কার করা হবে।

৩. বিয়ের সব ধরনের সক্ষমতা আছে এমন ব্যক্তি যদি বিয়ে না করলে গুনাহে লিপ্ত হওয়ার ভয় করে, তবে তার জন্য বিয়ে করা ওয়াজিব।

৪.  বিয়ের চাহিদা অনুভব করে অথচ তার আর্থিক সামর্থ্য নেই এমন ব্যক্তি রোজা রাখবে।

৫. আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, অধীন ব্যক্তিদের বিয়ের উদ্যোগ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা অভিভাবকদের দ্বিনি দায়িত্ব। (মাআরেফুল কোরআন : ৬/৪০২)

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

তারাবিতে কোরআনের বার্তা

    পর্ব : ২২
শেয়ার
তারাবিতে কোরআনের বার্তা

সুরা : আহজাব

এই সুরায় সামাজিক জীবনের বিভিন্ন শিষ্টাচার, আহজাব যুদ্ধ ও বনি কুরাইজা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। শুরুর দিকে দত্তক নেওয়া শিশুর বিধান সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। মহানবী (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের বিশেষ মর্যাদার কথা তুলে ধরা হয়েছে। পর্দার বিধান বর্ণনা করা হয়েছে।

জাহেলি যুগের মতো উদ্দাম চলাফেলা করতে নিষেধ করা হয়েছে। তালাকপ্রাপ্তা নারীর ইদ্দত পালনের বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। নবীপরিবারের মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। ভালো কাজে তাঁদের প্রতিদান দ্বিগুণ আর মন্দ কাজে শাস্তিও দ্বিগুণ দেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে।

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. ওহির অনুসরণ করো। (আয়াত : ২)

২. মুমিনের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। (আ. : ৩)

৩. মানুষকে পিতৃপরিচয়ে ডাকো। (আ. : ৫)

৪. পৃষ্ঠপ্রদর্শন কোরো না।

(আয়াত : ১৫)

৫. রাসুল (সা.)-এর জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ। (আয়াত : ২১)

৬. রাসুল (সা.)-এর আনুগত্যে দ্বিগুণ পুরস্কার। (আয়াত : ৩১)

৭. পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ভাষায় কথ বোলো না। (আয়াত : ৩২)

৮. তোমরা ঘরে অবস্থান কোরো। (আ. : ৩৩)

৯. মুহাম্মদ (সা.) শেষ নবী।

(আয়াত : ৪০)

১০. সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর জিকির কোরো। (আয়াত : ৪১-৪২)

১১. আমন্ত্রণকারীর অনুমতি ছাড়া ঘরে প্রবেশ কোরো না। (আয়াত : ৫৩)

১২. নারীদের কাছে চাইতে হবে আড়াল থেকে। (আয়াত : ৫৩)

১৩. রাসুল (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ কোরো। (আয়াত : ৫৬)

১৪. মানুষকে কষ্ট দিয়ো না। গুজব রটিয়ো না। (আয়াত : ৫৮ ও ৬০)

১৫. সদা সত্য কথা বলো। (আয়াত : ৭০)

সুরা : সাবা

মহান আল্লাহর হামদ পাঠের মাধ্যমে এই সুরা শুরু করা হয়েছে। এরপর এ কথার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে যে কিয়ামত অবশ্যই কায়েম হবে। তারপর দাউদ ও সুলায়মান (আ.)-এর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। পাখি ও পাহাড় দাউদ (আ.)-এর সঙ্গে মহান আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করত। আর বাতাস সুলায়মান (আ.)-এর অধীন ছিল। এরপর ইয়েমেনের সাবা নগরীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মুশরিকদের ঈমানের দাওয়াত দিয়ে সুরাটি শেষ করা হয়েছে।

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. আল্লাহর আয়াত মিথ্যা প্রমাণের চেষ্টা কোরো না। (আয়াত : ৫)

২. জ্ঞানীরা কোরআনের সত্যতা নিয়ে সংশয় রাখে না। (আয়াত : ৬)

৩. প্রাকৃতিক দুর্যোগ আল্লাহর অবাধ্যতার ফল। (আয়াত : ১৬)

৪. কারো পাপের দায় কেউ বহন করবে না। (আয়াত : ২৫)

৫. মহানবী (সা.) মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা। (আয়াত : ২৮)

৬. মানুষের জীবনকাল নির্ধারিত। (আয়াত : ৩০)

৭. বিত্তশালীরাই দ্বিন থেকে বেশি বিমুখ। (আয়াত : ৩৪)

৮. আল্লাহ সত্যের দ্বারা অসত্যের বিলোপ ঘটান। (আয়াত : ৪৮)

সুরা : ফাতির

এই সুরায় সৃষ্টিজগতের বিভিন্ন বস্তু উল্লেখ করে আল্লাহর একত্ববাদের প্রমাণ দেওয়া হয়েছে। ওহি নিয়ে ফেরেশতাদের আগমন বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের অন্ধ ও চক্ষুষ্মানের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। বৃষ্টি, ফল-ফসল, কয়েক স্তরে মানবসৃষ্টি, নোনা পানি থেকে সাগরের মিঠা পানি পৃথক করা, রাত-দিনের একের পর এক আগমন, চন্দ্র-সূর্যের নির্দিষ্ট নিয়মের অধীন হওয়া, হরেক রকম বৃক্ষ ও প্রাণী ইত্যাদি বর্ণনা করে আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ দেওয়া হয়েছে। এই সুরায় মহানবী (সা.)-কে বাশির ও নাজির তথা সুসংবাদদানকারী ও সতর্ককারী ঘোষণা করা হয়েছে। মূর্তিপূজার অসারতা বর্ণনা করে সুরা শেষ করা হয়েছে।

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. আল্লাহর অনুগ্রহ স্বীকার কোরো। (আয়াত : ৩)

২. সন্তান আল্লাহর অনুগ্রহ। (আয়াত : ১১)

৩. সমুদ্রে আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান কোরো। (আয়াত : ১২)

৪. আলো আর আঁধার কখনো সমান নয়। (আয়াত : ১৯-২১)

৫. জ্ঞানীরাই আল্লাহকে বেশি ভয় করে। (আয়াত : ২৮)

৬. দান করলে সম্পদ বৃদ্ধি পায়। (আয়াত : ৩০)

৭. কুফরি আল্লাহর ক্রোধ বৃদ্ধি করে। (আয়াত : ৩৯)

৮. আল্লাহ পাপীদের অবকাশ দেন, তবে তা নির্ধারিত কালের জন্য। (আয়াত : ৪৫)

গ্রন্থনা : মুফতি আতাউর রহমান

মন্তব্য

রোজাদারের মানসিক প্রশান্তি

আলেমা হাবিবা আক্তার
আলেমা হাবিবা আক্তার
শেয়ার
রোজাদারের মানসিক প্রশান্তি

যেকোনো ইবাদত মুমিনের হৃদয়ে প্রশান্তি বয়ে আনে। তবে রোজা রেখে মুমিন অন্য সব ইবাদতের তুলনায় অধিক প্রশান্তি খুঁজে পায়। কেননা রোজাদারের জন্য আল্লাহ যে পুরস্কার ঘোষণা করেছেন তা যেমন প্রেমময়, তেমনি অতি সম্মানের। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্যইরোজা ছাড়া।

তা আমার জন্য, আমি নিজেই তার পুরস্কার দেব। আর রোজাদারদের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের ঘ্রাণের চেয়ে বেশি সুগন্ধযুক্ত। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯২৭)

রোজাকে আল্লাহ নিজের দিকে সম্বোধন করে বলেছেন, রোজা আমার জন্য। যা একজন আল্লাহপ্রেমী মুমিনের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

মুহাদ্দিসরা বলেন, রোজা রিয়া বা প্রদর্শনপ্রিয়তামুক্ত হওয়ার কারণেই আল্লাহ তাকে নিজের দিকে সম্বোধন করেছেন। ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, অন্যান্য ইবাদতে রিয়া (অন্যকে দেখানোর আগ্রহ) থাকলেও রোজার ক্ষেত্রে তা নেই। রোজা সম্পর্কে শুধু আল্লাহই জানেন। এ জন্য আল্লাহ রোজাকে নিজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন।
আর ইবনুল জাওঝি (রহ.) বলেন, প্রায় সব আমলই কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পায় এবং কাজগুলোর খুব কমই অন্যকে দেখানোর মোহ থেকে মুক্ত থাকে। কিন্তু রোজা এর বিপরীত। আল্লামা ইবনু আবদিল বার (রহ.) বলেন, অন্য সব ইবাদতের ওপর রোজার মর্যাদা প্রমাণের জন্য আল্লাহ বলেছেন, রোজা আমার জন্য। আবু উমামা (রা.)-কে রাসুলুল্লাহ (সা.) যেমনটি বলেছিলেন, তুমি রোজাকে আঁকড়ে ধরো, যেহেতু এর কোনো বিকল্প নেই। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২২২০)

পৃথিবীর ভালো কাজের প্রতিদান ও মন্দ কাজের শাস্তি আল্লাহ নিজে দেন।

তার পরও উল্লিখিত হাদিসে আল্লাহর ভাষ্যে বলা হয়েছে, আমি তার পুরস্কার দিই। হাদিসের ব্যাখ্যাকাররা বলেন, নিজে দেওয়ার দ্বারা রোজা বিশেষ মর্যাদা ও প্রতিদান প্রদান উদ্দেশ্য। ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, আমলের সাধারণ হিসাব আল্লাহ মানুষের সামনে প্রকাশ করে দিয়েছেন। আল্লাহ নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী আমলের প্রতিদান ১০ থেকে সাত শ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন। রোজা এর ব্যতিক্রম। আল্লাহ রোজাদারের জন্য সীমাহীন প্রতিদান রেখেছেন। এক বর্ণনা অনুসারে আল্লাহ বলেছেন, আমিই রোজার প্রতিদান হয়ে যাই। একজন মুমিনের জন্য এর থেকে প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তির কথা কী হতে পারে যে আল্লাহ তার জন্য হয়ে যাবেন!

শায়খ ইবনে উসাইমিন (রহ.) বলেন, হাদিসটি নানাভাবে রোজার মর্যাদা প্রমাণ করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব আমলের মধ্যে রোজাকে নিজের জন্য বিশেষায়িত করেছেন। কেননা রোজার মাধ্যমে আল্লাহর জন্য বান্দার নিষ্ঠা প্রকাশ পায়। এ আমলের রহস্য আল্লাহ ও তাঁর বান্দা ছাড়া অন্যরা জানে না। সুতরাং আল্লাহর ভয়ে ও তাঁর প্রতিদান লাভের জন্য সে তা পরিহার করে। বান্দার এই নিষ্ঠার পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ সব ইবাদতের মধ্যে নিজের বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ সবাইকে রোজার প্রশান্তি অর্জনের তাওফিক দিন।

মন্তব্য
রমজান ঐতিহ্য

মেসিডোনিয়ায় রমজানে সোনালি যুগের স্মৃতিচারণা

মো. আবদুল মজিদ মোল্লা
মো. আবদুল মজিদ মোল্লা
শেয়ার
মেসিডোনিয়ায় রমজানে সোনালি যুগের স্মৃতিচারণা

পূর্ব ইউরোপের দেশ মেসিডোনিয়ার জনসংখ্যা তিন কোটি। যার ৪০ ভাগই মুসলিম। ইউরোপের অমুসলিম দেশগুলোর মধ্যে মেসিডোনিয়ায়ই মুসলিম জনসংখ্যার হার সবচেয়ে বেশি। স্পেনে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ইউরোপের নানা দেশে মুসলিম ধর্মপ্রচারক ও জ্ঞানান্বেষীরা ছড়িয়ে পড়েন।

তাঁদের মাধ্যমে মেসিডোনিয়া সর্বপ্রথম ইসলামের পরিচয় লাভ করে। মুসলিম ধর্মপ্রচারকরা সেখানে মসজিদ ও ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

১৩৮২ খ্রিস্টাব্দে উসমানীয় শাসকরা মেসিডোনিয়া বিজয় করেন এবং তাঁদের সহযোগিতায় সেখানে দ্রুত ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত প্রথম বলকান যুদ্ধ পর্যন্ত তুর্কিরাই কার্যত মেসিডোনিয়া শাসন করে।

উসমানীয় শাসকরা মেসিডোনিয়ায় বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। উসমানীয় শাসনামলে গড়ে তোলা পাঁচ শতাধিক মসজিদ এখনো মেসিডোনিয়ায় টিকে আছে।

মুসলিম শাসন অবসানের পর মেসিডোনিয়ার মুসলিম জনসংখ্যা ক্রমেই কমতে থাকে। ১৯২১ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত মুসলিম জনসংখ্যা ৩১ ভাগ থেকে ২৪ ভাগে নেমে আসে।

১৯৭১ সাল থেকে মুসলিম জনসংখ্যা আবারও বাড়তে থাকে। বর্তমানে মেসিডোনিয়ার মুসলিম জনসংখ্যার হার ৪০ ভাগ, যা ২০৫০ সাল নাগাদ ৫৬ ভাগে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মেসিডোনিয়ার মুসলিম জনগণের বেশির ভাগই আলবেনীয় ও তুর্কি বংশোদ্ভূত। বাকিরা বসনিক ও স্থানীয়।

মেসিডোনিয়া ইউরোপিয়ান দেশ হলেও এখানকার মুসলিম জীবনে তুর্কি সংস্কৃতির প্রভাবই বেশি।

খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে ধর্মীয় উদযাপন পর্যন্ত সব কিছুতেই তারা তুর্কি সংস্কৃতির অনুসারী। দীর্ঘদিন তুর্কি শাসনাধীন থাকায় এর প্রধান কারণ। মূলত তুর্কি রীতি রমজান উদযাপন করে মেসিডোনিয়ার মুসলিমরা তাদের সোনালি অতীতকেই স্মরণ করে থাকে।

বলকান অঞ্চলের মুসলিমদের মধ্যে মেসিডোনিয়ান মুসলিমরাই রমজানের আগমনে সবচেয়ে বেশি উল্লসিত হয়। মেসিডোনিয়ার সর্বস্তরের মুসলিম; এমনকি ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও পণ্ডিতরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলে রমজানকে স্বাগত জানায়। সাধারণ মানুষের মাঝে উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা ছড়িয়ে পড়ে। মসজিদে মসজিদে ধর্মীয় আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। মসজিদে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় বিশেষ অতিথিদের উপস্থিত করা হয়। কখনো কখনো বলকান অঞ্চলের অন্যান্য মুসলিম দেশ থেকে ইসলামিক স্কলারদের আমন্ত্রণ করা হয়।

বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মুসলিমদের মতো রমজানে মেসিডোনিয়ান মুসলিমরাও ইবাদতে মনোযোগী হন। দিনরাতের দীর্ঘ সময় মসজিদে কাটায়। প্রতিটি মসজিদে তারতিলের সঙ্গে কোরআন খতম করা হয়। রমজান মাসে মেসিডোনিয়ার মুসলিমরা পারস্পরিক সম্পর্ক জোরালো করে। তারা পরস্পরের সঙ্গে দেখা করে উপহার দেয়। ধনীরা দরিদ্রদের মাঝে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে। তারা তুর্কিদের মতো তোপধ্বনিতে রমজানকে স্বাগত জানায় এবং মসজিদগুলোয় আলোকসজ্জা করে। বর্ণিল আলোয় সাজিয়ে তোলে মসজিদগুলোকে। শেষ রাতে সাহরির জন্য পরস্পর জাগিয়ে দেওয়াও একটি মেসিডোনিয়ান মুসলিম সংস্কৃতি।

মেসিডোনিয়ার মুসলিমরা সম্মিলিতভাবে ইফতার করতেই পছন্দ করে। তারা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ইফতারের আয়োজন করেন। প্রত্যেকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী তাতে অংশগ্রহণ করে। প্রতিটি ইফতারস্থলে শতাধিক মানুষ একত্র হয়। এসব ইফতার অনুষ্ঠানেই ধনীরা দরিদ্র ব্যক্তিদের হাতে তাঁদের জাকাত ও ফিতরার অর্থ তুলে দেন। রমজানের শুরু থেকেই তাঁরা জাকাত আদায় শুরু করেন। যেন দরিদ্র মুসলিমরা জাকাতের অর্থ পেয়ে স্বস্তির সঙ্গে রমজান কাটাতে পারে।

ইসলাম ওয়েব ডটনেক অবলম্বনে

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ