প্রিয় নবীর শুভাগমনের সময় অলৌকিক ঘটনা

মাওলানা মুহাম্মদ মুনিরুল হাছান
মাওলানা মুহাম্মদ মুনিরুল হাছান
শেয়ার
প্রিয় নবীর শুভাগমনের সময় অলৌকিক ঘটনা

গোটা বিশ্ব যখন অন্যায়-অবিচার, জুলুম ও নানা কুসংস্কারে নিমজ্জিত হয়েছিল ঠিক তখনই আল্লাহ তাআলা হিদায়াতের আলোকবর্তিকা হিসেবে পৃথিবীর বুকে পাঠিয়েছেন প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে। তিনিই সর্বপ্রথম পৃথিবীর বুকে এমন এক সভ্যতা স্থাপন করেছেন, যা চির সুন্দর, চিরসবুজ ও সমুজ্জ্বল আলোকধারায় উদ্ভাসিত। আল্লাহ তাআলা এর আগে হিদায়াতের জন্য প্রত্যেক জাতি-গোষ্ঠীর কাছে নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসুল পাঠিয়েছি এই মর্মে যে তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুত থেকে বেঁচে থাকো।

’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৩৬)

মানবজাতির জন্য প্রিয় রাসুল (সা.)-এর শুভাগমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ। আল্লাহ তাআলা তাঁকে ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ বা বিশ্বজগতের রহমত হিসেবে এবং নবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম মর্যাদা দিয়েই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তাঁর মাধ্যমে সমাপ্ত হয়েছে রাসুল প্রেরণের ধারাবাহিকতা। নবীজি (সা.)-এর সৃষ্টি হয়েছে সবার আগে আর পিতা আবদুল্লাহর ঔরসে মা আমিনার গর্ভ হয়ে পৃথিবীতে শুভাগমন করেছেন নবীদের শেষে।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, লোকেরা প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল, আপনার নবুয়ত কখন অবধারিত হয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, যখন আদম (আ.) শরীর ও রুহের মধ্যে ছিলেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৬০৯)

আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করে যখন (হে আবু মুহাম্মদ) বলে ইলহাম করলেন তখন তিনি বলেছেন, হে আল্লাহ, আপনি আমার কুনিয়াত ‘আবু মুহাম্মদ’ কেন রেখেছেন? এর জবাবে আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমার মাথা উত্তোলন করো। তিনি মাথা উত্তোলন করে আরশ এবং এর  চারপাশে রাসুল (সা.)-এর নুর মুবারক দেখতে পান। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এই নুর কার? জবাবে আল্লাহ তাআলা বলেন, এটি ওই নবীর নুর, যিনি তোমার সন্তানদের মধ্যে হবেন।

তাঁর নাম আসমানে ‘আহমদ’ এবং জমিনে ‘মুহাম্মদ’ (সা.)। তিনি যদি না হতেন তবে আপনাকে সৃষ্টি করতাম না, আসমান আর জমিনও সৃষ্টি করতাম না। (ইমাম শিহাব উদ্দিন কাস্তালানি, আল মাওয়াহিবু লাদুনিয়া, ১/৫৭)

পবিত্র কোরআন মজিদে প্রায় ১০টি সুরার মধ্যে রাসুল (সা.)-এর শুভাগমন সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানবজাতি, তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে (বোরহান) অকাট্য প্রমাণ এসেছে, আর আমি সমুজ্জ্বল আলোকময় নুর পাঠালাম।’ (সুরা আন নিসা, আয়াত : ৪১)

তাফসিরে কবির, তাফসিরে রুহুল বয়ান প্রভৃতি তাফসির গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, বোরহান বা অকাট্য প্রমাণ বলে নবীজি (সা.)-কে বোঝানো হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(হে হাবিব) আমি আপনাকে জগৎসমূহের প্রতি একমাত্র রহমতস্বরূপই প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘আল্লাহ ঈমানদারদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন যে তাদের মাধ্য, তাদের নিজেদের মধ্য থেকে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৬৪)

প্রিয় রাসুল (সা.) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার সুবহে সাদিকের সময় পবিত্র মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশের হাশেমি গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। ঐতিহাসিকরা তাঁর জন্ম ‘হাতির বছর’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।

রাসুল (সা.) এর শুভাগমনের আগে বিভিন্ন ঘটনা প্রকাশিত হয়েছিল। এগুলোকে বলা হয় ‘ইরহাস’। ইরহাস অর্থ হলো বুনিয়াদ বা ভিত্তি। রাসুলে পাক (সা.)-এর নবুয়ত প্রকাশের আগে সাধারণ বিবেকবহির্ভূত ঘটনাগুলোকেই ইরহাস বলা হয়ে থাকে।

রাসুল (সা.)-এর শুভাগমনের ৫০ অথবা ৫৫ দিন আগের একটি ঘটনা হলো আসহাবে ফিল বা হাতির ঘটনা। পবিত্র মক্কা নগরীতে অবস্থিত কাবাঘর আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অত্যন্ত বরকতমণ্ডিত ও মর্যাদাপূর্ণ একটি নিদর্শন।

আবিসিনিয়ার বাদশা নাজ্জাশির পক্ষ থেকে আবরাহা নামক এক ব্যক্তি ইয়ামেনের শাসক ছিল। সে দেখল প্রিয় নবী (সা.)-এর আম্মাজান যখন তাঁকে গর্ভে ধারণ করলেন তখন অগণিত আশ্চর্য ঘটনা প্রকাশ পেয়েছিল। এমনকি ৯ মাস পূর্ণ গর্ভকালীন তিনি কোনো কষ্ট অনুভব করেননি। মাতৃগর্ভে থাকাকালে মা আমিনা অনেক শুভ স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্নযোগে তাঁকে নবীপাক (সা.)-এর পবিত্র নাম মুবারক বলে দেওয়া হয়। এমনকি এও বলা হয় যে হে আমিনা, তোমার গর্ভে আমানত আছেন দুই জাহানের সরদার ও সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

বহুদিন ধরে দুর্ভিক্ষ, অনাবৃষ্টি ও খাদ্যাভাবে আরবের সর্বত্রই হাহাকার চলছিল। নবীজি (সা.)-এর বরকতময় জন্মের বছর আরবের গাছপালা ফলে-ফুলে, পত্র-পল্লবে ভরপুর হয়ে ওঠে। দুর্ভিক্ষ কাটিয়ে আরবে এক শুভ দিগন্তের সূচনা হয়। আরবের ঘরে ঘরে আনন্দের ফল্গুধারা বইতে থাকে। যেহেতু এ বছর কুরাইশরা আবরাহার বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছিল এবং দুর্ভিক্ষ থেকে পরিত্রাণ পেয়েছিল, তাই নবীজি (সা.)-এর শুভজন্মের এ বছরকে তারা ‘সানাতুল ফাতহ ওয়াল ইবতিহাজ’ (বিজয় ও আনন্দের বছর) হিসেবে নামকরণ করেছিল।

ফাতিমা বিনতে আবদিল্লাহ (রা.) বলেন, যখন প্রিয় নবীজি (সা.)-এর শুভ আগমন ঘটল, তখন আমি আমিনার কাছে উপস্থিত ছিলাম। আমি দেখলাম সব গৃহ উজ্জ্বল আলোতে ভরে গেছে এবং এও দেখলাম, আসমানের তারকারাজি এত কাছে এসেছে যে আমার মনে হলো এই তারকা আমার ওপর পতিত হবে। (ফাতহুল বারি, ৬/৪২৬)

আমিনা আরো বলেন, আল্লাহ তাআলা ওই সময়ে আমার চোখের পর্দা উঠিয়ে নেন আমি পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম প্রান্ত দেখতে পেলাম।

ইরবাস ইবনে সারিয়্যা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্ম গ্রহণকালীন তাঁর সময়ে তাঁর মাতা এক নুর দেখেন, যাতে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকিত হয়ে যায়। (ইমাম হাকেম, আল মুসতাদরাক, মেশকাত-৫৭৫৯)

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি তোমাদের আমার প্রাথমিক বিষয় সম্পর্কে বলছি। আমি হলাম ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া ও ঈসা (আ.)-এর সুসংবাদ। আর আমার মায়ের স্বপ্ন, যা তিনি আমাকে প্রসব করার সময় দেখেছিলেন যে এমন এক নুর উদ্ভাসিত হয়েছে, যার দ্বারা আমার আম্মাজানের জন্য সিরিয়ার প্রাসাদও উজ্জ্বল হয়েছিল। (ইমাম বায়হাকি, দালায়েলুন নবুয়ত, পৃষ্ঠা ৩৫)

রাসুল (সা.)-এর শুভাগমনের সময় আশ্চর্য ঘটনার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে হাসসান বিন সাবেত (রা.) বলেন, আমি সাত বা আট বছরের শিশু ছিলাম, আমি যা দেখতাম এবং শুনতাম তা অনুধাবন করতে পারতাম। একদিন সকালে এক ইহুদি চিৎকার করে বলতে লাগল, হে ইহুদি সম্প্রদায়, তোমাদের জন্য ধ্বংসের কথা হলো যে আহমদ এর তারকা উদিত হয়েছে, আজ রাতেই তার শুভাগমন ঘটেছে।

আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, মক্কা শরিফে এক ইহুদি বাস করত। যে রাতে প্রিয় রাসুল (সা.) তাশরিফ এনেছিলেন তখন সে বলল, হে কুরাইশ দল, আজ রাতে কি তোমাদের কোনো শিশু জন্মগ্রহণ করেছে? তারা বলল, আমাদের জানা নেই। তখন সে বলল, দেখো, আজ এই উম্মতের নবী তাশরিফ এনেছেন। যাঁর দুই স্কন্দের মাঝে নবুয়তের চিহ্ন রয়েছে। তিনি দুই রাত পর্যন্ত দুধ পান করবেন না। লোকজন দ্রুত ওই সভা থেকে উঠে অনুসন্ধান শুরু করল। জানা গেল যে আবদুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের ঘরে একটি পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করেছে। ইহুদি বলল, তোমরা আমাকে নিয়ে গিয়ে দেখাও। ইহুদি তার দুই বাহুর মাঝখানে ওই মোহরে নবুয়ত চিহ্ন দেখে  জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। জ্ঞান ফিরে আসার পর সে বলল, নবুয়ত বনি ইসরাঈল থেকে চলে গেছে। হে কুরাইশ সম্প্রদায়, শোনো, এই নবীর অসিলায় তোমাদের প্রভাব প্রতিপত্তি এতই বৃদ্ধি পেয়েছে যে তাঁর শুভাগমনের সংবাদ পৃথিবীর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে ছড়িয়ে পড়েছে। (ইমাম হাকেম, আল মুস্তাদরাক, হাদিস : ৪১৭৭)

প্রিয় নবী (সা.)-এর পূর্বপুরুষরা আপন সময়ের অত্যন্ত সৌভাগ্যবান, বিজ্ঞ ও সম্ভ্রান্ত ছিলেন। প্রিয় নবীজি (সা.)-এর দাদা, আব্দুল মুত্তালিবের অসিলা নিয়ে আরবের লোকেরা আল্লাহর কাছে দোয়াও করত। ইমাম শিহাব উদ্দিন কাস্তালানি (রহ.) বলেন, কুরাইশ গোত্রে যখন দুর্ভিক্ষ নেমে আসত তারা আবদুল মুত্তালিবের হাত ধরে ছবির পাহাড়ে নিয়ে যেত। তার উসিলা নিয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করত এবং বৃষ্টির জন্য দোয়া করত। (আল মাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ, পৃষ্ঠা ১/৮৮)

লেখক : সিনিয়র শিক্ষক (ইসলাম শিক্ষা)

চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজ

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কোরআন থেকে শিক্ষা

    পর্ব, ৭৪৬
শেয়ার
কোরআন থেকে শিক্ষা

আয়াতের অর্থ : ‘কিন্তু তারা কিয়ামতকে অস্বীকার করেছে এবং যে কিয়ামতকে অস্বীকার করে তার জন্য আমি প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত অগ্নি। দূর থেকে অগ্নি যখন তাদেরকে দেখবে তখন তারা শুনতে পাবে তার ক্রুদ্ধ গর্জন ও চিৎকার; আর তাদেরকে শৃঙ্খলিত অবস্থায় তার কোনো সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তারা তথায় ধ্বংস কামনা করবে। তাদেরকে বলা হবে, আজ তোমরা একবারের জন্য ধ্বংস কামনা কোরো না, বহুবার ধ্বংস হওয়ার কামনা করতে থাকো। ...সেথায় তারা যা চাইবে তাদের জন্য তাই থাকবে এবং তারা স্থায়ী হবে; এই প্রতিশ্রুতি পূরণ তোমার প্রতিপালকেরই দায়িত্ব।

’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ১১-১৬)

আয়াতগুলোতে জাহান্নামের ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়েছে।

শিক্ষা ও বিধান

১. কিয়ামতের বিশ্বাস ঈমানের অপরিহার্য অংশ। কিয়ামতে বিশ্বাস না করলে কেউ মুসলমান হতে পারে না।

২. কিয়ামতে অবিশ্বাসের শাস্তি জাহান্নাম।

প্রকৃতপক্ষে কিয়ামতে অবিশ্বাস মানুষকে অপরাধপ্রবণ করে তোলে।

৩. আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বিশ্বাস হলো, জাহান্নাম এখনো বিদ্যমান। আল্লাহ তা অনাদিকাল থেকে জাহান্নামিদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন।

৪. পৃথিবীতে মানুষের কাছে মৃত্যু যতটা অনাকাঙ্ক্ষিত, জাহান্নামে পাপীদের কাছে মৃত্যু ততটা কাঙ্ক্ষিত হবে।

৫. আল্লাহ অনুগ্রহপূর্বক বান্দাকে জান্নাত দানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। নতুবা আল্লাহর ওপর কোনো কিছু অপরিহার্য নয়। (বুরহানুল কুরআন : ২/৬০৭)

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

জাহেলি আরবে যেসব মূর্তির পূজা হতো

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ
মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ
শেয়ার
জাহেলি আরবে যেসব মূর্তির পূজা হতো

লাত ও উজ্জা ছিল কুরাইশের দুই দেবতা। কুরাইশের লোকেরা ঘুমানোর আগে লাত ও উজ্জার পূজা করত।

(মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-২২২)

এ দুটির নামে কসম খেতো। হজের সময় তারা মানাতকে ঘিরে তাওয়াফ করত।

(মুজামুল বুলদান, আল-উজ্জা ভুক্তি)

সুরা নুহের ভেতর যেসব মূর্তির কথা বলা হয়েছে আরবের বিভিন্ন গোত্র এগুলোর পূজা করত। ওয়াদ্দ ছিল দুমাতুল জান্দালে বনি কালবের দেবতা। সুওয়াআ ছিল হুজাইল গোত্রের দেবতা। মুরাদ ও বনি গাতফানের গোত্রগুলোর দেবতা ছিল ইয়াগুস

ইয়াউক পূজিত হতো হামদান গোত্রে। নাসর ছিল হিময়ারি জুল কালা গোত্রের উপাস্য। (সহিহ বুখারি, সংশ্লিষ্ট আয়াতের তাফসির) শামে পূজা করা হতো বায়াল-এর। (তাফসিরে বায়জাবি, সুরা সাফফাতের তাফসির)

মূর্তির নাম বিশ্লেষণ

লাত : আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) ও অন্যদের থেকে বর্ণিত হয়েছে যে লাত শব্দটি থেকে এটা নিষ্পন্ন, এর অর্থ হলো সংমিশ্রণ।

আরবে একজন লোক ছিল, লোকটি হজের মৌসুমে একটি পাথরের ওপর বসে থাকত এবং ছাতু গুলিয়ে গুলিয়ে হাজিদের মধ্যে বিতরণ করত। লোকটির মৃত্যুর পর মানুষ ওই পাথর পূজা শুরু করে দিল এবং এটির নাম রাখল লাত (মিশ্রণকারী)। (সহিহ বুখারি, তাফসির সুরা নাজম; ফাতহুল বারি)

আল-উজ্জা : আল-উজ্জা অর্থ হলো প্রতাপ, প্রতিপত্তি। এই শব্দের ইসমুত তাফজিল বা অগ্রাধিকার-বিশেষণ স্ত্রীলিঙ্গ হলো উজ্জা। অর্থাৎ মহাপরাক্রমশালী দেবী।

এতে বিস্ময়ের কিছু নেই যে উজ্জা কুরাইশ ও একই বংশীয় অন্যান্য গোত্রের যুদ্ধের দেবী ছিল। এ কারণেই হয়তো উহুদ যুদ্ধে মুসলমানরা পরাজিত হলে আবু সুফিয়ান পাহাড়ের ওপর থেকে চিৎকার করে বলেছিলেন : আমাদের রয়েছে উজ্জা, তোমাদের তো উজ্জা নেই। তখন নবী করিম (সা.) কর্তৃক উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-কে তার জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়, যেন তিনি এই কথা বলেন—‘আল্লাহ আমাদের অভিভাবক এবং তোমাদের কোনো অভিভাবক নেই।

(সহিহ বুখারি, গাজওয়াতু উহুদ)

মানাত : মানাত শব্দটি কয়েকটি মূল ধাতু থেকে নির্গত হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। লিসানুল আরব প্রণেতা উল্লেখ করেছেন যে মানাত-এর তা স্ত্রীলিঙ্গবাচক। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, মানাত ভাগ্য ও মৃত্যুর দেবী ছিল।

ওয়াদ্দ : ওয়াদ্দ অর্থ অনুরাগ ও ভালোবাসা। এর বিপরীতে ছিল ঘৃণা ও শত্রুতার দেবী, তার নাম ছিল নিকরা। ওয়াদ্দ দেবতার কথা বিভিন্ন শিলালিপিতে পাওয়া যায়।

সুওয়াআ : আরবি ভাষা সুওয়াআ শব্দটির মূল ধাতু পাওয়া যায় না। যার অর্থ যুগ।

ইয়াউক : যার অর্থ রুখে দেওয়া। এই মূর্তির পূজা করত ইয়ামানবাসীরা। তাদের মধ্যে প্রতীক হিসেবে ভবিষ্যত্বাচক ক্রিয়াপদের ব্যাপকতা ছিল।

ইয়াগুস : ইয়াউকের পদ্ধতি অনুযায়ী ইয়াগুসও একটি প্রতীক। এর অর্থ হলো ফরিয়াদ করা। সুতরাং ইয়াগুসের অর্থ হলো যে ফরিয়াদ শোনে এবং ফরিয়াদের প্রতিকার করে।

নাসর : নাসর একটি পরিচিত পাখি শকুন। আকাশে শকুন আকৃতি ধারণকারী একগুচ্ছ নক্ষত্রকে নাসর (ভেগা) বলা হয়। ভেগা নক্ষত্র একটি দেবতা হিসেবে দীর্ঘকাল পর্যন্ত সেমেটিক জাতিগোষ্ঠীগুলোর পূজা লাভ করেছে। বাবেলের অন্যতম দেবতা ছিল নাসরুক। ইদানীংকালে বাবেলে এই দেবতার মূর্তি উদ্ঘাটিত হয়েছে।

বায়াল : বায়াল সম্পর্কে আগেই বলা হয়েছে যে এই দেবতা শামের উপাস্য ছিল। এ প্রসঙ্গেই এটির উল্লেখ কোরআন মাজিদে রয়েছে। বায়ালের শাব্দিক অর্থ শক্তি। রূপকার্থে নেতা ও সর্দারকেও বায়াল বলা হয়। একইভাবে স্বামী অর্থেও বায়াল শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কোরআন মাজিদে শব্দটি দ্বিতীয় অর্থে বহুবার ব্যবহৃত হয়েছে। আরবের একটি বিখ্যাত দেবতা ছিল হুবাল। হুবাল ছিল কুরাইশের সবচেয়ে বড় উপাস্য। হুবাল বায়ালেরই

বিকৃতরূপ।

আরবের মূর্তি ইউরোপে

বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে আরবের তাওহিদবাদীরাই প্রথমে ইউরোপীয় দেশগুলোতে একত্ববাদের আলো ছড়ান, একইভাবে আরবের জাহেলি যুগই ইউরোপের মূর্তিপূজাকালের শিক্ষক ছিল। আরব বণিকদের মাধ্যমে গ্রিসে, গ্রিস থেকে ইউরোপের অন্যান্য দেশে আরবের দেবদেবী ছড়িয়ে পড়ে। সেসব দেশের লোকেরা এসব মূর্তির সামনে সিজদাবনত হয়ে এগুলো উপাসনা করতে শুরু করে। কথিত আছে যে গ্রিক দেবী লেটো (জিউসের পত্নী খবঃড়) আরবের লাতেরই বিকৃতরূপ। একইভাবে হুবাল হার্মিস হয়েছে। হুবাল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা এসেছে মুজামুল বুলদান নামক গ্রন্থে। কিছু প্রাচ্যবিদ এ বিষয়ে পুস্তিকা রচনা করেছেন। (এনসাইক্লোপিডিয়া অব ইসলাম,

খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৩৮০)

মন্তব্য

নবীযুগের প্রখ্যাত কারি উবাই ইবনে কাব (রা.)

মাওলানা মুহিউদ্দীন হাতিয়ূভী
মাওলানা মুহিউদ্দীন হাতিয়ূভী
শেয়ার
নবীযুগের প্রখ্যাত কারি উবাই ইবনে কাব (রা.)

নবীজি (সা.)-এর বিশেষ প্রতিভাবান সাহাবিদের একজন সাইয়্যিদুল কুররা উবাই ইবনে কাব (রা.)। তাঁর নাম উবাই। উপনাম আবু মুনযির ও আবুত তুফাইল। প্রথমটি দিয়েছেন রাসুল (সা.) এবং দ্বিতীয়টি হজরত উমর (রা.)।

উপাধি সাইয়্যিদুল কুররা (প্রধান কারি)। বংশীয় দিক থেকে তিনি মদিনার বিখ্যাত খাজরাজ গোত্রের বনু নাজ্জার শাখার সন্তান। তাই তাঁকে নাজ্জারি বলা হয়। ইসলামী পরিচয়ে তাঁকে আনসারি বলা হয়।
বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী হিসেবে বদরি বলা হয়। ইলমে কিরাআতে অগাধ দক্ষতার কারণে সাইয়্যিদুল কুররামুকরি বলা হয়। প্রসিদ্ধ সাহাবি আবু তালহা আনসারি (রা.) তাঁর মামাতো ভাই। (সিয়ার আলামিন নুবালা : ১/৩৮৯-৩৯০, উসদুল গাবাহ : ১/৬১)

 

ইসলাম-পূর্ব জীবন ও ইসলাম গ্রহণ

হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.)-কে ইসলাম-পূর্ব জীবনে মদিনায় ইহুদিদের অন্যতম ধর্মগুরু গণ্য করা হতো।

প্রাচীন আসমানি কিতাবগুলোর জ্ঞানও ছিল তাঁর। সে যুগে পড়ালেখার তেমন পরিবেশ ছিল না। তা সত্ত্বেও তিনি লিখতে জানতেন। এ কারণে তিনি ইসলাম গ্রহণের পর রাসুল (সা.)-এর লেখালেখির দায়িত্ব পালনের সৌভাগ্য অর্জন করেন। (আল-আলাম : ১/৮২)

রাসুল (সা.) মদিনায় হিজরতের পূর্বে কোনো একসময় উবাই ইবনে কাব (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন।

মিনার আকাবার দ্বিতীয় (শেষ) শপথে অংশগ্রহণ করেন। তাতে মদিনায় হিজরতের পর রাসুল (সা.)-কে পূর্ণ সহায়তার দৃঢ় অঙ্গীকার করেন। তিনি বদর, উহুদ, খন্দকসহ সব যুদ্ধে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে অংশ নেন। (আল-আলাম : ১/৮২; সিয়ার আলামিন নুবালা : ১/৩৯০; আল-ইসাবাহ : ১/১৮১)

 

ওহি লেখার সৌভাগ্য

যাঁরা রাসুল (সা.)-এর ওহি লিখতেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.)। হজরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রা.)-এর পূর্বে তিনিই ওহি লিখতেন। তিনি উপস্থিত না থাকলে রাসুল (সা.) হজরত যায়েদ (রা.)-কে ডেকে নিতেন। পরবর্তী সময়ে হজরত যায়েদ (রা.) বেশি লিখতেন।

(আল-ইস্তিআব : ১/৬৮)

 

ইলমি দক্ষতা

উবাই ইবনে কাব (রা.) ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদিতে ব্যস্ত না হয়ে মসজিদে নববীতে কোরআনের পাঠ-পঠন-পদ্ধতিসহ দ্বিনি ইলম অর্জনের পেছনে সময় দিতেন। এভাবে রাসুল (সা.)-এর সাহচর্যে থেকে ইলমে ওহির বিশাল ভাণ্ডার অর্জন করেন। একসময় তিনি ইলম ও আমলের সাজে সজ্জিত হয়ে মহান মর্যাদার অধিকারী হন। রাসুল (সা.)-এর যুগেই তিনি ফতোয়া দিতেন। দ্বিতীয় খলিফা উমর (রা.) তারাবির জামাত চালু করেন। ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেন হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.)-কে।

(আল-আলাম : ১/৮২; সিয়ার আলামিন নুবালা : ১/৩৯৪; আবু দাউদ : ১/২০২)

ইমাম শাবি (রহ.) তাবেঈ মাসরূক (রহ.) সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.)-এর পক্ষ থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত বিচারক ও ফতোয়া দাতা ছয়জনের একজন ছিলেন উবাই ইবনে কাব (রা.)।

(উসদুল গাবাহ : ১/৬২)

 

ইলমে কিরাআত ও উবাই ইবনে কাব (রা.)

রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায় তিনি কোরআনের একটি পূর্ণ সংকলন প্রস্তুত করেন এবং তা রাসুল (সা.)-এর সামনে পেশ করেন। এই সংকলনটি মাসহাবে উবাই নামে খ্যাত ছিল। কোরআনের বিভিন্ন পাঠ-পদ্ধতিতে ছিল তাঁর অসাধারণ দক্ষতা। তাঁর তিলাওয়াতে ছিল বিশেষ আকর্ষণ। রাসুল (সা.) মাঝেমধ্যে তাঁর থেকে কোরআন শুনতেন। আনাস (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) উবাইকে বললেন, আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন, তোমাকে কোরআন শোনাতে। হজরত উবাই বললেন, আল্লাহ কি আমার নাম উল্লেখ করেছেন? ইরশাদ করলেন, হ্যাঁ। এরপর বললেন, আমি রাব্বুল আলামিনের দরবারে আলোচিত হয়েছি? ইরশাদ করলেন, হ্যাঁ। তখন তাঁর দুই চোখ অশ্রুতে ভরে গেল। (বুখারি : ৭৪১, মুসলিম : ১/২৬৯,

সিয়ার আলামিন নুবালা : ১/৩৯৪)

হাদিস : উবাই ইবনে কাব (রা.) সূত্রে ১৬৪টি হাদিস বর্ণিত আছে। এর মধ্যে বুখারি-মুসলিম যৌথভাবে তিনটি এবং পৃথকভাবে বুখারি তিনটি ও মুসলিম সাতটি হাদিস বর্ণনা করেছেন।

ইন্তেকাল : উবাই ইবনে কাব (রা.) মদিনায় ইন্তেকাল করেন। (মুজামুস সাহাবা : ১/৩)

তবে কোন সনে, তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। আবু নুআইম (রহ.) বলেন, এক মতে ২২ হিজরি উমর (রা.)-এর খিলাফতে, আবার এক মতে ৩০ হিজরি উসমান (রা.)-এর খিলাফতে। দ্বিতীয় মতই গ্রহণযোগ্য। (উসদুল গাবাহ : ১/৬৩ পৃ.; আল-ইসাবাহ : ১/১৮১-১৮২ পৃ.; আত-ত্বাবাকাতুল কুবরা : ৩/৩৮১ পৃ., ক্র.১৭৪; তাহজিবুল আসমা ওয়াল লুগাত : ১/১০৯-১১০ পৃ.)

লেখক : মুহাদ্দিস ও গবেষক

 

মন্তব্য

জান্নাতে আল্লাহর দিদার লাভের ৬ আমল

আসআদ শাহীন
আসআদ শাহীন
শেয়ার
জান্নাতে আল্লাহর দিদার লাভের ৬ আমল
ছবি : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি প্রতীকী চিত্র

আল্লাহ তাআলাকে নিজ চোখে দেখা মহা সৌভাগ্যের বিষয়, যা পরকালে মুমিনদের জন্য নির্ধারিত। জান্নাতের অফুরন্ত সুখ-সুবিধা ও অনাবিল আনন্দের মধ্যেও আল্লাহর দিদার হবে এমন এক পরম আনন্দ, যা জান্নাতবাসীরা অন্য সব আনন্দ ভুলে যাবে।

আসুন, জান্নাতে আল্লাহর দিদার লাভের কিছু আমল জেনে নিই

প্রথম আমল : ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করা

আল্লাহর দিদার লাভের প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো, একজন ব্যক্তি ইসলামের অনুসরণে থেকে মৃত্যুবরণ করবে। কারণ অবিশ্বাসীদের জন্য আল্লাহর দিদার হারাম করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, কখনো নয়! বস্তুত তারা সে দিন তাদের প্রতিপালকের দিদার (দর্শন) থেকে বঞ্চিত থাকবে।

(সুরা : আল মুতাফফিফীন, আয়াত : ১৫)

অর্থাৎ গুনাহ ও কুফরির জন্য তাদের কঠিন শাস্তি হলো, তারা কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার দিদার থেকে বঞ্চিত হবে। এ থেকে স্পষ্ট হয় যে মুমিনরা কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলাকে দেখতে পাবে, আর কাফিররা এই মহান নিয়ামত থেকে বঞ্চিত থাকবে।

দ্বিতীয় আমল : আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করা

আল্লাহ তাআলার দিদার লাভের অন্যতম মাধ্যম হলোতাঁর কাছে এই মহান নিয়ামত লাভের জন্য আন্তরিকভাবে দোয়া করা।

আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুলকারী, আর তাঁর বান্দাদের আন্তরিক দোয়া তিনি প্রত্যাখ্যান করেন না। কায়েস ইবনে উবাদা (রা.) বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন, যাতে আল্লাহর দিদারের জন্য দোয়া করা হয়েছে। সেই দোয়াটি হলো—‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে (জান্নাতে) তোমার দিদার লাভ করতে চাই এবং ক্ষতিকর কষ্ট ও পথভ্রষ্টকারীর ফাসাদে পড়া ছাড়া তোমার সাক্ষাতের আশা-আকাঙ্ক্ষা করি। হে আল্লাহ! আমাদের ঈমানের বলে বলীয়ান করো আর হেদায়েতপ্রাপ্ত ও হেদায়েত প্রদর্শনকারী করো।
(সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১৩০৫)

তৃতীয় আমল : ফজর ও আসরের নামাজের পাবন্দি করা

জান্নাতে আল্লাহ তাআলার দিদার লাভের অন্যতম মাধ্যম হলো সব নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া, বিশেষত ফজর ও আসরের নামাজ নিয়মিতভাবে আদায় করা। জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন : একদা আমরা নবী করিম (সা.)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি রাতে (পূর্ণিমার) চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলেন, ওই চাঁদকে তোমরা যেমন দেখছ, ঠিক তেমনি অচিরেই তোমাদের প্রতিপালককে তোমরা দেখতে পাবে। তাঁকে দেখতে তোমরা কোনো ভিড়ের সম্মুখীন হবে না। কাজেই সূর্য উদয়ের ও অস্ত যাওয়ার আগের নামাজ (শয়তানের প্রভাবমুক্ত হয়ে) আদায় করতে পারলে তোমরা তা-ই করবে।

(বুখারি, হাদিস : ৫৫৪)

চতুর্থ আমল : গুনাহ থেকে মুক্ত থাকা

জান্নাতে আল্লাহ তাআলার দিদার লাভের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলোসব ধরনের গুনাহ থেকে নিজেকে বিরত রাখা। হজরত আবু জর গিফারি (রা.) বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির লোকের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদের পবিত্র করবেন না; বরং তাদের জন্য রয়েছে ভয়ানক শাস্তি। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এ কথাটি তিনবার পাঠ করলেন। আবু জর (রা.) বলে উঠলেন, তারা ধ্বংস হবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হে আল্লাহর রাসুল! এরা কারা? তিনি বলেন, যে লোক পায়ের গোছার নিচে কাপড় ঝুলিয়ে চলে, কোনো কিছু দান করে খোঁটা দেয় এবং মিথ্যা শপথ করে পণ্যদ্রব্য বিক্রি করে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৯৪)

পঞ্চম আমল : আল্লাহ তাআলার সাক্ষাৎ ও দিদারের আকাঙ্ক্ষা

জান্নাতে আল্লাহ তাআলার দিদার লাভের অন্যতম মাধ্যম হলোআল্লাহ তাআলার সঙ্গে সাক্ষাতের প্রবল আকাঙ্ক্ষা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ পছন্দ করে, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ পছন্দ করে না, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৫০৭)

ষষ্ঠ আমল : ইহসান করা

জান্নাতে আল্লাহ তাআলার দিদার লাভের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো ইহসান বা সৎকর্ম করা।

ইহসানের অর্থ হলো, সৃষ্টিজীবের প্রতি যেকোনো ভালো কাজ করা এবং কল্যাণমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। এটি এমন একটি গুণ, যা মানুষের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ সুগম করে। ইমাম জুরজানি (রহ.) ইহসানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, ইহসান হলো সেই কাজ, যা দুনিয়াতে প্রশংসিত হয় এবং পরকালে প্রতিদান ও সওয়াবের কারণ হয়। (আল-তারিফাত, পৃষ্ঠা-৯১)

আল্লাহ তাআলা আমাদের উপরিউক্ত আমল পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ